সাবরিনা জাহানের লেখা পর্ব ১
পর্ব ২
সকালে একদফা বৃষ্টি হয়ে গেছে। বছরের এ সময়টাতে ঝুম বৃষ্টির পর আকাশ সাধারণত ঝকঝকে পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু আজ আকাশ এখনও মুখ অন্ধকার করে রেখেছে, যেকোনো সময়ে আবারও ঝরে পড়বে। সকালবেলা এ রকম আবহাওয়া দেখতে ভালো লাগে না মৃনের। ওর মুখটাও কিঞ্চিত অন্ধকার হয়ে আছে, যেটা এই বয়সের মেয়ের সাথে ঠিক যায় না।
সমস্যা হলো- এই ওয়েদারে আরও কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি দেয়ার ইচ্ছে ছিলো মৃনের, সেটা আর হচ্ছে না। নয়টায় খাইরুল স্যারের একটা ক্লাস আছে, বৃষ্টি বাদলার মধ্যেই তাকে এখন ক্যাম্পাসে যেতে হবে। এই ক্লাসে পাঁচ-সাত মিনিট দেরি করে গেলে এমন কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। কিন্তু খাইরুল স্যারের মুখ খুব চড়া! সবার সামনে এমন একটা কথা বলে দেবেন যে তখন লজ্জায় নীল হয়ে যেতে হয়।
ক্লাস শুরুর দুই সপ্তাহ না যেতেই ক্লাসের সবচেয়ে রুপসচেতন মেয়ে সিন্থিয়া একদিন দশ মিনিট দেরি করে ফেললো। ক্লাসের দরজায় দাঁড়িয়ে বললো-
‘স্যার আসতে পারি?’
খাইরুল স্যার বোর্ডের লেখা থামিয়ে কিছুক্ষণ চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন- ‘হু, যে মেকাপ আপনি সকাল থেকে নিয়েছেন, তাতে দেরি হওয়াটা স্বাভাবিক। এখন এসেই যেহেতু পড়েছেন, আপনাকে তো আসতে দিতেই হবে। কিন্তু আপনি বেঞ্চে নয়, আমার পাশের এই চেয়ারটাতে বসে থাকবেন, ক্লাসের সবাই দেখুক আপনি কত সুন্দর, এটা ওদের অধিকার.. ..!’ ।
সিন্থিয়া পারলে তখুনি কেঁদে দেয়। এ রকম একজনের ক্লাস মিস দেওয়া সম্ভব হলেও দেরি করা যায় না কোনোভাবেই।
সাধারণত মৃন নিজেদের গাড়িতেই ক্যাম্পাসে যায়, কিন্তু আজ সকালে আফজাল ভাইয়ের ছোট ছেলেটা বৃষ্টিতে পা পিছলে পড়ে হাত ভেঙে ফেলেছে। আফজাল ভাই ফোন করেছিলেন- ‘আপা, আজ আসতে পারবো না’।
মৃনের একটু রাগও লাগছে, বাবা অনেকবার বলেছিলেন যে ড্রাইভিংটা শিখে রাখ্, কাজে দেবে। ও নিজেই গা করেনি। হাসতে হাসতে মৃন বলেছে ‘বাবা আমি বড় বড় প্রতিষ্ঠান চালাবো, ছোট এই সেডান নয়...’।
‘ময়ী মা, যেকোনো লম্বা যাত্রার শুরু হয় একটা ছোট্ট একটা পা ফেলা থেকে’ ওর বাবা বলেছিলেন। বাবা মাঝে মধ্যে আদর করে ওকে ‘ময়ী’ বলেন।
এখন ইউনিভার্সিটি বাসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ইউনিভার্সিটি বাসে যাওয়াতে মজা আছে। সবার সাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যায়, এর আগেও একদিন গিয়েছে মৃন। কিন্তু উত্তরা থেকে ‘ক্ষণিকা’য় উঠলে সিট পাওয়া যায় না। টঙ্গী থেকেই সিট ফিলআপ হয়ে যায়। এতদুর দাঁড়িয়ে যাওয়া কষ্টকর আবার বাস জ্যামে পড়লে সেই ক্লাসে দেরি দেরি হওয়ার সম্ভাবনা।
একটা রিকশা নিয়ে জসীমউদ্দিনে আসতেই মৃন দেখলো ‘ক্ষণিকা’ চলে এসেছে। দৌঁড়ে গিয়ে বাসে উঠেই একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো মৃন। বৃষ্টির কারণেই বোধহয় আজকে ভীড় নেই। মাঝামাঝি যায়গায় বাঁদিকের দুটি সিটই ফাঁকা রয়েছে। মৃন তার একটাতে গিয়ে বসলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বাসগুলোতে কিছু অলিখিত নিয়ম আছে। মেয়েরা সাধারণত বাসের সামনের দরজা দিয়ে ওঠানামা করে এবং বাসের সামনের অর্ধেক সিটে বসে আর পেছনের অর্ধেকে ছেলেরা। সে হিসেবে মাঝের এই সারিটা ছেলেদের সিট। কিন্তু মৃনের সেটা জানার কথা নয়। ও তাই নিঃসংকোচে বসে থাকলো।
বাস চলতে শুরু করেছে। হঠাৎ পেছনের দরজা থেকে এক ভাইয়া চিৎকার করে বললো- ‘মামা দাঁড়ান! ‘মামা দাঁড়ান।’
মনে হয় কেউ দৌঁড়ে আসছে।
মামা ব্রেক করতেই একজন সশব্দে পেছনের দরজা দিয়ে উঠলো বলে মনে হলো। তারপর একটু ধাতস্ত হয়ে ছেলেটি দেখলো মাঝ বরাবর বাঁদিকের দুসিটের একটা ফাঁকা আছে, যার অন্যটিতে একটি মেয়ে বসে আছে। ফার্স্ট ইয়ারের হওয়ায় আমাদের এই নতুন যাত্রীটিরও জানার কথা নয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোতে সাধারণত মেয়ে-ছেলে একসাথে বসে না। সুতরাং সে গিয়ে ওই সিটটাতে বসে পড়লো।
মৃন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো। পাশের জনকে যায়গা ছেড়ে দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই একটু চমকে উঠলো। ওর পাশে এসে বসেছে ওরই ক্লাসের ফর্সা লম্বা মতন সেই ছেলেটা, যার নাম সে ইতোমধ্যেই জেনেছে- নভোনীল!
কিন্তু মৃন কেনো চমকে উঠলো, নিজেও বলতে পারলো না। বাস তখন এয়ারপোর্ট পার হচ্ছে। এইমাত্র টেকঅফ করা নভো এয়ারের একটা উড়োজাহাজকে উড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। (অসমাপ্ত)
ব্লগার মেঘশুভ্রনীলের লেখা পর্ব ৩
ব্লগার খায়রুল আহসানের লেখা পর্ব ৪
ব্লগার আখেনাটেনের লেখা পর্ব ৫
ব্লগার পুলক ঢালীর লেখা পর্ব ৬
ব্লগার নিয়াজ সুমনের লেখা পর্ব ৭
ব্লগার কবিতা পড়ার প্রহর এর লেখা পর্ব ৮
ব্লগার মনিরা সুলতানার লেখা পর্ব ৯
ব্লগার বিলুনীর লেখা পর্ব ১০
ব্লগার ঢুকিচেপার লেখা পর্ব ১১
ব্লগার মোঃ মাইদুল সরকারের লেখা পর্ব ১২
ব্লগার কল্পদ্রুমের লেখা পর্ব ১৩
ব্লগার ফয়সাল রকির লেখা পর্ব ১৪
ব্লগার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তমালের লেখা পর্ব ১৫
** ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রুটের বাসগুলোর সুন্দর সুন্দর কাব্যিক নাম আছে যেমন, তরঙ্গ, হেমন্ত, আনন্দ, কিঞ্চিত, উল্লাস, মৈত্রী, চৈতালী, বৈশাখী ইত্যাদি। গাজীপুর/টঙ্গী- ক্যাম্পাস রুটের বাসটির নাম ক্ষণিকা।
ডিসক্লেইমার:
কয়েকদিন আগে ব্লগার রিম সাবরিনা জাহান সরকারের একটা পোস্ট দেখলাম ‘নভোনীল’ নামে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ফ্যাকাল্টির দুজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে গল্পটা শুরু হয়েছে। মজার বিষয় হলো- গল্পের শেষে সাবরিনা জাহান লিখে দিয়েছেন যে এটা অসম্পূর্ণ গল্প এবং সম্পূর্ণ করা হবে না। দেখে বেশ মজা লাগলো। এমনিতে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে এমনভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে যে এতদিন পরে এসেও এর যেকোনো অনুষঙ্গকেই অতি আপন মনে হয়।
সাবরিনা জাহান যে পরিবেশ-প্রতিবেশ বর্ণনা করেছেন, তা আমারও পরিচিত। আমি আর্টস ফ্যাকাল্টির হলেও এ যেন আমার নিজেরই দেখা কোনো ঘটনা। হঠাৎ তাই মনে হলো- এটা শেষ হতে দেবো না, এর দ্বিতীয় কিস্তিটা আমি লিখবো। কিন্তু এরই মধ্যে সাবরিনা জাহান কোনো অজানা কারণে তাঁর লেখাটা ড্রাফটে নিয়ে ফেলেছেন। অগত্যা আমার চিন্তাও অ্যাবর্শন করাতে বাধ্য হলাম।
গতকাল ব্লগার সাবরিনার অন্য একটা লেখায় আমার এই ইচ্ছের কথা বলেছিলাম। আজ সকালে দেখলাম সাবরিনা জাহানের ড্রাফটে নেয়া পোস্ট ফেরত এসেছে! আমি তাঁর আগের পোস্টে গিয়ে দেখি আমার মন্তব্যের প্রতিমন্তব্যে উনি গল্পটা ফেরত আনার কথা বলেছেন এবং পরবর্তী অংশ লেখার জন্য আমাকে ইনসিস্ট করেছেন।
আমি একটু বিপদেই পড়লাম। কারণ আগের চিন্তাটা ছিলো জাস্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট কিন্তু এখন তা হয়ে গেছে বাধ্যতামূলক! আমার লেখার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে ভাবতে আত্মশ্লাঘা তৈরী হতে পারে কিন্তু আদতে আমিতো গল্প লিখতে পারি না! তবুও চেষ্টা করলাম। এটি খুবই দুর্বল প্রচেষ্টা, তবুও আশা করি অন্য কেউ পর্ব ৩ লিখবেন। এগিয়ে যাক নতুন একটা ধারা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩১