somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাফায়েতুল ইসলাম
জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছি । প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রশ্ন করি- আমি কে? আমি কি? আমি কোত্থেকে আসছি ? আমি কিছুই জানি না । মাঝে মাঝে নিজেকে শূন্য মনে হয় । মনের অজান্তেই নিজেকে ভাবায়, এই জগৎ সংসার কেমন করে সব শূন্য থেকে শূন্যে মিলে যায়।

দূর্লভ্য নিদর্শনে একটি জাতির ইতিকথা

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চট্টগ্রাম একটি অপার সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক নগরী, প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান, তার মধ্যে অন্যতম জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর। বৈচিত্র্যময় নিদর্শন নিয়ে এশিয়া মহাদেশে যে কটি জাদুঘর রয়েছে, তার মধ্যে চট্টগ্রাম জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘরটি অন্যতম । চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতি ও আবহাওয়া সমৃদ্ধ পার্বত্য এলাকায় প্রাগৈতিহাসিক থেকে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, বিচ্ছিন্ন ও নিভৃত ভাবে জীবনযাপন করে আসছে। তাদের মধ্যে অনেকে আজও নিজ নিজ আঞ্চলিক ভাষা, নিজস্ব সৌভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে জীবন চর্চা অব্যাহত রেখেছেন। দেশের মূল জনগুষ্টির জীবনধারার সঙ্গে যথেষ্ট পার্থক্য থাকা সত্যেও, অধিকাংশ জনগুষ্টি এই বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক সম্পর্কে অবগত নয়। তাই এই নৃগোষ্ঠী, আদিবাসী ও মৌলগুষ্টি সম্পর্কে ধারণা দানের জন্য জাতীয়করণের মধ্য দিয়ে এই জাদুঘরটি নির্মিত।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের পশ্চিমে শেখ মুজিব রোডস্থ বাদাম আলীর মোড়ের উত্তরে পাঠান তলা মহল্লায় “চট্টগ্রাম জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর” অবস্থিত। লোহার সীমানায় প্রাচীর ঘেরা বিশাল একটি একতলা ভবন। প্রধান ফটকের ডান এবং বাঁ পাশে রয়েছে দুটি মনোমুগ্ধকর ভাস্কর্য, তারপর ফটক পেরিয়ে মূল ভবনে যেতে যেতেই দেখা মিলবে, নানান ধরনের দেশি-বিদেশি ফুল ও পাতাবাহারের বাগান। ভবনের ভেতরে রয়েছে টিকেট বিক্রয় কেন্দ্র এবং টিকেট বোর্ডের নোটিশ অনুযায়ী বিদেশিদের জন্য ২০০ টাকা, সার্কভূক্ত দেশের পর্যটকের জন্য ১০০ টাকা, বাংলাদেশী নাগরিকের জন্য ২০ টাকা, এবং মাধ্যমিক স্তর (হাইস্কুল) পর্যন্ত শিক্ষার্থী ৫ টাকা এবং ৫ বছরের শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ফ্রি করে, টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারপর টিকেট কেটে ডানদিকে ঘুরলেই দেখা যাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমাদের মনোরম মাচানঘর। বাঁ পাশের দেয়ালে আছে নিগ্রয়েড, ককেশয়েড, মঙ্গোলয়েড ও অস্ট্রালয়েডথ—এই চারটি প্রধান মানব ধারার প্রতিকৃতি। ভেতরে ঢুকার পর বাংলাদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন আদিবাসী ও মৌল-গোষ্ঠী যেমন চাক, মুরং, লুসাই, পাংখো, বম, খুমি, হাজং, কোচ, দালু, মান্দাই, বোনা, কুকী, সাঁওত্ বাবুবলী, ওরা্ পলিয়া, এদের সম্পর্কে তথ্য প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় নিদর্শন জাদুঘরে রাখা আছে। এছাড়া বাংলাদেশের জাতি তাত্ত্বিক নিদর্শনাবলী সাথে তুলনামূলক জ্ঞানলাভ এবং পর্যালোচনার জন্য বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশের জাতি তাত্ত্বিক নিদর্শন স্থান লাভ করেছে।

জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘরের ইতিহাস সম্পর্কে যতটুকু জানা যায়, ১৯৬৫ সালে 'সেন্ট্রাল ইতনোলজিক্যাল মিউজিয়াম অব পাকিস্তান' নামে জাদুঘরটি প্রথম পর্বের নির্মাণ কাজ শুরু করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। তবে ১৯৭৪ সালের আগ পর্যন্ত জাদুঘরটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিলোনা, তবে পরবর্তী ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সময়ে এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৮ সালে প্রথম এই জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘরটি সম্প্রসারণের কাজে পদক্ষেপ গৃহীত হয় এবং ১খ, ২খ, ৩খ এবং ৪খ নামে ৪টি নতুন কক্ষ নির্মিত হয়। পরবর্তী ১৯৮৫ সালে জাদুঘরটির পূর্বদিকে ২টি নতুন গ্যালারি (৩ ও ৪) সংযোজন করা হয়। সাপ্তাহিক ছুটি রোববার ছাড়া প্রতিদিনই এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে সরকার ঘোষিত সাধারণ এবং নির্বাহী আদেশে ছুটির দিন এটি বন্ধ থাকে।

জাদুঘরের কর্মকর্তার তথ্য সূত্রে ১.৩২ একর জায়গার ওপর মূল ভবনটি, বর্তমানে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে। কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘরটি দেখভালের জন্য ৩২টি পদ সংরক্ষিত আছে। তবে তার মধ্যে ১২ টিই রয়েছে শূন্য। স্বল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে বৃহত্তর এই জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমান ইন্টারনেটের অনলাইনে এই জাদুঘরটি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে তেমন কোন তথ্য নেই। প্রচারের ক্ষেত্রেও রয়েছে চরম মাত্রার প্রশাসনিক অবহেলা, তাই অনেকে এ যাদুঘর সম্পর্কে জানেও না। জাদুঘরের অভ্যন্তরীণ কাজ সম্পাদিত হয় খুবই অনুন্নত প্রযুক্তির মধ্যমে। দর্শক কে আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রচারণায় কোন প্রকারের উদ্যোগ নেই বলেই হয়তো অগ্রগতির দিক দিয়ে অনেক খানি পিছিয়ে।

সর্বাংশে বলতে হয়, মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে “চট্টগ্রাম জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর” টি প্রতিষ্ঠিত হলেও এটি তার লক্ষ্য অর্জনে আজও কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করতে পারেনি কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি দুর্বলতার কারণে। তারপরেও সাংস্কৃতিক বিনিময়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর, জীবনযাত্রা ও আচার আচরণ সম্পর্কে বিশ্বপরিমন্ডলে বহিঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই পর্যাপ্ত প্রকাশনা এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটি দূরীকরণে যথার্থ উদ্যোগ এখন সময়ের দাবী।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×