somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাফায়েতুল ইসলাম
জ্ঞান হবার পর থেকে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়াচ্ছি । প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রশ্ন করি- আমি কে? আমি কি? আমি কোত্থেকে আসছি ? আমি কিছুই জানি না । মাঝে মাঝে নিজেকে শূন্য মনে হয় । মনের অজান্তেই নিজেকে ভাবায়, এই জগৎ সংসার কেমন করে সব শূন্য থেকে শূন্যে মিলে যায়।

অপরাজিতার চিড়িয়াখানায় একদিন

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আকাশ ঘনিয়ে মেঘ করেছে, প্রকৃতি তার সমগ্র মেঘ বর্ষা নিয়ে ভূপৃষ্ঠে আঁচড়ে পরবে, এমনটাই মনে করছেন হাবিবুর রহমান । জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝা মাঝি তারিখ, আজ বাংলা মাসের কত তারিখ তিনি মনে করতে পারছেন না, তার কাছে সব সময় বাংলা মাসের হিসেব থাকে না, এই বেপারটা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন, তার সাথে যোগ হয়েছে আজ সরকারি ছুটির দিন, উদ্বিগ্নতার কারণ এই জন্য যে তার নয় বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাওয়ার কথা, কিন্তু আবহাওয়া অবস্থা দেখে তিনি শঙ্কিত বোধ করছেন, মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হবেন কি হবেন না।


হাবিবুর রহমান একজন সরকারি চাকুরীজীবী, তিনি সুযোগ পেলেই তার মেয়ে অপরাজিতাকে নিয়ে ঘুরতে চলে যান দূরে অথবা কাছে কোথাও । চট্টগ্রাম শহরে খুব বেশি ঘুরতে যাওয়ার মত জায়গা নেই বললেই চলে । যে কয়টি আছে তার সবকটির অবস্থাও খুব ভালো নয় । আবার কোন কোনটি এত বেশি ব্যয়বহুল যে, সেখানে সবসময় সবার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না, তাই অল্প খরচে জানতে ও শিখতে পারা যায় এমন জায়গার মধ্যে, তার অন্যতম পছন্দের যায়গা চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানা ।

দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এটি নগরীর পাহাড়তলি ইউএসটিসি হাসপাতাল এর বিপরীতে, পাহাড়ের পাদদেশে নয়নাভিরাম ছয় একর ভূমির ওপর এ চিড়িয়াখানার অবস্থান । অবশ্য তার নিজ বাসা থেকে আধ ঘণ্টার রাস্তা, হাবিবুর রহমান তার মেয়েকে নিয়ে বাস দিয়ে আসার সময় অনেক কথার ফাঁকে বলছিলেন, জানো মা- আমরা এখন যেখানে যাচ্ছি এটি একটি চিড়িয়াখানা, সেখানে অনেক ধরনের বন্য প্রাণী থাকে, তোমার বইয়ের বাঘ ভাল্লুকের ছবিতে দেখা প্রাণী গুলো আজকে জীবিত এবং সরাসরি দেখতে পাবে, তারা কি খায়, কি করে সব কিছু । বাবার কথা শুনে মেয়েটি চোখ বড় করে তীব্র উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছে, কখন পৌঁছবে । তিনি তার মেয়েকে আরও বলছিলেন- এই চিড়িয়াখানাটি ১৯৮৯ প্রতিষ্ঠিত । তার পাশেই হচ্ছে ফয়েস লেক, প্রথম অবস্থায় চিড়িয়াখানা আর ফয়েস লেকের প্রবেশ পথ একটাই ছিল । অবশ্য ১৯৯৫ সালে বাড়তি লাভ এবং দর্শকদের সুবিধার্থে আলাদা গেটে পৃথক টিকিট করে প্রবেশের ব্যবস্থা করে । এই চিড়িয়াখানায় বর্তমানে বাঘ নেই, তারপরেও নানান প্রজাতির পশু পাখির দেখা মিলবে, যেমন- বানর, কুমির, সিংহ, ময়ূর, হরেক রকমের হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সহ আরও অনেক কিছু ।

গাড়ি থেকে নেমে দুজন হাটতে হাটতে চিরিয়াখানার প্রধান মূল ফটকে এসে পৌঁছে, প্রধান ফটকের সামনেই তাদের দেখা মিলল ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছটি । নগরে ভিন্ন পাখিদের আনা গুণা নেই বলেই হয়তো তারা গাছের ডালে কাক ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাননি, তারপর মেয়েকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ডুকতেই বানরের দেখা মিলল, অনেক দর্শক তাদের বাদাম খাওয়াচ্ছে, এরপর প্রত্যেকটা পশু পাখির খাঁচা দেখে, তার মধ্যে অপরাজিতার দেখা সবচে ভয়ঙ্কর প্রানী ছিল ভাল্লুক, ঘুরার সময় অপরাজিতার অনেক প্রশ্ন, বাবা এইটা কি ? বাবা সে কি খায় ? বাবা এই প্রাণীটা এমন কেন ? ইত্যাদি প্রশ্নের প্রতি উত্তরে বাবার মুখে বিরক্তের ছাপ তো দূরের কথা, আনন্দ আর তীব্র উৎসাহের মধ্যে দিয়ে মেয়েকে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন । তারা ঘুরে ফিরে দিন শেষে চিড়িয়াখানার কিছু অন্যতম সমস্যা বের করলেন যেমন, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা স্থান সংকট । পশু-পাখি সুরক্ষায় যেখানে এক শেড থেকে অন্য শেডের দূরত্ব ৫০ ফুট রাখা প্রয়োজন, সেখানে কোনো কোনো শেডের দূরত্ব মাত্র ৪/৫ হাত ! একই শেডে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী । এতে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু এক প্রাণী থেকে অন্য প্রাণীতে সংক্রমিত হচ্ছে । তিনি আরেকটা বেপার লক্ষ করলেন তার মেয়ে বেশীক্ষণ একটা খাঁচার সামনে দাড়িয়ে থাকতে চায়না, কারণ জানতে চাইলে বলে অতিমাত্রায় দুর্গন্ধ, এছাড়াও তিনি আরেকটা বেপার আবিষ্কার করলেন, অনেক খাঁচায় পুরুষ পশু থাকলেও নেই কোন স্ত্রী পশু । আবার কয়েকটি খাঁচায় স্ত্রী পশু থাকলেও নেই পুরুষ পশু । এতে ব্যাহত হচ্ছে প্রজনন প্রক্রিয়া ।

তাই হাবিবুর রহমানের তীব্র আক্ষেপ, সরকার আসে যায় কিন্তু নেই কোন পরিবর্তন এই চিড়িয়াখানার, এত জরাজীর্ণ বেহাল অবস্থার পরেও হাবিবুর রহমানরা আশাবাদী, অসংখ্য হাবিবুররা মনে করেন চট্টগ্রামের এই চিরিয়াখানা এশিয়া মহাদেশের সবচে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টিনন্দন যায়গা হবে, কর্মজীবী মানুষের ব্যস্ততম জীবন থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস দেবে । কিছুটা সময়ের জন্য হলেও পরিবারের সবাই মিলে যান্ত্রিকতা আর ভার্চুয়াল জগতকে পিছনে ফেলে চিরিয়াখানাকে উদ্দেশ্য করে ঘুরতে বের হবে, শিখবে শেখাবে এবং বন্য প্রাণীদের বেপারে সুস্থ মননশীলতা ছড়িয়ে বেড়াবে সর্বত্র, আর আমাদের মত নব্য লেখক সমাজ ইতি টানবে- চট্টগ্রামের চিড়িয়াখানা প্রতিনিয়ত সামাজিক মেলবন্ধন আর বন্য প্রাণীদের প্রতি সহমর্মিতা ও উদার ভালবাসার প্রতীকী হয়ে থাকুক আজীবন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:২৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অদ্ভুতত্ব.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৩

অদ্ভুতত্ব.....

আমরা অনিয়ম করতে করতে এমন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, অনিয়মকেই নিয়ম আর নিয়মকে অনিয়ম মনে হয়। নিয়মকে কারো কাছে ভালো লাগে না, অনিয়মকেই ভালো লাগে। তাই কেউ নিয়ম মাফিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের কালো রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত অধ্যাপক ইউসুফ আলী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৫৮




অধ্যাপক ইউসুফ আলী মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন।

উনি ছিলেন বাংলার অধ্যাপক। ৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য হন। ৬৫ সালে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য,... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার দশটা ইচ্ছে

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩১



প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হয়-
যদি সকালটাকে দেখতে না পাই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বিস্ময়কর জিনিস কি? তাহলে বলব মানুষের বেচে থাকা। মরে গেলেই তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×