শামচুল হক
একদিন সুযোগ পেয়ে থিয়েন নাইমুলকে বলেই ফেলল, নাইমুল, তুমি কি দেশের বাড়ি যাবে?
নাইমুল সায় দেয়, হুঁ।
-- আমাকে তোমার সাথে নিবে?
-- কেন?
-- আমি তোমাদের বাড়ি যাবো।
নাইমুল আশ্চর্য হয়েই বলল, আমাদের বাড়ি যাবে মানে!
-- তুমি যদি সাথে নাও তাহলে তোমার বাড়িতে বেড়াতে যাবো।
থিয়েনের কথা শুনে নাইমুলের মুখটা কালো হয়ে যায়। এমনিতেই লোকলজ্জার ভয়ে দূরে দূরে থাকে তারোপর সাথে যেতে চাওয়ায় আরো বিব্রত বোধ করতে থাকে। ঘনিষ্ঠ কেউ সাথে যেতে চাইলে না করা দুষ্কর। থিয়েনকে যদিও সে সেইভাবে ভালোবাসে না, তারপরেও তার প্রতি দুর্বলতা একেবারে কম নয়। দুর্বলতা সত্বেও তাকে কঠিন হতে হচ্ছে। কারণ চাকরি করা বিবাহযোগ্যা মেয়েকে সাথে নিয়ে গেলে মানসম্মান আর থাকবে না। মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র হিসাবে দেশে ঢিঁ ঢিঁ পড়ে যাবে। গ্রামের মানুষের কথার বাক্য বাণে আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এসব চিন্তা করেই নাইমুল থিয়েনের প্রতি দুর্বলতা সত্বেও মনটাকে শক্ত করে বলল, তোমাকে তো নেয়া যাবে না।
-- কেন?
-- তুমি নারী।
-- তাহলে কাকে নেয়া যাবে?
-- তুমি পুরুষ হলে নিতে পারতাম।
-- নারী নেয়া যাবে না কেন?
-- আমাদের সমাজে আত্মীয় ছাড়া অন্য কোন নারীর সাথে কোন পুরুষের চলাফেরা করার নিয়ম নাই।
-- তাহলে কি করলে অন্য নারীকে সাথে নেয়া যায়?
-- বিয়ে করলে, বউ হিসাবে নেয়া যাবে।
থিয়েন আর কোন কথা বলল না। আস্তে করে নাইমুলের কাছ থেকে সরে গেল। নাইমুলও আর কোন কথা বলল না। মনে মনে ভাবল-- বিয়ের কথা বলায় থিয়েন পিছু হটেছে। আর হয়তো কখনই যেতে চাবে না। কিন্তু নাইমুলের সেই ধারনার উল্টোটা হলো। নাইমুল যেদিন বাড়ি যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্টে গেল, গিয়ে দেখে থিয়েন আগেই সেখানে উপস্থিত হয়ে আছে। থিয়েন অফিসে যায় নাই। গেটের পাশে দাঁড়ানো দেখে নাইমুল আশ্চার্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, থিয়েন, তুমি এখানে কি করছো?
-- তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি?
-- কেন?
-- আমি তোমার সাথে যাবো।
-- তোমাকে তো বলেছি, তোমাকে নেয়া যাবে না।
-- কি করলে নেয়া যাবে?
সেই দিনের মত আজও তার সেই প্রশ্ন শুনে নাইমুল ঝটপট উত্তর দিল-- বিয়ে করলে।
নাইমুল মনে করেছিল বিয়ের কথা বললেই থিয়েন পিছিয়ে যাবে, কিন্তু সে বিয়ের কথায় নেগেটিভ কোন চিন্তা না করেই উত্তর দিল-- আমি তোমাকে বিয়ে করতেও রাজী আছি।
থিয়েন বিয়ে করতেও রাজী আছে এমন কথায় নাইমুল বিব্রতবোধ করতে লাগল। তাকে পাশ কাটানোর জন্য বলল -- তুমি তো অন্য ধর্মের লোক, তোমাকে বিয়ে করা যাবে না।
-- কি করলে বিয়ে করা যাবে?
-- খ্রীষ্টান ধর্ম ছেড়ে মুসলমান হতে হবে।
-- তুমি সহযোগীতা করলে আমি তাই হবো।
নাইমুল তার কথায় আশ্চার্য হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল, এ কেমন বিপদে পড়লাম রে বাবা! আমি তো তাকে ভালোবাসি নাই। ভালোবাসার কথা কখনও বলিও নাই। তারপরেও ও আমার প্রতি এত দুর্বল হলো কেন? বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার জন্য নিজের থেকেই প্রশ্ন করল, থিয়েন তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে বাধ্য হচ্ছি, তুমি তোমার ধর্ম ত্যাগ করে আমার ধর্মে আসতো চাচ্ছো কেন?
-- তোমার জন্য।
-- আমার মধ্যে কি পেলে?
-- আমার বিশ্বাস তোমাকে আমি স্বামী হিসাবে পেলে আমি ঠকবো না।
-- কারণ?
-- কারণ, তোমার মানবতাবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তুমি পাশে থাকলে আমি কখনই বিপদগ্রস্ত হবো না। এমন বিশ্বাস থেকেই আমি তোমাকে স্বামী হিসাবে পেতে চাচ্ছি। তোমার জন্য আমি পৃথিবীর সব কিছু বিসর্জন দিতে রাজী আছি।
-- তাতে কি তুমি সুখি হবে?
-- তোমার ভালোবাসা পেলে আমি অবশ্যই সুখি হবো। আমাকে সুখি করার মত অনেক গুণাবলী তোমার মধ্যে আছে। আমি অনেক ভেবে চিন্তেই ডিসিশন নিয়েছি।
থিয়েন দেখতে শুনতে মন্দ নয়। অনেক বাঙালি মেয়েদের চেয়েও সুন্দরী। কিন্তু তার অপছন্দটা অন্য জায়গায়। তার ধারনা বিদেশের মেয়েরা বিয়ের আগেই খোলামেলা জীবন যাপন করে। বাসর রাতের ঘটনাটি তারা আগেই বন্ধু বান্ধবের সাথে ঘটিয়ে থাকে। সে মাদ্রাসায় পড়ে ইসলামী নিয়মে জীবন যাপন করছে। কোনও মেয়েকে আজ পর্যন্ত স্পর্শ পর্যন্ত করে নাই। তার পক্ষে কি এরকম মেয়ে বিয়ে করা উচিৎ হবে! বিয়ে করলেও মানসিক দিক দিয়ে কি এ্যাডজাস্ট হতে পারবে? বাঙালি হিসাবে জেনে শুনে এরকম মেয়েকে কি বিয়ে করা যায়? বাঙলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করেই এসব প্রশ্নের কারণে নাইমুল থিয়েনকে ভালোবাসতে গিয়েও ভালোবাসতে পারছে না। থিয়েন ভালোবাসলেও সে যে তাকে ভালোবাসে না এমন কথা এইমুহুর্তে বলতেও পারছে না। বললে যদি আবার সে সিনক্রিয়েট করে বসে। তাই কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল, এবার আমি বাড়ি থেকে ফিরে আসি, আগামীবার যখন বাড়ি যাবো তখন তোমাকে দেশে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা ভেবে দেখবো।
-- তুমি আসবে তো?
নাইমুল ছলনা করেই একটা হাসি দিয়ে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ আমি অবশ্যই আসবো।
-- আমাকে সামনের বার যাওয়ার সময় নিবে তো?
-- চেষ্টা করবো।
-- শুধু চেষ্টা করবে, নিবে না?
-- ইসলাম ধর্মে কথা দিতে নেই, আশ্বাস দিতে হয়, আমিও তাই দিলাম।
-- কথা দিতে নেই কেন?
-- যদি কথা পুরণ করতে না পারি অথবা হঠাৎ মারা যাই, তাহলে প্রতিশ্রুতি দেয়া কথার জন্য পরোকালে আল্লাহর কাছে জবাব দিহি করতে হবে, এই জন্য।
-- ঠিক আছে, তোমার আশ্বাসকেই আমি বিশ্বাস হিসাবে ধরে নিলাম।
নাইমুল তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবে এমন কথা বিশ্বাস করেই থিয়েন খুশিতে চোখ মুছতে মুছতে একটা হাসি দিল। নাইমুলের মুখের দিকে তাকিয়ে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা তোমার জন্য এনেছি।
প্যাকেট এগিয়ে দেয়ায় নাইমুল দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে গেল। যাকে ভালোবাসে না, যাকে বিয়ে করবে না তার গিফট নেয়া কি ঠিক হবে? নাইমুল বিবেকের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে নিবে কি নিবে না সঙ্কোচবোধ করতে লাগল। একটা পর্যায়ে নিবে না বলে নিষেধ করল। নিষেধ করায় থিয়েনের মুখটা মুহুর্তেই কালো হয়ে গেল। দুচোখ জলে ভরে গেল। তার কান্না ভেজা চোখ দেখে নাইমুল অনিচ্ছা সত্বেও জিজ্ঞেস করল, প্যাকেটে কি এনেছো?
থিয়েন কাঁদো কাঁদো ভাবেই বলল, তোমার জন্য দু’টি সার্ট আর দু’টি প্যান্ট কিনে এনেছি।
নাইমুল নিতে না চাইলেও থিয়েনের কান্নার কারণে আর না করতে পারল না। থিয়েনের কাছ থেকে প্যাকেট নিয়ে গেটের ভিতর ঢুকতে যাবে তখন থিয়েন আবার নাম ধরে ডাক দিল, নাইমুল।
থিয়েনের ডাকে নাইমুল পিছন ফিরে তাকালে থিয়েন মৃদু হাসি দিয়ে বলল, প্যাকেটের ভিতর কিছু ডলার দিয়েছি, তোমার বাবা মাকে তাদের পছন্দ মত কিছু কাপড় কিনে দিও।
নাইমুল থিয়েনের কথার জবাব না দিয়ে শুধু ঘাড় কাত করে সায় দিয়ে এয়ার পোর্টের গেটের ভিতরে ঢুকে গেল।
নাইমুল দেশে এসে থিয়েনের দেয়া প্যাকেট খুলে আশ্চার্য হয়ে গেল। নতুন সার্টের পকেটে দুই এক ডলার নয় পাঁচ হাজার ডলার দিয়েছে। এত ডলার দেখে নাইমুল থ হয়ে বসে রইল। যাকে বিয়ে করবে না তার এত ডলার নেয়া কি উচিৎ হবে? মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল মালায়শিয়া গিয়ে থিয়েনের পুরো ডলার ফেরৎ দিয়ে দিবে এবং তার দেয়া শার্টের বদলে ঐ মূল্যের জামা কিনে দিবে।
নাইমুলের বাবা আগে থেকেই মেয়ে দেখে রেখেছিল। নাইমুল দেশে আসলেই বিয়ের তারিখ পাকা করবে। নাইমুল এটা জানে এবং জেনেই থিয়েনকে কথা দেয় নাই। কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করা ইসলামের নীতিতে উচিৎ হবে না। বরঞ্চ জাহান্নামী হতে হবে। এমন চিন্তা থেকেই নাইমুল কৌশলে থিয়েনের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে।
নাইমুল আসার কয়েক দিন পরেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলল। সেই অনুযায়ী নাইমুল বিয়ের বাজারও করল। অনেক টাকাই বাজার করেছে। আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত দিয়েছে। নির্দিষ্ট দিনে বরযাত্রী যাওয়ার জন্য দূর থেকে অনেক আত্মীয় স্বজন এসেছে। দুপুর বেলা নাইমুলকে গোসল করিয়ে বরের পোষাক পরানো হয়েছে। বিয়ের জন্য ভাড়া করা পাঁচটি মাইক্রো এসেছে। বর যাত্রী রওনা হবে ঠিক এই মুহুর্তে খবর এলো পাত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পত্রীর বাবা আপাতত বর যাত্রী যেতে নিষেধ করেছে।
খবর শুনে নাইমুলের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। তার বাবা মা হাউমাউ করে কান্না করতে লাগল। বরযাত্রীদের মুখ কালো হয়ে গেল। এই অবস্থায় কি আর এখানে থাকা যায়? আস্তে আস্তে যে যার বাড়ি চলে গেল। মুহুর্তেই পাত্রী পালানোর খবর চারদিকে ছড়িয়ে গেল। এলাকার লোকজন ছিঁ ছিঁ করতে লাগল। ঘটনার আকস্মিকতায় নাইমুলও বেকুব বনে গেল। ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করে সেই বিয়ের আসর থেকে বউ যদি পালিয়ে যায় এর চেয়ে লজ্জার ঘটনা আর কি হতে পারে? এমন অপমান সহ্য করার মত নয়। কিন্তু নিয়তির উপর তো কিছু করার নেই। সব কিছু যে উপর থেকেই হয়, কারো কিছু করার থাকে না। নাইমুল যা কল্পনা করে নাই তাই হলো। বিনা কারণে অপমানিত হওয়ায় ঘরে দরজা আটকিয়ে শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগল।
বিদেশী মেয়েদের প্রতি নাইমুলের অনীহা থাকলেও বাঙালি মেয়েদের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। যেহেতু বাঙালি মেয়েরা রক্ষণশীল পরিবেশে মানুষ হয় তাই তারা আর যাই করুক খোলামেলা মেশামেশির সুযোগ পায় না। বিয়ে করা স্বামী ছাড়া বিয়ের পূর্বে কারো সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকে না। এমন বিশ্বাস থেকেই থিয়েনের ভালোবাসা সত্বেও দেশে বিয়ে করতে এসেছিল, কিন্তু তার এই বিশ্বাস আজ ভেঙে গেল। তার বিয়ের পাত্রী তার মামাতো ভাইয়ের সাথে পালিয়ে গেছে এতে তার মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই এখন এমন। কাউকে আর বিশ্বাস হচ্ছে না। শুধু মনে হচ্ছে থিয়েন আর যাই হোক ছলনাময়ী নয়।
এই ঘটনার পর থেকে থিয়েনকেই তার বিশ্বাসী মনে হতে লাগল। বিদায়ের সময় থিয়েনের চোখের পানি নাইমুলকে দুর্বল করতে না পারলেও এই মুহুর্তে সেই চোখের জল ব্যাথার সৃষ্টি করেছে। যে ব্যাথা নাইমুল থিয়েনকে দিয়েছে এখন উল্টো সেই ব্যাথায় ভুগছে। থিয়েন বিয়ের জন্য কত চেষ্টাই না করেছে। শুধু বিদেশিনী হওয়ায় তাকে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে। যে অজুহাতে তাকে বার বার ফিরিয়ে দিয়েছে আজ দেশের মেয়ে তাকে সেই অপমানেই অপমানিত করে দিল। তার এ অপমান কাউকে বলতেও পারছে না সহ্যও করতে পারছে না।
মনে মনে ভাবছে পৃথিবীতে আর কাউকে নয়। বিয়ে করলে থিয়েনকেই করবে। যে মেয়েটি নিজের বাবা মাকে ত্যাগ করে, নিজের ধর্মকে ত্যাগ করে, তাকে বিয়ে করতে পাগল পারা, সেই মেয়েকে বিমুখ করা হয়তো আল্লাও মেনে নিতে পারে নাই। তাই তাকে আজ এতবড় অপমান হতে হলো।
বিদেশিনী হলেও সব মেয়ে সমান নয়। বাঙালি অনেক মেয়ের চেয়েও সে অনেক ভালো। তাকে যখন যা বলেছে তাই শুনেছে বরঞ্চ সেই তার কথা শোনে নাই। মনে পড়ে গেল হাসপাতালের কথা। রিলিজ হওয়ার আগের দিন নাইমুল হাসপাতালে দেখা করতে গেলে খুব মাথা ধরেছিল। থিয়েনকে বলতেই থিয়েন বেডের একপাশে সরে গিয়ে বলেছিল, তুমি আমার পাশে শুয়ে পড় আমি তোমার মাথা টিপে দেই।
কথা শুনে নাইমুল লজ্জায় লাল হয়ে বলেছিল, ছি-- ছি-- থিয়েন, তুমি এসব কি বলছো! হাসপাতালের এত লোকের মাঝে তোমার পাশে ঘুমালে মানুষে কি বলবে?
থিয়েন জবাবে বলেছিল, তুমি আমার পাশে সুস্থ্য হিসাবে নয় রুগী হিসাবে শুয়ে থাকবে, তাতে মানুষ আবার কি বলবে?
নাইমুল থিয়েনের কথায় হাসি দিয়ে বলেছিল, না না থিয়েন, আমি যত রুগীই হই না কেন, তোমার পাশে শোয়া যাবে না। এটা আমার জন্য খুবই লজ্জার।
-- তাহলে তুমি চেয়ারে বসে মাথাটা বিছনায় রাখো আমি টিপে দিচ্ছি।
নাইমুল তাই করেছিল। বিছানায় মাথা এলিয়ে দিতেই অসুস্থ্য থিয়েন এত সুন্দর করে হাত বুলিয়ে দিয়েছিল যে নাইমুল ঐ অবস্থায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল নিজেও জানে না। ঘুম থেকে যখন জেগে উঠে তখন রাত নয়টা। জেগে দেখে তখনও থিয়েন মাথায় একইভাবে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ্য শরীরে থিয়েনের সেই সেবার কথা মনে হতেই নাইমুল আরো দুর্বল হয়ে গেল।
থিয়েনের নরম হাতের ছোঁয়া সেইদিন নাইমুলের মনকে দুর্বল করতে না পারলেও এখন সে সেটা মনে করেই দুর্বল হয়ে পড়ল। মনে মনে চিন্তা করল আর একদিনও নয় কালকেই মালয়শিয়ায় চলে যাবে।
বিয়ে করার আগেই বউ পালিয়ে যাওয়ার কারণে লজ্জায় যেমন নিজেকে পরিচিতদের কাছে মুখ দেখাতে পারছিল না অপর দিকে থিয়েনের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্যও মনটা উতলা হয়ে উঠল । পর দিনই মালয়শিয়া যেতে চাইলে বাবা মা নিষেধ করল, তারা আরো পাত্রী দেখছে এবং এর চেয়েও ভালো পাত্রী দিয়ে বিয়ে করাবে বলে আশ্বাস দিলেও নাইমুল একদিনও থাকতে রাজি হলো না। টিকিট কাটাই ছিল পরদিনই মালয়শিয়ায় চলে এলো।
নাইমুল মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল প্লেন থেকে নেমেই আগে থিয়েনের সাথে দেখা করবে এবং থিয়েনকে চমকে দিয়ে বলবে, থিয়েন আমি তোমার জন্য ফিরে এসেছি। থিয়েন যদি আজকে তার সাথে বেড়াতে যেতে চায় এখন আর নিষেধ করবে না, তবে তাকে প্রথমেই বাজারে নিয়ে একটা হিজাব কিনে দিয়ে বলবে, তুমি যেমন আমাকে জামা উপহার দিয়েছো আমিও তোমাকে এটা উপহার দিলাম। যেহেতু সে মুসলমান হতে চেয়েছে কাজেই হিজাব পরতে নিশ্চই সে দ্বিধােবাধ করবে না। আর যদি মুসলমান হতে চায় তাহলে সোজা মসিজদের ইমাম সাহেবের কাছে নিয়ে যাবে। আর যদি বিয়ে করতে চায় তাহলে স্থানীয় লোকজনকে স্বাক্ষী রেখে ইসলামী কায়দায় ঐ ইমাম সাহেবকে দিয়েই বিয়ে পড়িয়ে নিবে।
এক বুক আশা নিয়েই নাইমুল এয়ারপোর্ট থেকে নেমে বাসায় না গিয়ে সোজা থিয়েনের হোষ্টেলেই চলে গেল, কিন্তু দুঃখের বিষয় দেখা হলো না। থিয়েনের মা অসুস্থ্য হওয়ায় নাইমুল দেশে যাওয়ার সতেরো দিন পরেই সে ভিয়েতনাম চলে গেছে। নাইমুল ভেবেছিল থিয়েন হয়তো দু’এক সপ্তাহ পরেই ফিরে আসাবে কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পার হলেও সে ফিরে আসল না। থিয়েনের ঠিকানা না জানায় কোন যোগাযোগও করতে পারছে না। থিয়েনের দেয়া জামা দু’টো বুকে জড়িয়ে ধরে প্রতি দিনই ভেজা ভেজা চোখে কাঁদতে লাগল। মালায়শিয়ায় চাকরী করা অবিবাহিতা কত সুন্দরী মেয়ে আছে কিন্তু নাইমুলের মনে হচ্ছে থিয়েনের চেয়ে ভালো মেয়ে পৃথিবীতে আর একটিও নাই। থিয়েন নিশ্চয়ই আসবে এই বিশ্বাসে নাইমুল মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে লাগল।
০০০ সমাপ্ত ০০০
আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ভিয়েতনামের মেয়ে (গল্প)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৭