somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কানাডার জঙ্গলে এক রাত

০৬ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(উৎসর্গ ঃ কানাডা প্রবাসী ব্লগার সোহানী এবং সামু পাগলা ০০৭)
শামচুল হক

বিকাল বেলা গুলিস্তান মোরে কানাডা প্রবাসী এক বন্ধুর সাথে দেখা। তার মুখে কানাডার বর্ননা শুনে বড়ই আফসোস করতে লাগলাম। ৯৯ লক্ষ ৮৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের দেশ কানাডা, অথচ জনসংখ্য মাত্র তিন কোটি। প্রতি তিনজনের জন্য প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার জায়গা। খাওয়া, পরা, থাকার কোন অভাব নাই, খালি শান্তি আর শান্তি! আহা! কানাডায় যদি একবার যেতে পারতাম, তাহলে কত শান্তিই না পেতাম।

রাতে শুয়ে শুয়ে কানাডার এসব কথাই ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়েছি বলতে পারি না। হঠাৎ দেখি ঢাকা এয়ার পোর্টের উত্তর পাশ দিয়ে ঢুকে পড়েছি। উত্তর পাশে কোন দেয়াল দেয়া নাই, সহজেই ঢোকা যায়। জঙ্গল পেরিয়ে কিছুদূর যেতেই রানওয়ে। রানওয়ের একপাশে মাঝারি সাইজের একটি বিমান দাঁড়ানো আছে। বিমানটির দরজা খোলা এবং সিঁড়ি লাগানো আছে। বিমানের ভিতরে কি আছে দেখার জন্য খুব কৌতুহল জাগল। আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। উপরে উঠতেই দুই তিন জন যাত্রী চিল্লিয়ে উঠল, এই তো প্যাসেঞ্জার এসে পড়েছে, আর চিন্তা নাই, পাইলট সাহেব, এবার বিমান ছাড়েন।

তাদের চিল্লানো দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ কেমন বিমানরে বাবা! গুলিস্থান মিরপুরের লোকাল বাসের যাত্রীরাও তো এভাবে চিল্লায় না! বাসের মত বিমানো কি সিটিং সার্ভিস হলো নাকি? পুরো সিট না ভরলে ছাড়া যাবে না, সিট খালি থাকায় পাইলট বিমান আটকিয়ে বসে আছে।

আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তড়িঘড়ি এসে একজন বিমানবালা আমাকে সাথে নিয়ে মাঝখানের একটি সিটে বসিয়ে দিল। তাড়াহুড়া করে সিটে বসিয়ে দেয়ায় আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। আসে পাশে তাকাতে লাগলাম। আমি যে সিটে বসেছি তার পাশের সিটে আরেকজন ভদ্রলোক বসা। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই, আপনি কোথায় যাবেন?
তিনি সিটে হেলান দিয়ে বসে ছিলেন, আমার কথা শুনে আড়মোড়া দিয়ে সোজা হয়ে বসে বলল, কানাডা। আপনি কোথায় যাবেন?
কানাডার নাম শুনে মনে মনে আনন্দে নেচে উঠলাম, আমিও তো রাতে কানাডা যাওয়ার কথাই ভাবতেছিলাম, সেই সুযোগ যখন পেয়েছি তখন সুযোগ হাত ছাড়া করে লাভ কি? মুখটা উজ্জল করে খুশি হয়ে বললাম, আমিও কানাডা যাবো।
-- কানাডার কোথায় যাবেন?
-- টরেন্টোতে।
-- সেখানে কে থাকে?
-- আমার বন্ধু।
-- তার বাসা চেনেন?
-- না, চিনি না, এই প্রথম যাচ্ছি।
-- ঠিকানা মনে আছে?
-- ঠিকানা জানি না, তবে ওর টেলিফোন নাম্বার আমার মুখস্থ আছে।
-- টেলিফোন নাম্বার মুখস্থ থাকলে কোন সমস্যা হবে না। আর যদি সমস্যা হয় তাহলে আমাকে বলবেন আমি আপনাকে ব্যবস্থা করে দিব।
আমি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললাম, আপনাকে কিছু করা লাগবে না, ও আমার ছোট কালের বন্ধু, আমার ফোন পেলেই ও তড়িঘড়ি এসে আমাকে নিয়ে যাবে, বলেই সিটে হেলান দিয়ে বসে পড়লাম।

হেলান দিয়ে বসলাম ঠিকই কিন্তু এসির ঠান্ডা বাতাস সরাসরি আমার গায়ে লাগায় খুব ঠান্ডা লাগতেছিল, বিমান বালাকে ডাক দিতেই একটি সুন্দর তুলতুলে কম্বল গায়ে জড়িয়ে দিয়ে গেল। কম্বল গায়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আর বলতে পারি না। হঠাৎ কিসের যেন ধাক্কা লেগে ঘুম ভেঙে গেল।

তাকিয়ে দেখি আমাকে প্লেন থেকে ফেলে দেয়া হয়েছে। ঘন ডালপালাওয়ালা ছোট একটি গাছের উপরে পড়েছি। আর একটু পরেই গাছ থেকে নিচে পড়ে হাত পা ভেঙে গুড়া উঠে যাবো। নিচে পড়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি জীবন বাঁচানোর জন্য ডালপালা দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। কিন্তু রক্ষা পেলাম না, জড়িয়ে ধরা অবস্থায় ডালপালা ভেঙে মাটিতে পড়ে গেলাম। তবে সুখের বিষয় হলো মাটিতে পড়লেও ব্যাথা পেলাম না। গাছের ডালপালা জড়িয়ে ধরায় গাছের উপর থেকে নিচে পড়তে পড়তে পড়ার গতি কমে যাওয়ায় চোট পাওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছি।

মাটিতে পড়ে আর চোখে দেখি না, একে তো ঘন জঙ্গল তারোপর অন্ধকার রাত। কিছুই চোখে দেখা যায় না। উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম কোন দিক নিদর্শন করতে পাচ্ছি না। অনুমানের উপর ভিত্তি করে পশ্চিম দিকে হাঁটতে লাগলাম। জঙ্গল ভেঙে ভেঙে কিছুদূর যেতেই উত্তর দক্ষিণ লম্বা একটি রাস্তার মত মনে হলো। রাস্তায় নেমে অন্ধকারে হাত দিয়ে হাতিয়ে দেখি এটা রাস্তা নয়, রেল লাইন। রেল লাইন পেয়ে মনে একটু সাহস হলো। মনে মনে ভাবলাম, রেল লাইন যখন পেয়েছি তাহলে শহর বন্দর পেতে আর অসুবিধা হবে না। রেল লাইন ধরে ধরে হাঁটলে একটা কিছু পাওয়া যাবেই। কিন্তু ঠান্ডা বাতাসে কোঁকড়া লেগে গেলাম। কানাডার ঠান্ডা যে এত কনকনে ঠান্ডা হয় তা আগে জানা ছিল না, জানলে কি আর খালি শার্ট গায়ে কানাডায় আসি? শরীরের মাংস ভেদ করে হাড্ডিতে গিয়ে ঠান্ডা লাগতে ছিল। রক্ত জমে যাওয়ার অবস্থা। চিন্তা করলাম হাত পা ঠান্ডায় অবস হলেও অসুবিধা নাই কিন্তু হৃদপিন্ড চালু রাখা দরকার, হৃদপিন্ড বন্ধ হলে ঠাস করে পড়ে এই জঙ্গলেই মারা যাবো, তখন আর কানাডার সুখ-শান্তি কিছুই চোখে দেখা হবে না। সেই চিন্তা করেই ঠান্ডার ভিতর দুইহাত দিয়ে কান চেপে ধরে কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিকে রওনা হলাম। কিছুদূর যেতেই রেললাইনের পাশে ছোট একটি ঘর চোখে পড়ল। ঘরের সামনে একটি বারান্দাও আছে। মনে হয় কোনও রেলের কর্মচারী এখানে বসে ডিউটি করে। কিন্তু লোকজন কাউকে চোখে পড়ল না। দেয়ালের পাশের টেবিলে দু’টি শীতের জ্যাকেট ভাঁজ করে রাখা। জ্যাকেট দু’টির উপরে একটি কাগজ সাঁটানো আছে, তাতে লেখা, “ফর হেল্পলেস”।

দেয়ালে লেখা কাগজটি পড়ে মনে হলো আমিও তো হেল্পলেস। কাপড়ের অভাবে এই মুহুর্তে আমিও দাঁতে দাঁতে করতাল বাজিয়ে চলেছি। ঠান্ডায় মরে যাওয়ার অবস্থা। কথার সাথে আমার বর্তমান অবস্থার মিল থাকায় দেরি না করে তাড়াতাড়ি একটি জ্যাকেট গায়ে দিয়ে দ্রুত উত্তর দিকে হাঁটতে লাগলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে রেল লাইন ধরেই হাঁটতেছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে মৃদু আলো জ্বলে উঠল, ভুক করে আলো জ্বলে উঠায় চমকে উঠলাম, কিসের আলো সেটা পরখ করার জন্য পিছনে তাকাতেই দেখি একটি ট্রেন দ্রুত গতিতে এদিকেই আসছে। আর দু’এক মিনিট দেরি করলেই আমাকে পিশে ফেলে আমার উপর দিয়ে চলে যাবে। তাড়াতাড়ি জান বাঁচানোর জন্য রেল লাইন থেকে পশ্চিম দিকে জঙ্গলে লাফিয়ে পড়লাম। লাফিয়ে জঙ্গলে পড়ে ভালোই হলো। মনে হয় একটি রাস্তা পেয়ে গেলাম। দুইপাশে জঙ্গল মাঝখান দিয়ে চিকন রাস্তা। এই রাস্তা ধরেই পশ্চিম দিকে যেই দৌড় দিয়েছি অমনি কিসের সাথে যেন ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে গেলাম। আমি চিৎ হয়ে পড়ে যাওয়ার পরপরই ট্রেন দ্রুত গতিতে চলে গেল। ট্রেন চলে যাওয়ায় এলাকাটি আবার ঘন অন্ধকার হয়ে গেল। অন্ধকারেই খেয়াল করলাম আমার অল্প দূরেই কি যেন নড়ছে আর কিউ কিউ করছে। ভয়ে কেঁপে উঠলাম। জীবন বাঁচানোর জন্য জোরে চিল্লিয়ে উঠলাম, কে-- কে--?
আমার চিল্লানোর পরেই ঐ বস্তু থেকে আওয়াজ এলো, হু আর ইউ?
প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে ‘হু আর ইউ’ শুনে মনে একটু সাহস এলো, যাক বাঁচা গেল বাবা, কোন জন্তু জানোয়ার নয়, ইংরেজি যখন বলেছে তখন মানুষই হবে, কোন জন্তু জানোয়ার তো আর লেখা পড়া জানে না, ওরা ইংরেজি বলবে কি করে?
আমি ভালো ইংরাজী না জানলেও টুকটাক বলতে পারি। এই টুকটাকের জোরেই ডাটে ফাটে বললাম, আই এম এ বাংলাদেশি।
এবার চি চি করে বলল, কাম হেয়ার।
‘কাম হেয়ার’ বুঝতে অসুবিধা হলো না। কাছে গিয়ে দেখি কেউ একজন শীতের কাপড় গায়ে জড়ানো অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়ে কোমর ধরে কোকাকোকি করছে।
তাকে ধরে উঠাতেই বলল, তুই আমাকে ধাক্কা দিলি কেন রে?
তার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলাম, ভয়ে ভয়ে বললাম, আমি ধাক্কা দেই নাই দৌড় দিয়েছিলাম।
-- দৌড় দিলি কেন?
-- ট্রেনের তলে পড়া থেকে বাঁচার জন্য।
-- আরে স্টুপিড, আমি তো ঐ ট্রেনের তলে পড়ে মরার জন্যই রেল লাইনের দিকে দৌড় দিয়েছিলাম।
তার কথা শুনে বয়স্ক মহিলার মত মনে হলো। কিন্তু ট্রেনের তলে পড়ে মরতে চাওয়ায় আশ্চার্য হয়ে জিজ্ঞেস বললাম, কেন ট্রেনের তলে পড়ে মরবেন কেন?
মহিলা হতাশ কণ্ঠে বলল, আমার আর বেঁচে থাকার ইচছা নেই।
-- আপনার দুঃখ কিসের?
-- অনেক দুঃখ।
-- আপনার কি ভাত-কাপাড়ের অভাব?
-- না
-- টাকা পয়সার অভাব?
-- না
-- থাকার জায়গার অভাব?
-- না
-- কোন অভাব যদি না থাকে তাহলে ট্রেনের তলে পড়ে মরবেন কেন?
-- আমার মনে কোন সুখ নেই।
-- কেন?
-- আমার সাথে কথা বলার লোক নেই।
-- কেন, আপনার পরিবারে কোন লোক নাই?
-- আছে, তারা কেউ আমার সাথে থাকে না।
-- ছেলে মেয়ে কেউ থাকে না?
-- তারা যার যার মত বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কেটে পড়েছে।
-- ছেলে-মেয়েরা না হয় না থাকলো আপনার স্বামী কোথায় থাকে?
-- আমার স্বামী তো একজন নয় সাত জন ছিল, তারা কেউ আর আমার সাথে থাকে না।
স্বামীর সংখ্যা শুনে আশ্চার্য হয়ে বললাম, সাতজন স্বামী!

সাতজন স্বামীর কথা শুনে আশ্চার্য হওয়ায় বুড়ি রেগে গেল, কিছুটা কর্কশ কণ্ঠেই বলে উঠল, আরে এতে আশ্চার্য হওয়ার কি হলো? আমার তো মাত্র সাতজন স্বামী ছিল, অনেকের তো আরো অনেক বেশি স্বামী আছে।
মনে মনে বললাম, এটা কোন দেশে এলামরে বাবা! সাত জন স্বামী তাও নাকি কম হয়ে গেছে! আরো স্বামী হলে আরো ভালো হতো। কৌতুহল থেকে আবার প্রশ্ন করলাম, আপনার বাচ্চা কাচ্চাগুলো কোন স্বামীর?
আমার প্রশ্ন শুনে ধমক দিয়ে উঠল, তুই একটা আস্ত স্টুপিড, আমি কি শুধু স্বামী নিয়ে বসে ছিলাম নাকি? আমার আরো বন্ধু-বান্ধব ছিল না, তাদের সাথেই তো বেশিরভাগ সময় কাটাতাম। কোন সন্তান কার এটা আমি কি করে বলবো?

বুড়ির কথা শুনে কৌতুহল আরো বেড়ে গেল, জানার জন্য আবার জিজ্ঞেস করলাম, আপনার স্বামী ছাড়া আরও কতজন বন্ধু-বান্ধব ছিল?
বন্ধু বান্ধবের কথা জিজ্ঞেস করতেই বুড়ি খুশি হয়ে বলল, আরে বন্ধু-বান্ধব কতজন ছিল মানে, আমি কি দেখতে কুৎসিত ছিলাম নাকি? আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল, স্কুল জীবনের বয়োসন্ধি কাল থেকে বুড়ি হওয়ার আগ পর্যন্ত বন্ধু-বান্ধবের অভাব ছিল না, বলেই বুড়ি কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, কিন্তু দুঃখের বিষয় ওরা কেউ আর আমার খোঁজ খবর নেয় না। সারা দিন বাড়িতে একা থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সুইসাইড করবো।

মনে মনে আমার আঞ্চলিক ভাষায় বললাম, হায়রে বুড়িরে-- ভাতের অভাব নাই, কাপড়ের অভাব নাই, ঘরবাড়ির অভাব নাই, স্বামীর অভাব নাই, বন্ধু বান্ধবের অভাব নাই এতসুখে থাকার পরেও আত্মহত্যা করতে রাতের অন্ধকারে রেললাইনে আইছোস। তোর জন্মডা যদি বাংলাদেশের রংপুরের মঙ্গা এলাকায় হইতো তাইলে আর আত্মহত্যা করতিস না। জীবন বাঁচানোর জন্য এক থাল ভাতের ফ্যানের জন্য বাড়ি বাড়ি হততা দিয়া ঘুইরা বেড়াইতিস। এইখানে বেশি সুখে আছোস তো এই জন্য আত্মহত্যা করতে রেল লাইন খুঁইজা বেড়াস।

বুড়ির সাত স্বামী আর অগণিত বন্ধুবান্ধবের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম, এরা তো জীবনের সব স্বাদ-আল্লাদ আগেই শেষ করেছে। জীবনের কোন আকাঙ্খা অপূর্ণ রাখে নাই। জীবনের সব আশা আকাঙ্খা শেষ করার পর পড়ন্ত জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছা আর থাকে কি করে? জীবনের সবকিছু অকারণে শেষ করায় মধুহীন দেহে হয়তো আর মৌমাছি ফিরেও তাকায় না। অতীতের হৈ-হুল্লোড় জীবনের কথা মনে হলে বর্তমান একাকীত্ব জীবন অসহায় মনে হয়। কাজেই অসহায়ত্ব থেকেই হয়তো আত্মহত্যার প্রবনতা জেগে উঠেছে।

বুড়ির লাগামহীন জীবনের অফুরান্ত আনন্দের কথা ভেবে ব্যাক্কেলের মত ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম। অনেকক্ষণ কোন কথা বললাম না। আমি অনেকক্ষণ কোন কথা বলছি না দেখে বুড়ি বলল, এই-- তুই কোন কথা বলছিস না কেন রে?

আমি বললাম, আপনার অতীত জীবনের সুখের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।
বুড়ি বলল, আমার অতীত জীবন নিয়ে বাকরুদ্ধ হওয়ার কিছু নাই, এটাই আমাদের পরিবেশ, তুই আমাকে ধরে উঠা, আমি উঠতে পারতেছি না।

বুড়ির কথা শুনে মনে মনে বললাম, বুড়িরে-- আমি যখন তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি তখন তোকে উঠানোর দায়িত্বও আমার। কিন্তু তোর এত এত বন্ধুবান্ধবের কথা শুনে তো ভালো লাগল না। তোর যত বন্ধু বান্ধবের সাথে দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে বাংলাদেশের কোন পতিতার ভাগ্যেও মনে হয় এত কাস্টমার জোটে না। তুই কি আসলে ভদ্র ঘরের বউ না গণিকা বাড়ির বউ এটাই তো বুঝতে পারছি না। তোর লাগমহীন যৌন জীবনের কথা শুনে তোর প্রতি ঘৃণা লাগতেছে। বাংলাদেশের হিসাবে তো তোকে ছোঁয়াটাও পাপ। কিন্তু কানাডার পরিবেশ সম্পর্কে যেহেতু আমার কোন ধারনা নাই, তাই হয়তো হতেও পারে অধিক স্বামী আর অধিক বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারাও একটা পরিবেশ। কানাডার পরিবেশের কথা ভেবেই বুড়িকে ধরে উঠালাম, বুড়ি দাঁড়ানোর পরে ঠিক মত হাঁটতে পারছে না, কোমরে পচন্ড ব্যথা পেয়েছে। বুড়ির অবস্থা দেখে ঘৃণার মাঝেও মায়া হলো, ধরে ধরে হাঁটাতে লাগলাম। বুড়ি বলল, আমাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে আয়, আমি অন্ধকারে একলা একলা যেতে ভয় পাই।
মনে মনে বললাম, হায়রে বুড়িরে, একটু আগেই ট্রেনের তলে পড়ে মরার জন্য এই অন্ধকার দিয়ে দৌড়ে আসলি এখন আর অন্ধকারে হাঁটতে পারোস না, ভয়ে কোঁকড়া লেগে যাস। সুইসাইড করার সময় ভয় লাগে না সুইসাইড না করে ফিরে আসতে ভয় লাগে।

আমি বুড়িকে ধরে ধরে তার বাড়িতে নিয়ে গেলাম। রেল লাইন থেকে বাড়িটি বেশি দূরে নয়, অনেক জায়গা জুড়ে বিশাল বাড়ি। বাড়ির সামনে ফুল বাগান আছে। নিচে গাড়ি রাখার গ্যারেজও আছে। গ্যারেজে একটি চকচকা গাড়িও রাখা আছে। এত কিছু থাকতে বুড়ি কোন আক্কেলে আত্মহত্যা করতে গেছে এটা আমার মাথায় ধরছে না।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:০১
৪০টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন ড. ইউনূস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:১০





যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।শুভেচ্ছা বার্তায় ড. ইউনূস বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের জন্য আপনাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×