somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পান্না জ্বলা রাত

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাটিতে হাটুমুড়ে বসে এক দৃষ্টিতে ডাক্তার বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে রতন। সেখানে আজ বিরাট মচ্ছব। বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। এরা সবাই অবশ্য ঢাকাতেই থাকে। বিয়ে সেখানেই হয়েছে, অনুষ্ঠানও। গ্রামেও আবার হচ্ছে। এখানে কারেন্ট নেই। তাই জেনারেটর নিয়ে আসা হয়েছে। বাড়ির আশে পাশে তাই দিনের আলোর মতই পরিষ্কার। লাল নীল মরিচ বাতি লাগানো হয়েছে। অদ্ভুত বাতিগুলো একবার জ্বলছে, একবার নিভছে। ডান থেকে বামে, বাম থেকে ডানে। আবার উপর থেকে নীচে। রতন বসে বসে সেটাই দেখছে।
ডাক্তার সাহেব গ্রামের সবাইকেই দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছেন। রতনও মাত্রই খেয়ে উঠেছে। তাই এভাবে বসতে ওর খানিকটা কষ্টই হচ্ছে। তবে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে এটাই ভালো উপায়।
নিজের বিয়ের কথা মনে পড়ে ওর। গত শীতেই বিয়ে করেছে ও। খুব ইচ্ছা ছিল না। মায়ের জোরাজুরিতেই করা। ওর বাপ নেই। জন্মের কিছুদিন পরেই মারা গেছে। পরের জমিতে কামলা খাটে। বিয়েও করেছে আরেক কামলার মেয়েকে। তাই শুধু রঙ্গিন কাগজ দিয়ে ঘর সাজানো ছাড়া আর কোনো আনুষ্ঠানিকতার বালাই ছিল না। এমনকি সেই যে বিয়ের সময় দুটো শাড়ি দিয়েছিল, তারপর বৌকে আর কিছুই দিতে পারেনি কিনে। সেই শাড়ি দুটোও আজ শতছিন্ন। তা দিয়ে আব্রু রক্ষা হলেও সভ্য সমাজের সামনে তা বেমানান। তাইতো রতন খেতে আসলেও ওর বৌ আসেনি।
ওর বৌ এসব নিয়ে কিছুই বলে না। ছোট থেকে এসবেই মানুষ সে। দুইবেলা খেতে পারলেই খুশি। তার পরও রতনের মনটা ভার হয়ে আসে। বাতির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে পানি এসে যায় তার।
না, আবেগে না। অনেকক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার কারণে। চোখ মুছতে গিয়ে কেমন একটা জ্বলুনিও টের পায়।
বিয়ে বাড়ির ভীড় কমে গেছে, শীতটাও তাই কামড় বসানো শুরু করলো। রতনও ধীর পায়ে বাড়ির দিকে হাটা দেয়।

বাড়ি একেবারেই চুপচাপ। শীতের রাত। ওর বৌ অনেক আগেই কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে দরজা খুলে ঘরে ঢুকতেই রতন হতভম্ব হয়ে গেল।
কাথার উপর এক হাজার একটা জোনাকি জ্বলছে। মনে হচ্ছে কেউ যেন একগাদা পান্না মোতি সেলাই করে রেখেছে। কাথার ফাক দিয়ে বৌয়ের মুখটা দেখা যাচ্ছে। বালিশের পাশেই তিনটা বিড়ালের বাচ্চা জড়াজড়ি করে ঘুমাচ্ছে।
আগেও তো এই দৃশ্য দেখেছে, কিন্তু আজকের মত অনুভব করতে পারেনি। মরিচ বাতির আলো চাইলেই জ্বালানো যায়, কিন্তু সবার ঘরের মাঝে জোনাকির হাট বসে না।
মাতাল করা বাতাস সারাদিনের সমস্ত গ্লানি উড়িয়ে দিল। বাতাস এত মিষ্টি হতে পারে ওর জানা ছিল না। কোনো কারণ ছাড়াই এক অপার্থিব আনন্দে মন ভরে গেল। অজানা কার প্রতি কৃতজ্ঞতায় বুকটা ভরে গেলো। চোখে আবারো পানি চলে এল। তবে এবার নিখাদ আবেগে। রতন কবি হলে হয়তো লিখেই ফেলতঃ

থমকে গিয়ে রই দাঁড়িয়ে, ‘এলেম কোথায়?’ বলে।
আমার আধার বিরান ঘরে হাজার মানিক জ্বলে।

ভুল করে কি চলেই এলাম, স্বর্গলোকের দ্বারে
কচলে দুচোখ, তাকিয়ে দেখি, ‘জোনাক পোকা, আরে!’

অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি আগুন পাখির কাজ
জীর্ণ কুটির সাজলো আজি রাজপ্রাসাদের সাজ

জোনাক আলোয় দেখছি তোমার ঘুম জড়ানো মুখ
হাজার দুঃখের মাঝে আমার এক টুকরো সুখ।



[জোনাকি পোকার অংশটুকু আমার নিজ চোখে দেখা। আফসোস তাদের জন্য যারা কোনোদিন এ দৃশ্য দেখেনি। নিজের জন্যও আফসোস হচ্ছে, কেন আমি কবি না? এই জিনিস দেখেই কবি হওয়া মানায়!]
[ দৃশ্যটা দেখে Owl city’র fireflies গানটার কথা মনে পড়ছিল খুব]
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×