somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ ও প্রত্যাশা : লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব, নির্বাচন-২০১০

১৯ শে মার্চ, ২০১০ ভোর ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকী। বহুলকাংখিত এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রেসক্লাব সংশ্লিষ্ট সদস্যদের উৎসুক্য বেড়েই চলেছে। তা-ই স্বাভাবিক। কারন বাঙালির অনেক অর্জনের মধ্যে বৃটেনের মাল্টিকালচারাল সমাজে বাংলা ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশ তথা সাংবাদিকতার চর্চা অন্যতম। নিকট অতীতে কিছুসংখ্যক দূরদর্শী বাঙালি ব্যক্তিত্বের স্বপ্রণোদিত হয়ে পত্র-পত্রিকার প্রকাশ এবং তার বিস্তারে আন্তরিক প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় আজকের বাংলা মিডিয়ার ভীত নির্মিত হয়েছে। এ প্রজন্মের সাংবাদিকদের গর্বের কুতুব মিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব। আমাদের বিশ্বাস - কষ্টার্জিত এ অর্জনকে ধরে রাখা এবং সময়ের সাথে এগিয়ে নেয়া নির্বাচিত, অনির্বাচিত সকল সদস্যের সমান দায়িত্ব। আর এসমস্ত দায়িত্বের নিশ্চিত তত্ত্বাবধানের জন্যে প্রয়োজন একটি কাঠামো তথা দায়িত্ব পালনে সক্ষম ব্যক্তিবর্গের সমন্বিত কমিটি। যা নির্ধারিত হতে যাচ্ছে আগামী ২০ মার্চ শনিবার।
আমরা জানি, প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সহিষ্ণু মনোভাব এবং আন্তরিকতায় আমাদের এই প্রিয় প্লাটফরম লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব তার জন্মলগ্ন থেকে কোনো ধরনের মতানৈক্য ছাড়াই পরিচালিত হয়ে আসছে। আনুষ্ঠানিক নির্বাচন পদ্ধতিতে পদার্পনের পর এটা হচ্ছে তৃতীয় নির্বাচন। নির্বাচন চালু হওয়ার পর থেকে প্যানেল পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে, চলছে জোর প্রচারণা। অনেকেই এ প্যানেল পদ্ধতিকে দেখছেন এক ধরনের বিভাজন হিসেবে এবং অনাকা-িক্ষত প্রচারণায় হচ্ছেন বিরক্ত। আমার বক্তব্য এ বিষয়েই।
নিঃসন্দেহে প্রেসক্লাব সচেতন ও পেশাজীবি সাংবাদিকদের সংগঠন। এখানে মতভেদ এবং বিভাজন সৃষ্টি করে এমন যে কোনো পদক্ষেপ-পদ্ধতি থেকে বিরত থাকাই বাঞ্চনীয়। ক্লাবের সমৃদ্ধি সাধনে যে কেউ অংশ নিতে পারেন এবং সামগ্রিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আমরা সবার মধ্য থেকে যে কাউকে বাছাই করতে পারি, দায়িত্ব দিতে পারি। অনেকে ভাবছেন বিভাজন সৃষ্টিকারী প্যানেল পদ্ধতি এবং প্রার্থীদের অতিউৎসাহী প্রচারণা কি খুবই জরুরী? আমাদের ছোট্ট এ কমিউনিটিতে যে পন্থা ও পদ্ধতিতে কোনো ধরনের বিভাজন বা অনৈক্যের সৃষ্টি না হয় সে পথেই এগুতে হবে। আজ না হয় কাল বিষয়গুলো জরুরী ভিত্তিতে ভেবে দেখা প্রয়োজন। গত নির্বাচনের অনেক কদর্য প্রচারণা আমাদের বিব্রত করেছে।
ভেবেছিলাম এবছর ঐক্যবদ্ধ প্যানেল এবং কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীতার সমন্বয়ে নির্বাচন হওয়ায় এবার আর সেই পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। দু”খজনক হলেও সত্য, প্রথম প্রথম অনেক কুট-কৌশলের খবর বাতাসে ভেসে আসলেও শেষ মূহুর্তে তা আবার প্রকাশ্য কদর্যতায় রূপ নিয়েছে। যা আমাদের মতো সাধারণ সংবাদকর্মী ও ভোটারদের কিঞ্চিত হলেও পীড়া দেয়। তাছাড়া এটাতো কোনো রাষ্ট্রক্ষমতায় আরোহণের মতো রাজনৈতিক দলসমূহের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন কিংবা সামাজিক প্রতিপত্তি অর্জনের স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন নয় (যা বাংলাদেশে হয়ে থাকে)। নির্বাচনকে সামনে রেখে খুব বেশী ভাবার কিংবা সংস্কারের মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব না হলেও নির্বাচনের পর নির্বাচিত কমিটি ভবিষ্যতে ক্লাবকে একটি গ্রহণযোগ্য কাঠামোতে দাঁড় করাবেন এটাই এসময়ের প্রত্যাশা। আমাদের বিশ্বাস যারাই নির্বাচিত হবেন তারা সেই ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রেখেই তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে ক্লাবের অগ্রগতি সাধনে ব্রতি হবেন।
মাত্র ১৫২ জন ভোটার সদস্যের এ ক্লাবের প্রায় সবাই একে-অন্যের পরিচিত। কে কি করছেন, কীভাবে করছেন তা অনেকটা সকলের নখদর্পনে। তারপরও কারো কারো প্রচারণা দেখে সত্যি বিমবিষা হয়। কথায় আছে ‘বৃক্ষ তার ফলে পরিচয়’। কিন্তু অবাক লাগে কোনো কোনো প্রার্থী শিশু ভোলানোর মতো নিজের ‘কাউয়ালুলি’ ফল গলায় ঝুলিয়ে ফেরি করে বেড়ান, ভোট ভিক্ষা (!) করেন। শুধু তাই নয়, একধরনের বিকৃত মানসিকতার ব্যক্তিবর্গ প্রার্থীদের খাদ্যরুচি থেকে শুরু করে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়-আশয় তুলে আনছেন। যে যা নয় তাকে তা দিয়ে লেভেল এঁটে দেয়ার কুমতলবও করছেন। অবস্থাদৃশ্যে মনে হচ্ছে আমরা বোকার স্বর্গে বাস করছি। না হলে একটি সচেতন নাগরিকদের ক্লাবে এমন নির্লজ্জ প্রচার-প্রপাগান্ডার কী প্রয়োজন রয়েছে? বিপরীতে অনেক প্রকৃত সাংবাদিক ও লেখক আছেন যারা এমন নির্লজ্জ হতে পারেন না, নিজের ঢোল নিজে পেটান না। কেউ কেউ এমন ব্যতিক্রম আছেন যাদের সদস্য হওয়ারও আগ্রহ নেই।
পরিশেষে বলতে চাই, পরিশুদ্ধ সাংবাদিকতার চর্চা, পেশাগত উৎকর্ষ সাধনসহ কমিউনিটিকে এগিয়ে নিতে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের বিশাল করণীয় রয়েছে। এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাবৃন্দসহ বর্তমান কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাধারণ সংবাদকর্মী সবাই ওয়াকিবহাল। ঐক্যবদ্ধ এবং সুশীল সংস্কৃতি চর্চার স্বার্থে ভবিষ্যতে প্যানেল এবং প্রচার-প্রপাগান্ডা বিহীন বিকল্প নির্বাচন পদ্ধতির কথা চিন্তা করতে হবে। জানি এ মূহুর্তে একটি নিজস্ব ভবনের কথা সর্বাগ্রে ভাবা হচ্ছে, তা অর্জনের আর্থিক স্বচ্ছলতাও রয়েছে ক্লাবের। কিন্তু এটাকে প্রধান ও শেষ অর্জন হিসেবে ভাবলে চলবে না। অতীতে কী হলো বা হলো না সেদিকে না গিয়ে আগামীতে কী করা প্রয়োজন তা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ভাবতে হবে। আমরা মনে করি, রক্ত আর আত্মদানের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাভাষার চর্চা এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রচার প্রসারই প্রেসক্লাবের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষার প্রসারে প্রথম টার্গেট হিসেবে বৃটেনের সেকেন্ডারী স্কুলসমূহে বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষার অন্তর্ভূক্তিকরনের আন্দোলনকে সফল করার দায়িত্বসহ কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের পদক্ষেপ বাংলা মিডিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবকেই নিতে হবে। তা না হলে দু’বছর অন্তর অন্তর নির্বাচন, পদবিমোহী প্রার্থীদের প্রচার-প্রপাগান্ডা কেবলই ‘নিষ্ফলা জমির কৃষক’দেরই জন্ম দেবে।


৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×