আজকাল নয় , আজীবন ধরেই পত্র- পত্রিকা , টিভি নিউজ আর টক শো কম্পিত হয়ে দেখে আসছি নারী নির্যাতনের কথকতা ।
যৌতুক ,পরকীয়া কিংবা শ্বশুরবাড়ির রোষানলে পিষ্ট হয়ে নির্যাতিত কিংবা নিহত নারীর সংখ্যাটা অগনিত বলাই বাহুল্য ।
নারীর প্রতি সহসাই ঘটে চলা এই অন্যায়গুলোর বিচার হোক বা নাই হোক - তাদের আর্তনাদের এই আর্ত চিৎকার গুলো বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে মুখরিত করে তুলছেই চারপাশ ।
এ সকল অন্যায়ের তীব্র নিন্দা এ হৃদয়ে ধারণ করেই আমার লেখাটি শুরু করছি ।
নারীরা যে অন্যায় গুলোর স্বীকার হয়ে এসেছে বা আসছে পুরুষদেরও অনেকেই কিন্তু ধর্ষণ ব্যাতিত অনেক নিরব নির্যাতন মুখ বুজে সয়ে চলেছেন যুগ যুগ ধরে তার ঘরের রমণী কিংবা তার পরিবার দ্বারা । কেবল মাত্র লোক - লজ্জা আর আত্মসম্মানের ভয়েই তাকে এড়িয়ে চলতে হচ্ছে এসব হৃদয়ে রক্তক্ষরণে।
আমার পরিচিত এক ভাইয়ের জীবন কাহিনী দিয়েই নাহয় শুরু করি । নাম রনি ।
ছোটবেলায় বাবা হারানো রনি কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত । অত্যন্ত সৎ এবং সরল মনের এ মানুষটি এক সময় রিলেশনে জড়িয়ে পরে সাবিহার সাথে । নিজের প্রেমকে সার্থক করে বিয়েতে রুপ দিতে তাকে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা হয়ত বাস্তবে না দেখলে বোঝা যাবেনা । তার পরেও পরিবারের অমতেই কেবল বিশ্বাসকে পুঁজি করে রনি বিয়ে করে সাবিহাকে সাবিহার পরিবারের সহায়তায় । তাদের চাপিয়ে দেয়া দশ লাখ টাকার কাবিনের বোঝা তার বিশ্বাস আর ভালবাসার কাছে মূল্যহীন রয়ে যায় ।
কিন্তু বিয়ের এক বছর গড়াতেই রনির চোখের সামনে উম্মচিত হতে থাকে সাবিহার আর তার পরিবারের আসল চরিত্র । শুধু নিজের সাথেই নয়, রনির মায়ের আর ওর পরিবারের প্রতি সাবিহার অন্যায় আচরন একটা সময় সহ্যের বাইরে চলে যায় । প্রতিবাদ করতে গিয়েই রনি বুঝতে পারে তার অসহায়ত্ব । সাবিহা আর তার পরিবার থেকে যৌতুকের হুমকি , নারী নির্যাতনের ভয় আর সর্বোপরি আইনের মারপ্যাঁচ তার ক্যারিয়ার কিংবা সামাজিক সম্মানহানির বিপর্যয়ের আশংকা হয়ে দাঁড়ায় । তাই তাকে নিরবে আজও সহ্য করে যেতে হচ্ছে তাদের দেয়া সব আঘাত । আমার জীবনে দেখা সবচাইতে ভাল এ মানুষটি বিধবা মায়ের দিকে তাকিয়ে আজও নিরবে দিন পার করে যাচ্ছে । তথাকথিত সামাজিক মাধ্যমগুলো তাই তাকে এখনও হয়ত আপনার আমার চোখে নির্যাতনকারীর হাতকড়া পরাতে পারেনি ।
এতো একজন রনির সংক্ষিপ্ত করুন জীবন কাহিনী তুললাম । এরকম হাজার-লাখো রনি আজও মুখ বুজে সয়ে চলেছে নিরব নির্যাতন । ছিনতাইকারীর ছুড়ি আর পিস্তলের মতই তাদের দিকে তাক করা আছে যৌতুক আর নারী নির্যাতনের মত আগ্নেয়াস্ত্রের চেয়ে বহুগুনে শক্তিশালী মারনাস্ত্র । আপনার -আমার লেখনীর কিংবা শ্লোগানের ঘৃণ্য অপরাধী হবার ভয়ই তাদের প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেরিয়ে সহনশীল করে তুলছে । তাই রনির নয়, নাহয় রনির বিধবা মায়ের কষ্টের আকুতিতেই সকল মেয়েদের বলছি - আপনার স্বামীকে কিংবা তার পরিবারকে বুঝতে হবেনা, নিজেকেই বুঝুন, নিজের মাতৃত্বকে অনুধাবন করুন । আপনার সন্তানকেও যাতে কোন না কোন একটা সময়ে নিজেকে নিয়ে, আপনাকে নিয়ে- এরকম অসহায় না হয়ে যেতে হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫