অসম্ভব, অদ্ভূত, অতিপ্রাকৃত, কাকতালীয় ঘটনা কৌতুহলী করে সবাইকে, অনেক অদ্ভূত বিস্ময় ঘটে পৃথিবীতে এবং একই সাথে ঘটে অনেক অসাবধানী ঘটনাও অনেকে আবার আবিষ্কারের নেশায় এমন কাজ করে যার পরিনাম হয় একমাত্র মৃত্যু, এমনসব অদ্ভুত মৃত্যুর কিছু ঘটনা-
ফ্র্যন্সিস বেকনঃ- ঠাণ্ডায় জমে মৃত্যু
ষোড়শ শতাব্দীর আরেকজন গুরূত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব যিনি একই সাথে ছিলেন ফিলসোফার, রাইটার এবং সায়েন্সটিস্ট।
১৬২৫ সালের এক বিকেলে তিনি মাংস প্রিজার্ভ করার জন্য একটা পরীক্ষা চালাতে মুরগী বেছে নেন। সেই বিকেলে তুষারপাতের ঝড়ে তিনি দেখতে চাইছিলেন যে মাংস ফ্রজেন হয় কিনা, এই নিয়তে মুরগী নিয়ে বরফের মধ্যে থাকার দরূন নিজেই ফ্রজেন হয়ে যান।
জেরোমি আরভিং রোডেইলঃ-
অর্গানিক মুড মুভমেন্টের একজন প্রধান উদ্যোক্তা, "Organic farming and gardening"-ম্যাগাজিনের জনক, একই সাথে রোডেইল প্রেসের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
১৯৭১ সালের এক টিভি শো (Dick cavett show) তে তার ইন্টারভিউ চলাকালীন অর্গানিক ফুডসের প্রয়োজনীয়তার উপর বলতে গিয়ে, তিনি ঘোষনাই দিয়ে দিয়েছিলেন যে সহজেই ১০০ বছর বাচবেন, যদিও তার বয়স তখন ছিলো ৭২।
দূভার্গ্যক্রমে ঐ শো রেকর্ডিং এর সময়ই হার্ট এট্যক করে তিনি মারা যান, অতপর সেই শো আর প্রচার করা হয় নি।
স্টিভ ইরউইনঃ- কাঁটা থেকে সাবধান
জিওগ্রাফিক চ্যানেলগুলো যারা দেখেন তারা ক্রোকোডাইল হান্টারকে অবশ্যই চিনবেন। ক্রোকোডাইল হান্টার স্টিভ ইরউইন ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের গ্রেট ব্যারিয়ার রীফে “ওসান’স ডেডলিয়েস্ট” নামের একটি ডকুমেন্টরী তৈরি করছিলেন। এ সময় সমুদ্রের নীচে এক নিরীহ স্টিনগ্রে বার্ব এর লেজের কাঁটার আঘাতে মারা যান। কাঁটা তার হৃদযন্ত্র ফুঁটো করে দিয়েছিল। ভয়ঙ্কর কুমিরদের সাথে নিজের শিশু সন্তানকে নিয়ে খেলা করে শেষ পর্যন্ত নিরীহ এক জলচর প্রাণীর আঘাতে মারা যাবেন স্টিভ তা কেউ ভাবতেই পারেননি।
এলিয়েজার ম্যাকাবিয়াসঃ- পড়লে হাতি-চাপা...
সেলেয়ুসিড ও সিরিয়ার শাসকদের বিরুদ্ধে জিউশদের ম্যাকাবিয়ান বিদ্রোহের সৈনিক ছিলেন এলিয়েজার ম্যাকাবিয়াস। যুদ্ধের সময় ম্যাকাবিয়াস যুদ্ধে নামেন এক যোদ্ধা হাতির সাথে। তিনি ভেবেছিলেন ঐ হাতির পিঠে সেলেয়ুসিড রাজা এন্টিওকাস ফাইভ বসে ছিলেন। রাজার চারদিক বিশেষ বর্ম দিয়ে ঘেরা ছিল। তাই তিনি হাতিকেই আক্রমণ করেন। তিনি ধারালো বর্শা হাতির পেটে গেঁথে দেন। এর ফলে হাতি মারা যায় ঠিকই কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ এটি পড়ে গিয়ে ম্যাকাবিয়াসের উপর। ফলে হাতির নীচে চাপা পড়ে মারা যান তিনি।
এম্পিডোক্লেসঃ- অমর হবার আকাঙ্খা
সক্রেটিসের আগের দার্শনিক এম্পিডোক্লেস সিসিলির মাউন্ট এটনার জীবন্ত আগ্নেয়গিরিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। এর কারন ছিল তারা অমর হবার আকাঙ্খা। তিনি ভেবেছিলেন আগ্নেয়গিরিতে ঝাঁপ দেবার পর তার শরীর আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে লোকে ভাববে সে ঈশ্বর, মানুষের মনে অমর হয়ে থাকবেন তিনি। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় এক। অপ্রত্যাশিতভাবে আগ্নেয়গিরি তার পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল ফেরত দিল। বিফল হলো তার ঈশ্বর হবার আকাঙ্খা। তবে অমর তিনি ঠিকই হয়েছেন, যেমন এখনো তার সম্পর্কে পড়ছি আমরা।
জে. জি. প্যারি-থমাসঃ- রেকর্ড গড়ে মৃত্যু
১৯২৭ রেসিং ড্রাইভার প্যারি থমাস রেকর্ড গড়তে যেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই ম্যালকম মার্শাল তার গড়া আগের ল্যান্ড স্পীড বিশ্ব রেকর্ডটি পেন্ডাইন স্যান্ডস সৈকতে ভেঙ্গে দেন। তিনি তার রেকর্ড পুনরূদ্ধার করার সংকল্প করেন। তিনি যে গাড়ীটি ব্যবহার করছিলেন তার ড্রাইভ হুইলের সাথে ইঞ্জিনের সংযোগের চেনটিতে কোন কভার দেয়া ছিল না। তাছাড়া উঁচু ইঞ্জিন কভারের কারনে তাকে মাথা ডান দিকে কাত করে গাড়ী চালাতে হচ্ছিল। শেষ রানের সময় ডানদিকের ড্রাইভ চেনটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে ১৭১ মাইল বেগে ছিড়ে যায়। সেই সাথে কেড়ে নেয় তার জীবন।
থিক কুয়াং ডুকঃ- আত্নহত্যায় প্রতিবাদের ভাষা
১৯৬৩ সালে ভিয়েতনাম বৌদ্ধ ভিক্ষু থিক কুয়াং ডুক শহরের এক ব্যস্ত রাস্তায় মাঝখানে নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। প্রেসিডেন্ট জিও দিন দিয়েম প্রশাসনের বৌদ্ধ ধর্ম দমনের প্রতিবাদ হিসেবে তিনি আত্নাহুতি দেন।
কেনজি উরাদাঃ- রোবটের হাতে মৃত্যু
৩২ বছর বয়সী কেনজি এক জাপানিজ প্ল্যান্টে ভাঙ্গা রোবট মেরামত করছিলেন। রোবট মেরামতের পর তিনি রোবট বন্ধ করতে ভুলে যান। রোবটটি জেগে উঠে তার হাইড্রোলিক হাত দিয়ে কেনজিকে গ্রিন্ডিং মেশিনে ফেলে দেয়। মারা যান কেনজি। রোবটের হাতে মৃত্যু কিন্তু এটিই প্রথম নয়; এর আগে রবার্ট উইলিয়াম রোবটের আঘাতে মারা গিয়েছিলেন।
লেস হার্ভিঃ- সঙ্গীতই কেড়ে নিয়েছে তার জীবন
সঙ্গীত কি কখনো কারো মৃত্যুর কারন হতে পারে? যারা বলবেন ‘না’ তাদেরকে বলছি ১৯৭২ সালে ব্যান্ড দল “স্টোন অব ক্রোস” এর স্কটিশ গিটারিস্ট লেস হার্ভি সোয়ানসি এর টপ র্যাঙ্ক বিঙ্গো ক্লাবের মঞ্চে ইলেক্ট্রিক গিটার বাজাচ্ছিলেন। সেই সময় আর্থিং না করা একটা মাইক্রোফোন ভেজা হাতে ধরার কারনে তিনি বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান।
ফেলিক্স ফ্যরঃ- সেক্স হতে পারে ভয়ংকর
১৮৯৯ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স ফ্যর তার অফিসে স্ট্রোকে মারা যান। এটা হচ্ছে অফিসিয়াল স্টোরী, কিন্তু নিন্দুকেরা বলেন যে তার ৩০ বছর বয়স্কা স্ত্রী মার্গারেট স্টিনহেল এর সাথে ওরাল সেক্স করার সময় তিনি মারা যান। যা সঙ্গতকারণেই অফিসিয়ালী চেপে যাওয়া হয়।
তাই সাধু সাবধান।
জর্জ রিচমানঃ- বজ্রপাতে মৃত্যু
রিচম্যান ছিলেন একজন জার্মান ডাক্তার ও বিজ্ঞানী। তবে থাকতেন রাশিয়ায়। যে বছর বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন উড্ডয়ন যন্ত্র তৈরি করেন তার পরের বছর ১৭৫৩ সালে তিনি অনেকটা ঘুড়ির মতো একইরকম আরেকটি যন্ত্র তৈরি করেন। একদিন একাডেমী অব সায়েন্সের এক সভায় তিনি অংশগ্রহণ করছিলেন। সেসময় তিনি বজ্রপাতের শব্দ শুনতে পান। দৌড়ে যান বাসায়, বজ্রপাতকে কাছ থেকে দেখার আশায় তার উড্ডয়ন যন্ত্র নিয়ে আকাশে ওড়েন। তার গবেষনা বা পর্যবেক্ষন যখন চলছিল, তখন বিদ্যুৎ চমকায় এবং তার মাথায় বজ্রপাত আঘাত করে। তিনি মারা যান। কি ভয়ানক দুঃসাহস ছিল তার ভেবে অবাক হতে হয়।
ফ্রাঞ্জ রিচেল্টঃ- আবিস্কারের দুর্বার নেশা
রিচেল্ট একধরনের ওড়ার জন্য ওভারকোট তৈরি করেছিলেন। যা আধুনিক প্যারাসুটের মতো কাজ করবে। তার এই আবিষ্কার পরীক্ষা করার জন্য তিনি সেইসময়কার সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা আইফেল টাওয়ারের ফার্স্ট ডেক (৬০ মিটার) থেকে লাফ দেন। তিনি ভেবেছিলেন তার ওভারকোটটি খুলে যাবে এবং তিনি নিরাপদে মাটিতে নেমে আসবেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ প্যারাসুটটা কাজ না করায় তিনি মাটিতে পড়ে মারা যান।
হোরেইস ওয়েলসঃ- ব্লেডের আঘাতে মৃত্যু
১৮৪০ এই ডেন্টিস্ট প্রথম যেকিনা এনেস্থেসিয়া ব্যবহার শুরু করেছিলেন। এনেস্থেসিয়ার উপর রিসার্চ করতে গিয়ে ডেন্টিস্ট ওয়েলস ক্লোরোফরম গ্যাসের প্রেমে পড়ে যান। ১৮৪৮ সালে তাকে এরেস্ট করা হয় সালফিউরিক এসিড দিয়ে দুই মহিলাকে স্প্রে করার জন্য। এবং তিনি তার একটা পত্রে স্বীকার করেন যে ক্লোরোফরম দায়ী তার এই কাজের জন্য। অতঃপর নিজেকে ক্লোরোফরম দিয়ে এনেস্থেটাইজড করে নিজেকে ব্লেড দিয়ে আঘাত করে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসুত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১০