আসসালামু আলাইকুম,
রোজাদারের জন্য ইফতার এক অন্যরকম আনন্দের মুহূর্ত। সারাদিনের অনাহারি আর কর্মব্যস্ত শরীর এ সময় ফুরফুরে হয়ে ওঠে। প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে দেহ-মন। সামনে নানা রকম খাবারের আইটেম। মুড়ি, বুট, পেঁয়াজু, বেগুনি আর নানা স্বাদের ফলের শরবত যেন বেহেশতি আবহ তৈরি করে। গৃহিণীরা বাসায় তৈরি করে ইফতারের হরেকরকম পদ। গৃহকর্তা বাইরে থেকে আসার সময় এটা-সেটা আনতেও ভুল করেন না। সবকিছু সামনে নিয়ে চলতে থাকে মুয়াজ্জিনের আজানের প্রতীক্ষা। কখন মিনারে ধ্বনিত হবে আল্লাহু আকবর। ফাঁকে ফাঁকে ঘড়ি দেখা আর মুখে মুখে দোয়া-দুরুদ পড়া।
হাদিসে পাকে ইফতারের এই আনন্দ আর প্রতীক্ষার কথাই গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে। নবীজী (সা.) বলেছেন, ‘ইফতারের সময় কোনো দোয়া বাতিল করা হয় না। ইফতারের সময় দোয়া খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়।’ -বায়হাকি
এ হাদিসটি এ কথাই প্রমাণ করে, ইফতারের সময় বাজে কাজকর্মে লিপ্ত না হয়ে ইফতার সাজিয়ে বসে থাকা এবং দোয়া-দুরুদ পড়তে থাকা রোজাদারের জন্য অবশ্য কর্তব্য। তিরমিজি শরিফের একটি হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের প্রত্যেক রাতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বহু জাহান্নামিকে মুক্তি দেন।’
অন্যকে ইফতার করানো ব্যাপারেও হাদিসে পাকে এসেছে সওয়াবের কথা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে সে তার পূর্ণ সওয়াব পাবে। যদিও ইফতারটি হয় একটি খেজুর কিংবা একগ্লাস পানির দ্বারা।’
হাদিসের এই বাণী সব মুসলমানের কাছেই অত্যধিক গুরুত্ববহ। তাই সবাই চেষ্টা করে সাধ্যমত অন্যকে ইফতার করানোর। আত্মীয়কে দাওয়াত করে ‘একবার হলেও যেন আমার বাসায় ইফতার করা হয়।’ এছাড়াও কাজের খাতিরে কর্মজীবীকে অনেক সময় বাইরে ইফতার করতে হয়। এ সময় রাস্তা কিংবা দোকানের আশপাশে প্রতিটি ইফতার আসনেই দেখা যায় ভ্রাতৃত্বের এক বিশাল বন্ধন। কেউ দৌড়ে এসে খালি হাতেই শরিক হচ্ছেন এসবে। কেউবা সামান্য মুড়ি বা পেঁয়াজু নিয়ে। আশ্চর্য হলেও সত্য! এসময় কেউ কাউকে নিজের সঙ্গে বসতে নিষেধ করেন না। সাদরে টেনে নেন কাছে। বসিয়ে দেন ভালো আসনে।
ইফতারের দোয়া
হাদিসে ইফতারের সময় পাঠ করার বেশ কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দোয়া হলো-
ক. হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْنَا وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْنَا فَتَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সুমনা ওয়া আলা রিজকিকা আফতারনা। ফাতাকাব্বাল মিন্না। ইন্নাকা আনতাস্ সামিউল আলিম। -দারা কুতনি : ২৩০৩
অর্থ : হে আল্লাহ! তোমাকে সন্তুষ্ট করার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার দেয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করেছি। অতএব, এ রোজা ও ইফতার তুমি কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি সব কিছু শোন ও জান।
খ. ইবনে উমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
উচ্চারণ : যাহাবায যমা-উ ওয়াবতাল্লাতিল উরূকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ। -আবু দাউদ : ২৩৫৯
অর্থ : পিপাসা মিটেছে, শিরাগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহ চাহে তো সওয়াবও লেখা হয়েছে।
ইফতারের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত দোয়া হলো-
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلى رِزْقِكَ أفْطَرْتُ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।
অর্থ : হে আল্লাহ! একমাত্র তোমার জন্যই রোজা রেখেছে এবং তোমার দেওয়া রিজিক দিয়েই ইফতার করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৫