#জাকির_ওরফে_জ্যাকি ২য় খন্ড
১ম খন্ডের লিংকঃ
ক্লিকান।
জাকির স্যরি জ্যাকি ছোট বেলা থেকেই দুরন্ত। একটু মজা করে কিন্তু ছেলে ভাল।
ওর সাথে পরিচয় আমার ছোট বেলা থেকে।
ছোট বেলায় রস চুরি, পেয়ারা চুরি, মুরগী চুরি, ডাব চুরি একসাথেই করতাম।
জ্যাকি ওস্তাদ আর আমি তার চ্যালা।
চ্যালা হলে কিছু সুবিধে আছে। গাছে চরতে হয় না। ওস্তাদ আছে।
একবার আমরা রাতে চুরি করতে গেলাম।
পাশেই সুমিদের বাসা। ওদের গাছে পেয়ারা হয়েছে অনেক।
আমি রাত জেগে পরাশুনা করতাম। জ্যাকিও করত। একদিন আমার জানালায় শব্দ শুনে খুলে দেখি জ্যাকি।
বলল পেয়ারা চুরি করবে। আমাকে বের হতে বলল।
বের হলাম।
জ্যাকি আগে আমি তার পিছনে।
জ্যাকি আমাকে নিচে রেখে একাই গাছে উঠে গেল।
আমি ভয়ে ভয়ে নিচে রইলাম।
জ্যাকি বোধহয় ছোট কোন ডালে পা রেখে ছিল। শব্দ করে ডাল ভেংগে গেল।
আমি দৌড় দিয়ে নিরাপদে চলে এলাম।
সুমির বাবা বের হলেন।
এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। জ্যাকি ঘাপ্টি মেরে বসে আছে গাছে।
কিছু না পেয়ে সুমির বাবা টয়লেটে গেলেন। এই ফাকে জ্যাকি নেমে এল।
আসার সময় পায়ে একটা পাত্র মত লাগলো ওর। সজোরে লাথি দিল।
রাতের নিরবতায় বেশ শব্দ হল। আমি ওকে টেনে নিয়ে দূরে এসে বললাম শব্দ করলি কেন?
বলল "শালা ঠিক মত চুরিও করতে দিল না।"
আমি হাস্লাম। জ্যাকি পকেট থেকে পেয়ারা দিল। খেতে খেতে চলে আসলাম।
আরেকবারের ঘটনা, আমরা অনেক ছোট, নামাজ পরতে যেতাম মসজিদে।
নামায বলতে ঈমামের সাথে মিলানো।
মাগরিবের নামাযের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেল।
আমি কাতারের সর্ব বামে, আমার ডানে জ্যাকি। বামে আরো জায়গা আছে।
বাহিরে আলো কমে গিয়েছে। হাল্কা আলো। হটাৎ জ্যাকি আমার পেছনে হাত দিয়ে গুতা মারলো। আমিও রিটার্ন দিলাম। সে একটা আমি একটা।
এর মধ্যেই জ্যাকির বাবা আসলো।
আমাদের গুতোগুতি দেখে আমাকে ঠেলে আরো বায়ে নিয়ে জ্যাকি আর আমার মাঝে দারালো। জ্যাকি বিষয়টা খেয়াল করেনি।
আমি আস্তে করে আংকেলের পেছন দিয়ে জ্যাকির পেছনে গুতা মারলাম।
জ্যাকি ফিরতি গুতা মারলো। আসলে আমি ভেবে আংকেল কেই গুতা মারলো।
আমি চুপ করে আছি। কোন গুতা না পেয়ে জ্যাকি আবার আংকেল কে গুতা দিল। এবার সে কিছুটা বুঝতে পারল তার পাশে আমি নেই। আংকেল লুংগি পরা আমি প্যান্ট পরা ছিলাম। জ্যাকি হাত দিয়া পাছাটা ধরে বুঝলো এটা কোন মতেই আমি না। সে আর গুতো দিল না।
নামাজের পরে আংকেল জ্যাকির কান ধরে বলল মসজিদে কি পাছা মাপতে আসোস?
নামাযে আমাদের আর এখন হাতাহাতি হয়না। জ্যাকি নামাযে যথেষ্ট ধ্যান দিয়ে নামায পরে।
আল্লাহ আমাদের ছোট বেলার ভুল গুলো ক্ষমা করবেন জানি। কারন তিনি ক্ষমাশীল।
তবে এর প্রতিশোধ হিসেবে জ্যাকি আমাকে ৬ তলায় সিড়ি দিয়ে উঠিয়ে ছিল।
সেটা ঢাকায় আসার পরে।
আমাকে রাত ১০ঃ৩০ এর দিকে ফোন করে বলল দোস্ত বাসায় আজ কেউ নেই।
আমি বললাম, আমার বাসায় আয় একসাথে থাকি।
ও বলল না আজ আমার যাওয়া সম্ভব না।
আমি আসব কিনা বলতেই সে বলিল ওকে।
আমি তখনি বের হয়ে চলে গেলাম।
১১ টায় গিয়ে দেখি ওর বাসায় তালা মারা।
ফোন দিলাম। তোর বাসায় তো কেউ নেই।
ও বলল আমি তো এটাই বলেছিলাম। আমার বাসায় কেউ নেই। তুই চাইলে নিচের থেকে চাবি এনে থেকে যেতে পারিস।
আমার তো মেজাজ খারাপ হয়েছিল। পরেরদিন বাসায় এসে অনেক বাহানা করে বলে দোস্ত ছোট বেলায় যেই বিপদে ফেলেছিল তার তুলনায় কিছু না।
আচ্ছা যা শোধবোধ। আর রাগ করে থাকিস না।
কিন্তু জ্যাকি এখন একটা মেয়ে পটানোর তালে আছে।
ঐ যে নতুন এসেছে আমাদের ভার্সিটি তে। এক্সাম দিয়েই কথা বলেছিল সেই মেয়েটা।
আমাকে বললো, দোস্ত কিভাবে সম্ভব হবে?
- কি?
- নিশি কে পাওয়া।
- কিছুক্ষন অপেক্ষা কর, রাত হতে বাকি নেই।
- আরে বা* আমি ওই মাইয়া নিশির কথা বলছি।
- কোনটা আজ যে মেয়েটার সাথে কথা বললি?
- হুম।
- নাম জানলি কিভাবে! ও তো বলেনি!
- বলেছিল। তুই বল কিভাবে লাইনে আনবো।
- বেশি বেশি কথা বল। আমাকেও পরিচয় করিয়ে দিস।
-মানে কি? তুই প্রেম করবি!
- আরে না। তোর জন্য সাইজ করব। টেনশন নিস না। জাকির নিশির হবে।
জাকির খুশি হয়ে গেল মনে হল।
বলল, আমার একটা প্লান আছে। তুই শুধু আমাকে হেল্প করবি।
- কি প্লান।
- আমাকে হেল্প করবি বল।
- কি প্লান?
- জানবি। পুরোটা আগে বানাই প্লান।
-আচ্ছা। জানাইস। তুই কি বাসায় যাবি না আমার কাছে থাকবি?
- না আজ যাই। কাল ক্যাম্পাসে যাব। তুইও যাবি।
-ক্যান? এক্সাম শেষ হল এখন তো ক্লাস নেই।
- তো কি হইসে নিশি তো আছে।
- আমি ঘুমাবো অনেক বেলা করে পারলে জাগাই দিস। ১০ টার আগে না।
আচ্ছা বলে চলে গেল জ্যাকি।
আমিও রাতে ঘুমাতে গেলাম।
সকালে ৭ টার একটু বেশি বাজে, আমাকে ফোন দিল জ্যাকি।
আমি বিরক্ত হয়ে ফোন ধরলাম।
- কি এত সকাল সকাল নিশির ভূতে ধরছে!
- নিশি না দোস্ত রাত্রি।
- তুই তো নাম নিশি বলেছিল।
- না রাত্রি কাল রাতে ফেইসবুকে নক করেছিল।
- ওই যে ফেইক আইডি টা! দেখা করার কথা বললেই সে এড়িয়ে যেত। ফোন নাম্বার দিতে চাইত না ওইটা!
- হ দোস্ত, ওর নাকি বাসায় সমস্যা, কথা বলতে পারে না বাসায়। আর ফ্যামিলি অনেক কনজারভেটিভ যার কারনে দেখা করতেও সমস্যা।
- সমস্যা না চুল আমার। সারাদিন বিভিন্ন যায়গায় গিয়া মুখে স্টিকার লাগানো ছবি দেয়। বাইরেই থাকে দেখা করতে কি সমস্যা। আর ফ্যামিলি এত কনজারভেটিভ হলে ড্রেস আপ এত ওয়েস্টার্ন হয় কিভাবে। এগুলা ফাপর দোস্ত। তোরে আগেই কইছি দূরে থাক। এগুলা দেখা ও করবে না, কথাও বলবে না, খালি মোবাইলের কার্ড নাম্বার চাইবে। তুই তো দিয়েছিলিও।
- কিন্তু দোস্ত ও তো আজ দেখা করবে বলেছে।
- কোথায়?
- ধানমন্ডি তে কি একটা "ক্যাফে আকাইম্যা" নাকি আছে ওইখানে।
- তো আমি কি করমু। যা তুই দেখা কইরা আয়।
- দোস্ত ওর ইংগিত ভাল ছিল না। ১২ টায় হোয়াইট শার্ট পরে যেতে বলেছে। আমি অন্য কোথাও দেখা করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু ও এখানেই দেখা করতে চাইল। তাছারা লাঞ্চ এখানে নাকি ভাল। আকাইম্যা স্পেশাল সেট মেনু আছে। সেটা নাকি তার প্রিয়। তার চেয়ে বড় কথা সাথে ওর ফ্রেন্ড নাকি থাকবে।
- সিল খাবি, যাইস না।
- আমি তো যামু না। তুই যা দোস্ত।
ও তো আমারে দেখে নাই। আমার ফেইক আইডি দিয়া চ্যাট করি। যদিও আমিও দেখি নাই। মাইয়া ফেইসের ছবি দেয় না। স্টিকার দিয়া রাখে।
- ক্যান ভাই অভাগারে ডাকিস। আমি এই গুলো থেকে একটু দূরে থাকি।
- দোস্ত তুই যাবি, সাদা শার্ট পরেই। কিন্তু ওদের সাথে কথা বলবি না। দেখি কি করে।
- তাইলে সাদা ক্যান কালা পরলে প্রব্লেম কি?
- আচ্ছা, কালো পরিস, কিছু দিন আগে একটা ফেসবুকে পোস্ট দেখেছিলাম। এই টাইপের দেখা করার নামে খালি বিল দেয়ানোর ধান্দা। তাই সতর্কতা। ভাল হলে আমি যাব। আর ওই রকম হলে বাদ।
১১ টার আগেই আমি আর জ্যাকি "ক্যাফে আকাইম্যা" খুজে বের করলাম।
আমি ভিতরে গেলাম। আর জ্যাকি বাইরে থাকল। আমি ব্লাক এন্ড হোয়াইট পরেছি। জ্যাকি ব্লু পাঞ্জাবি পড়া। সাদা শার্ট আছে। দরকারে সে ব্যবহার করবে।
জ্যাকি বাইরে থাক্লো। আমি গেলাম। ওদের সাদা ড্রেসে থাকার কথা।
ভেতরে ৩ টা সাদা ড্রেস পরা মেয়ে বসা দেখলাম।
একজন তার বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে বসা।
আরেকজন একা কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
আর ২ জন বসে আড্ডা দিচ্ছে। স্যুপ আর অন্থন খাচ্ছে।
কনফিউশন এ পরে গেলাম। অপেক্ষারত মেয়েটিকেই মনে হল। মেয়েটির পাশের টেবিলে বসে পরলাম।
মেয়েটি মোবাইল চাপাচাপি করছে।
জ্যাকি কে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম মেয়ে কি একা এসেছে?
জ্যাকি জানালো মেয়েটা ফোন ধরছে না। তবে ওর বান্ধবি থাকবে বলেছিল।
আমি ধারনা করলাম ঐ ২ টা। টেবিল থেকে উঠে এক্টা ড্রিংক্স অর্ডার করে ওদের পাশের টেবিলে বস্লাম।
বোঝার ট্রাই করলাম আসলে ওদের উদ্দেশ্য কি।
ওরা ওদের মত কথা বলছে।
স্যুপ প্রায় শেষ।
একজন আরেকজনকে বলছে আর কিছু খাবি?
না, ও আসলে একবারে দুপুরের খাবার খাব নে।
ভাইয়া কে ফোন দিয়ে দেখ। কোথায়।
মেয়েটা ফোন বের করল। ২ বার ডায়াল করে বলল ধরছে না। আমার মেজাজ খারাপ হল। জাকির্যা ফোন ধরে না ক্যান!
১১ঃ১৫ পেরিয়ে যেতেই সাদা ড্রেস পরা হাতে সাদা ফুল নিয়ে অসাধারন একজনকে প্রবেশ করতে দেখলাম। মেয়ে নয়, ছেলে। সাদা ব্লেজারে ভালই লাগছে। একটা টেবিলে বসে পরল। পাশের মেয়ে ২ টাকে দেখছে।
১০ মিনিটের মধ্যে আরো ২ টা ছেলে সাদা শার্ট পরে আস্লো। তাদের একজনের হাতে ফুল, আরেকজনের হাতে গিফট। ফুল হাতেরটাকে আমি চিনি।
যখন ১১ঃ৪৫ এর সময় আরোও ২ জন সাদা শার্ট পরে এসে বস্লো। এবার আমার সন্দেহ হল। সব গুলোকেই আবার রাত্রি ডাকেনি তো।
ফুল নেয়া ছেলেটা পাশেই বসেছে।
ভাব্লাম খোজ নেই।
-ভাইয়া কত বাজে?
-১১ঃ৫০।
- আপনি কি প্রেম কানন ইউনিভারসিটি তে পরেন না! ১ম সেমিস্টারে!
-আরেহ সাইফ ভাইয়া কেমন আছেন।
-ভাল। আতিক, তুমি কেমন আছ।
-ভাল ভাইয়া।
-প্লান আছে মনে হচ্ছে? কেউ আসবে নাকি? বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে সুন্দর লাগছে।
- ধন্যবাদ। না মানে একজন ফ্রেন্ড আসবে। আপনি?
-আমার বন্ধু আসবে। ফ্রেন্ড না গার্ল ফ্রেন্ড ব্রো?
- না না ফ্রেন্ড। আর কিছু না।
-সাথেই পড়ে বুঝি?
- না ভাইয়া। ফেইসবুক ফ্রেন্ড।
- নাম কি। (ভাবলাম রাত্রি কিনা)
- বন্যা।
-ওহ। গুড। দেখেছো নাকি!
- আমি ওকে দেখিনি। ও দেখেছে আমাকে।
-ক্যান কি সমস্যা?
- ওর ফ্যামিলিতে নাকি প্রব্লেম আছে তাই ছবি দেয়না।
আমার সন্দেহ বেরেই যাচ্ছে। নাম ম্যাচ করছে না ক্যান!
ফেসবুকে কি বন্যা নাম দেয়া নাকি?বন্যা আক্তার রাত্রি হতে পারে।
জ্যাকি থেকে আগেই জেনেছিলাম এই মেয়ের ফেবু নাম স্বপ্নের বালিকা। আমি দেখেছিলাম একবার।
নাম ভিন্ন কিন্তু সব মেয়ে ক্যান এই ক্যাফে আকাইম্মাতেই আসবে!
একটা ছেলেকে দেখলাম স্যরি বলতে বলতে ঐ মেয়ে দুটোর টেবিলে গিয়ে বসলো।
আতিক বলল ভাইয়া আপনি কি কারও সাথে দেখা করতে এসেছেন নাকি।
- ওই যে বললাম আমার ফ্রেন্ড আসবে। ক্লাস মেট। তুমি চিনবে, জ্যাকি।
- ওহ। চিনি তো ভাইয়া কে।
- কিছু মনে না করলে বলবে কিভাবে পরিচয় হল।
- একদিন একটা মেয়ের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট এসেছিল। আমি ফেইক ভাব্লাম। পরে নক দিল মেসেজে। কথা বলতে বলতে নাম পরিচয় জানা হল।
- আইডি তে নাম ছিল না?
- আসল নাম ছিল না। স্বপ্নের বালিকা ছিল।
ঝিম খাইয়া গেলাম। জাকির্যার জন্য এই ধরাটা খাইলাম। ফার্স্ট ডেট নাটক এইবার আমার জিবনে!
মাইয়া নিশ্চয়ই অনেক ছেলেরে একি সাথে সেইম ড্রেসে সেইম প্লেসে আসতে বলেছে।
এই জন্যই ক্যাফে তে সাদা ড্রেস পরা ছেলে এত।
নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।
(চলবে)