প্রথম পর্বের লিংক।
২য় পর্বের লিংক।
৩য় পর্বের লিংক
চতুর্থ পর্বের লিংক।
৫ম ও শেষ পর্বঃ
ঘুম থেকে একটু সকালে উঠে পড়ুন। বের হওয়ার আগে ম্যানেজার কে বলে যান আজ হোটেল ছেরে দিবেন। এখান কার নিয়ম ১২ টায় চেক ইন বা আউট হতে হবে।
নাস্তা করে নিন।
এবার ইন্ডীয়াণ মিউজিয়ামের কাছে আসুন। নেট দেখে দেখে বা ম্যাপ দেখে দেখে একে একে দেখুন, ময়দান, ইডেন গার্ডেন, ফোরট উইলিয়াম, জেমস প্রিন্সেপ, হুগলী ব্রীজ, (জেমস প্রিন্সেপের উপরেই হুগলী ব্রীজ) তাছারা আসার পথে গঙ্গার পারে দাড়িয়ে এই ব্রীজের পুরো ভিউ তুলতে পারবেন। হাওড়া ব্রীজ থেকে এই ব্রীজটা দেখা যায়।
এখান থেকে অনেকটা দূরে ভিক্টোরিয়াল মেমরিয়াল। চাইলে ট্যাক্সি নিতে পারেন। আমরা হেটেই গিয়েছিলাম মোবাইলের ম্যাপ দেখে। আস পাশের সৌন্দর্য দেখে দেখে যেতে খারাপ লাগেনি। যদি হেটে যান, তাহলে ভিক্টরিয়াল এর কাছাকাছি রেসকোর্স পাবেন। ওটা দেখুন। বিশাল বড় এরিয়া, পুরো ঘুরতে গেলে দিন শেষ।
আমরা এদিন বৃষ্টিতে পরেছিলাম। ভিজে ভিজেই গিয়েছিলাম ভিক্টোরিয়া দেখতে। ঘুরতে গিয়ে বৃষ্টির বাধা মানলে আর ভিক্টোরিয়া দেখা হবে না।
ভিক্টোরিয়ার টিকেট ইন্ডিয়ানদের জন্য ২০ রুপী। বিদেশী দের জন্য ২০০ রুপী। নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে ২০০ দিয়েই কাটতে হবে।
অথবা কাউন্টারে গিয়ে বিশ্বাসের সাথে বলুন,
“দাদা দুটো টিকেট দিন”
বেশী কথা বলবেন না। আমাদের ভাষা শুনলেই ওরা বোঝে এটা কলকাতার না, বাংলাদেশী মাল।
টিকেট পেয়ে গেলে গেটের কর্মীকে কে দেখিয়ে ঢুকে পড়ুন। ঘুরুন, ছবি তুলুন। সব শেষে বাইরে এসে ট্যাক্সি নিয়ে আপনার হোটেলে আসুন। ট্যাক্সি নিতে বলা হয়েছে কারন এত হেটে তেমন শক্তি পাবেন না।
আজকেই যেহেতু চলে যাবেন তাই ১২ টার আগে আসাই ভাল। ১২ টার মধ্যে বের হয়ে যাবেন ব্যাগ সহ। ম্যানেজারকে বলে যান, চাবি দিয়ে দিন ও পাওনা থাকলে সব ক্লিয়ার করে দিন।
দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। কিছু কেনাকাটা করলে করতে চাইলে নিউ মার্কেটে যান। ভুলেও রাস্তার পাশের ফুটপাত থেকে বডি স্প্রে বা প্রসাধনী কিনবেন না। এখানে মাত্র ১০০ টাকায় ২ টা বডি স্প্রে দিবে। কিন্তু ভিতরে পানি মিক্স থাকে।
প্রসাধনীও নকল। কোন ষ্টোরের থেকে নিবেন। চাইলে হোটেল থেকে বের হয়ে কোন স্টোর থেকে নিতে পারেন। সিগারেট কিনতে চাইলে ইন্ডিয়ান কিছু কিনতে পারেন। এগুল নাকি বেশি মজা না। সিল্ক কাট ব্লু টা একটু ভাল মানের। ১০ টার প্যাকেট। প্যাকেটের গায়ে দাম লেখা যা সেই মুল্য দিয়েই কিনবেন। পাতার বিড়ি কিনতে পারেন। আর অবশ্যই চকলেট। ডেইরি মিল্ক সিল্ক বাংলাদেশে কম বেশী ১২০ টাকা হলেও ওখানে ৬০ রুপী। গায়ের মূল্যেই বিক্রয় করবে। কিছু ব্যাক্তি হ্যানত্যান বলে, আপনি নিবেন না।
শাল এর দাম মোটামটি ৬০০ রুপির মত। কম বেশি আছে। তাছারা দাম চাইবে অনেক বেশি।
কেনা কাটা শেষ?
জনপ্রতি ১৫০ রুপী রেখে সব টাকা বানিয়ে ফেলুন। ১৫০ রুপী লাগবে। কারন ভাড়া পরবে ৫০ রুপির মত। কিন্তু বনগাঁ স্টেশনে মানুষ না পেলে অটো রিজার্ভ করে যেতে হবে। তাছারা ঘুস দেয়া লাগতে পারে। এখানে নাই এর মাঝে ও ঘুস দেয়া লাগে। আরেকটা জিনিস। টাকা ও রুপী সম্ভব হলে ১০০ এর নোট কয়েকটা করে রাখুন।
এবার তারাতারি নিউ মার্কেটের পাশেই দেখুন পাতাল রেল এর গেট আছে। সেখান দিয়ে নিচে এসে কাউন্টার থেকে দমদম এর টিকেট নিন। ১০ রুপী করে।
বোর্ড দেখে জানতে পারবেন কয়টায় ট্রেইন আসবে।
আসলে উঠে পড়ুন। দমদম নেমে আবার ট্রেইনের কাউন্টারে চলে আসুন। এখান থেকে বনগাঁ এর টিকেট কাটুন ১৫ রুপী করে। তার পরে প্লাটফর্মে এসে অপেক্ষা করুন। স্টেশনে ঘোষণা হতে থাকবে।
একটা জিনিস, বনগাঁ এর ট্রেইন আসবে দুপুর ৩ টার পরে। ৩.২০ এর দিকে। আপনাকে ৩ টার আগে দমদম স্টেশনে থাকতে হবে।
নিউ মার্কেট থেকে সেভাবে রওয়ানা দিন। আমরা ২ টার আগেই এখান থেকে দমদম এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছিলাম।
৩ টার দিকের ওই ট্রেইন মিস করলে আজ আর জেতে পারবেন না। সাবধান।
এই ট্রেইন ৫ টার দিকে বনগাঁ পৌছবে। সেখান থেকে অটো করে তারাতারি হরিদাসপুর পোর্টে চলে যান। জন প্রতি ২৫ করে। কিন্তু লোক না হলে যে কয়জন আছে তাদের নিয়েই যেতে বলুন। ভাড়া বেশি পরবে, পরুক। দেরী করা যাবে না। ৬.৩০ এর সময় পোর্ট বন্ধ হবে।
নামার সময় দালালরা ঘিরে ধরবে। পাসপোর্ট হাতছারা করবেন না। তাদের সাথে কোন কথা বলার দরকার নেই। ইমিগ্রেশন অফিসে ঢুকে পড়ুন।
পাসপোর্ট জমা দিলে তারা একটা সীল মেরে আবার আপনাকে ফেরত দিবে। সেটি নিয়ে সামনের কক্ষে গেলে ব্যাগ চেক করতে চাইবে। করতে দিন। এই টাইমে বেশীর ভাগ সময়েই চেক করে না। করলেও সমস্যা নেই। করা শেষে বলবে ইন্দিয়ান রুপী আছে কিনা। তারা পকেট চেক করতে চাইবে। সত্যি কথা বলবেন যে ৫০ রুপির মত আছে। বা ১০০ রুপির মত আছে। সে ফাপর দিবে রুপী নেয়া অবৈধ। কিছুক্ষন আগে একজনকে কেস দেয়া হয়েছে। তার পরে সে বলবে তাকে যা আছে তার অর্ধেক দিতে।
আমরা একটা ভুল করেছিলাম। রুপী কে টাকা করে আনিনি। যা আছে সবই রুপী। ফলে তিনি চেক করলে ধরা পরে যাব। ঝামেলা হতে পারে।
মিথ্যে বললাম। ৫০০ রুপী আছে। আমাকেও ভয় দেখাল। তার পরে বলল ফিফটী ফিফটি ভাগ করতে। রাজী হলাম না। আমি ১০০ দিতে চাইলাম। আমরা ২ জন। সে নিতে চাইল না। শেষ পর্যন্ত ১৫০ রুপী দিয়ে ব্যাগ চেক করতে না দিয়ে চলে আসলাম। ঘুস দিলাম আবার চেক কি? চলে আসলাম।
ইন্ডিয়ান বর্ডারের শেষ প্রান্তে আবার পাসপোর্ট ও ভিসা এবং সীল চেক করল। তারপরে ছেরে দিল। বাংলাদেশের অফিসে ঢোকার আগে আবার চেক। তার পর লাইন দিয়ে সামনে আগান। পাসপোর্ট জমা দিন। তারা সীল মেরে ফেরত দিলে। সামনের দিকে আগান। ব্যাগ চেক করতে চাইবে। ঘুশ না দিলে চেক করতে বলুন। ব্যাস এর পরে বের হয়ে অটো করে বাস কাউন্টার।
এবার রাতের বাসে নির্ধারিত গন্তব্য ফিরে আসুন।
টিপ্সঃ
* কলকাতার সেই মানুষ টানা রিকশায় চড়তে ভুল করবেন না।
* সন্ধ্যায় বা ক্ষিদে পেলে স্ট্রীট ফুড যা নতুন মনে হয় খাবেন। আমার খারাপ লাগেনি। অনেক কিছু খেয়েছি। রাস্তার পাশের একটা দোকানে দোসাই নিল ২০ রুপী। রোলের মত করে বানিয়ে দিয়েছিল। বেশ ভাল লেগেছে।
* রাস্তা ঘাটের দিকে তারা অনেকটা যত্নবান। আমি একটা ডেইরি মিল্ক সিল্ক কিনেছিলাম ৬০ রুপী দিয়ে। সেটা খেয়ে মোড়কটা ফেলতেই দোকানদার সেটা নিচে ফেলতে নিষেধ করল। আমি তুলে বললাম ডাস্টবিন কোথায়? সে বলল তার কাছে দিতে। দিলাম, সে হাতে নিয়ে পকেটে রেখে দিল। বলল আমি পরে ফেলে দিব।
* দীঘাতে চা খেয়েছিলাম, ওয়ান টাইম কাপে করে। খাওয়া শেষ হলে স্বভাব মত বাইরে ফেলি। দোকানদার সেটা তুলে একটা ডাস্টবিনে ফেললেন। আর বললেন এটা ফেললে সৈকত নোংরা হবে। পানি পুরি (ফুসকা) দেয় পাতার তৈরি বাটিতে। শুকনো পাতা দিয়ে এত সুন্দর বাটি কিভাবে বানাল?? পানি পুরি ৬টা ১০ রুপী। একটা একটা করে বাটিতে দিবে, আপনি খাবেন, আবার দিবে। বাটিতে একটার বেশী ধরবে না। পাতা আর কত বড়।
* কলকাতার ফল ও মিষ্টি ভাল। ফল নাকি ফরমালিন ছাড়া হয়। আর মিস্টি খেতে বেশ ভাল।
* যদি আরেকদিন বেশি থাকেন, তাহলে সল্ট লেক ও নিক্কো পার্ক ঘুরে আসবেন। সকালে নিক্কো পার্কে গিয়ে ভিজে বিকেলে সল্ট লেক যাবেন।
* বেনাপোল এসে ইন্ডিয়া প্রবেশের আগেই সন্ধ্যার পরে বাস কয়টায় ছারবে জেনে যাবেন।
* রুপী থাকলে কাউন্টারে খোজ নিন কোথায় ভাঙ্গায়। এখানে অনেক কম রেট দিবে। যা আছে চাইলে ভাঙ্গাতে পারেন।
বাজেটঃ
উপরের সব কিছু করলে আপনি বাংলাদেশী টাকায় ১০০০০ টাকার মধ্যে ঘুরে আসতে পারবেন।
আমরা সব ঘুরে নিজের জন্য কিছু কিনেছি। বাসার জন্য শপিং করেছি। যা নতুন মনে হয়েছে খেয়েছি। চকলেট আর কিছু সিগারেট কিনেছি। প্রসাধনী কিনেছি কিছু। সব মিলিয়ে আমাদের ২ জনের ২২০০০ টাকার মত লেগেছে। মাদারীপুর থেকে যাওয়া ও আসার বাস ভাড়া সহ। আমরা এসি বাসে গিয়েছিলাম, ভাড়া তাই বেশী ছিল। একদিন বাদে অন্য সব দিন ওই কমদামী হোটেলে খাইনি। কারন আমরা সব দোকানের খাবার টেস্ট করতে চেয়েছিলাম। যাওয়া ও আসার সময় কিছু অবাঞ্ছিত ঘুষ দিতে হয়েছিল। তার পরেও ১১০০০ টাকায় হয়েছিল।
এই ভিসার মেয়াদ এখনও আছে। আরেকবার যাব সময় সুযোগ হলে।
এর পরেরবার ভিসা করব চেংরাবান্ধা পোর্ট দিয়ে। তখন দার্জিলিং যাব ভাবছি। যারা যার ঘুরে এসেছেন সম্ভব হলে দার্জিলিং এর বিস্তারিত লিখবেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। নেটের তথ্য ১০০ ভাগ সঠিক না।
ভাল থাকুন সবাই।
সামু তে ছবি দিতে পারলাম না। তাই ফেবু তে আপলোড করা আমার পচা মোবাইল দিয়ে তোলা কিছু ছবির লিংক দিলাম। এটা পাবলিক করে রাখা।