প্রথম পর্বের লিংক।
২য় পর্বের লংক।
৩য় পর্বের লিংক।
৪র্থ পর্বঃ
ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
এলারম বেজে গেছে। উঠে পড়ুন। ফ্রেশ হয়ে হাওয়ার বাসে করে স্টেশনে চলে যান।
দীঘার টিকেট কাটুন, ৬০ রুপী করে জন প্রতি। সময় কতক্ষন আছে তা দেখে নাস্তা করতে পারবেন কিনা দেখুন, যদি অনেক সময় থাকে তাহলে নাস্তা করে নিন। না হলে ট্রেনে উঠে পড়ুন। ট্রেনে একটু আগে উঠতে পারলে সিট পাবেন। দিঘা অনেক দূর, এটা পূর্ব মেদিনীপুরে প্রায় ১৯০ কিমি, তাই আগে সিট দখল করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
নাস্তা করতে না পারলে সমস্যা নেই, ট্রেনে অনেক ফেরিওয়ালা ওঠে, খেতে পারবেন।
হাতে সময় থাকলেও একজন কে বসিয়ে রেখে সীট ধরে রাখবেন। আরেকজন খাবার কিনে এনে সিটে বসে আরাম করে খাবেন।
কোন কারনে যদি ট্রেইনে যেতে না পারেন বা ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। আমার অভিজ্ঞতা আছে তো আপনাদের সাথে।
যদি ঘুম থেকে উঠে দেখেন ট্রেনের সময় শেষ। তাহলে আরো ১০ মিনিট ঘুমান। শুনেছি ঘুম থেকে ওঠার পরে ১০ মিনিট ঘুম নাকি দুনিয়ার সব থেকে শান্তির ঘুম।
উঠে ফ্রেশ হয়ে আবার সেই ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের সামনে আসুন। রাস্তার অপর পাশের সিগন্যাল থেকে হাওড়ার বাসে উঠুন। ৮ রুপী জন প্রতি ভাড়া দিয়ে হাওড়া স্টেশনে গিয়ে নামুন। যেখানে নামাবে তার একটু সামনে ডান দিকে গেলেই দেখবেন বাস দাঁড়ানো অনেক। কোন বাস দীঘা যাবে জেনে তাতে উঠুন। ভাড়া পরবে জন প্রতি ১৫০ টাকার কম।
সময় থাকলে নেমে নাস্তা খেয়ে নিন। না থাকলে কিছু খাবার কিনে আনুন। সাথে একটা পানি(সাথে যদি না নিয়ে আসেন) ও থামস আপ( থামস আপ কিনতে বলছি ওই একি কারনে, কোক, পেপসি তো দেশেই খান)
৯.৩০ এর মধ্যে বাসে উঠলে সেটা পৌঁছাবে দুপুর ২ টার আগে।
আমরা উঠেছিলাম ধর্মতলা থেকে। সেই বাস হাওড়া আসে দাড়িয়ে থাকল অনেক্ষন। বাসে এক দিদি ( আসলে বৌদি, কারন বিবাহিত মেয়েদের কে দিদি না বলে বৌদি ডাকা হয়) ঠিক আমাদের ডান পাশের সীটে বসেছিল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম দীঘা যেতে কতক্ষন লাগবে?
জানি আগেই, খাজুরে আলাপ করার জন্য জিজ্ঞেস করা। সে বলল ঘন্টা ৫ এর মত।
-আপনি দীঘা যাবেন নাকি?
-না, আপ্নারা কি ঘুরতে এসেছেন?
-হ্যা, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
-আমি আমার বরের সাথে কলকাতা থাকি, আমার বাবার বাড়ি যাচ্ছি (জায়গাটার নাম ভুলে গিয়েছি, সে বলেছিল)
ভাইয়াও আমাদের কথার সাথে জয়েন করল।
কিছু কথার পরে সে প্রস্ন করল কোথা থেকে এসেছেন?
ভাইয়া বলল বাংলাদেশ থেকে।
বলেই বুঝলাম দিয়েছি রেডিও অন করে।
সুযোগ বুঝে আমি জানালার পাশে বসে ভাইয়াকে বিজয়া দিদির পাশে বসিয়ে বাইরে দেখতে থাকলাম।
ভাইয়ার সাথে সে কথা বলেই যাচ্ছে, মাঝে মাঝে আমাকেও ডাকল। তার নির্ধারিত নামার স্থানে আসলে সে এবার মোবাইল নাম্বার চাইল। আমি বললাম নাম্বার তো জানিনা, কয়েকদিন হল সিম কিনলাম।
কিন্তু সে ইন্ডিয়ার না, বাংলাদেশের নাম্বার চাইল।
আমি ভাইয়ার দিকে করুন ভাবে চাইলে, ভাইয়া তার একটা কার্ড দিয়ে আসলো। সাথে বাংলাদেশে গেলে জানাতে বলল।
অলমোস্ট পুরো বাস সে আমাদের সাথে রেডিও জকির মত কথা বলেছিল। বুঝলাম ইন্ডিয়ান মেয়ে, ঝাল তো একটু হবেই।
বাস আগাচ্ছে গন্তব্যের দিকে। এর মাঝে এক লোক বলল দাদা বর্ডার যাবে নাকি? কান খারা করে শুনলাম বলছে বর্ডারই শেষ, যাবে।
মনে মনে ভাবলাম পাকিস্তানি বর্ডার কিনা, তাহলে গিয়ে ঘুরে আসি। হেল্পার কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম এটাকি বর্ডার যাবে, বলল যাবে। আমি বললাম দীঘা থেকে কত দূরে, সে বলল তার পরের স্টেশন। খুসি হয়ে জানতে চাইলাম এটা কিসের বর্ডার? সে বলল এটা পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের বর্ডার। এখানে পশ্চিম বঙ্গ শেষ, আরেকটা রাজ্য শুরু।
আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। থাক যাবনা।
আপনি ওল্ড দীঘা তে নামবেন। নতুন দীঘা নামলে আপনাকে ওল্ড দীঘা দেখতে আবার এখানে আসতে হবে এবং হাওড়া যাওয়ার জন্য পরে আবার নিউ দীঘা ফিরতে হবে।
এই ভুলটা আমরা করেছিলাম। নতুন দীঘা থেকে হেটে ওল্ড দীঘা এসে বাসের খোঁজ নিয়ে শুনি সব নতুন দীঘাতে। কি আর করা ভ্যানে চরে ২ জন স্টেশন এসেছিলাম।
ওল্ড দীঘা নেমে রাস্তা ধরে সৈকতে যান। ভাল লাগবে। নির্মল বাতাস। সাগরের পার পুরো কংক্রিটের তৈরি। ঢেউ এসে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ১২-১৫ ফিট উপরে পানি তুলে দেয়। দেখতে দারুন।
সাগরের পারের বাম পাশে সুন্দর করে বেঞ্চ বানানো। চাইলে বসতে পারেন।
এখানে গোসল করবেন না। ঢেউ আসে যদি আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ওই পাথরের উপর ফেলে, তাহলে আর বাংলাদেশে ফিরতে হবে না। যদিও কয়েকটা সাইনবোর্ড দেখেছিলাম, লেখা “এখানে স্নান করা বিপদজনক”।
ওখানে ঘোরা শেষ হলে এবার সমুদ্রের পার ধরে নিউ দীঘার দিকে হাঁটুন। ২০ মিনিটের মাঝেই দেখবেন মানুষ আর মানুষ। এখানে গোসল করবেন। সাবধান ভেজার সময় ব্যাগ একটু চোখে চোখে রাখবেন। এতো মানুষ। কার মনে কি আছে কে জানে।
গোসল করে উঠে দুপুরুরে খাবার শেরে নিবেন। এখানে খাবারের দাম একটু বেশি মনে হল। জন প্রতি ১০০ রুপির কিছু বেশি খরচ লাগতে পারে।
আগেই প্লান করে নিন বাসে ফিরবেন নাকি ট্রেইনে। বাসা ফিরলে ৩ টার মধ্যে গোসল, খাওয়া ও ঘোরা শেষ করে বাস কাউন্টারে আসতে হবে। তা না হলে ফাপর। এর পরে বাস আছে আর রাতে। যা পৌঁছাবে রাত ২ টার দিকে।
আর ট্রেইনে ফিরলে ৬.১৫ তে ট্রেইন ছারে। আপনাকে ৫.১৫ এর মধ্যে টিকেট কেটে সিট নিতে হবে। এত দুরের যাত্রা সিট না পেলে কষ্ট হবে।
আমার মতে ট্রেইনে ফেরা ভাল হবে, হাতে সময় পাবেন।
স্টেশন্টা অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখলাম।
আমাদের যেতে একটু লেট হয়েছিল। কারন ৪ টায় বাস পাব না সেটা বুঝিনি। পরে বাস স্টেশনে গিয়ে ও কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করে জানলাম বিকেলে বাস নেই। আমি নিশ্চিত নই পরের দিন রবি বার বলেই কিনা বাস ছিল না। নাকি এটাই সময়সুচি। উল্লেখ্য রবি বারে ইন্ডিয়া সাপ্তাহিক বন্ধ। তাই শনি বার বিকেলে ফেরার যাত্রী থাকে বেশি। কলকাতা যাওয়ার যাত্রী কম।
সে যাই হোক, প্রথমে না বুঝে সিট নিয়ে যাওয়া যায় এমন একটা কাউন্টারে গিয়ে ফর্ম ফিলাম করে যেতে চাইলাম। কিন্তু এটা আগে থেকে করে রাখতে হয়। আজ গিয়ে আজ সিট পাওয়া যায় না।
কি আর করা, লোকাল কামরার টিকেট কাটলাম। ৬০ রুপী জন প্রতি।
ট্রেইনে উঠে দেখি সিট প্রায় ভরা। ভাইয়া একটা সীট পেল। আমি পেলাম না। আমি খুজতে খুজতে একটা ৩ সিট এর সিট খালি পেলাম। সিট টা ধরে ভাইয়াকে ফোন দিলাম। বললাম ওই সিট পাশের জনকে রাখতে বলে আমি যেদিকে এসেছি ওদিকে আস্তে বললাম। ভাইয়া আসলো। এক সীটে বসলাম। এমন সময় ২ টা ছেলে আসলো। আমরা বললাম এখানে একজন বসতে পারবেন। আরেকজন দাঁড়ানো। ভাইয়ার আগের সিট টা ভাইয়া ওই ছেলে কে গিয়ে বসিয়ে দিয়ে এল।
নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে দিল ট্রেন।
পানির একটা বোতল ছিল। অনেক কিছু ফেরী করে বিক্রি হচ্ছে। কি কি যেন খেয়েছিলাম।
পাশের ছেলেটাও এতক্ষন যা খেয়েছি সব কিনে খাচ্ছিল। তবে কফি খেয়েছিলাম যখন তখন আর সে খায়নি। গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসে আমরা ২ জন খাচ্ছি, সে খাচ্ছে না এটা কেমন অসুন্দর দেখায় বলে আরেকটা কফি তাকে দিতে বললাম। নিতে চাইল না। জোরজুরি করায় নিল। সে ও অনেক কথা বলল।
মাঝে ১০ টার কিছু আগে ট্রেইন পুরো থেমে গেল। কি হল? জানলাম সিগ্ন্যালে পরেছে (!!)
ট্রেইন সিগন্যালে?
পরে জেনেছি, ইন্ডিয়া এত ট্রেন যে একটা নিয়মের মাঝে না চললে এক্সিডেণ্ট করবে। কি আর করা বসে থাকলাম। ২৫ মিনিট পরে ট্রেইন ছারল।
১১ টার পরে হাওড়া এসে থামল।
হাওড়া প্লাটফর্ম অনেক বড়। সম্ভবত ২৭ টা প্লাটফরম আছে। বিজয়া দিদি নাকি এখনও ভাল করে স্টেশনের সবটা চেনে না।
প্রতিটি প্লাটফর্ম থেকে কিছুক্ষন পর পর ট্রেইন ছারে।
আমরা লোকজনের পিছনে পিছনে হেটে বের হলাম। বের হয়ে ঠিক চিনতে পারলাম। বাসে উঠে পার্ক স্ট্রিট নেমে হোটেলে। তার আগে রাতের খাবার খেয়ে নিয়েছিলাম।
রাতে আর জাগতে পারলাম না। সব কিছু চার্জে দিয়ে ঘুম।
(চলবে)
৫ম ও শেষ পর্বের লিংক।