প্রথম পর্ব।
২য় পর্ব
এখান থেকে ইন্ডিয়ার ইমিগ্রেশনে ঢোকার সময় ২ জন ইন্ডিয়ান লোক আবার আপনার ভিসা ও সীল চেক করবে। চেক হয়ে গেলে ঢুকে পড়ুন ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিসে।
ব্যাগ বড় হলে স্ক্যানারে দিতে হবে। ছোট হলে সামনা সামনি চেক করবে।
আমাকে এক অফিসার জিজ্ঞেস করেছিলেন “ ব্যাগ মে ক্যা হে”?
আমি বলেছিলাম, “সামান”।
ক্যা ক্যা সামান?
আমি বলেছিলাম, বুঝতে পারছি না, I cant Understand.
সে বলল খুলকে দেখাও। ব্যাগ খুলে দেখালাম। বেশি ঝামেলা করল না।
শুধু জিজ্ঞেস করল বাংলা টাকা আছে কিনা। আমি বললাম মানি ব্যাগে কিছু আছে। দেখতে চাইল, খুলে দেখালাম কিছু ভাংতি টাকা ছিল। ছেরে দিল আমাকে।
আমার সফর সাথী আমার ভাইয়াও পার পেয়ে গেল।
আমরা ২ জনেই ওই অফিস থেকে বের হয়ে সামনের অফিসের দিকে আগালাম। এখানেও দালাল, বাশের বেড়ার পাশে বসে একটা ফর্ম পূরণ করে। এবার ১০ রুপি দিয়ে এটা পূরণ করলাম। এটা লাগবে, তাই না করে উপায় নেই। হোটেলের নাম জানতে চাইলে আপনার জানা থাকলে বলুন। না থাকলেও সমস্যা নেই, তারাই একটা লিখে দিবে।
তারা(দালাল) আপনাকে জিজ্ঞেস করবে বাংলা টাকা আছে কিনা, ডিরেক্ট বলবেন না, শুধু রুপি আছে।
নতুবা পিছনে লাগবে। তারা আপনাকে কম রেটে বাংলা টাকার বিনিময়ে রুপী দিবে, আবার শেষে ১০০ রুপী বকশিস চাইবে।
এটা হয়ে গেলে চলে যান সামনের অফিসে। এখানেও বাংলাদেশের মত ভিসা সীল চেক করে একটা সীল দিবে। ব্যাস।
বের হয়ে আসুন। ইন্ডিয়া আপনাকে স্বাগতম জানাচ্ছে।
সব কিছু করতে ৮.৩০ এর মত বাজবে।
এখান থেকে টেম্পু তে করে বনগাঁ স্টেশনে যান। জন প্রতি ভাড়া ২৫ রুপী।
সেখানে আশা করি ৯টার আগেই যেতে পারবেন।
নাস্তা করে নিন। এখানে ৩ টা লুচি সাথে ডাল মাত্র ১০ রুপী। আমরা সেটা খেয়েছিলাম।
নাস্তা শেষে ট্রেনের টিকেট নিন। দমদম স্টেশনের। ১৫ রুপী করে।
মোটামুটি ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট লাগবে।
একটা জিনিস জেনে নিন। এখানকার ট্রেনের সিস্টেম একটু আলাদা। আপনি সিট পেয়ে বসে আছেন। ঘন্টা খানেক পরে উঠে যে দাঁড়ানো তাকে বসতে দিতে হবে। এটা নিয়ম। ইন্ডিয়ানরা বৃদ্ধ আর মহিলা দের জন্য অনেক ছার দেয়। সব খানেই সিনিয়র সিটিজেন দের সংরক্ষিত আসন আছে।
যাই হোক, ট্রেন ছারলে সময় দেখুন। অনেক স্টেশন পেরিয়ে শেষে প্রায় ১.৩০ ঘন্টা পরে দমদম পৌঁছাবে। কাউকে জিজ্ঞেস করুন চিনতে সমস্যা হলে। এখানেই বেশির ভাগ মানুষ নেমে যাবে।
নেমে আন্ডার পাস দিয়ে স্টেশন পার হোন। অপর পারেই পাতাল রেল এর কাউন্টার। মেট্রো রেলের কাউন্টার কোথায় কাউকে জিজ্ঞেস করুন না চিনলে। কাউন্টার গিয়ে পার্ক স্ট্রিট এর টোকেন নিন। ১০ রুপী জন প্রতি।
এবার ছোট্ট কয়েনের মত টোকেন হাতে রেখে আপনার সামনের জন যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে যান। কয়েনটা স্টেশনে প্রবেশের সময় নির্ধারিত স্থানে ছোয়ালে গেট খুলবে। ঢুকে পড়ুন। অপেক্ষা করুন। কারও থেকে জেনে নিন কোন লাইনে আসবে আপনাদের ট্রেন। বোর্ড দেখে বুঝতে পারবেন কখন ট্রেন আসবে। ট্রেন নির্ধারিত সময়েই স্টেশনে থামবে। উঠে পড়ুন। এবার আর কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবেনা। মেট্রো রেল মাটির নিচ ও উপর দিয়ে সবেগে যাবে। কোথায় যাচ্ছে, স্টেশনের নাম কি, পরের স্টেশন কি সব ভিতরের স্পীকারে ঘোষণা হতে থাকবে। এটা এসি ট্রেন।
পার্ক স্ট্রিট আসার আগে বাংলায়, হিন্দিতে ও ইংরেজী তে ঘোষণা করবে।কোন পাশে নামতে হবে তাও বলে দিবে। প্রস্তুত হয়ে যান। ডানে বললে ডানে, আর বায়ে বললে বায়ের দরজার সামনে দাঁড়ান। স্টেশন আসলে খোলার আগে ঘোষণা দিবে “স্টেশন পার্ক স্ট্রিট” । নেমে পড়ুন।
একটা জিনিস মাথায় রাখুন। পাতাল রেলের ছবি তোলা নিষেধ। তবে মোবাইল বের করে এমনভাব করেন যে আপনি কাজ করছেন, ফ্ল্যাশ ও সাউন্ড বন্ধ করে কিছু ছবি তুলতে পারেন।
এবার বের হয়ে আসুন। অপর পারে গিয়ে একটু এগিয়ে দেখুন “ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম”। তার একটু সামনের বামের রাস্তা ধরুন সোজা হেটে শেষ প্রান্তে যে রাস্তার সাথে মিলেছে সেটা মির্জা গালীব রোড।
এখানে একটু খুজে ৭০০ টাকার মধ্যে ডাবল বেডের একটা হোটেল নিয়ে নিন। আমরা “ডিয়ার হোটেল” এ ছিলাম।
টেলিভিশন আর ঠাণ্ডা পানির ব্যাবস্থা ছিল। নামাজ পরতে চাইলে রাস্তার অপর পাশেই মসজিদ।
হোটেলে উঠে অবশ্যই তাদের ২ টা কার্ড মোবাইল নাম্বারসহ চেয়ে নিন। মানি ব্যাগে রাখুন। ২ জনের কাছে ২ টা।
পৌঁছে রেস্ট নিন দুপুর পর্যন্ত। তার আগে একটা এয়ারটেল এর সিম কিনুন। আমাদের হোটেলের ম্যানেজারই ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন সিমের। ৩০০ রুপী তে সিম, পাওয়ার দেয়া (এটা দিলে বাংলাদেশে ১.৯৯ রুপী তে কথা বলা যায়।), সিমে ২০০ রুপী ছিল। বাইরে থেকে কিনলে সিমের জন্য পাসপোর্ট এর কপি দিবেন, সিমের দাম ১০০ রুপী, পাওয়ার দিতে ৯৬ রুপী। আর আপনি যত রিচারজ করেন সেই পরিমান টাকা।
এবার দেশে জানান আপনি ঠিক মত এসেছেন।
নেট চালানোর জন্য ভোদাফোনের সিম নিন। ২০০ রুপিতে সিম, ৫০০ এমবি নেট, সাথে ৫০ রুপী টক টাইম পাবেন। ২ টা সিম ২ জনের সাথে রাখুন। কখন হারিয়ে গেলে যাতে খুজে পেতে পারেন।
আর দুপুরে ও রাতে খেতে যাবেন আরেক্তু সামনে গিয়ে ডানে গেলে একটা মুসলিমদের হোটেল আছে। গরুর মাংস মাত্র ৩০ রুপী প্লেট। ভাত ১০ রুপী। আলুভর্তা ১০। আমরা ১ম দিন দুপুরে আর রাতে এখানে ২ প্লেট গরু, ৩ প্লেট ভাত আর ডাল খেয়েছিলাম। ২ জনের বিল ১০০ রুপী প্রতি বেলায়। এই হোটেলের পাশেই বাংলাদেশ থেকে আসা বাস এসে থামে।
চাইলে দাওয়াতে খেতে পারেন, দাম বেশি নিবে। মান ভাল।
যেহেতু কম খরচে ঘুরবেন, তাই এটার কথা আর বললাম না।
(চলবে)
৩য় পর্বের লিংক।
চতুর্থ পর্বের লিংক।
৫ম ও শেষ পর্বের লিংক।