চুড়িহাট্টার কোলাজ
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
****************
কোথায় হারাল মা
ডিএনএ’র নমুনা যদি মিলে যায়
তবে কি ফিরবে মা? জড়িয়ে ধরবে কি আর?
শরীরটা ভালো যাচ্ছিলো না তার
মায়েরা তো আসলে প্রথম এবং শেষ পর্যন্ত
লড়ে যাওয়া সেই নির্ভীক সৈনিক,
না ভেবেই যারা বেরিয়ে পড়ে পথে
পেরিয়ে যায় একা আগুন-নদী-জনপদ
ডিএনএ না মিলুক, মা আসবে তবে ফিরে
গলিটা হয়েছিল আগুনের নদী
চেনা যায় না কোনটা চাচা কোনটা শ্বশুর
কোনটা ভাই, কোনটা ভাসুর
কয়লায় লেখা থাকে না বনস্পতির নাম
ভস্মে থাকে না কৌলীন্যের পরিচয়
সত্তর নাকি সাতাত্তর, নাকি আরও বেশি
গণিতের যাযাবর সংখ্যা বাড়ে-কমে
পোড়া মাংসের ঘ্রাণ মেনেছে হার
কৌটার সুবাস ফেটেছে আগুনের আমোদে
গলিটা সত্যিই হয়েছিলো অনলের ধারা
পুড়ে যায় স্বপ্ন
স্বপ্নের পাখা কি উড়তে পারে?
যেতে কি পারে অনেক দূরের দেশে?
সারা গায়ে নয়া ফাগুনের গন্ধ মেখে
জীবনকে দেখা অন্য আলোর লন্ঠনে
সে কি কেবলই খোয়াব কোন?
নাকি সাধারণের স্বপ্ন দেখা হারাম
দিগন্তের রেখা দেখতে চাওয়া মানা
রাসুর স্বপ্ন ওড়ে তবু চল্লিশ ফুট উঁচুতে
ছাইয়ের ডানায় ভেসে ভেসে একা একা
মর্গে প্রিয় মুখ
মর্গে আছে শুয়ে কিছু প্রিয় মুখ
কিছু গান, কিছু কল্পনা, কিছু কবিতা
মর্গে আছে শুয়ে কিছু ব্যাথা, কিছু গল্প
কিছু চিঠি, কিছু স্বপ্ন, কিছু কথা
মর্গে আছে শুয়ে কিছু বাসর, কিছু অভিসার
কিছু হাসি, কিছু কান্না, কিছু হতাশা
মর্গে আছে শুয়ে আনগতের বানী
কিছু আফসোস, ভ্রুকুটি, কিছু আশা
মর্গে আছে শুয়ে আগুন নদীর ক্রোধ
কিছু আস্ফালন, আর্তনাদ, কিছু কয়লা
মর্গে আছে শুয়ে কিছু নকল সুবাসের চাদর
কিছু স্পিরিট, দাহ্য বায়ু, কিছু কেমিক্যাল
মর্গে আছে শুয়ে পোড়া দেশের পোড়া রতন
কিছু অবহেলা, অনুযোগ, কিছু যন্ত্রণা
কিছু পোড়া দেহ, ছাই, কিম্বা অ্যাবস্ট্রাক্ট ভাস্করের মতন
না দেওয়া গোলাপ
তোমাকে যে কথাটি বলা হয় নি।
যেদিন আমাদের বিয়ে হল, ঠিক তার আগের রাতে উর্বর মাটি জোগাড় করে
একটা সুন্দর টবে আমি লাগিয়েছি গোলাপের চাড়া
তারপর নিজের হাতে ছাদের সেই টবের চারপাশে দিয়েছি লাল রঙ
প্রতিরাতে তোমাকে চুমু দেবার আগে ছাদে গিয়ে ঢেলেছি জল
একটু একটু করে কাণ্ড হয়ে উঠেছে সজল, টসটসে
পাতারের কানে কানে ফিসফিস করে বলেছি,
‘বল, গোলাপ মোরে বল, তুই ফুটবি কবে বল’
আমার অভিসন্ধির কথা তুমি জানতে না
নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছি,
ছোঁব না তোমাকে যতদিন না এ ফুল ফোটে
প্রথম গোলাপ যেদিন ছোঁবে তোমার ঠোঁট,
আমি প্রার্থনা করবো তোমার কুমারিত্ব
কী আশ্চর্য, ঠিক চব্বিশ দিনের মাথায় দেখা দিয়েছে কুঁড়ি
একটি নয়, দুটি, ঠিক ফেব্রিয়ারির কুড়ি তারিখ
ভেবেছি আজ সারাদিনে কুঁড়ি দুটি হয়ে উঠবে পুরনাঙ্গ ফুল
তারই একটি ছোঁবে তোমার চোখ,
অপরটি নিয়ে যাবো একুশের প্রভাত ফেরিতে
আমার দেহভস্ম যখন উড়ে উড়ে গিয়ে বসবে
একেকটি গোলাপের পাপড়িতে, তুমি জানতেও পারবে না তা
আমার না বলা কথার মতো
তোমাকে না দেয়া গোলাপগুলো একদিন ঝরে যাবে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:১৩