somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ সালের মার্চেও আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা চায়নি : ভারতীয় গবেষক রাঘবন

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভারতীয় গবেষক শ্রীনাথ রাঘবন বলেছেন, এমনকি ১৯৭১ সালের মার্চেও আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা চায়নি। ‘১৯৭১ : এ গ্লোবাল হিস্ট্রি অব দ্য ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থের লেখক লন্ডনের সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো ও কিংস কলেজের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শ্রীনাথ রাঘবন টাইমস অব ইন্ডিয়ায় এক সাক্ষাতকারে এই মন্তব্য করেছেন। এটি পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয় ৩০ ডিসেম্বর। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদক অশীষ যেচুরি। শ্রীনাথ বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়টিকে বৈশ্বিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ সৃষ্টি কেন একটি বৈশ্বিক বিষয়, স্বাধীনতা আন্দোলন সৃষ্টিতে এর প্রভাব এবং এমনকি ইসরাইল পর্যন্ত এতে কিভাবে সম্পৃক্ত হয়েছিল, তা তিনি এই সাক্ষাতকারে তুলে ধরেছেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ায় সাক্ষাতকারটির ভূমিকায় বলা হয়, সহিংসতার মধ্যে নির্বাচন এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যত মনে হচ্ছে অনিশ্চিত। এসবের অনেক কারণ নিহিত রয়েছে অতীত থেকে চলমান সঙ্ঘাতে।

এখানে তার সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : আপনার গ্রন্থটির নাম ‘১৯৭১ : এ গ্লোবাল হিস্টি অব দ্য ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ’। বৈশ্বিক কেন?
শ্রীনাথ রাঘবন : আচ্ছা, বাংলাদেশ সৃষ্টির বিষয়টি উপমহাদেশীয় বিষয় বিবেচনা করা হয়, অনেক সময় একে দ্বিতীয় দেশ-বিভাজন হিসেবে দেখা হয়। আমার কাছে এটা খুব সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি মনে হয়। বাংলাদেশের সৃষ্টি যে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ঘটল এবং সেটাই যে ফলাফল নির্ধারকের ভূমিকা পালন করল, তা এতে ফুটে ওঠে না। এটা ছিল বৈশ্বিক ঘটনা, অংশগ্রহণকারীরা মনে করেছিল তাদেরে বৈশ্বিক সমর্থন নিশ্চিত করে দিতে হবে। এই দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী, ঘটনাস্থলের সংগ্রাম বৈশ্বিক জনমতের সংগ্রামের সাথে মিশে গিয়েছিল। এসব ঘটনা উপলব্ধির এটাই মূল বিষয়।

প্রশ্ন : আপনি যুক্তি দিচ্ছেন, বাংলাদেশের সৃষ্টি অনিবার্য ছিল না। তবে যেসব গুরুত্বপূর্ণ কারণে ১৯৭১-এর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, আপনি ওই তালিকা করেছেন। আপনি কিভাবে এর সমন্বয় করেন?
শ্রীনাথ রাঘবন : বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে যে ধারণা তুলে ধরা হয় সেটা এসেছে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে অখণ্ড পাকিস্তানের অস্তিত্ব টেকসই ছিল না। এর পেছনে যুক্তি ছিল, অখণ্ড দেশটি ভারতের মাধ্যমে ভৌগোলিকভাবে দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। অর্থনৈতিক বৈষম্য, বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানি এলিটদের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং দুই অংশের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে ব্যাপক পার্থক্যের কথা বলা হয়।
তবে আমার যুক্তি হচ্ছে, স্বায়ত্তশাসন কিভাবে স্বাধীনতার দাবিতে রূপান্তরিত হলো, তা অনুধাবনের কোনো দরকার নেই। আমাদের প্রয়োজন আরো বৃহত্তর প্রেক্ষাপট।

প্রশ্ন : তবে কি আপনি বলতে চাচ্ছেন, পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া যদি এত কঠোর না হতো, তবে স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না?
শ্রীনাথ রাঘবন : আপনি হয়তো একটি শিথিল কনফেডারেশন পেতেন, আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমান এমন কিছু একটাই চেয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসেও আওয়ামী লীগ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা ব্যক্ত করেনি। তারা পূর্ব পাকিস্তানের কাছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরসহ একটি শিথিল কনফেডারেশন চেয়েছিলেন।
আশা করা ছিল যে অপেক্ষাকৃত শিথিল কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকালে বাঙালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে তারা আরো ক্ষমতা ও ন্যায্য হিস্যা আদায় করে নিতে পারবে।

প্রশ্ন : এটাকে কেন ‘১৯৬৮ সালের চেতনা’র সাথে সম্পৃক্ত করার কারণ কি?
শ্রীনাথ রাঘবন : আমার দৃষ্টিতে ১৯৬৮ সালের ছাত্র আন্দোলন পাকিস্তানের ইতিহাসের মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন আইয়ুব খান। বৈষম্য ও সম্পদ পুঞ্জিভূত করার সমস্যার মধ্যেও পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে ভালো অবস্থায় ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্র আন্দোলন পরিবর্তন ত্বরান্বিত করেছিল।
ছাত্র আন্দোলন ছিল আলোড়ন সৃষ্টিকারী বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ। আমি সিআইএ’র একটি নথি উদ্ধৃত করছি যেখানে তারা বলছে, এটা ছিল বৈশ্বিক আন্দোলন। পাকিস্তানের ওই ছাত্ররা ছিল ভিন্ন প্রজন্মের। ১৯৪০-এর দশকে শেখ মুজিবুর রহমান নিজে ছাত্রনেতা ছিলেন। ভিন্ন আকাক্সা নিয়ে তিনি পাকিস্তানের জন্য লড়াই করেছিলেন। এই ছাত্র আন্দোলন চরম রূপ গ্রহণ করার ফলে আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়েছিল তাদের নমনীয় অবস্থান থেকে সরে আসতে।

প্রশ্ন : এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ইসরাইল জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আপনি উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে আরো কিছু বলবেন কি?
শ্রীনাথ রাঘবন : ভারতে অস্ত্র সরবরাহের ইতিহাস রয়েছে ইসরাইলের। ১৯৬৫ সালে ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ১৯৬২ ও ১৯৬৫ সালে ভারতে অস্ত্র পাঠিয়েছিল ইসরাইল। ফলে ইসরাইলের সাথে ভারতের গোপন লেনদেন ছিল। ১৯৭১ সালে ইসরাইল যে ভারতে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল, সে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র জানত, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
ভারতের কাছ থেকে পূর্ণ কূটনৈতিক স্বীকৃতি ইসরাইলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, ওই সময় ইসরাইল খুবই একঘরে ছিল। তারা ভেবেছিল, ভারতে অস্ত্র সরবরাহ তাদের জন্য সহায়ক হবে।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×