প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
যুক্তরাষ্ট্রকে স্পর্শকাতর পরমাণু তথ্য দিয়েছিলেন মোশাররফ
পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. আবদুল কাদির খান আরো বলেছেন, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কিত স্পর্শকাতর বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করেছিলেন। এসংক্রন্ত প্রমাণাদি তার কাছে আছে এবং চাইলে তিনি আদালতের সামনে এসব তথ্য উপস্থাপন করতে পারবেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একটি প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে পাকিস্তানের পরমাণু বোমার জনক কাদির খান এ কথা বলেন। ড. আবদুল কাদির খান দাবি করেন, ক্ষমতায় থাকাকালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জাফরুল্লাহ খান জামালি এসংক্রান্ত আদেশে সই করতে রাজি না হওয়ায় সেটা তখন সম্ভব হয়নি। কাদির খান বলেন, ওই আদেশে সই করার জন্য প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী জামালি। কিন্তু কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যদের আস্থা অর্জনের পর তিনি ওই আদেশে সই করতে অস্বীকৃতি জানান। মোশাররফ তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্শ করার জন্য একটি সি-১৩০ বিমানও প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। পারভেজ মোশাররফকে যুক্তরাষ্ট্রের ভাঁড় হিসেবে বর্ণনা করে এই পরমাণু বিজ্ঞানী বলেন, এখন সময় এসেছে, পরমাণু কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য হস্তান্তর সম্পর্কে অবশ্যই জনগণকে অবহিত করতে হবে। এ ব্যাপারে তদন্ত ও মোশাররফের বিচার করতে হবে। তিনি বলেন, এটা এখন সবাই জানে, ইসরাইল ও অন্যান্য দেশের সাথে সাবেক এই জেনারেলের গভীর সখ্য ছিল। কাদির খান বলেন, খোদাই জানেন, ওই দেশগুলোর কাছে কী পরিমাণ গোপন তথ্য হস্তান্তর করেছিলেন মোশাররফ। তবে তিনি স্বীকার করেন, প্রেসিডেন্ট মোশাররফের মেয়াদকালে তাকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, চীন পাকিস্তানকে দু’টি পরমাণু বোমা বানানোর মতো ইউরেনিয়াম সরবরাহ করেছিল এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য সবার আগে কাদির খানই প্রকাশ করেছিলেন।
পরমাণু বোমা তৈরির জন্য পাকিস্তানকে ইউরেনিয়াম দিয়েছিল চীন!
দু’টি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য পাকিস্তানকে ৫০ কেজি ইউরেনিয়াম সরবরাহ করেছিল চীন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের মধ্যকার সমঝোতার ভিত্তিতে ১৯৮২ সালে ওই ইউরেনিয়াম সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি পাকিস্তানকে পরমাণু বোমা তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় নকশা ও সরঞ্জাম দিয়েও সহায়তা করেছে সমাজতান্ত্রিক দেশটি। গত বছরের ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানের একটি চিঠির বরাত দিয়ে প্রভাবশালী মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট এ কথা জানায়। তবে পাকিস্তান সরকার এ তথ্যকে ‘ভিত্তিহীন’ উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ওই চিঠির বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, ১৯৭৬ সালে ভুট্টো চেয়ারম্যান মাওয়ের কাছে পরমাণু বোমা তৈরি করার ব্যাপারে সাহায্য চান। সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে এই লেনদেন হয়। চিঠিতে কাদির খান লিখেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত অনুরোধে চীনের মন্ত্রী আমাদের ৫০ কেজি বোমা বানানোর উপযোগী ইউরেনিয়াম দেন।’ তিনি জানান, মূলত ভারত ও ইসরাইলের ঘনিষ্ঠতা এবং পাকিস্তানের পরমাণু স্থাপনার ওপর এই দুই দেশের হামলার আশঙ্কা থেকে পাকিস্তান চীনের কাছে এ ব্যাপারে সাহায্য চেয়েছিল। চিঠিতে কাদির খান লেখেন, ‘আমাদের কাজের গতি ও সাফল্য দেখে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শত্রু ও তাদের পরামর্শদাতারাও বিস্মিত হবে এবং পশ্চিমা বিশ্ব অসহায়ভাবে দেখবে, সাইকেলের চেইন বা সুঁচ বানাতে পারে না, এমন একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ কিভাবে স্বল্পতম সময়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক পরমাণু প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠেছে।’ পরমাণু অস্ত্রবিস্তার রোধ চুত্ত্নি ভঙ্গ করে চীন পাকিস্তানকে পরমাণু বোমা বানাতে সাহায্য করেছে ওয়াশিংটনের এমন দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করল কাদির খানের এই চিঠি। ২০০৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার আবদুল কাদির খানকে গৃহবন্দী করার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জন্য এসব নথি প্রস্তুত করেন তিনি। তার আগে স্ত্রীকে চিঠি লিখে এ ব্যাপারে জানান কাদির খান। ওই চিঠিই ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিকের হাতে পড়ে। এ দিকে পত্রিকাটিতে প্রকাশিত ওই তথ্য প্রত্যাখ্যান করে এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ওই প্রতিবেদনে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে কঠোরভাবে তা প্রত্যাখ্যান করছে পাকিস্তান। পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কে চিড় ধরাতেই এমন তথ্য রটানো হচ্ছে। দুই দেশই আন্তর্জাতিক রীতি ও আইন এবং অস্ত্রবিস্তার রোধসংক্রান্ত নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছেন জারদারি
দেশের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির হাতে ছেড়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি। রাজনৈতিক চাপ সামাল দেয়ার উদ্দেশ্যেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পদক্ষেপকে প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্টকে আরো শক্তিশালী করার পথে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রেসিডেন্ট জারদারির একজন মুখপাত্র। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ও সামরিক সমালোচকদের শান্ত করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে দেয়া এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গিলানি বলেন, ন্যাশনাল কমান্ডসংশি্নষ্ট ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক কতৃত্ব তার হাতে হস্তান্তর করেছেন প্রেসিডেন্ট। এ বিষয়ে একটি অধ্যাদেশও জারি করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ফরহাতুল্লাহ বাবর বলেন, ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির দায়িত্ব হস্তান্তর নির্বাচিত পার্লামেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পদক্ষেপ। তবে অন্য এক মুখপাত্র বলেন, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি একনায়কমূলক ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। একজন অনির্বাচিত নেতা হিসেবে নিজেকে আরো শক্তিশালী করার জন্য জারদারির এই ক্ষমতার প্রয়োজন ছিল।
শেষ কথা
ইউনাইটেড স্টেটস অব অ্যামেরিকা। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই দেশটি ব্রিটেনের শাসন থেকে মুক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এক সময় সমগ্র বিশ্বের কাছে মুক্ত বিশ্ব হিসেবেই পরিচিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে এখানে ইউরোপিয়ান উপনিবেশ স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোক এসে জড়ো হয় আটলান্টিকের অপর পাড়ে। জনপ্রবাহের সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। তাই ছয়টি টাইম জোনে বিভক্ত এ বিশাল দেশটিকে বলা হয় ইমিগ্র্যান্ট বা অভিবাসীদের দেশ। একটি স্বাধীন ফেডারেশন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতা বলে দিচ্ছে, বিশ্বশান্তি অনেকটাই নির্র্ভর করে এ দেশটির ভূমিকার ওপর। প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র পারে মানবজাতির কল্যাণে আরো ইতিবাচক কাজ করতে। সে সামর্থ্য দেশটির রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালীন সে উদ্দেশ্য থেকে দেশটি অনেক দূরে সরে এসেছে। বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করেছে একক আধিপত্য। তারই ছায়া পড়েছে ভারত ও পাকিস্তানসহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ায়। দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে সাম্প্রতিক মার্কন নীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের চেয়ে ভারতকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। একই সাথে মার্কন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তানকেও তার দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে। পরমাণু ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে চুত্ত্নি করা থেকে বোঝা যায় ওয়াশিংটন সব ক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকেই অগ্রাধিকার দেবে। এ কারণে পাকিস্তানও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের পাশাপাশি তার দেশের সাথেও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আন্তরিকতার নিদর্শনস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনুরূপ চুক্তি স্বাক্ষরের দাবি জানিয়েছে। প্রকৃত অর্থে যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তান ও ভারতের এই সুযোগ করে দেয়া দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তত্ব প্রতিষ্ঠার পথকেই সহজ করে দিচ্ছে। এর থেকে শুধু ভারত আর পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার কারোরই স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়।
ভারত , পাকিস্তান , যুক্তরাষ্ট্রর সমরশক্তি
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ বিকাল ৪:৫০