ইউনাইটেড স্টেটস অব অ্যামেরিকা। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী রাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই দেশটি ব্রিটেনের শাসন থেকে মুক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এক সময় সমগ্র বিশ্বের কাছে মুক্ত বিশ্ব হিসেবেই পরিচিত ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে এখানে ইউরোপিয়ান উপনিবেশ স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তô থেকে লোক এসে জড়ো হয় আটলান্টিকের অপর পাড়ে। জনপ্রবাহের সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। তাই ছয়টি টাইম জোনে বিভক্ত এ বিশাল দেশটিকে বলা হয় ইমিগ্র্যান্ট বা অভিবাসীদের দেশ। একটি স্বাধীন ফেডারেশন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর আন্তôর্জাতিক ড়্গেত্রে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান বিশ্ব বাস্তôবতা বলে দিচ্ছে, বিশ্বশান্তিô অনেকটাই নির্ভর করে এ দেশটির ভূমিকার ওপর। প্রতিষ্ঠাকালীন নেতাদের আদর্শ অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র পারে মানবজাতির কল্যাণে আরো ইতিবাচক কাজ করতে। সে সামর্থø দেশটির রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালীন সে উদ্দেশ্য থেকে দেশটি অনেক দূরে সরে এসেছে। বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করেছে একক আধিপত্য। এই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর সংগঠন
যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী দেশটির পাঁচটি মিলিটারি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত। সংস্থাগুলো হচ্ছে- সেনাবাহিনী, মেরিন কর্পস, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী ও কোস্টগার্ড। দেশটির প্রথম মিলিটারি গঠন করা হয় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরম্নদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন। ১৭৭৬ সালের স্বাধীনতার আগেই ১৭৭৫ সালে সেনা, মেরিন ও নৌ বাহিনীর সৈন্যদের নিয়ে প্রথম সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোস্টগার্ড গঠন করা হয় ১৭৯০ সালে। দেশটির বিশ্বের বৃহৎ বিমান বাহিনী থাকলেও ১৯৪৭ সালের আগে এই বাহিনী স্বাধীন কোনো অপারেশন পরিচালনা করতে পারত না।
দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হচ্ছেন ইউএস প্রেসিডেন্ট। কোস্টগার্ড ছাড়া অন্য সংস্থাগুলো প্রতিরড়্গা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তô। কোস্টগার্ড নিয়ন্ত্রণ করে দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ। কিন্তু যুদ্ধকালীন এই বাহিনীকেও প্রতিরড়্গা মন্ত্রণালয়ের অধীন নেয়া হয়।
বাজেট
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক বাজেটের দেশ যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৫ সালে বিশ্বের সামরিক বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ ছিল এই দেশটির। এ বছর বিশ্বের সামরিক বাজেট ১ হাজার ৪১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাজেট ৭১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উলেস্নখযোগ্য খাত হচ্ছে অপারেশনস ও মেইটেনেন্সে ১৭৯·৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৯·৫ ভাগ বেশি। মিলিটারি পারসোনেল খাতে ১২৫·২ বিলিয়ন যা গত বছরের তুলনায় ৭·৫ ভাগ বেশি। প্রকিউরমেন্ট খাতে ১০৪·২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৫·৩ ভাগ বেশি। রিসার্স, ডেভেলপমেন্ট, টেস্টিং ও ইভ্যালুয়েশন খাতে ৭৯·৬ বিলিয়ন, যা গত বছরের তুলনায় ৪·১ ভাগ বেশি। মিলিটারি কনস্ট্রাকশন খাতে ২১·২ বিলিয়ন, যা গত বছরের তুলনায় ১৯·১ ভাগ বেশি। ফ্যামিলি হাউজিং ৩·২ বিলিয়ন, যা গত বছরের তুলনায় ১০·৩ ভাগ বেশি। রিসলভিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ফান্ডস খাতে ২·২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১৮·৫ ভাগ কম। উলিস্নখিত খাতগুলোর মধ্যে মাত্র একটিতে খরচ কমানো হলেও বাকি সব খাতেই খরচ বাড়ানো হয়েছে।
স্টাফ কলেজ
মিলিটারি অফিসারদের প্রশিড়্গণ দেয়ার জন্য রয়েছে অনেকগুলো স্টাফ কলেজ। এগুলো কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ এবং ওয়ার কলেজ নামেও পরিচিত। কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজগুলো হচ্ছে এয়ার ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড স্টেটস আর্মি কমান্ড অ্যান্ড জেনারেল স্টাফ কলেজ, নেভাল ওয়ার কলেজ, মেরিন করপোরেশনস ইউনিভার্সিটি ও জয়েন্ট ফোর্সেস স্টাফ কলেজ। ওয়ার কলেজগুলো হচ্ছে- নেভাল ওয়ার কলেজ, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি, ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজ ও এয়ার ইউনিভার্সিটি। গ্র্যাজুয়েট স্কুল হচ্ছে নেভাল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুল, এয়ারফোর্স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল কলেজ অব দ্য আর্মড ফোর্সেস।
মিলিটারি একাডেমি
জুনিয়র রিজার্ভ অফিসারদের প্রশিড়্গণের জন্য রয়েছে পাবলিক মিলিটারি স্কুল। এগুলো হচ্ছে কার্ভার মিলিটারি একাডেমি, শিকাগো মিলিটারি একাডেমি, কিভল্যান্ড জুনিয়র নেভাল একাডেমি, ফোর্স্টভিল মিলিটারি একাডেমি, ফ্রাঙ্কলিন মিলিটারি একাডেমি, কিনোশা মিলিটারি একাডেমি, মেরিন মিলিটারি একাডেমি, মেরিন একাডেমি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ফিলাডেলফিয়া মিলিটারি একাডেমি ও টুল মিলিটারি ম্যাগনেট একাডেমি।
মিলিটারি জুনিয়র কলেজ
সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর কমিশন প্রাপ্তির আগ পর্যন্তô দু’বছর প্রশিড়্গণ দেয়ার জন্য রয়েছে পাঁচটি মিলিটারি জুনিয়র কলেজ। দুই বছরের এই প্রোগ্রামকে বলা হয় আর্লি কমিশনিং প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রাম সফলভাবে সম্পন্ন হলে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ওয়েন্টওর্থ মিলিটারি একাডেমি অ্যান্ড কলেজ, ভেলি ফোর্গ মিলিটারি একাডেমি অ্যান্ড কলেজ, নিউ মেিকো মিলিটারি ইনস্টিটিউট, ম্যারিয়ন মিলিটারি ইনস্টিটিউট ও জর্জিয়া মিলিটারি কলেজ।
আরো প্রতিষ্ঠান
যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিড়্গণের জন্য রয়েছে আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে পাঁচটি ফেডারেল সার্ভিস একাডেমি, সাতটি প্রাইভেট/স্টেট কলেজ লেভেল মিলিটারি একাডেমি, ছয়টি স্টেট-সাপোর্টেড মেরিটাইম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনেকগুলো প্রাইভেট কলেজ-প্রিপারেটরি মিলিটারি স্কুল। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে বেসামরিক লোকদের পড়ারও সুযোগ রয়েছে।
রণতরী
বাংলাদেশে গত বছরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর-বিধ্বস্তô এলাকায় ইউএসএস তারাওয়া ও ইউএসএস কেয়ারসার্স নামে দু’টি মার্কিন রণতরী এসেছিল ত্রাণসহায়তার জন্য। ছোটখাটো একটা দ্বীপের মতো এসব জাহাজ। এ দু’টির মধ্যে বড় ছিল তারাওয়া। এর দৈর্ঘø ৮২০ ফুট, প্রস্থ (বিম) ১০৬ ফুট। জাহাজটির খোলা (ড্রাফট) ২৭ ফুট প্রশস্তô। তারাওয়া সমুদ্রে ভেসে থাকার জন্য ৪০ হাজার টন পানি সরিয়ে ফেলে। তারাওয়াকে বলা হয় সমুদ্রের ঈগল। এই ঈগলটি ৩০টির মতো আকাশযান বহন করতে পারে। একসাথে ২০টি আকাশযান ওঠানামা করতে পারে এতে। যেসব আকাশযান এতে বহন করা হয়, সেগুলো হলো হ্যারিয়ার (এভি-৮বি) জাম্প জেট, সি নাইট (সিএইচ-৪৬), সুপার স্ট্যালিয়ন (সিএইচ-৫৩), সুপার কোবরা (এএইচ-১ ডবিস্নউ), হুয়ি (ইউএইচ-১ এন) ও সি হক (এমএইচ-৬০ এস)। এতে আছে সুসজ্জিত ট্যাঙ্ক, হালকা যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী যান, মাল ও সেনা বহনকারী গাড়ি, দরকারি জিনিসপত্র বহনকারী গাড়ি ইত্যাদি। পেটের মধ্যে উভযান হোভারক্রাফট রাখার জন্য বিশাল ফাঁকা জায়গা। জেমস বন্ডের মুভিতে হোভারক্রাফটের অনেকগুলো দৃশ্য দেখা যাবে। জাহাজটিতে রয়েছে তিন শতাধিক টেলিভিশন সেট। ইন্টারনেট সুবিধাসহ কম্পিউটার। মোট তলা রয়েছে ২০টি।
অন্য দিকে ১৩তলাবিশিষ্ট ও এক কিলোমিটার দৈর্ঘেøর অপর জাহাজটি কেয়ারসার্সের প্রথম তলা থেকে সাততলা পর্যন্তô রয়েছে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা। নিচতলা থেকে ভারী মালামাল ওঠানামা করার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। জাহাজটিতে বিমানবন্দরের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। আছে পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ বাহিনীর এ ধরনের ১৩টি জাহাজ বা রণতরী রয়েছে। এর সবগুলোতেই রয়েছে আত্মরড়্গামূলক ব্যবস্থা। এসব জাহাজকে বিমানবাহী জাহাজও বলা হয়।
নৌঘাঁটি
গত বছর ফেব্রম্নয়ারিতে মিউনিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল নিরাপত্তা সম্মেলন। সম্মেলনে জার্মানির চ্যান্সেলর ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিজা রাইসসহ বিশ্বের অন্তôত ২৫০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে রম্নশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন তার বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একপাড়্গিকতার নিন্দা করে বেশ কিছু শক্ত কথা উচ্চারণ করেন। বিশেষ করে এই পরাশক্তির আন্তôর্জাতিক আইন অমান্য করার প্রবণতা, অস্ত্র প্রতিযোগিতার ইন্ধন ও বিশ্বব্যাপী আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদের বিরম্নদ্ধে তীব্র অভিযোগ উঠে আসে তার ভাষণে। পুতিনের দৃষ্টিতে এসব মার্কিন কর্মকাণ্ডই দেশে দেশে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আহরণে প্ররোচনা জোগায় এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ উসকে দেয়। এত কিছু করার পরও মার্কিনিরা কিভাবে সমগ্র বিশ্বে মোড়লিপনা করছে তা ভাবার বিষয়।
রণতরীর কথা বলা হয়েছে। তার বিশালত্বের সামান্য বিষয় প্রবন্ধে উলেস্নখ করতে পেরেছি। এসব রণতরী সারা বিশ্ব চষে বেড়াচ্ছে। এদের দেখভালের জন্য মার্কিন নৌ বাহিনীর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নৌঘাঁটি। এ রকম একটি ঘাঁটি রয়েছে ভারত মহাসাগরের একটি প্রবাল দ্বীপে। দ্বীপটির নাম ডিইগো গার্সিয়া। দড়্গিণ ভারতের সমুদ্র সৈকত থেকে এর দূরত্ব ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার বা ১ হাজার মাইল। দ্বীপটি লম্বায় ৬০ কিলোমিটার। ১৯৬০ সালে মৌরিতানিয়ার কাছ থেকে দ্বীপটি ব্রিটেন বনায়নের কথা বলে লিজ নেয়। কিন্তু ১৯৭১ সালে দ্বীপটিতে একটি সামরিক ঘাঁটি তৈরির জন্য ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিবদ্ধ হয়। ঘাঁটিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৭০০ সামরিক, ১ হাজার ৫০০ বেসামরিক ও ব্রিটেনের মাত্র ৫০ জন সামরিক সদস্য রয়েছে। দ্বীপটিতে বসানো হয়েছে উচ্চ ড়্গমতাসম্পন্ন বেতারতরঙ্গ। যার মাধ্যমে পুরো বিশ্বের খবরাখবর খুব সহজ ও অল্প সময়ে সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে। এই ঘাঁটি থেকে আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
ইরাক যুদ্ধের কারণে গুয়ানতানামো বে অনেকের কাছে বেশ পরিচিত। গোপন কারাগারে বন্দী নির্যাতনের কারণে গুয়ানতানামো বে ব্যাপক আলোচনায়ও আসে। এখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় নৌঘাঁটি। নাম গুয়ানতানামো বে নেভাল বেইজ। কিউবার দড়্গিণ-পূর্ব সমুদ্র সৈকতের গুয়ানতানামো বে এলাকায় ঘাঁটিটি প্রায় এক শ’ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা লিজ নেয়া হয় কিউবার কাছ থেকে। অবশ্য বর্তমানে কিউবা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে লিজের মেয়াদ শেষ হয়েছে আর যুক্তরাষ্ট্র বলছে মেয়াদ এখনো চলছে। দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ২০০২ সালে ঘাঁটিটিতে গুয়ানতানামো বে ডিটেনশন ক্যাম্প নামে একটি বন্দিশিবির তৈরি করা হয়। প্রথম দিকে এই কারাগারে তালেবান জঙ্গিদের রাখা হলেও পরে ইরাকের যোদ্ধাদের রাখা হয়। কারাগারটি জেনেভা কনভেনশনের আওতায় পড়ে না বলে বুশ প্রশাসন মনে করে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরো চারটি বড় নৌঘাঁটি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে স্পেনের জেলেদের আবাসভূমি ও পর্যটন কেন্দ্র রোটা গ্রামে ইউএস নেভাল স্টেশন রোটা। জাপানের কায়ুশু দ্বীপে ইউএস ফেট অ্যাকটিভিটিস সাসেবো। গুয়ামের আপরা বন্দরে নেভাল বেইজ গুয়াম। বাহরাইন প্রজাতন্ত্রের নেভাল সাপোর্ট অ্যাকটিভিটিস বাহরাইন।
বেইজ স্টেশন
দেশের অভ্যন্তôর ছাড়াও সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বেইজ স্টেশন ছড়িয়ে রয়েছে। এ প্রবন্ধে দেশের বাইরে বিভিন্ন বাহিনীর বেইজের একটি তালিকা দেবো। এসব বেইজের কোনো কোনোটি যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আবার কোনোটি ওই দেশ কিংবা আন্তôর্জাতিক কোনো সংস্থার সাথে যৌথ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন বিমানবন্দর, দ্বীপ এমনকি সামরিক সদর দফতরেও দেশটির বেইজ রয়েছে। স্টেশনগুলোর বেশির ভাগই যুদ্ধকালীন অথবা কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে করা হয়েছে।
ইকুয়েডর, জার্মানি, গ্রিস, গ্রিনল্যান্ড, গুয়াম, ইতালি, জাপান, দড়্গিণ কোরিয়া, কিরঘিজস্তôান, নেদারল্যান্ড, পানামা, ফিলিপাইন, পর্তুগাল, স্পেন, তুর্কি ও যুক্তরাজ্যে রয়েছে দেশটির বিমান বাহিনীর বেইজ।
জার্মানি, ইতালি, জাপান, কুয়েত, কসোভো, ফিলিপাইন, দড়্গিণ কোরিয়া ও ইসরাইলে রয়েছে আর্মির বেইজ।
মেরিন সেনাদের বেইজ রয়েছে আফগানিস্তôান, কিউবা, জিবুতি, জার্মানি, ইরাক, জাপান ও কুয়েতে।
নৌ বাহিনীর বেইজ রয়েছে ব্রিটিশ-ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল, কিউবা, স্পেন, জাপান, গুয়াম, বাহরাইন, ইতালি, গ্রিস ও দড়্গিণ কোরিয়ায়। নৌ বাহিনীর বেইজ স্টেশনগুলো নৌঘাঁটি নামেও পরিচিত।
সামরিক চুক্তি
বিভিন্ন যুদ্ধ ও অস্ত্র বিক্রিসহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন দেশের রয়েছে সামরিক চুক্তি। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ন্যাটো, আনজুস ট্রিটি, ইন্টার অ্যামেরিকান ট্রিটি অব রিসিপ্রোক্যাল অ্যাসিসট্যান্স, নোয়াড-এর সাথে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চুক্তি। বৃহৎ দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা চুক্তি রয়েছে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, মিসর, ইসরাইল, জাপান, জর্ডান, ভারত, কুয়েত, মরক্কো, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তôান, ফিলিপাইন, দড়্গিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডের সাথে।
বাইরের দেশে সৈন্যের অবস্থান
বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে। এর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার। এসব সৈন্যের বেশির ভাগই পাঠানো হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শীতল লড়াইয়ের সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব ধ্বংস করার জন্য। কোনো কোনো দেশে এক শ’র নিচেও সৈন্য রয়েছে। ২০০১ সালের পর সন্ত্রাসের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধের নামে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেনাদের।
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার সৈন্য অবস্থান করছে। যৌথ বাহিনীর নামে এ দেশে অন্যান্য দেশের সৈন্য রয়েছে ২৬ হাজারের মতো। আফগানিস্তôানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে ১৯ হাজার ৫০০। অন্যান্য দেশের রয়েছে ৬ হাজার ৫০০।
আফ্রিকা মহাদেশের জিবুতিতে ২ হাজার ৪০০, কেনিয়ায় ১৫৩ এবং মিসরের কায়রোতে ২৯ ও সিনাই মরম্নভূমিতে ৫০০ যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যপ্রাচ্য ও সেন্ট্রাল এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে অন্তôত ৯৭ হাজার। এর মধ্যে ইরাক, সৌদি আরব ও আফগানিস্তôান ছাড়া কাতারে ১৫৮, বাহরাইনে ২ হাজার ৩৩৩, কুয়েতে ১০, ওমানে ১০, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩৭ জন সৈন্য রয়েছে। এ ছাড়া দড়্গিণ কোরিয়ায় রয়েছে ২৬ হাজার ৪৭৭, জাপানে ৪৮ হাজার ৮৪৪, ফিলিপাইনে ৬৬০, দিয়াগো গার্সিয়ায় ৩১১, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ১৯, সিঙ্গাপুরে ১১৫, থাইল্যান্ডে ১ হাজার ১১৩ ও মালয়েশিয়ায় ১০ জন সৈন্য।
অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের অস্ট্রেলিয়ায় ১২৬, মার্শাল আইল্যান্ডে ২৬ ও নিউজিল্যান্ডে রয়েছে ১২ জন মার্কিন সেনা।
ইউরোপ মহাদেশের শুধু বসনিয়া অথবা কসোভোতেই মার্কিন সৈন্য রয়েছে ৯০ হাজার। অন্যান্য দেশের মধ্যে জার্মানিতে ৬৩ হাজার ৯৫৮, গ্রিসে ৩৮৬, ইতালিতে ১১ হাজার ৬৯৩, যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ৯৬৭, স্পেনে ১ হাজার ২৬৮, নরওয়েতে ২৩, সুইডেনে ২৩, তুরস্কে ১ হাজার ৩৬৫, বেলজিয়ামে ১ হাজার ৩৬৭, পর্তুগালে ৮৬৪, নেদারল্যান্ডে ৪৪৪, গ্রিসে ৫৬২, রাশিয়ায় ১৮ ও গ্রিনল্যান্ডে ১৩৮ জন মার্কিন সেনা অবস্থান করছে।
এসব সেনা যৌথ বাহিনী, ন্যাটো, জাতিসঙ্ঘের বিশেষ বাহিনী কিংবা আন্তôর্জাতিক অন্য কোনো সংস্থা অথবা এককভাবে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা রয়েছে প্রধানত দেশটির দূতাবাসে। ছোট ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর হিসাব এখানে আনা হয়নি।
যুদ্ধে অংশগ্রহণ
যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম অনেক পুরনো। ১৭৭৬ সালে ব্রিটেনের শাসন থেকে মুক্ত হয় দেশটি। প্রায় প্রতি বছরই দেশটি কোনো না কোনো যুদ্ধের সাথে জড়িত ছিল। উলেস্নখযোগ্য যুদ্ধের একটি সংড়্গিপ্ত তালিকা এ প্রবন্ধে তুলে ধরা হলো। এসব যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অফিসিয়ালি অংশগ্রহণ করে। এ প্রবন্ধে নামও দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল নামে।
১৭৭৫ সাল থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্তô দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ঔপনিবেশিক শাসনের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ করে। এর এক পড়্গে ছিল ইংরেজ উপনিবেশ। অন্য পড়্গে গ্রেট ব্রিটেন। এই যুদ্ধের পরই সৃষ্টি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ যুদ্ধের আগেও দেশটি অনেকগুলো যুদ্ধে নিজেকে জড়ায়। ১৬৭৫ সালের ৪ জুলাই থেকে ১৬৭৬ সালের ১২ আগস্ট পর্যন্তô চলে কিং ফিলিপ ওয়ার। এর এক পড়্গে ছিল নতুন ইংল্যান্ড উপনিবেশ। অন্য পড়্গে ওয়ামপানাগ, ন্যারাগানমেট ও নিপমুফ ইন্ডিয়ান। ১৬৮৯ সাল থেকে ১৬৯৭ সাল পর্যন্তô চলে কিং উইলিয়াম যুদ্ধ। এক পড়্গে ইংলিশ উপনিবেশ অন্য পড়্গে ছিল ফ্রান্স। ১৭০২ সাল থেকে ১৭১৩ সাল পর্যন্তô ইংলিশ উপনিবেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে হয় কুইন এনি যুদ্ধ। ফ্রান্স উপনিবেশ ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে কিং জর্জ ওয়ার হয় ১৭৪৪ সাল থেকে ১৭৪৮ সাল পর্যন্তô। একই দেশগুলোর সাথে ১৭৫৬ সালে আবার যুদ্ধ শুরম্ন হয়। শেষ হয় ১৭৬৩ সালে। এটি ছিল ফ্রান্স ও ইন্ডিয়ান যুদ্ধ। এই যুদ্ধকে সেভেন ইয়ারস ওয়ারও বলা হয়। ইংলিশ উপনিবেশ ও চিরোকি ইন্ডিয়ানদের মধ্যে চিরোকি যুদ্ধ হয় ১৭৫৯ সাল থেকে ১৭৬১ সাল পর্যন্তô। এর পরই শুরম্ন হয় দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধ। শুরম্ন হয় ১৭৭৫ সালে আর শেষ হয় ১৭৮৩ সালে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশটির যুদ্ধের ইতিহাস অনেক লম্বা। এক উপনিবেশ থেকে দেশ মুক্ত হলেও দেশটি নিজেই সাম্রাজ্য বাড়ানোর লড়াই শুরম্ন করে। এসব যুদ্ধের বেশির ভাগই ছিল সমাজতন্ত্রের বিরম্নদ্ধে পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠা ও এককভাবে বিশ্বের মোড়লিপনার উদ্দেশ্যে।
১৭৯৮ সালে দেশটি জড়িয়ে পড়ে ফ্রান্সের সাথে ফ্রান্সো-অ্যামেরিকান নেভাল ওয়ারে। যুদ্ধ চলে ১৮০০ সাল পর্যন্তô। ১৮০১ সাল থেকে ১৮০৫ সাল পর্যন্তô ও ১৮১৫ সালে বারবারি ওয়ার সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিপড়্গে ছিল মরক্কো, আলজিয়ার্স, তিউনিস ও ট্রিপলি। ওয়ার অব ১৮১২ চলে ১৮১২ সাল থেকে ১৮১৫ সাল পর্যন্তô। বিপড়্গে ছিল গ্রেট ব্রিটেন। ১৮১৩ সালে দেশটি চেক ইন্ডিয়ানদের সাথে শুরম্ন করে চেক যুদ্ধ। শেষ হয় ১৮১৪ সালে। দেশটির টোস রাজ্যের সাথে মেিকোর যুদ্ধ হয় ১৮৩৬ সালে। এটি ছিল ওয়ার অব টোস ইনডিপেন্ডেন্স। মেিকোর সাথে মেঙ্কিান ওয়ার সংঘটিত হয় ১৮৪৬ সাল থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্তô। কনফেডারেশন যুদ্ধ হয় ১৮৬১ সাল থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্তô। এটি সিভিল ওয়ার নামে পরিচিত। স্পেনের সাথে স্পেনিশ-অ্যামেরিকান যুদ্ধ হয় ১৮৯৮ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরম্ন হয় ১৯১৪ সালে। শেষ হয় ১৯১৮ সালে। এ যুদ্ধে এক পড়্গে ছিল জার্মানি, ইতালি ও অস্ট্রেলিয়া। অপর পড়্গে ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে ১৯১৭ সালে। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্তô চলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধের এক পড়্গে ছিল জার্মান, ইতালি ও জাপান। অপর পড়্গে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। কোরিয়ান যুদ্ধ শুরম্ন হয় ১৯৫০ সালে, শেষ হয় ১৯৫৩ সালে। এই যুদ্ধে এক পড়্গে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের অংশ হিসেবে ও দড়্গিণ কোরিয়া এবং অপর পড়্গে উত্তর কোরিয়া ও সমাজতান্ত্রিক চীন জড়িয়ে পড়ে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরম্ন হয় ১৯৬০ সালে, শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। এই যুদ্ধে উত্তর ভিয়েতনামের বিপড়্গে ছিল দড়্গিণ ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্র। বে অব পিগস ইনভেসন যুদ্ধ হয় ১৯৬১ সালে। পড়্গে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবা। গ্রেনাডার যুদ্ধ হয় ১৯৮৩ সালে। পানামার বিরম্নদ্ধে দেশটি ইউএস ইনভেসন অব পানামা যুদ্ধ করে ১৯৮৯ সালে। পারসিয়ান গালফ ওয়ার পরিচালনা করে ১৯৯০ থেকে ১৯৯১ সালে। ইরাকের বিরম্নদ্ধে যৌথ বাহিনীর নামে এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মধ্যে যুদ্ধে ন্যাটোর হয়ে হস্তôড়্গেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর সময়কাল ছিল ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্তô। আফগান যুদ্ধে এই দেশ জড়িয়ে পড়ে ২০০১ সালে। সবশেষে ২০০৩ সালে যৌথ বাহিনীর নামে ইরাকের বিরম্নদ্ধে দেশটি শুরম্ন করে একতরফা যুদ্ধ।
একনজরে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী
শাখাঃ আর্মি
মেরিন কর্পস
নেভি
এয়ারফোর্স
কোস্টগার্ড
কমান্ডার ইন চিফঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট
প্রতিরড়্গা সচিবঃ রবার্ট এম গেটস
জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ চেয়ারম্যানঃ অ্যাডমিরাল মাইকেল মুলেন
সামরিক বয়সঃ ১৭-৪৫ বছর
সামরিক বাহিনী সদস্যঃ ৭,২৭,১৫,৩৩২ জন পুরম্নষ ও
৭,১৬,৩৮,৭৮৫ জন মহিলা
মিলিটারি সার্ভিসের উপযুক্তঃ পুরম্নষ ৫,৯৪,১৩,৩৫৮ জন
মহিলা ৫,৯১,৮৭,১৮৩ জন
অ্যাকটিভ পার্সোনেলঃ ১৪,৩৬,৬৪২ (র্যাঙ্ক-২) জন
রিজার্ভ পার্সোনেলঃ ৮,৪৮,০৫৬ জন
সামরিক শক্তি
কার্যকর সৈন্যঃ ১৩,৮০,০০০
রিজার্ভ সৈন্যঃ ১৪,৬৩,০০০
সামরিক বাজেটঃ ৭১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার
ট্যাঙ্কঃ ৭,৮২১
এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারঃ ১৩
(বিমানবাহী জাহাজ)
ক্রুজারঃ ২২
ডেসট্রয়ারঃ ৫৬
ফ্রিগেটঃ ৩৪
করভেট্টঃ ৪৮
সাবমেরিনঃ ৭৪
যুদ্ধবিমানঃ ২,৬০৪
পারমাণবিক বোমাঃ ৯,২০০