somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাশিয়ার সমর শক্তি

২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্পেন, পর্তুগাল, হল্যান্ড, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড যেভাবে সমুদ্রপথে সাম্রাজ্য বিস্তôারের উদ্যোগ নেয় রাশিয়া ঠিক সেভাবে নেয়নি। রাশিয়া উত্তর আমেরিকার বেরিং প্রণালী পেরিয়ে আলাস্কা অঞ্চল নিজ অধিকারে নেয়। সেখান থেকে রম্নশরা যায়, যা এখন সানফ্রান্সিসকো নামে পরিচিত সেখানে। পরে রম্নশরা এই অঞ্চল স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে আসে। রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আলাস্কা বিক্রি করে দেয় ১৮৬৭ সালে। ইউরোপের অন্যান্য জাতি যেভাবে সাম্রাজ্য বিস্তôার করেছে, রাশিয়া ঠিক সেভাবে করেনি। রাশিয়ার সাম্রাজ্য হলো মহাদেশীয়, সামুদ্রিক নয়। সামুদ্রিক সাম্রাজ্যবাদ আর মহাদেশীয় সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে মনোগতভাবে বেশ কিছু পার্থক্য পরিলড়্গিত হয়। ১৯১৭ সালে ঘটে রম্নশ বিপস্নব। এই বিপস্নবের মাধ্যমে লেনিন ড়্গমতায় আসেন। তিনি চেয়েছিলিন রম্নশ সাম্রাজ্যে জাতিসত্তার সংঘাত কমাতে। দিতে চান ভিন্ন ভাষাভাষীদের স্বাধিকার। ফলে গঠিত হয় ১৫টি ইউনিয়ন রিপাবলিক। এসব অঞ্চলের মানুষ পায় নিজ নিজ ইউনিয়নের কাজ চালানোর জন্য নিজেদের ভাষা ব্যবহারের অধিকার। শিড়্গার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা শুরম্ন হয় মাতৃভাষা। কিন্তু রম্নশ ভাষা সবাইকে শিখতে হতো কেন্দ্রীয় ভাষা হিসেবে। কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত হতে থাকে রম্নশ ভাষারই মাধ্যমে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে যেমন ১৫টি ইউনিয়ন রিপাবলিক ছিল, তেমনি আবার ছিল বিভিন্ন স্বায়ত্বসাশিত অঞ্চল। তারা ভাষাগতভাবে ছিল ভিন্ন; কিন্তু জনসংখ্যায় ছিল কম। এসব অঞ্চলকে ঘোষণা করা হয়েছিল স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল হিসেবে। এদের যুক্ত থাকতে হতো কোনো না কোনো ইউনিয়ন রিপাবলিকের সাথে। এ ছাড়াও ছিল ছোট ছোট ভাষাভিত্তিক জেলা। যারা প্রতিনিধি পাঠাতে পারত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন পরিষদে। অর্থাৎ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে জাতিসত্তার পরিস্থিতি সরল ছিল না, বরং ছিল যথেষ্ট জটিল।১৯৯০-৯১ সালে ভেঙে পড়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই ১৫টি ইউনিয়ন রিপাবলিক থেকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলও হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। এ সময় জার্জিয়া থেকে স্বাধীন হয়ে পড়ে দড়্গিণ ওশেটিয়া ও আবখাজিয়া। রাশিয়া হয়ে পড়ে অনেকটা একা। এখন আবার ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দেশটি। এক সময়ে বিশাল সাম্রাজ্য সাশনকারী এই দেশ আবার পরাশক্তি হচ্ছে এমনটাই ধারণা সমর বিশেষজ্ঞদের।

আর্মড ফোর্সেস অব রাশিয়ান ফেডারেশন
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯২ সালের ৭ মে প্রতিষ্ঠা করা হয় আর্মর্ড ফোর্সেস অব রাশিয়ান ফেডারেশন। প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিন এর দলিলে স্বাড়্গর করেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাশিয়া অঞ্চলের সব সৈন্যকে নেয়া হয় এই বাহিনীর অধীনে। রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট পদাধিকার বলে আর্মড ফোর্সের সুপ্রিম কমান্ডার হন। বাহিনীর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ করে দেশটির প্রতিরড়্গা মন্ত্রণালয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়ও আর্মড ফোর্সের নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করত প্রতিরড়্গা মন্ত্রণালয়।রাশিয়ার মিলিটারি বা আর্মড ফোর্স তিনটি শাখার সমন্বয়ে গঠিত। গ্রাউন্ড ফোর্সেস, নেভি ও এয়ার ফোর্স। এছাড়াও রয়েছে স্বাধীন সৈন্য বাহিনী। এগুলো হচ্ছে- স্ট্রাটেজিক রকেট ফোর্সেস, রাশিয়ান স্পেস ফোর্সেস ও রশিয়ান এয়ারবর্ন ট্রুপস। গ্রাউন্ড ফোর্স ছয়টি মিলিটারি ডিস্টিক্টে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে- মস্কো, লেনিনগ্রাড, উত্তর ককেশিয়ান, প্রিভোলজশ-উরাল, সাইবেরিয়ান ও ফার ইস্টার্ন। নেভি চারটি নৌ বহরে ও একটি ফোটিলা নিয়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছে- বাল্টিক ফিট, প্যাসিফিক ফিট, নর্দার্ন ফিট, বস্নাক সি ফিট ও কাস্পিয়ান ফোটিলা।

জনবল
রাশিয়ার মোট সৈন্য সংখ্যা ৪০ লাখ ৪ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে অ্যাকটিভ সার্ভিস পার্সোনেল ১২ লাখ ৪৫ হাজার, রিজার্ভ ফোর্স ২৪ লাখ ও প্যারামিলিটারি ৩৫ লাখ ৯ হাজার ১০০। এ্যাকটিভ সার্ভিস পার্সোনেল সৈন্যের দিক থেকে রাশিয়ার অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। রিজার্ভ ফোর্সের দিক থেকে এর অবস্থান পঞ্চম আর প্যারামিলিটারির দিক থেকে ষষ্ঠ। দেশটিতে প্রতি হাজারে সৈন্য সংখ্যা ৭·২৪ ভাগ। সংখ্যার দিক থেকে আর্মড ফোর্সেস অব রাশিয়ান ফেডারেশনের অবস্থা বিশ্বে চতুর্থ। অবশ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র তথ্য মতে রাশিয়ার অ্যাকটিভ সৈন্য ১০ লাখ ৩৭ হাজার। বিশ্বে এই অবস্থান চতুর্থ। মোট সৈন্য ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ১০০। বিশ্বে এই অবস্থান অষ্টম।

বাজেট
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষের দিকে ১৯৮৮ সালে আর্মড ফোর্সের মোট ব্যয় ছিল ২১ বিলিয়ন রম্নবেলস বা ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শীতল যুদ্ধের শেষের দিকে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় নাটকীয়ভাবে কমে যায়। ১৯৯৭ সালে এই ব্যয় ছিল ১৯৮৮ সালের ১০ ভাগের এক ভাগ। আবার ১৯৯৩ সালে রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন ১৯৮৮ সালের তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে। আর ১৯৯৮ সালে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে দেশটির সামরিক ব্যয় ১৯৯১ সালের তুলনায় এক-চতুর্থাংশে নেমে আসে। যা ১৯৯২ সালের তুলনায় দুই-পঞ্চমাংশ কম। গত পাঁচ বছর ধরে দেশটির সামরিক ব্যয় বাড়ছে। ১৯৯২ সাল থেকে এই বৃদ্ধির পরিমান প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ২০০৫ সালে দেশটির সামরিক ব্যয় ছিল ৩২·৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০০৯ সালে দেশটির সামরিক ব্যয় হবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সামরিক ড়্গেত্রে এটি বিশ্বে রেকর্ড ব্যয়। অবশ্য বাজেটে এই ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪১·৫ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাপক বিধ্বংসী ও পারমানবিক অস্ত্র
রাশিয়ার পারমানবিক অস্ত্রের মজুদ বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। তবে এই সংখ্যা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও প্রপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৬ হাজার ৬৮১টি পারমানবিক অস্ত্রের কাঁচামালের মজুদ আছে দেশটিতে। ২০০৮ সালে এক ঘোষণায় বলা হয়েছিল রাশিয়ায় অস্ত্র তৈরির রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে ২৮ হাজার টন। একই সালের প্রথম দিকে বলা হয়েছিল ৫ হাজার ২০০টি পারমাণবিক অস্ত্র মজুদের কথা। দেশটিতে বিশাল বায়োলজিক্যাল ও ক্যামিক্যাল অস্ত্রের মজুদ আছে। রাশিয়া প্রথম পারমানবিক অস্ত্র পরীড়্গা করে ১৯৪৯ সালে ২৯ জুন। সর্বোচ্চ ড়্গমতার পারমানবিক অস্ত্র পরীড়্গা করেছিল ১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর।

শেষ কথা
মার্কিন অর্থনীতিতে এখন মন্দা চলছে। তাকে ভাবতে হচ্ছে বড় ধরণের যুদ্ধে না জড়ানোরই কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এখন থমকে যেতে হচ্ছে। বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্র এখন আর ওয়াশিংটন ডিসি থাকছে না। কিছুটা ফিরে আসতে চাচ্ছে মস্কোতে। বিশ্ব রাজনীতিতে একটা ড়্গমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউরোপ ও আমেরিকা যেভাবে হস্তôড়্গেপ করছে, সেটা কারো কাছেই বাঞ্ছনীয় নয়। বিশ্ব রাজনীতিতে একটা শক্তির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাথী ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুরম্নব্বিয়ানা যে ছেদ করবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। রাশিয়ার পুনরম্নত্থান বিশ্বের জন্য অমঙ্গল বার্তা বহন করছে বলে মনে হয় না।

এক নজরে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী
প্রতিষ্ঠাঃ ৭ মে ১৯৯২
সুপ্রিম কমান্ডারঃ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ
শাখাঃ এয়ার ফোর্স, গ্রাউন্ড ফোর্স, নেভি
ইন্ডিপেন্ডেন্ট ট্রুপসঃ স্ট্রাটেজিক রকেট ফোর্সেস, রাশিয়ান স্পেস ফোর্সেস ও রাশিয়ান এয়ারবর্ন ট্রুপস
অ্যাকটিভ সৈন্যঃ ১২,৪৫,০০০ জন
রিজার্ভ ফোর্সঃ ২৪,০০,০০০ জন
প্যারামিলিটারিঃ ৩৫,০৯,১০০ জন
বাজেটঃ ৪১·৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০০৯ সাল)
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×