গতকাল আমরা ডিএসই সাধারন মূল্যসূচকের ৬০০ পয়েন্ট পতন দেখলাম, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পতন।মার্কেট যখন পড়তে থাকে, গুজব তখন পাগলা ঘোড়ার মত দৌড়াতে থাকে,তখন ফান্ডামেন্টাল, ট্যাকনিক্যাল এনালাইসিস এ কোন কাজ হয় না। আজ ট্যাকনিক্যাল এনালাইসিস বলে, মার্কেট আরো পড়বে, ৭০০০ পয়েন্টে একটা সাপোর্ট লাইন আছে, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় এ সাপোর্ট লাইন ব্রেক হবার সম্ভাবনা প্রবল।গত ৬ জানুয়ারী ৯৭৪ কোটি টাকার লেনদেন হয় যা বিগত ৮ মাসের মধ্যে সর্ব নিম্ন, ২০০ পয়েন্ট পড়া এবং সর্বনিম্ন লেনদেন দ্রুত সূচক পড়ার ইঙ্গিত দেয় যা আজ হয়েছে। আজকের লেনদেন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। গতকালের চেয়ে আজ লেনদেন ৫০% বেশি, কিন্তু সূচক গতকালের চেয়ে ৩০০% পড়েছে। গতকালের চেয়ে অতিরিক্ত লেনদেন প্যানিক সেল এর প্রমান দিচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে বাজার আরো পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।একমাত্র সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এ পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে করনীয়ঃ
১। যাদের পোর্ট ফোলিও ১০% এর কম লস এ আছে, তা দ্রুত বিক্রি করে লস কমিয়ে ফেলুন।
২। ১০% এর বেশি লস থাকলে, এভারেজ না করে বাজার পর্যবেক্ষন করুন, যেখানে গিয়ে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে সেখানে কিনে এভারেজ করুন।
৩। ট্যাকনিক্যাল এনালাইসিস অনুযায়ী, ৬৫০০ তে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর একটা আভাস আছে, কিন্তু প্যানিক সেল এর কারনে তা টিকে থাকবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে সিদ্ধান্ত নিন।
৪। ফান্ডামেন্টাল অনুযায়ী, ৫৫০০ এর নিচে সুচক পড়ে গেলে প্রায় ৯৯% শেয়ার আন্ডারভ্যালুড হয়ে পড়বে, কিন্তু প্যানিক সেল অব্যাহত থাকলে সুচক ৫০০০ পর্যন্ত যেতে পারে।৫৫০০ পয়েন্টের নিচে গেলে আপনি পুনরায় কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৫। প্রত্যেক বাজার ইতিহাস এর পুনরাবৃত্তি করে। ২০০৪ সালে সূচক ১০০০ পয়েন্ট থেকে বেড়ে বছর শেষে প্রায় ২০০০ পয়েন্টে উন্নীত হয়। ২০০৫ সালের শেষে সূচক প্রায় ১৭০০ ও ২০০৬ সালের শেষে ১৬০০ তে নেমে আসে। ২০০৭ সালে সুচক ১৬০০ হতে ৩০০০ এ উন্নীত হয়। ২০০৮ সালের শেষে সুচক ২৮০০ তে নেমে আসে, ২০০৯ সালের শেষে সূচক উন্নীত হয় ৪৫০০ তে। ২০১০ সাল শেষে সূচক দাঁড়ায় ৮২৯০ তে। ২০০৪ সালে উন্নীত সুচক পুনরুদ্ধার হতে ২ বছর সময় লেগেছে। ২০০৭ সালে সুচক যে পরিমান উঠেছিল তা পুনরুদ্ধার হতে সময় লাগে ১ বছর ৯ মাস। ২০০৯ এর অক্টোবর হতে ২০১০ এর নভেম্বর পর্যন্ত ১৪ মাসে সুচক প্রায় ২০০% বৃদ্ধি পায়। ২০% স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হিসাব করলে ২০১০ সালের শেষে সূচক হবার কথা ৫৬০০। ২০১০ সালের শেষে সূচক দাঁড়ায় ৮২৯০ তে। বর্তমান পরিস্থিতেও বাজার প্রায় ৩২% অতি মুল্যায়িত। বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে সতর্ক ভাবে বাজার পর্যবেক্ষন করুন এবং যেখান থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস পাওয়া যায় সেখান থেকে বিনিয়োগ করুন।
৬। বটম আউট থেকে বিনিয়োগ করুন। মনে রাখবেন, আপনার উচ্চমূল্যে যে সব শেয়ার কেনা আছে সেই মুল্যে ফিরে যেতে কমপক্ষে ২ বছর লাগতে পারে। তাই সর্ব নিম্ন সূচক থেকে পুনরায় বাজার ঘুরে দাঁড়ালেই কিনবেন।
৭। বিয়ার মার্কেটে যত দ্রুত পতন হয়, তত দ্রুত উঠে না। গত দেড় মাসে সূচক প্রায় ১৮০০ পয়েন্ট পড়েছে। তাই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা আপনি নাও পেতে পারেন।
৮। বিয়ার মার্কেটকে ভয় পাবেন না, বাজার ঘুরে দাঁড়াবেই।
৯। আপনার জীবনের চেয়ে টাকা মূল্যবান নয়। টাকা আসবেই। হতাশ হবেন না ।
১০। যারা ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে কিংবা মুল্যবান স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে বিনিয়োগ করেছেন তারা দয়া করে যতটুকু লস ই হোক তাড়াতাড়ি বিক্রি করে নগদ করে ফেলুন। বাজার পরিস্থিতি ভাল হলে আপনার আবার বিনিয়োগের সুযোগ তো থাকছেই।
এই পরামর্শ গুলো ও অনেকের কাছে প্যানিক সৃষ্ঠি করছি বলে মনে হতে পারে। আশাবাদী আপনি হতেই পারেন, কিন্তু আশা করাই শেষে বাদ দিতে হলে?
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই বিশ্লেষন একান্তই লেখকের নিজের। এই বিশ্লেষনের উপর ভিত্তি করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার জন্য লেখক দায়ী হবেন না।নিজের ঝুঁকিতে সিদ্ধান্ত নিন।
কৃতজ্ঞতা: লেখক Taj U Ahmed
Click This Link