somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হয়ার উই গো নাউ - মুভি রিভিও

২৬ শে মার্চ, ২০১৪ ভোর ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘মোরা এক বৃন্তে দুটি ফুল হিন্দু মুসলমান’। কবিতায় এই লাইনটি যতটুকু সত্যি বাস্তবে এই কথাটুকু ততটাই মিথ্যা। ফুল দুটি এক বৃন্তে থাকার কারনে শোভা বর্ধিত হয়েছে বলে আপাত মনে হলেও বাস্তবে তাদের সহবাস্তানে কারনেই ঠুকাঠুকি লেগেই আছে। অথচ হবার কথা ছিল উল্টো। কোন দেশে মসজিদ ভেংগেছে, ভাংগ আমার দেশের মন্দির। মিষ্টার এন্ড মিসেস আয়ার দেখলে মনে হয় আমাদের জন্মই হয়েছে জাতিগত দাংগা করবার জন্য। রাং দে বাসন্তির একটি ডায়ালগ প্রায়ই আমার মনে পড়ে – ‘উই ফাইন্ড রিজন টু হেইট ইজ আদার, স্টার্ট ফাইটিং এন্ড কিলিং ইজ আদার’। আর বাংলাদেশে রাজনীতিতে সম্প্রদায়িকতা'ত একটি বিরাট ফ্যাক্টর। দেখছিলাম একটি কালজয়ি লেবানিস চলচিত্র – ‘হয়ার উই গো নাউ’।

রোমোট একটি গ্রাম। একটি মাত্র ব্রীজের মাধ্যমে এই গ্রামে প্রবেশ করা যায়। গ্রামবাসীরা কেউ খ্রীষ্টান আবার কেউ মুসলমান। শুরুতেই দেখা যায় গ্রামের মহিলারা কবরস্থানের দিকে যাচ্ছেন। কবরস্থানে একদিকে মুসলমানদের কবর অন্যদিকে খ্রীষ্টানদের। কোন এক কোন্দলে তারা তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন। প্রত্যকের চোখেই জল। পরের দৃশ্য, গ্রামে একটি টেলিভিশন ও একটি রেডিও নিয়ে আসা হয়। খবরে জানা যায় লেবাননের কোন এক অঞ্চলে খ্রীষ্টান আর মুসলমানদের মধ্যে দাংগা হয়েছে। খবর শুনে উপস্থিত প্রামবাসীদের মধ্যে দাংগা প্রায় লেগেই যাচ্ছিল। কয়েকজন মহিলার মধ্যস্থতার কারনে থেমে যায়। কিন্তু ভিতরে ভিতরে পুরুষেরা একে অপরে বিরুদ্ধে হামলা করতে প্রস্তুতি গ্রহন করে।



অন্যদিকে মহিলারা বুঝতে পারে গ্রামে এইসব খবর প্রচার হতে থাকলে ঘৃনা বাড়তেই থাকবে। তাই তারা রাতের অন্ধকারে গিয়ে টিভি এবং রেডিও নষ্ট করে দেয়। অন্যদিকে একটি বাচ্চা ছেলে রেডিও এন্টিনা ঠিক করতে গেলে চার্চের ভিতরে ক্রসটি ভেংগে যায়। দোষ পরে মুসলমানদের ঘাড়ে। প্রায় মারামারি লেগেই গিয়েছিল কোনমতে রক্ষা পায়। অন্যদিকে গ্রামের মসজিদে গরু ছাগল প্রবেশ করলে এর দায় গিয়ে পড়ে খ্রীষ্টানদের উপর। মুসলমানেরা এসে মেরীর মুর্তি ভেংগে ফেলে। এভাবেই ধীরে ধীরে গ্রামের পরিবেশ ভারী হতে থাকে। এক পর্যায়ে খ্রীষ্টানদের কপালে তিলক থেকে রক্ত পড়তে দেখে তারা মনে করে মুসলমানদের অভিশাপে এমন হয়েছে। তারা একটি পংগু মুসলমান ছেলেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। ছেলেটির মা ছেলেটিকে নিষেধ করে যেন সে তার বাবাকে গিয়ে এসব না বলে। অন্যদিকে খ্রীষ্টান পরিবারের এক ছেলে শহরে গিয়ে দাংগার কবলে পরে এবং সেখানে নিহত হয়। তার ভাই তার দেহ গ্রামে নিয়ে আসে কিন্তু সবার অলক্ষ্যে তার মা ছেলেটিকে কবর দেয় এবং প্রকৃত ঘটনা লুকাতে চেষ্টা করে। কারন প্রকৃত ঘটনা জানাজানি হলে গ্রামে মারামারি হবে এবং কেউ ন কেউ মারা যাবে।

কিন্তু কতদিন এইভাবে লুকানো যায়। গ্রামের পুরুষেরা একে অন্যকে হত্যা করতে অস্ত্রের জোগাড় করে। গোপন খবর পেয়ে নারীরা লুকানো স্থান থেকে অস্ত্র সরিয়ে ফেলে যাতে দাংগা না লাগতে পারে। শেষে একদিন সকালে প্রতিটি খ্রীষ্টান নারী মুসলমান হয়ে যায়, কোরান পড়তে শুরু করে, বোরকা, হিজাব পড়তে শুরু করে – অন্যদিকে মুসলমান নারীরা স্কার্ট পরতে শুরু করে। মেয়েরা তাদের বলে – ‘আমাদের মেরে ফেল, আমরা তোমাদের ঘরের মানুষ, কিন্তু বিধর্মি, আমাদের মেরে ফেল’। গ্রামের পুরুষেরা মেয়েদের কর্মকান্ডে তাজ্জব হয়ে যায়। শেষে তারা শহরে গিয়ে মারা যাওয়া ছেলেটিকে সবাই মিলে কবর দিতে নিয়ে যায়। কবর স্থানে গিয়ে তারা ঘুরে দাড়ায় এবং মেয়েদেরকে জিজ্ঞাসা করে এখন আমরা তাকে কোথায় কবর দিব? এই জিজ্ঞাসার মাঝে শেষ হয় চলচিত্রটি।



সহিংসতা খুবই সহজ বিষয়। আমরাও এক হিংস্র জীব। হয়ত পৃথিবির সবচেয়ে বড় হিংস্র জানোয়ারদের মধ্যে আমরা এক জীব যারা আইন আর কানুনের কারনে নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু সুযোগ পেলেই, নানা উছিলায় আমাদের ভিতরকার পশু বেরিয়ে আসেতে চায়। এই পশুকে বেরিয়ে আসতে দিলে নিজেরি ক্ষতি হবে। নিজেরাই মারা যাব। তাই একে রুখতে হবে, কোন অবস্থাতেই এই আগুন বের হতে দেয়া যাবে না। এই ছিল মুল কথা। লেখক ও পরিচালক নাদিম লাবাকি অত্যন্ত যত্ন করে মুভিটি তৈরি করেছেন যেন মানব জীবনের অন্য একটি অধ্যায় আমরা দেখতে পারি। নায়কের ভুমিকায় অভিনয় করেছেন ক্লাউডি মুসাওব্বা ও লেবাননের প্রতিষ্টিত নায়িকা লায়লা ফুয়াদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৫০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×