ইসলামি ব্যাংকের প্রতি আমার কোন বিদ্বেষ নেই। তারা ব্যবসা করতে চায় করবে। কিন্তু সমস্যাটা তখনি বাঁধে যখন তারা জনগনকে বুঝায় যে সাধারণ ব্যাংকে টাকা রাখা গুনাহর কাজ। এমনকি সাধারণ ব্যাংকে চাকরি করাও কবিরা গুনাহ। এ কারণে অনেক ব্যাংকারই নিদারূন মনোকষ্টে ভোগেন এবং উপায় না পেয়ে চাকরিও ছাড়তে পারেননা।
আমরা জানি যে ইসলামে সুদকে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু কোরান হাদিস পড়লে বুঝা যায় সেটা ছিল আসলে গরিবের উপর আপতিত অতি উচ্চ দরের মহাজনি সুদ। আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুদের সাথে ইসলামের বিরোধ থাকার কোন যৌক্তিকতা নেই। তবুও সুদ হারাম এই যুক্তিতে কিছু ইসলামি বুদ্ধিজীবি ইসলামি ব্যাংকের আইডিয়া ফেঁদে বসেছে। মূলত ইসলামি ব্যাংক আর সাধারণ ব্যাংক এর মধ্যে কোন পার্থক্যই নেই, শুধু কাগজে কলমে একটু কারসাজি করে সুদকে মুনাফা আর ঋণকে ব্যবসা বলে এটাকে ইসলামি ব্যাংক বলে চালানো হয়। যেমন আপনি সাধারণ ব্যংকে ১০০ টাকা জমা রাখলে ১২.৫% সুদে বছর শেষে পাবেন ১১২.৫ টাকা। আর ইসলামি ব্যংকে ১০০ টাকা জমা রাখলে তারা ১০.৫% লাভের গ্যারান্টি দেবে, আর বলে দেবে ব্যাংকের লাভ হলে আপনি আরও বেশি পাবেন। বছর শেষে দেখা যায় ইসলামি ব্যংকের লাভ সাধারণ ব্যাংকের সুদের মত সেই ১২.৫% এর মতই থাকে। আবার ধরুন সাধারণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে আপনাকে ১৫% সুদ দেয়া লাগে। ইসলামি ব্যাংক থেকে টাকা পেলেও আপনাকে সেই ১৫% ই লাভ দেয়া লাগবে তবে তারা এর মাঝে শুধু একটু কায়দা করবে। সেটা হল আপনি যদি ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ১ টি বাইক কিনতে চান তাহলে আপনাকে ইসলামি ব্যাংকের মালিকানায় ইসলামি ব্যাংকের টাকায় বাইকটি কিনতে হবে। পরে ১৫% লাভ হিসেবে কিস্তিতে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে বাইকটির মালিকানা আপনি নিজের নামে করে নিতে পারবেন। তাই বুঝতেই পারছেন যে প্র্যাক্টিক্যালি সাধারণ ব্যাংক আর ইসলামি ব্যাংকের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
ইসলামি ব্যাংকের কায়দা কাজে লাগিয়ে একটি যৌনপল্লীকেও ইসলামি যৌনপল্লী হিসেবে ঘোষনা দেয়া যায়। ইসলামে দাসীর সাথে সঙ্গম করা বৈধ। বাংলাদেশের যৌনপল্লীগুলোতে যৌনকর্মীরা দাসীর মতই অন্যের মালিকানায় থাকে। তাই কোন মুসলিম চাইলে সেখানে গিয়ে দাসী কিনে আমোদ করার কিছুক্ষণ পর কিছুটা কমদামে দাসীর আগের মালিকের কাছে বিক্রি করে দিতে পারে। কতক্ষণের জন্য দাসী কিনবে, কত দামে কিনবে আর কত দামে বিক্রি করবে সেই চুক্তিটা ইসলামী ব্যাংকের টেকনিক্যাল চুক্তির মত আগে থেকেই ঠিক করে নিতে হবে আরকি।
এক্ষেত্রে আপনার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন চলে আসাটা স্বাভাবিক, তাই সম্ভাব্য প্রশ্নগুলো পয়েন্ট করে দিয়ে সেগুলোর জবাবও এখনই দিয়ে দেয়া যায়।
১) ইসলামে তো দাসীকে বেশ্যালয়ে পাঠিয়ে উপার্জন করতে নিষেধ করা আছে।
উত্তরঃ কাগজে কলমেতো দাসীকে বেশ্যালয়ে পাঠানো হচ্ছেনা, বরং দাসী কেনাবেচা করে ব্যবসা করা হচ্ছে যা ইসলামিক ভাবে বৈধ। আর দাসীর মালিক দাসীর সাথে চাইলেই সঙ্গম করতে পারে।
২) এখনতো দাস প্রথা নাই তাই যৌনপল্লীর মেয়েরা কোনভাবেই দাসী নয় বরং কর্মী। দাসী না হলে এটা ইসলামিকও নয়।
উত্তরঃ প্রাচীনকাল থেকেই দাসের পরিচয়, সুযোগ সুবিধা, অধিকার, দাস সম্পর্কিত নিয়ম নীতি ইত্যাদি একেক সমাজে একেক রকম ছিল। সরকারী ভাবে বর্তমানে সারাবিশ্বে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হলেও বেআইনি ভাবে মডার্ণ স্লেভারি নামে দাসপ্রথা আজও চালু আছে। বিশ্বব্যাপি প্রায় ৩ কোটি লোক এখন আধুনিক দাসত্বের স্বীকার। গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্সে এসম্পর্কে প্র্যাক্টিক্যাল তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে। ভিজিট করুন Click This Link
৩) সরকারী ভাবে দাসপ্রথা অবৈধ তাই বর্তমানে মডার্ণ স্লেভারির অস্তিত্ব থাকলেও একটি অবৈধ ব্যাপার ইসলামে বৈধ হতে পারেনা।
উত্তরঃ সরকারী ভাবে অনেক দেশে একাধিক বিয়ে করা অবৈধ তাই বলে কি ইসলামে চার বিয়ে করা অবৈধ হয়ে যাবে? আবার অনেক দেশে মদ কেনা বেচা বৈধ বলে কি ইসলামেও তা বৈধ হয়ে যাবে? ইসলামে দাসপ্রথা বৈধ এটাই সবচেয়ে বড় কথা নয় কি?
৪) সমস্ত আলেমগণ ইজমা বা ঐক্যমতের ভিত্তিতে দাসপ্রথা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে।
উত্তরঃ তাহলে সমস্ত আলেমগণের জন্য ইজমার মাধ্যমে সুদি ব্যাংকিং সিস্টেমকে বৈধ ঘোষনা করতে অসুবিধা রইল কোথায়?
আমার পোস্টের মূল উদ্দেশ্য যৌনপল্লীকে হালাল প্রমাণ করা নয়, আমাদের কমন সেন্সই বলে এটা কোনভাবেই হালাল হতে পারেনা। এনালজি করে আমি শুধু এটাই বুঝাতে চাইলাম যে আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কেউ যেন হারাম না ভাবে আর আলেমগণ যাতে সত্বর এব্যাপারে একটি ঐক্যমত্যে পৌঁছায়। ইসলামি ব্যংকের আইডিয়াটিই আলেমদের ঐক্যমতে পৌঁছানোর সবচেয়ে বড় বাঁধা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:৩০