somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হারিকেন - দ্য ডিভাইন উইন্ড (২)

০৩ রা অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব দুই – কাঁদো বাংলাদেশ কাঁদো
======================

১৯৯১ সালের ২৯শে এপ্রিল ঘূর্ণিঝড় তান্ডবের একদিন পর প্রথম পাতা জুড়ে দৈনিক ইত্তেফাকের শিরোণাম ছিল- ‘কাঁদো বাংলাদেশ কাঁদো’। আমরা তখন চট্টগ্রামে থাকি। হাই স্কুলে উঁচু ক্লাসে যাই। এখনো আমাকে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমার স্মরণীয় দিন/রাত কোনটা, এক মূহুর্ত দ্বিধা না করেই বলি ২৯শে এপ্রিলের কথা। আমি জানি, এমন একটা অভিজ্ঞতা আমার জীবনে আর কখনো আসবে না, মৃত্যুকে অমন কাছ থেকেও এত দীর্ঘক্ষণ হয়ত আর কখনো দেখব না।

আমার মনে আছে, ২৯শে এপ্রিলের আগেও চট্টগ্রামে একবার ‘দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত’ দেয়া হয়েছিল। ওটা ছিল ‘ফলস এলার্ম’। তাই ২৯শে এপ্রিল যখন আবার দশ নম্বর সংকেত দেয়া হল, আমি আম্মাকে বল্লাম, ‘দেখো, এবারো কিছুই হবে না’। তখন কি আর জানতাম কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য! রাত আটটা/নয়টার দিকে বিটিভি-র নিয়মিত অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে হামদ-নাত পড়া শুরু হয়ে গেল। আম্মা একটু অস্থির হয়ে গেলেন। বাসায় তখন শুধু আমি আর আম্মা। ভাইয়া ফৌজদারহাটে, আব্বা দেশের বাইরে। আমি আম্মার অস্থিরতা দেখে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগলাম। তারপর রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। বাইরে তখন ঝড়ো বাতাস এবং বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

কিছুক্ষণ পর আমরা কেউই আর রুমে থাকতে পারলাম না। দোতালায় আমাদের বেডরুমগুলোর জানালা ছিল বাইরের দিকে। বাতাসে প্রথম জানালার ছিটকিনি খুলে গেল, তারপর ঝনঝন করে সব কাঁচ ভেঙ্গে পড়ল। রুমের মধ্যেই তখন শুরু হয়েছে তান্ডব। বাতাসে আমার বই-খাতা, জিনিষ-পত্র সব উড়ছে। বেডরুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমরা ড্রইং রুমে এসে জড়ো হলাম। একমাত্র এই ঘরটার বাইরের দিকেই কোন জানালা-দরজা নাই। বাইরে তখন প্রকৃতি প্রচন্ড আক্রোশে গর্জে চলেছে। দরজা-জানালা, বাড়ীটা এমনভাবে কাঁপছে, মনে হচ্ছে উড়ে চলে যাবে যে কোন সময়। আমি আর আম্মা শক্ত করে হাত ধরে বসে আছি। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি, এই ঝড় কখন শেষ হবে, আগামী দিনটা কি দেখব?

ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। হঠাৎ খুব ইচ্ছে হল বাইরেটাকে দেখার। আম্মার নিষেধ অগ্রাহ্য করে দরজাটা খুলে বাইরে যা দেখলাম তাতে আমার রক্ত হিম হয়ে গেল। আমি দেখলাম ওই প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে একটা আগুনের কুন্ডলী সাপের মত হিস হিস শব্দ করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি এটার ব্যাখা আজও পাই নি। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, পরদিন ঝড় থামার পর আমি অবাক হয়ে দেখলাম, শহরে যে সব গাছ অক্ষত আছে তার প্রায় সবই পুড়ে কালো হয়ে গেছে! এটা নিয়ে আমি অনেক হারিকেন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলেছি। তারা কেউ এমন কিছু কখনো শুনে নি। হারিকেন হওয়ার সময় কোন এলাকায় গাছ পুড়ে গেছে এমনটা কোন রেকর্ডেও নেই। একজন আমাকে ব্যাখা দিয়েছে বাতাসের ঘর্ষণে হয়ত গাছে আগুন ধরে গিয়েছিল। কিন্তু পুরো শহরের সব গাছ আগুনে পুড়ে গেল, অথচ একটা বাড়ীতেও আগুন লাগল না, এটা কিভাবে সম্ভব! আর ঝড়ের মধ্যে এত বৃষ্টি হল, সেখানে আগুন-ই বা ধরল কিভাবে। দুঃখের বিষয়, আমার কাছে ওই সময় গাছ পুড়ে যাওয়ার কোন ছবি নেই, তাই এ দাবীটা এখনও অপ্রমাণিত। আসলে মানুষের দুর্দশা তখন এত বেশী হয়েছিল, কেউ আর এটাতে নজর দেয় নি। যদিও অনেক প্রত্যক্ষদর্শী পরে আমার সাথে একমত হয়েছে, তারাও দেখেছে শহরের সব গাছ পুড়ে যেতে।

একসময় ভোর হল। চট্টগ্রাম তখন এক মৃত নগরী...

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৪:৩০
২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×