আদি’র ডায়েরী’র পাতা থেকে -
সকাল থেকেই এক অজানা অস্থিরতায় সময় কাটছে। কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা। ঠিক মনে পড়ে না অনিকে’র সাথে কতটা দিন কথা হয় না। আচ্ছা তার’ও কি এমন ভাবনা হচ্ছে? নাহ্ মনে হয় না। যদি এমন সে ভাবত তাহলে অবশ্যই একবার না হোক টেলিফোন করে খবর নিত। কত চেষ্টা করি আমিও অনিকে’র মত হতে, কিন্তু পারছি কই। কত অপমান করি, কত অবহেলা করি - তার কিছুই দেখা যায় না তার মুখে।
সব সময় একজন মানুষ কি করে পারে হাসি মাঁখানো চেহারা নিয়ে থাকতে! এই ব্যাপারটা প্রায় আমাকে ভাবিয়ে তুলে। সময়টা ঠিক মনে পড়ছে না, হয়ত হেমন্তে’র শুরু’র দিকে হবে। খুব ভোরে হালকা হালকা কুয়াশা’র দেখা মিলত বা পথে’র ধারে ঘাস ভিজে থাকতো এমন। সময় জ্ঞান বলে কিছু তার ছিল না যা এখনও নাই। অবশ্য একটা ব্যাপার ছিল লক্ষ্যণীয় যে, যত রাত করে’ই সে ঘুমাক সাত-সকালে হাটা’র জন্যে বের হবে’ই। তাই ভাবলাম আমিও হঠাৎ একদিন বের হবো তার পথ আগলে ধরব কিছু পথ সাথে থাকার জন্যে। তো যেই ভাবা সেই কাজ। সকালে’র আবহাওয়াটা’ই কেমন জানি খুব হালকা হালকা মনে হয় নিজেকে।
রবিঠাকুরের লেখা’টা মনে পড়ছে -
”দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু-
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দু’পা ফেলিয়া,
একটি ধানে’র শীষে’র উপর একটি শিশির বিন্দু।”
অনিক’কে আসতে দেখে একটু ভাব ধরার চেষ্টা করলাম এমন যে আমি মহা বিরক্ত যে কোন কারণে। তা এজন্যে আমার যে কোন সম্স্যা’র সমাধান সে যে করে’ই হোক করে দেয়। অনিক এসে পাশে’ই দাড়ালো -
কি রে এই সাত-সকালে মুখ ভোঁতা করে রাস্তায় দাড়িয়ে আছিস কেন?
তোমার সমস্যা কি আমি মুখ ভোঁতা করি না ধারালো করি? যে কাজে যাচ্ছিলে যাও। কানে’র কাছে ঘ্যাঁন ঘ্যাঁন করবানা।
হুম। চল একসাথে যাই।
নাহ্ তোমার সাথে মরা’র ইচ্ছে আমার নাই, যাও তো।
না হয় নাই’ই মরলি বাঁচতে তো দোষে’র কিছু নাই। চল্
ওরে বাবাহ্ ব্যাপার কি বলো তো সকাল সকাল এত্ত রোমান্স মনে’র মধ্যে?
ব্যাপার কিছু না, সহজ সমীকরণ সব।
সত্যি করে বলো তো দেখি -
আচ্ছা বলছি, চল্ হাটতে হাটতে বলি। (আমি ইচ্ছে করে’ই অনিকে’র হাত জড়িয়ে ধরে পথ চললাম। আঁড়চোখে সে একবার দেখল কিন্তু কিছু বলল না।) আমার কেন জানি মনে হয় এমন সকাল তুই কখনও দেখিসনি। মানে তোর ঘুমে’র মধ্যে’ই সকাল’টা আর সকাল থাকে না।
দুনিয়াতে মনে হয় তুমি একজন’ই সকাল সকাল উঠ্ সকাল দেখার জন্যে? এত্ত ভাব মারো কেন?
সত্যি কি মাঝে মাঝে খুব ভাবতে ইচ্ছে করে, তবে পুরোপুরি কিছুই হয় না। যেমন ধর ’সুন্দর সুর্যোদয় মানে এই নয় সারাদিন আকাশে মেঘের মিলন ঘটবে না।’
দিন দিন তোমার মাথা যাচ্ছে। না জানি কোন দিন শুনবো কোন পুরান পাগলা গারদে তোমার স্থায়ী নিবাস।
জীবন চক্রটাই হলো ম্যাজিক। কখন কি হয় বা হবে কারোর’ই বলার বা বুঝার সাধ্য নাই।
চুপ, একদম চুপ। চান্স পেলে’ই বকবকানি শুরু। হুম, কি যেন বলতে বলেছি তা’র উত্তর দেও।
ও হ্যাঁ। ক’দিন আগে সিফাত একটা কবিতা লিখেছিল। জানি না কার জন্যে, তবে আমায় দিল দেখার জন্যে। এতবার পড়েছি তুই চাইলে তোকে শুনাতে পারি।
এখন আমার কি মনে হচ্ছে জানো? জীবনে যদি মস্ত কোন ভূল আমি করে থাকি তা হলো আজ তোমার সাথে এসে। শুনাও শুনি তোমার সিফাত কি বলতে চায় -
আমি তোমায় অনেক ঘৃণা করি, কেন জানো?
কারণ তোমায় ভুলতে পারিনা বলে।
খুব ঘৃণা করি তোমায় -
অনেক ভালবাসি বলে।
দগ্ধ যন্ত্রণার সামিল করা শব্দে বলি তোমায়
তোমায় নিজ থেকে দূরে রাখতে।
কখনও কখনও বাঁধ ভেঙ্গে যায় -
সেই প্লাবণে ঢেলে দেই অজস্র ঘৃণা,
যাতে সহজ করে তুমি বুঝতে পারো ভুল।
এড়িয়ে চলি পথ, দু’পায়ে মাড়িয়ে তোমার সকল স্মৃতি -
ত্রিশুলে’র তিক্ষণতায় মনে হয় পাঁজড় ভেদ করে কষ্ট।
কখনও নিজে একা হাসি -
কত ভাঙ্গছি আর গড়ছি জোড়াতালি’র সময়।
দীর্ঘ হাহাকার মনের অনিচ্ছায় ধাবিত হই্
ভেবে নিই তোমায় একটা জীবন ঘৃণা দিব,
বিকলাঙ্গ ঘৃণা আমার নিবৃত হয়ে পড়ে ভাল লাগায়।
তারপরও তোমায় অনেক ঘৃণা করি কারণ -
তোমায় অনেক ভালবাসি বলে।
আচ্ছা সত্যি একটা কথা বলবা?
জিজ্ঞেস কর।
তুমি কি তাঁকে অনেক ভালবাসো? - (চুপচাপ পথ চলতে থাকলাম। অনিক হাসছে, কিছুই বলেনি।)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮