কথায় আছে “লেবু বেশী চিপলে তিতা হয়ে যায়” কিন্তু এই প্রজন্ম চত্বরকে যদি রুপক অর্থে লেবুর সাথে তুলনা করি তাহলে বলতে হবে সবুজ রঙের লেবুটিকে এরুপভাবে চিপা হয়েছে যে লেবুটির প্রাননাশ করে মলিন করে দেয়া হয়েছে। “ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট” এর ব্যানার থেকে গড়ে তোলা এই আন্দোলন আসলে কতটুকু গণ প্রতিনিধিত্ব করে সেটি পরে আগে কথা হল কতটুকু এই ব্লগার আর অনলাইন এক্তিভিস্টদের প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রথমেই আহবায়কের উদ্দেশ্যে একটি আবেদন, “গণজাগরন মঞ্চ” এই শব্দটি লক্ষ্য করুন। মঞ্চ শব্দটি এটির উৎপত্তি সংস্কৃত থেকে সুতরাং সে অর্থে এটি হিন্দি,উর্দু এবং বাংলায় প্রবেশ করে। বানান এক হলেও আমাদের দুই ভাষায় এটি দুইভাবে উচ্চারণ করা হয় শেষ ধ্বনিটি । সেটি হল বাংলায় এটি “মঞ্চ” তে চো এবং হিন্দিতে “মঞ্চ” তে চ। মানে ইংরেজিতে এটি আমরা বলি গ্লাইড সাউন্ড আর স্টপ সাউন্ড। আর আমাদের আহবায়কের কাছে প্রথমেই আকুল আবেদন মঞ্চের উচ্চারণ বাংলায় করুন হিন্দিতে নয়।
অনেক প্রস্ন উঠতে পারে আমার লিখা নিয়ে সমালোচনার আর গালির ঝড় বইতে পারে আমার উপর দিয়ে কিন্তু সব কিছুর আগে একটি প্রস্ন বিবেকের কাছে রাখবেন যে কথাগুলি কি আমাদের আম জনতার নয়?
তাসলিমা নাসরিনের লিখা পরছিলাম আজকে হিন্দুস্তান টাইমস এ তিনি সমর্থন জানিয়েছেন এই গনদাবীর প্রতি কেননা একাত্তুর সালে এই দলটির যেই অবস্থান ছিল এবং এর পর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের যেই কার্যক্রম সেটি জঙ্গিবাদের একপ্রকার বহিরপ্রকাশ। সমর্থনের জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ কিন্তু আসল দাবী আপনিও এড়িয়ে গেছেন এবং এখানেও আপনার যেই চিন্তা সেটি স্থাপন করেছেন “সেকুলার বাংলাদেশ” কিন্তু মহাদয়া বিনীতভাবে বলতে চাই এটি আমাদের মুখ্যদাবী নয় এবং হতেও পারে না। কেননা এখন এক বৃহৎ উদ্দেশ্যে আমাদের এই আন্দোলন আর এইখানে ধর্মের কোন স্থানই আমরা আনতে পারিনা এবং আমার বিশ্বাস যে কোন বিবেকবান,দেশপ্রেম, লক্ষে অটুট ব্লগার ও এক্টিভিস্ট এই আন্দোলনে এরকম একটি আত্তহত্যামুলক দাবী এড করবে না।
কিন্তু আত্তহত্যা আমরা করেছি,জি তৃতীয় দিনে যেদিন আমাদের গনজাগরন মঞ্চ থেকে প্রথমবারের উঠে আসলো এমন কিছু দাবী যেগুলু আসলেই অনর্থক এবং অপ্রাসঙ্গিক না হলেও অবস্থান থেকে পিছু হটার মতন। প্রথমেই ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের কথা বলা হলেও পরে অবশ্য ক্লিয়ার এবং যৌক্তিক ভাবে জামাতকে নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। এটি আমাদের দাবী হলেও আজকে বাংলা পরিক্ষার দিন এই আরবি পরিক্ষার প্রস্ন আমার কাছে বাঞ্ছনীয় নয়।
ইসলামি ব্যাংকের অসাংবিধানিক বিভিন্ন দিক নিয়ে নানা সময় কথা বলেছি,কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার দাবীতেও একমত তবে অবশ্যই শুধু রেটিনা আর ফোকাস নয়, আর এই কথা কেন বলছি এইখানে আজকে এই মুহূর্তে আমি ফাঁসির দাবীর সাথে এরকম একটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত আমি অবশ্যই আমার দাবী হিসেবে মানি না মানতে পারি না কেননা আমার দাবিটির ওজন কমে যায় এরুপ সিদ্ধান্তে।
আওয়ামীলীগ এই দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলন থেকে কিছুটা সুভিধা আদায় করাটা আমি খারাপভাবে নিচ্ছিনা বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পরিপক্ষতা আবার প্রমান করেছে যা বিএনপি বরাবরের মতনই ব্যর্থ ,তবে তাই বলে কিন্তু আমি এই আন্দোলন আওয়ামিলিগিকরন দাবী আমরা সাপোর্ট করতে পারি না । তাই আজকে সবার প্রস্ন পিয়াস করিম আর আসিফ আকবরের মতন শিক্ষক যারা দেশ বরেন্য ব্যাক্তি তাদেরকে গ্রেফতার করার বা কোন রুপে হুমকি দেয়া যেকোনো ছাত্রের জন্যই একপ্রকার বেয়াদবি এবং আমি একজন ছাত্র হিসেবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং জানাই। তবে আমার বিবেক বলে মাহ্মুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তেই পদক্ষ্যাপ নেয়া উচিৎ কেননা আমাদের দেশের মানুসের সাম্প্রদায়িক যেই শান্তি ছিল সেটি আজ নস্ট হবার পথে এবং তার দায়ভার সে এরাতে পারবে না এই ক্ষেত্রে। তবে সে ক্ষেত্রে আমি এর ব্যর্থতা সরকারের ঘারে দিব। তবে অবশ্যই এটি আমাদের গনজাগরনের দাবী বা সময় বেধে দেয়াটাও আমি মনে করি না সমুচিন হয়েছে।
আমাদের কিছু আতলামি তো রয়েছেই এবং আধিক্যটা বরাবরই খেয়াল করা যায়। যেমন ১৯ জনকে ব্লগারকে গ্যান্ম্যান দেয়া অথচ আমাদের সামহয়ার ইনের ব্লগারকে সরাসরি হত্যার হুমকি দেয়া হয়। সুতরাং ভুল যায়গায় ভুল কথা বা উপাধি দেয়া আমাদের আহবায়ক ভাইদের একপ্রকার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে আসলে যেমনটা রাজিব বা থাবা বাবাকে শহীদদের মর্যাদায় ভূষিত করা হল। অবস্থা আসলে পরিদর্শন করলাম এতদিন এবং গতকাল রাজিবের হত্যাকারী ধরা পরার সাথে সাথে এখন আর বলতে আর কোন সন্দেহ নেই যে আসলে এই প্রজন্ম চত্বরের সাথে তার মৃত্যুর আসলে কোন সম্পরকই নেই কেননা এই বিপদ্গামি শিবিরের মোট সাত ছেলে প্রায় দের মাস আগে থেকেই মারার প্ল্যান করে আসছে। যাক তবে এতে তেমন কোন সমস্যা না থাকলেও এটিকে কেন্দ্র করে আসলে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
আমাদের এই বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের বিষয়ে শক্ত অনুসারি না হলেও আবেগপ্রবন। দৈনিক এক ওয়াক্ত নামায আদায়কারী না হলেও এইখান থেকে বহু মানুষ হজ্জ করতে প্রতি বছর মক্কা যায় আর জুম্মার দিন মসজিদে জায়গা পাবার উপায় থাকেনা। এইখানে যখন একজন নাস্তিক বা মহানবীকে কটূক্তি করা ব্যাক্তিকে আপনি বলেন “শহীদ” তখন এই আবেগপ্রবন মানুষগুলী তা সহ্য করবেনা এবং অবশ্যই এর বিরুদ্ধে কথা বলবেই। তবে এনিয়ে সরজন্ত্র যে আমার দেশ আর ইনকিলাব করেছে তা বলতেই হবে এবং সরকার এইখানেও ব্যর্থ এদেরকে থামাতে বরং বলা যায় এদেরকে পরক্ষভাবে আরও সহায়তা করেছে।
সরকার এর ব্যর্থতা শুধু এখানেই নয় যেমন বিএনপি জামাতের প্রোপাগান্ডায় বারবার চেষ্টা করা হয়েছে বিতর্কিত এবং বার বার দেয়া হয়েছে হরতাল আর বাধ্য হয়ে বা প্ররোচিত হয়েই এই মঞ্চ থেকে হরতাল রুখে দেয়ার আহবান দেয়া হয়েছে যা কিনা আবার প্রস্নবিদ্ধ করে আমাদের এই আন্দোলনকে। হরতাল থামানোর দায়িত্ব আমাদের নয় আমাদের হতে পারেনা এসব করে আমাদের দাবিই শুধু আমরা হাল্কা হচ্ছে।
ভাই চার বছর আগে যখন আমাদের প্রাণের দাবী এই যুদ্ধ অপরাধদের বিচার শুরু হয় তখন এর কি পরিমান ভাবগাম্ভীর্যটা ছিলও মানুসের মনে তা আর বলে বর্ণনা করা সম্ভব নয় । কিন্তু চার বছরে আমাদের এম্পি মন্ত্রিদের এই নাম ভাঙ্গিয়ে খাওয়ার আর ব্যাবসা করার চেষ্টায় এই সুন্দর উদ্যোগ যেই ভাবে কলুষিত হয়েছে তেমনি আমাদের সরকারের রাজাকারের ফাঁসির দাবীতে সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা “প্রজন্ম চত্বর” এর আন্দোলনও এখন সেভাবে এই চেষ্টা ও সংগ্রামের ওজনটিও কমিয়ে আনছেন।
যাই হোক এইখানে আসলে নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা কাররি নেই তাই ভুল ত্রুটি হতেই পারে তাই আমাদের এই ত্রুটি এড়াতে আমাদের উচিৎ ছিল একটি দাবীতেই অটল থাকা তাহলে আওয়ামীলীগ এবং জামাত বিএনপির কোন ষড়যন্ত্র কাজে আসতো না।
ধন্যবাদ সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০০