ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত শরীর পরীক্ষা করা হয় এবং তার মৃত্যুর কারণ উদ্ধার করা হয়। কেউ অপঘাত, আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে মারা গেলে বা এক কথায় অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে তার মৃত দেহকে ময়নাতদন্ত করা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই পোস্টমর্টেমের সঙ্গে ধর্ম, রাজনীতি, যৌক্তিক মতবাদ, আধিভৌতিক জাদুবিদ্যা প্রভৃতি নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রদান করতে গেলে বলতে হয়, কোনো ব্যক্তি কখন, কীভাবে, কোথায়, কিসের দ্বারা মৃত্যুবরণ করেছে বা তার মৃত্যু কি স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক এসব তথ্য জানার জন্য মৃতদেহকে যে বিশেষ পরীক্ষা করা হয় তাকে পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত বলে। ময়নাতদন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানের দীর্ঘ সাধনা ও গবেষণার সোনালি ফসল। ময়নাতদন্তের ইতিহাসও ছোট নয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিসরীয়রা মমি তৈরির জন্য মৃতদেহকে ব্যবচ্ছেদ করত। তবে তারা শুধু ধর্মীয় কারণেই তা করত। মূলত মৃত্যুর কারণ জানার জন্য মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের কথা জানা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে গ্রিসে। রোমান সাম্রাজ্যে এটি চালু হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ অব্দে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর তার অফিসিয়াল পোস্টমর্টেম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৪৪ অব্দে। এছাড়া আরবদের মধ্যে আন নাফিসের কথা উল্লেখযোগ্য। আধুনিক পোস্টমর্টেম ব্যবস্থা চালু করেন ইভোননি মরগাগনি। যাকে পোস্টমর্টেম ব্যবস্থার জনক বলা হয়। ময়নাতদন্ত ব্যবস্থার ওপর ঐতিহাসিক কিছু বইয়েরও ইতিহাস জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিসরের ফারাও জোসের আমলে প্রধান চিকিৎসক হেব্রিয়ন ও ইমহোটেপ, খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৬৫ অব্দে গ্রিসের হিপোক্রেট, ১১৭-১৩৮ খ্রিস্টাব্দে মিসরীয় চিকিৎসক হেব্রিয়ন, ১২০০-১২৫০ খ্রিস্টাব্দে চীনে এবং ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে ইতালির চিকিৎসক ফরচ্যুনিতো ফেদেলে পোস্টমর্টেমের ওপর পুস্তক রচনা করেন। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ধারণ, ধরন, সময়। মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, কোনো বহিঃ বস্তুর উপস্থিতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ। অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহে হলে ভবিষ্যৎ শনাক্তকরণের জন্য তার মোটিভ সংরক্ষণসহ প্রভৃতি পোস্টমর্টেমের উদ্দেশ্য।
ময়নাতদন্তের বাহ্যিক পরীক্ষা শেষ করার পরই শুরু করা হয় আসল কাজ। এ পর্যায়ে মৃতদেহকে ব্যবচ্ছেদ করা হয়। মৃতদেহ যিনি ব্যবচ্ছেদ করেন তাকে ‘ডোম’ বলা হয়ে থাকে। ব্যবচ্ছেদ করার সময় মৃতদেহের গলা থেকে নাভির নিচ পর্যন্ত চিরে ফেলা হয় এবং মাথার করোটি খুলে ফেলা হয়। মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করার পর তার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো যেমন স্টমাক, কিডনি, হার্ট, লাঙ্, লিভার, ব্রেইন ইত্যাদি বের করে লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এরপর এই অঙ্গগুলো ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আবার মৃতদেহের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয় এবং পরিশেষে মৃতদেহের শরীর সেলাই করে দেয়া হয়।