স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যে অ্যালোভেরার ব্যবহার আজকের নয়। প্রাচীন কালেও রানী ক্লিওপেট্রা, সম্রাট আলেকজান্ডার, বাদশাহ সোলায়মান, নেপোলিয়ন এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মত বিখ্যাত মানুষেরা অ্যালোভেরা ব্যবহার করতেন। ইদানিং কালের বড় উদাহরন মহাত্মা গান্ধী।
ইউনানী শাস্ত্রে শুকনো চূর্ণকৃত ঘৃতকুমারীর নাম হয়ে মুসাওওয়ার। আজকের ট্রান্সন্যাশনাল বা মাল্টিন্যাশনাল কসমেটিক্স কোম্পানিগুলো মহাসমারোহে এ নামটির গুণকীর্তন করছে, বলছে হারবাল। দেখাচ্ছে ছবির সেই কবিরাজ বা বৈদ্য মশায়ের উদূখলের ছবি তা নেহায়েত অকারণে নয়। প্রায় প্রতিটি দামী ইউরোপীয় অঙ্গরাগের কৌটায়, শিশিতে বা বোতলে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার চোখধাঁধানো বিজ্ঞাপনে রয়েছে এলোভেরার জয়গান।
ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাসের মত দেখতে হলেও, ক্যাক্টাস নয়। এটা একটা লিলি পরিবারের উদ্ভিদ যেমন পেঁয়াজ ও রসুন। এটা পেঁয়াজ বা শাপলা-পদ্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর পাতাগুলো বর্শা আকৃতির লম্বা, পুরু ও মাংসল। তরুটির রং সবুজ যার মাঝে রয়েছে রহস্যময় গুণ যার গুণকীর্তন করে কোটি ডলার কামিয়ে নিচ্ছে পাশ্চাত্য, প্রাচ্য দেশীয় তরু থেকে।
পৃথিবীতে প্রায় ২৫০ রকমের অ্যালোভেরা জন্মে, তবে মাত্র দু’রকমের অ্যালো বানিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয়।
আমাদের এ অমূল্য ধনের কথা আমরা অনেকেই জানি না। তবু সাধারণ মানুষ যে জানে তা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করা যায় জনতার ভিড়ে ঘৃতকুমারীর শরবত নোংরা পরিবেশেও দারুণ বিক্রি থেকে। এটা বলছি আমাদের দেশের কথা। গরিব মেহনতি মানুষে খায় পেট ঠাণ্ডা রাখার জন্য। ঘৃতকুমারী কোষ্ঠকাঠিন্য ও খুশকির ভালো ওষুধ।
কৃত্রিম কারখানায় বা কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতে যা অত্যাধুনিক এলোভেরা নামে বেরিয়ে আসে তারচেয়ে বরং ঘৃতকুমারী সজীব টাটকা অবস্থাতেই সবচেয়ে দ্রুত উপকার দর্শায়। কেননা কারখানায় এলোভেরা বানাতে গিয়ে তাপ প্রয়োগ করতে হয়, ওটাকে অনেকদিন ঠিক রাখার জন্য আবার এনজাইম যোগ করতে হয় তাতে ঘৃতকুমারী কম কাজ করে।
মহাচীন যখন মাওয়ের নেতৃত্বে লড়ছে কুওমিন্টাং-এর সাথে স্বাধীনতার জন্য তখন এক পর্যায়ে পাশ্চাত্য তাদেরকে আধুনিক ওষুধ সরবরাহ কঠিন করে দেয়। তখন চীনের নেতৃত্ব গড়ে তোলেন বেয়ারফুট ডক্টর বা নগ্রপদ ডাক্তার। অনেকটাই হাতুড়েই বলা যায়। কিন্তু তারা ভেষজ থেকে যে সব ওষুধ তৈরি করে তা আজকের বিশ্বের অন্যতম হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতি। এর স্বীকৃতি ছিল না। এখন সেই পাশ্চাত্য এর স্বীকৃতি তো দিয়েছেই। উপরন্তু চুটিয়ে ব্যবসাও করে নিচ্ছে।
এলোভেরার নান্দনিকতায় ফিরে আসি। গোটা বিশ্ব জুড়ে এই গাছের জুস বা রস ক্যাপসুল বা জেলের আকারে বিক্রি হচ্ছে। এই জেলের ভেতরে আছে বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা থেকে বিজ্ঞানীরা বলেন প্রাণের সৃষ্টি। এই ২০ অ্যামিনো অ্যাসিডের আটটি দেহের মাঝে তৈরি হয় না। এটা বাইরে থেকে খাদ্যের আকারে গ্রহণ করতে হয়। এটা আসে ঘৃতকুমারী থেকে।
বিউটি এইড হিসেবে ঘৃতকুমারীর জেল বা আঠালো পদার্থ লোশন বা ক্রিমে মিলিয়ে দেয়া হয় ময়েশ্চারিজার হিসেবে। এটা ত্বকে পড়লে ত্বকে একটা উজ্জ্বল আভা আসে, তরতাজা হয়ে ওঠে আপনার ত্বক। এটা দেহের কোনো অংশ পুড়ে যাওয়া সারাতেও ব্যবহার হয়। কাজেই জলপাই তেলেরও আদর্শ বিকল্প এটি। রেডিয়েশন বার্ন সারাতেও এর ব্যবহার হয়েছে বলে এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে।
ঘৃতকুমারী : মেছতা দূর করার আরেকটি উপাদান হলো এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার জেল। এই জেলের রয়েছে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করার ক্ষমতা। আক্রান্ত স্খানে আঙুলের ডগার সাহায্যে ধীরে ধীরে জেল ঘষে লাগাতে হবে এবং সারা রাত লাগিয়ে রাখতে হবে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ লাগালে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এলোভেরা জেলের সাথে ভিটামিন ই এবং প্রিমরোজ ওয়েল মিশ্রিত করে লাগালে এক সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যাবে। একই সাথে জেলের শরবত খেলে ভালো হবে।
অ্যালোভেরা জেল মানুষের শরীরের ভেতরের যাবতীয় আবর্যনা পরিষ্কার করে প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পরিশোধিত করে, ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরার আশ্চর্য ঔষধি গুন রক্তে কোলেস্টেরল ও চিনির মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে সাহায্য করেছে; রক্তচাপও কমিয়ে আনছে। ”অ্যালোভেরা জেলী” ব্যবহারকারীদের তাদের যে কোনো চর্মরোগ, মেছতা, ব্রন দূর করতে দেখা গেছে।
(বাজার থেকে দাম দিয়ে এলভেরার জেল/ ফেইস ওয়াশ না কিনে সরাসরি এলভেরার পাতা থেকে জেল লাগালে ব্রণ এক সপ্তাহে কমে, এটা আমি নিজে পরিক্ষা করেছি।
অবশ্য পরামর্শ দাতা আমার চায়নিজ বন্ধু মাজুন। )
মিসরের রাণীর কাছে কেন এটার গাধার দুধের চেয়ে কদর সেটা এখন বুঝতে পারছেন পোস্ট মডার্ন যুগের সৌন্দর্যপিপাসুরাও।
চুল পড়া বন্ধ করে এলোভেরা, তাই দামী শ্যাম্পুর বোতলেও দেখবো আমরা এর নান্দীপাঠ। চুলপড়া দূর করে এলোভেরা। ইদানিং টুথপেষ্ট ও বেড়িয়েছে এলভেরার, ঘৃতকুমারীর প্রশস্তি তাই আর নয়। শুধু ভরা থাক সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের হৃদয় ।
____________________________ নেট থেকে নেয়া
বি: দ্রঃ এ বিষয়ে রাজা মশাইয়ের একটি পোষ্ট আছে Click This Link