আমাদের দেশের সরকার অনেক স্বাধীন আশে পাশের দেশের তুলনায়। পাকিস্তানের মত,ভারতের মত বাংলাদেশের আতঙ্কবাদী মোকাবেলা করতে হয় না। বড় বড় দেশদ্রোহী দমন করতে হয় না। বিরোধী দল গুলাও পঙ্গু হয়ে যায়। সীমান্ত নিয়ে কারো সাথে ঝামেলা নেই। আর সপ্তাহে সপ্তাহে পারমানবিক বোমার পরীক্ষা চালানোর ও দরকার হয় না। দেশেও তেমন জাত গোত বর্ন বিভেদ নেই। বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনও মোটামুটি সরকারের হাঁতে।
এরকম সরকার ব্যবস্থা চাইলেই ভালো কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কোনো সময়। তেমন কোনো বাধা আসবে না। আসলেও ঊতঁরে যাবার মত। সুতরাং অর্থনৈতিক দিককে উন্নত করার জন্য ভালো কিছু কাজ করতে পারেন। শিক্ষা ব্যবস্স্থাকে কার্যকর করতে পারতেন। বেকারদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার অনেক সময় পেতেন । কারন অন্য দিকে তেমন সময় অপচয় করতে হত না। প্রবাসীদের কল্যানে ভালো কিছু করা সম্ভব। দেশে এতো বেশি কার্যক্ষম লোক আছে যা দেখে জাপানের মত দেশ আফসোস করতেই পারে। কিন্তু তাদের দক্ষ করার দায়িত্ব নিতে পারেন। নাহলে যখন নির্ভরশীল লোকের অনুপাত বেশি হয়ে যাবে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে, তখন দেশ আরো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরবে। তখন ভিশন ২০২১ কিংবা ২০৩০ উলটে ভিশন ১৭৭৬ হয়ে যাবে।
সরকারের দরকার ঢাকা শহরকে কার্যকর রাখার ব্যবস্থা করা। বিকেন্দ্রীকরনের মাধ্যমে ঢাকার জনসঙ্খ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। তার জন্য বেশ কয়েকটি ইকোনোমিক জোন তৈরি করতে হবে যার সাথে ঢাকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুব ভালো হবে। তারপর ঢাকাকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজানো দরকার দীর্ঘ মেয়াদে। তবে অত দীর্ঘ যেন না হয় যে শেষে গিয়ে নেতিয়ে পরে । দরকার হলে বিদেশি পরিকল্পনাবিদ, পরামর্শ দাতা আনতে হবে।। সিউয়ারেজ ও পানির লাইন এমনভাবে ডিজাইন করা দরকার যাতে ৫০ বছরের বেশি টিকে যেতে পারে ছোটো খাটো মেরামতের সাহায্যেই। রাস্তাঘাটের উপযুক্ত সংস্কার করতে হবে। বছরের শেষে কাজ কত টুকূ শেষ হয়েছে তার রিপোর্ট বিবেচনা করে দরকার হলে আরো দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাবস্থা করতে হবে। যদি ঢাকার জনসংখ্যা অর্ধেকে আনা যায় তখন কোটি কোটি টাকা দিয়ে এলিভেটেট এক্সপ্রেস বানানোর দরকার হবে না। ১৪০ তলা আইকনিক টাওয়ার বানানোর বিলাসিতা আমাদের জন্য না। আপাতত রামপাল, রুপপুর ইত্যাদি প্রকল্প স্থগিত করা দরকার।
সেই টাকা দিয়ে জনগনকে শিক্ষিত করার ব্যবস্থা করা দরকার আগে। জিপিএ দিয়ে কাজ হবে না। ওইসব সমাস, কারক, লিংগ আর রচনা মুখস্থ করার দিন নাই। জার্নি বাই লেগুনা পরে লাভ নাই। ইংরেজিতে দক্ষ করার মত কার্যক্রম মাদ্রাসা, কারিগরী ,প্রাইমারি সব ক্ষেত্রেই সংযোজন করতে হবে। অনার্স মাসর্টাস শেষেও স্পোকেন ইংলিশ কোচিংএ দৌড়ানো কিংবা ৩০ দিনে ইংরেজি শিখুন এইসব বই কিনতে যাতে না হয়। কোনো বিষয়ে বিদ্যের জাহাজ না বানিয়ে উপযুক্ত কাজে চলার মত করে বানাতে হবে। সোমালিয়ার মুদ্রার নাম কিংবা হাট্টিমা টিম টিম মুখস্থ করার দরকার নাই।
কারিগরি শিক্ষার প্রসার দরকার। বাইরে থেকে প্রশিক্ষক আনা দরকার। বড় বিনিয়োগ দরকার উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা দিতে, প্রশিক্ষন দিতে। মান দাতার আমলের যন্ত্র দিয়ে খেলনা বাটী খেলার মত প্রশিক্ষন দিয়ে লাভ নেই। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। ফলে প্রবাসেও আমাদের জনশক্তির চাহিদা বাড়বে। রেমিটেন্স এমনিতেই বেড়ে যাবে। দেশের কাজে বিদেশী আনার প্রয়োজন হবে না আর।
এসব কাজের জন্য ভালোই সময় পায় আমাদের সরকার। কিন্তু তারা তাদের মুল্যবান সময় গুলো ব্যয় করে পুর্বে কি হয়েছে না হয়েছে, কোন সরকার কি করেছে, কারা চুরি করেছে আর কারা পাহারা দিয়েছে এইসব বিজ্ঞাপন দিয়ে। কিন্তু ১৭ কোটির দায় নিয়ে তারা চিন্তিত কখনোই হয় না। ক্ষমতায় এসেই পরবর্তী নির্বাচনে যেন চেয়ার ঠিক থাকে সেই ব্যাবস্থা করা শুরু করেন।
ফলে তাদের অবদানে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। এতোদুর যে দুর্বিন দিয়েও নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না। চায়নার বাচ্চারা খেলার ছলে রোবট বানায়,ড্রোন বানায়। আমাদের ছেলেরা আমাজন থেকে অর্ডার করে এনে পত্রিকার শিরোনাম হয়। একদল বূলেট ট্রেন বানায় , আরেকদল পিক আপ ভেঙ্গে লেগুনা বানায়, বাশ দিয়ে রিকশা বানায়। লোহার বদলে এখন প্লাস্টিকের রড ব্যবহার হচ্ছে। আমরা বাশেই পরে আছি।
সরকাররা কেউ চায় না দেশের ছেলে পেলেরা শিক্ষিত হোক। ভালো আয় করুক আর ভালো খাক। তাদেরকে মোটামুটি ভালো মন্দ বিবেচনা হীন করে রাখলেই সবার সিট ঠিক থাকবে, খালি পেটে কে আবার সরকারের বিরুদ্ধে মিছিলে যাওয়ার সাহস করবে???
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৭