নিজের অসার দেহটাকে কোনো রকমে টানিয়া টুনিয়া বাড়ির গেইটে নিয়া আসিলাম ।
এত কম সময়ে পৌছাইয়া যাওয়াটা আমার মত অপেশাদার মালখোর দ্বারা সম্ভব হইত না যদি না ঐ বজ্জাত কুত্তার বাচ্চারা ধাওয়া না করিত।
এমনিতে পেটে মাল পরিলে আমার পা চলিতে চায় না । দুই এক পা চলিলেও আমার কথামত চলে না । আমি যাহা বলিব , সবসময় উহার বিপরিত করাই যেন তাহাদের ধর্ম ।
তার উপরে আবার পাগলা কুত্তার ধাওয়া , দৌড়াইতে দৌড়াইতে মনে হইল আমার মুখ গহব্বর দিয়া যেই লাল পানি পেটে প্রবেশ করিয়াছে ,তাহা বুঝি বিদ্রোহ করিয়া নিম্ন উপত্যকার সুড়ংগ পথ দিয়া নির্গমন হইবার চেস্টা করিতেছে । শালা কুত্তার বাচ্চারাও না, আমার মত নিরিহ মানুষের পিছনে লাগে। দাড়া,আজকে আমারে মাতাল পাইয়া দৌড়ানি দিছস,যেদিন তোগো মাতাল পামু ওইদিন আমিও খবর বানাইয়া দিমু । তয় যাই হউক না কেন ,সব মিলাইয়া লাভের পাল্লাটা আমার দিকেই ঝুলিল । তাড়াতাড়ি পৌছানো মানে কম পেরেশান।
কিন্তু আমার চার তলার ছোট ঘরখানায় পৌঁছাইতে এখনো কমপক্ষে চার কুড়ি ধাপ অতিক্রম করিতে হইবে।
আমার মত মাতালের পক্ষে চার কুড়ি ধাপ আর খোঁড়া মানুষের এভারেস্টের চুড়ায় উঠা একই কথা।
আর কোনোমতে অলৌকিক শক্তি যদি আমাকে ওখানে পৌঁছেও দেয়, সেখানে ওঁত পেতে আছে মহা বিপদ। আমার গিন্নী। রাত দুটার সময় বাসায় ফেরার শাস্তিস্বরূপ তো ঘন্টা খানেক গেটের বাইরেই দাড় করাইয়া রাখবে,তার উপর যদি দেখে মদ গিলে এসেছি,তাহলে তো আর রক্ষেই নাই।
নাহ। এতসব চিন্তা বাদ । আগে উপরে উঠি।
গেটের সামনে বীভৎস ক্যাকটাস বহনকারী টবের মধ্যেই সেই উত্তেজিত লাল পানির বিদ্রোহ দমনপুর্বক সিঁড়িতে কদম্বুচি করিয়া গগন পথে যাত্রা শুরু করিয়া দিলাম।
বহু কস্টে সিঁড়ি নামক পুলছিরাত পার হইতেছি। হাতল খানা প্রানপনে আঁকড়াইয়া ধরিয়া এক পা দুই পা করিয়া উঠিতে লাগিলাম । মনে মনে বেয়ার গ্রিলস কে ধন্যবাদ দিলাম। তাহার কাছ থেকেই তো প্রতিকুল অবস্থায় লতা পাতা বাহিয়া পাহাড়ে ঊঠিবার টেকনিক শিখিয়াছি ।
যাক, এই যাত্রায় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটাইয়াই চার তলায় পৌঁছাইয়া গেলাম। নিজেকে এভারেস্ট জয়ির মতই মনে হইল। নিজের দক্ষতা দেখিয়া নিজেই প্রশংসায় হাত তালি দিলাম।
কিন্তু পরক্ষনেই আমার সকল প্রশংসা আনন্দ ম্লান হইয়া গেল যখনই মনে পড়িল এখনো ২য় এবং খঠিন ধাপ খানা পেরনো বাকি।
গেটের সামনে দাড়াইয়া খানিকক্ষন নিজেকে প্রস্তুত করিলাম আসন্ন ধকল সামলাইবার জন্য । সাথে নিজের প্যান্ট ,শার্ট ,জুতা তুটা দেখে নিলাম সব ঠিক ঠাক আছে কিনা। ধরা পরিলে কি বলিতে হইবে তাহার কিছু আত্মস্থ করিলাম ।
কোনো ভুলভাল যাতে না হয় । প্রথম দর্শনে যাতে বউ কিছু বুঝিতে না পারে।
নকল চাবি খানা দিয়া গেট খুলিয়া চুপি চুপি খাবার ঘরে পৌছাইলাম। লাইট খানা জ্বালাইয়া টেবিলের উপর নিজের প্রিয় খাবারের সমারোহ দেখিয়া হাত মুখ ধোয়ার কথা বেমালুম ভুলিয়া গেলাম। এর মধ্যে টের পাইয়া আমার বউ এসে আমার সামনে দাড়াইল।
বেশী রাত হইছে বলে আমার দিকে কটমট করে তাকাইয়া আছে কিন্তু বকাবকি করিতেছে না।
স্বাভাবিকভাবেই বলিল , ভাত খেয়ে নাও!
আমি গিয়ে টেবিলে বসিলাম । বউ দাড়াইয়া আছে পাশে । ভয়ে ভয়ে খুব সতর্ক ভাবে ভাত লইলাম, তরকারীও লইলাম , তারপরে ঠিকঠাক মত খাইতে থাকিলাম । এরপরে ডাল নিয়াও খাইতে থাকিলাম,আজকে জানি কেন সবকিছুতেই বড় স্বাদ পাইতেছি।
এবার বৌয়ের দিকে তাকাইয়া দেখি বউ চোখ বড়বড় করে তাকাইয়া আছে।
আবার কি ভুল করিলাম , না সবকিছু তো ঠিক ঠাক মতই আছে।
বৌয়ের দিকে তাকাইয়া সুমিষ্ট একটা দিতেই বউ চিৎকার করিয়া বলে উঠল " মাতালের বাচ্চা মাতাল ,তোমার প্লেট কই?"
[[[[গুরুচন্ডালীর জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত]]]]]
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৯