ঈদের ২য় দিন বিকেল বেলায় ।
আজিমপুর এতিমখানার মূল ভবনের নিচে দাড়িয়ে ফুটবল ম্যাচ দেখছি। যদিও খেলা দেখা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমার উদ্দেশ্য হল আমার বন্ধুর সাথে দেখা করা যে এই মুহুর্তে মাঠে খেলছে। তবুও সন্ধ্যের আগ মুহুর্তে উত্তেজনায় ভরপুর খেলাটা ভালই উপভোগ করছিলাম ।
মাগরিবের আযান পড়লে তাদের খেলায় ছেদ পড়ল। সবাই যে যার মত চলে গেল। আমার বন্ধু এসে আমাকে ওর রুমে গিয়ে বসতে বলে ফ্রেশ হতে চলে গেল।
ওর রুম এই ভবনের দোতালায়। তাই সিড়ি ভাঙ্গার কষ্ট এড়াতে ওখানেই দাড়িয়ে ওর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকলাম।
অপেক্ষার সময় এমনিতেই কাটে না। তার উপর আবার সন্ধ্যের অপেক্ষা ।
তাই মোবাইলটা হাতে নিয়ে টিপাটিপি শুরু করলাম। যাতে সময় টা তাড়াতাড়ি কেটে যায়।
এক ছেলে পাশে এসে দাড়াল। ভ্রুক্ষেপ না করেই গেমস খেলায় মন দিলাম। ৫ মিনিটের মত দাড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তির সাথে জিজ্ঞেস করলাম
---"কি চাই?"
কোনো উত্তর না পেয়ে মোবাইলটা পকেটে পুরে ছেলেটার দিকে তাকালাম।
৮ কি ৯ বছর বয়স । কাল মতন দেখতে। পোশাকের আগোছালো ভাব দেখে যে কেউ বলতে পারবে এই এতিমখানারই ছেলে।
মন খারাপ। চেহারায় ভেসে উঠা কষ্টের ছাপটা সন্ধ্যের অন্ধকারও ঢাকতে পারেনি।
---"কিছু বলতে চাও? সমস্যা নাই। বলতে পারো"। এবার গলাটা নরম করে জানতে চাইলাম ।
কিছু না বলে পকেট থেকে একটা পুরনো কাগজের টুকরা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। অনেক দিনের পুরনো কাগজ।তার উপর হাতের ঘষায় ঘষায় একেবারে নাজুক অবস্থা। এই বুঝি ছিড়ে গেল।
কাগজ খানার দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম একটা মোবাইল নাম্বার লেখা আছে।
কিছু না বুজতে পেরে কৌতূহলি দৃষ্টি কাগজের উপর থেকে সরিয়ে কাগজের মালিকের চোখের দিকে ঘুরালাম।
---"ভাইয়া, এইডা আমার ভাইয়ের নাম্বার। আপনার মোবাইল দিয়ে একটু কল দিবেন। ৩ মাস হইছে আমাকে এইখানে রেখে গেছে ,একবারও দেখতে আসে নাই। কালকে ঈদের দিনেও না।" ফ্যাস ফ্যাস কন্ঠে বলে উঠল ছেলেটা।
নিস্তব্ধ হয়ে ছেলেটার ছল ছল চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম । কাগজ খানার দিকে তাকালাম, যার কলম ,পেন্সিল এর কথা প্রত্যেকদিন ভুলে যাওয়ার কথা ,হারিয়ে ফেলার কথা ,সে ৩ মাস এই কাগজখানা যত্নে রেখেছে। পকেটে পকেটে রেখেছে। আমার মত কত জনের কাছে সাহায্য চেয়েছে।
আর প্রার্থনা জানালাম প্রভুর কাছে আমাকে এর থেকে সুখি রাখার জন্য। সুন্দর পরিবারের সাথে বসবাস করার সুজোগ দেয়ার জন্য।
এরপর অনেকবার ওই খানে গিয়েছিলাম কিন্তু সেই ছেলেটাকে আর খুজে পাইনি। হয়ত চিনতেই পারিনি। কিন্তু এখনো সেই ছেলেটার জন্য আমার আফসোস হয়।
ইস!!! যদি সাহায্য করতে পারতাম....................
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩