সকালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গেলাম।
আজ রবিবার।। রাস্তাঘাটে জ্যাম হবে তাই সময়ের আগেই রওনা হলাম।
দিনের পরিকল্পনা আগের দিন রাতেই সারা।
তাই রওনা হয়ে বাসস্ট্যান্ড যেতে তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয় নি। বাসের জন্যও বেশি অপেক্ষা করতে হয় নি। এত তাড়াতাড়ি বাস পেয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি।
গত কয়েক বছরে এমন সার্ভিস তো পাইনি। অন্তত আমার কপালে ছিলো না।
বাসে উঠতেই সিট ফাকা পেলাম। তবে জানালার পাশে না। তাই পাশের ভদ্রলোককে একটু বলতেই তিনি অতি উৎসাহে জানালার পাশের সিটটা আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমার বউ তো টিভির রিমোট টা ছাড়তেও ১ ঘন্টা যুদ্ধ করে। আর এই লোক কিনা??
তার উৎসাহে প্রথমে খটকা লাগলেও পরে ভাবলাম দুনিয়াতে ভালো মানুষও আছে । নাহলে কেয়ামত কবে চলে আসত ?
রাস্তাটা আজ ফাকা! অন্যদিন যেখানে চাকা একপাক ঘুরতে তিনবার ব্রেক করা লাগত ,আজ সেখানে হরদম ছুটে চলছে। তাও যেন সুপারম্যানের গতিতে।
মনটা খুব ভালো । দিনটা যদি এরকম ভালো যায় তবে মন কারই বা খারাপ থাকে।
জানালার পাশের হালকা বাতাসে ঘুমু ঘুমু ভাব চলে এলো। ঘুমাতে আর আটকায় কে?
একটু পর কন্ট্রাক্টারের ডাকে ঘুম ভেংগে গেল।"মামা ভাড়া দেন, অই মামা ভাড়াটা হইছিল???" বিরক্ত হয়ে ভাড়াটা পরিশোধ করলাম।
প্রত্যেকদিন এই ভাড়া নিয়ে ৫ মিনিট ক্যাঞ্চাল করতে হয়। আজ কিছু না বলেই একটা তৃপ্তির হাসি দিল!!
হাসিটা আমার বিরক্তিকে দূরে সরিয়ে দিল।
এদের সাথে পথে কত ঝামেলা করি। বেচারা পয়সার জন্যই তো কাজ করছে।
নাহ! আজ থেকে আর কখনোও রিকশাওয়ালা কিংবা বাস কন্ট্রাক্টার দের সাথে দুর্ব্যবহার করব না।
সামনের সিটের ইয়ো ইয়ো স্টাইলের যেই ছেলেটা কানে খুঁটি পুঁতে মাথা দোলাচ্ছে,সেও এক মুরুব্বিকে সিট খান ছেরে দিল।
মহিলা সিটে কোনো পুরুষ বসেনি।ঊল্টো কতক যুবক তাদের সিট ছেড়ে মহিলাদের বসার ব্যবস্থা করে দিলেন।
এইরকম যদি সবাই ভালো মানুষ হত!! সবাই অন্যকে সাহায্য করত! তাহলে পৃথিবীটা সত্যিই জান্নাতে পরিনত হত।
এই বাসের ভিতরে যেমন এখন জান্নাতি ফ্লেভার পাওয়া যাচ্ছে। হয়ত কোনো একদিন পুরো পৃথিবী ছড়িয়ে যাবে।
আনমনে এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে গন্তব্যে পৌঁছে গেছি খেয়াল করিনি।
পাশের সেই ভদ্রলোকের ডাকেই হুশ ফিরল।( মাঝপথে একটু আধটু কথা হয়েছিল,তাতেই আমার গন্তব্য স্থল জানতে পেরেছেন)
ভদ্রলোককে ধন্যবাদ দিয়ে নেমে গেলাম।
জানালায় তাকিয়ে বিদায় অভ্যর্থনা জানাতেই হাসি মুখে গ্রহন করলেন।
মানুষকে খুশি করতে আসলেই টাকা পয়সার দরকার নেই। ভাল ব্যবহারই যথেষ্ট।
বাসটা চলে যাচ্ছে,আমি অনেক্ষন তাকিয়ে ছিলাম ওইদিকে।
ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল আমি যার কাছে এসেছি তাকে ফোনটাই দেয়া হয় নি। আমাকে রিসিভ করতে আসার কথা তার। আমি ত কিছুই চিনি না।
পকেটে হাত দিয়েই বুজলাম কেস জন্ডিস। আমার অল্প দামি মোবাইল খানা আর আসার পথে এটিএম থেকে তোলা চকচকে নোট সমৃদ্ধ মানি ব্যাগের মামলা খালাস হয়ে গেসে। বিদ্যুৎ গতিতে প্যান্ট পকেট ব্যাগের পকেট সব চেক করে ফেললাম। নাহ ! লাভ হল না। যা হও্য়ার তাই হয়েছে।
কোনোমতে যাত্রী ছাউনিতে বসে পড়লাম। সকাল থেকে ঘটা সবকিছু মাথায় রিপ্লে করলাম।
কিন্তু এবার আর জন্নাতি ফ্লেভার না,যেন জাহান্নামের পচা গন্ধা ফ্লেভার আসছে।
সব শালারা এক একটা শুয়োরের জাত।
কন্ট্রাক্টারের হলুদ দাতগুলো বের করা হাসি দেখে যেন কোনো বীভৎস জানোয়ারও চমকে যাবে। ইয়ো ইয়ো শালাকে দেখলে যে কেউ বলে দিতে পারবে শালা জন্মসুত্রে গাঞ্জাখোর।
পাশের সিটের সেই সূফী ভদ্রলোক তো বড় হারামি। জানালার পাশে রোদ বলেই আমাকে ওইখানে বসাইছে।......শালা কুত্তা। হারামি। জানোয়ারের জাত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:১৫