জানালার বাইরে কুয়াশার ক্যানভাসে কিছু ক্লান্ত কাকের উড়ে যাওয়া দেখতে দেখতে বিভ্রম হয়; সে বিভ্রমের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায় শব্দিতা। শব্দিতা সম্পর্কে অনেক কথা লোকমুখে প্রচারিত হলেও শব্দিতাকে ভালোবাসে না, এরকম মানুষ পাড়ায় কম। জানালাবাসী শব্দিতাকে ভালোবাসে না। তবে সে রোজ সকাল আর বিকেলে জানালায় বসে শব্দিতার জন্যই। শব্দিতা আসবে কিংবা যাবে, ঘাড় বাঁকিয়ে এদিক ওদিক তাকাবে রিক্সার জন্যে, তারপর কখনো ওড়না কখনো শাড়ির আঁচল গুটিয়ে উঠে যাবে রিক্সায়, এই দৃশ্যগুলোর মধ্যকার সিম্ফনী সমাপ্তপাঠ করে উঠে যাবে ইজেলে। সেখানে কুয়াশার ক্যানভাসে ডানা ঝাপটায় কাক আর উড়ে উড়ে আসে নীল ওড়না।
'মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!', শব্দিতা একদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখে রাখে।
নীল রঙ আজ শেষ, কামিজের গলার কাছে কিছু নীল ফুলের কাজ ছিলো। জমিনের কেন্দ্রে, যেখানে কামিজের গলা পুনরায় সমতলে নামে, ছোপ ছোপ আলতা রঙ। বাতাসের সাথে সংঘর্ষে মনে হয় নিষিদ্ধ বইয়ের পাতা। আলতাও নেই আজ। রঙহীনতার প্রাবল্যে শব্দিতার দেহাবয়ব উড়ে যাওয়া কাকের ডানায় রুপার দুল হয়ে দুলতে থাকে।
ঠিক এসময়েই ঘোর এসে ঘরে ঢুকে। বাতাস ভরে যায় অন্ধ ধোঁয়ায়, ঝিম মারে ঘড়ির কাঁটা।
'আমি অনান্দিত ও মুগ্ধ হয়েছিলাম', শব্দিতা প্রতিমন্তব্য করে।
কুয়াশা কেটে যেতে শুরু করে আর ডানা ঝাপটায় সবগুলো কাক। কোনো এক আলোয় কাকের কালো উড়ে গেছে, পড়ে আছে শুধু শাদা। দেখতে দেখতে আকাশ খালি করে সব সরে যায় আর সাথে নিয়ে শব্দিতার ওড়না। উড়াল দেয় আর আর সব।
ক্যানভাসে লেপ্টে পড়ে কিছু হলদেটে, সাথে মেশে গোলাপি। সবার শেষে আধখোলা জানালা দিয়ে উড়ে আসে কিছু কুয়াশা। অদ্ভুত রঙয়ের সংসার বসে ক্যানভাসে।
এই সময় শব্দিতাবিষয়ক বিভ্রমে ঘূর্ণি সৃষ্টি হয় আর... ... ...
' আমায় সে ঢেকেছিলো আর বলেছিলো বিমূর্ত!', শব্দিতার নতুন স্ট্যাটাস।