somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা দুইটা শিবির ধর-সকাল বিকাল নাস্তা কর!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন আমি প্রচন্ড শিবির বিদ্বেষী। জামায়াত-শিবিরকে ঈমানের তাগিদে ঘৃণা করি! তাদেরকে অনেকটা কাফের তুল্য মনে করি। তবে তখনও তাদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। মাদ্রাসার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক 'হুজুরগণের' কল্যাণে আমার কিশোর মনে তাদের সম্পর্কে একটা ভয়ঙ্কর ধারণা জন্মে ছিল। এক সময় লক্ষ করলাম জামায়াত-শিবির সম্পর্কে আমার শ্রদ্ধেয় হুজুরগণের জানা-শুনা আমার মতোই জিরো। তারাও নাকি তাদের শিক্ষকগণের কাছে জেনেছেন জামায়াত-শিবির ভয়ঙ্কর খতরনাক! অনেকটা 'মুরুবি্বগণ' বলেছেন টাইপের! আজ কাল একটি জামাত 'মুরুবি্বগণের' রেফারেন্সে অনেক অবান্তর কথা অবলিলায় বলে বেড়াচ্ছে!

নানান কারণে কওমী মাদ্রাসায় আর মন বসে নি। চলে এলাম আলিয়া মাদ্রাসায়। কওমীর হুজুরগণ তখন ফতোয়া দিতেন আলিয়া থেকে দাখিল পরীক্ষা দেয়া হারাম!! আবার দেখতাম কিছু মতলববাজ হুজুর গোপনে আলিয়া থেকে পরীক্ষা দিয়ে সরকারী চাকুরী করছেন! আলিয়ায় এসে পেলাম একজন জবরদস্ত আলেম যিনি কওমীর ফারেগ আবার দীর্ঘ দিন কওমীতে পড়িয়েছেন। তিনি একদিন ডেকে বললেন, তুমি নাকি শিবিরের ছেলেদের ডাকে সাড়া দিচ্ছ না। আমি বললাম, ওরা তো বাতিল! তিনি বললেন, না তোমার কথা ঠিক নয়। মনে মনে বললাম মিয়া আপনিও বাতিল!

সম্ভবত ১৯৮৯ এর প্রথম দিকে বড় ভাইয়ে জন্যে টাকা আর মায়ের দেয়া পিঠা নিয়ে গেলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়নে লুঙ্গী, গায়ে পাঞ্জাবী, মুখে সদ্য গজানো দাড়ি! রেল স্টেশনে নেমে রিক্সা নিয়ে যাই আমীর আলী হলের গেইটে। হলের দু'তলায় মিছিল হচ্ছে। গগণ বিদারি আওয়াজ 'একটা দুইটা শিবির ধর-সকাল বিকাল নাস্তা কর'। রিক্সা থেকে নামার সাথে সাথে দুইটা ছেলে আমার বাম হাত ধরে টেনে সিড়ি দিয়ে দু'তলায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আমি ছাগলের মতো মেঝে পা ঠেকিয়ে নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করছি। এমন সময় একজন সিনিয়র টাইপের ছাত্র এসে ধমক দিয়ে বললেন, এই কি হয়েছে? থামো। আমাকে ছাড়িয়ে তিনি পরিচয় নিলেন। তারপর নীচ তলায় বড় ভাইয়ের রুমটা দেখিয়ে চলে গেলেন।

দরজায় কড়া নাড়ছি কিন্তু দরজা খুলছে না। এদিকে মিছিলের গমগম আওয়াজে গা ঠান্ডা হয়ে আসছে এই বুঝি মিছিল আমার কাছে এসে গেলো! ভেতরে কেউ আছে কিনা তা দেখার জন্য জানালার ফুরে চোখ দিতেই বড় ভাইয়ের সাথে চোখা-চোখি হয়ে গেলো। তিনি দ্রুত দরজা খুলে আমার হাত ধরে টান দিয়ে জলদি ভিতরে নিয়ে গেলেন। ভয়ে তার মুখটা শুকিয়ে গেছে। প্রথমেই জানতে চাইলেন গেইটে কিছু হয়েছে কিনা? বললাম, দুইটা ছেলে আমাকে টেনে উপরে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো। মাঠের দিক থেকে একজন এসে আমাকে ছাড়িয়ে আপনার নাম জেনে দূর থেকে রুমটা দেখিয়ে দ্রুত কেটে পড়লেন। ভাই এবং তার রুমম্যাটরা চাপা কণ্ঠে কথা বলছিল।

পরে জানতে পারি মিছিল করছিল ছাত্র মৈত্রীর ছেলেরা। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৈত্রীর একচ্ছত্র আধিপত্য। বর্তমানে রাজশাহীর চিড়িয়া খানায় দু'এক পিস মৈত্রী আছে কি না জানি না। কখনো সুযোগ হলে দেখে আসবো! সে সময়ের কথা মনে পড়লে এখনো গা কাটা দিয়ে উঠে। যদি ছাত্র মৈত্রীর বিপ্লবী ভাইয়েরা আমাকে শিবির মনে করে সেদিন নাস্তা করে ফেলতো তাহলে কি আজ আমি তিন যুগ ধরে এদেশে তাদের, তাদের দোসরদের, তাদের গুরুদের ভন্ডামি দেখতে পারতাম? মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে শেষমেশ নৌকায় আরোহন করে তাদের আখের গোছানোর নাটক দেখতে পারতাম?

কৌতুহল বলেন আর জানার জন্যই বলেন, এদেশের রাজনৈতিক দল এবং দলগুলোর নেতাদেরকে আশির দশক থেকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছি। সত্যবাদিতা, আমানতদারিতা, ওয়াদা রক্ষা করা, সহমর্মীতা, দেশ এবং জনগণের কল্যাণকামিতা, রাষ্ট্রকে শিক্ষা এবং বিত্ত বৈভবে বিশ্বের বুকে তুলে ধরার নিরন্তর প্রচেষ্টা সর্বোপরি ব্যক্তিগত চরিত্রমাধুর্যে তাদেরকেই একটু এগিয়ে দেখেছি যাদেরকে আমি কৈশোরে ঈমানের খতরনাক হিসেবে জেনেছি। আমি এদেরকে পীর-দরবেশ বলছি না। আমি বলছি এরা নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালোর মতো 'মামা'। এদেরকে যারা কথায় কথায় গালি দেন তাদেরকে দেখেছি 'মারিং কাটিং' আর দুই নম্বর কাজে এক নম্বর! এটা আমার দেখা। ৭১-৭৫ এর মতো শুনা নয়। দেশটা তো আর বেশী বড় নয় ইচ্ছে করলে আপনারাও পরখ করে দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:২৬
১৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×