ফেসবুকে মেয়েটির প্রোফাইল পিকটি অসাধারণ; রাসানের পছন্দ হয়েছে। এমনেতেই রাসানের বাস্তব লাইফে কোন বন্ধু-বান্ধব নেই। ওর জীবনে শুধু পড়ালেখা, ভার্সিটি আর ফেসবুক। এর বাইরে সে আর কিছুই কল্পনা করতে পারে না। চশমা পরে বিধায় বন্ধুরা তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ক্ষ্যাপায়। রাসান পড়াশুনা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে। মেধাবী ছাত্র সে; অনায়সেই সে সেই বিভাগের টিচার হতে পারবে। এদিকে মেয়েটির প্রোফাইল ইনফোতে শুধু রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস সিঙ্গেল ছাড়া আর কিছুই দেওয়া নাই। রাসানের হাত শুধু এড ফ্রেন্ড বাটনে ঘুরাঘুরি করছে; সে মেয়েটিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে কিনা চিন্তা-ভাবনা করছে। এমন মায়াবী চেহারা মেয়েটির যে, সে বারবার মেয়েটির ওয়ালে ঢুকে তার একটিমাত্র প্রোফাইল পিকটি দেখছে। এবার সে এড ফ্রেন্ড বাটনে ক্লিক করেই ফেলল। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চলে যায় অজো পাড়াগাঁয়ের খুব সুন্দরী ইসমত জাহানের কাছে। মেয়েটি গ্রামের খুব গরীব ঘরের, পাঁচ ভাই-বোনদের মধ্যে সেই বড়। দেখতে অনেক সুন্দরী বিধায় বাবা তাকে বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছে; যাতে পাড়ার বখাটে ছেলেরা তাকে বিরক্ত না করে। অলস সময় কাটে না বিধায় সেও ফেসবুকে সময় কাঁটায়।
সেদিন বিকাল ৪টা রাসানের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করল মেয়েটি। শুরু হল তাদের বন্ধুত্ব...
আচ্ছা রাসান তুমি ফেসবুকে সারাদিন কি কর ?
ইসমত ফেসবুকে আমি স্পেশাল একজনের জন্যই থাকি এবং আমি চাই যে, সে বুঝুক আমি তাকে কতটা গুরুত্ব দেই।
ও আচ্ছা, ভালো ভালো; তো সে স্পেশাল মানুষটি কে রাসান ?
টপ সিক্রেট; বলা যাবে না, তুমি যদি তাকে বলে দাও ! সে যদি আবার আমার কাছ থেকে দূরে চলে যায়...
আরে যাবে না যাবে না বল; আর আমি তাকে বলে দিব না। প্রমিজ...
যদি বলি তুমি...
আহহহহমি...ধুররররররর...
আমার সাথে কে প্রেম করবে; গরীব ঘরের মেয়ে আমি। আমাদের কি ভালোবাসা মানায়। সত্যি করে বল সে কে ?
এই যে, এক সত্যি...দুই সত্যি...তিন সত্যি বললাম, তুমিই সেই মেয়েটি; যে আমার মনের রাজকন্যা হবে।
রাসান তুমি এসব কি বলছো; এ হয় না তুমি শিক্ষিত তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতা অনেক বেশী, আমার কোন কোয়ালিফিকেশন নাই; মূর্খ একটা মেয়ে। শুধুমাত্র কথাটাই একটু শুদ্ধভাবে বলতে পারি আর কিছুই না। তোমার জীবনের সাথে আমাকে আষ্টেপাষ্টে তোমার কোন লাভই হবে না বরং জীবনের প্রতিটি জায়গায় লাঞ্ছিত হবে।
হুম সবই বুঝলাম; কিন্তু তারপরও আমি তোমাকে চাই। আমি তোমাকে আমার মত করে গড়ে নেব।
এভাবেই দু’জনার মধ্যে প্রেমের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দিনকে দিন তা আরো মধুর হয়ে উঠতে থাকে। মা-বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে দু’জন দু’জনার সাথে দেখা করা, ঝগড়া করা, নদীর তীর ধরে দূরে কোথাও হারিয়ে যাওয়া; এভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন।
এদিকে রাসানের দেশের পড়াশুনা শেষ; উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় রাসানের স্কলারশিপ হয়েছে। এই কথা শুনে ইসমত তো কেঁদেই অস্থির। তুমি আমাকে ছেড়ে এত্তো দূরে গিয়ে থাকতে পারবে বল ?
ধুরররররর...পাগলী তা কি করে সম্ভব, আমারও কি কম খারাপ লাগছে; আমি তো যাচ্ছি শুধু তোমার আমার সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্য। ফিরে এসে তোমার সাথে সুখের একটা ছোট্ট সংসার পাতব তারপর শুধু তুমি আর আমি...
তোমার আমার ভালোবাসা ছিল একটা দেশের সীমানার মধ্যে বন্দী কিন্তু এখন থেকে আমাদের ভালোবাসা হবে সীমানাহীন...
কয়েকদিন পর রাসান আমেরিকায় চলে যায়, ইসমতের কাছে রেখে যায় অসংখ্য পুরনো স্মৃতি। যেই স্মৃতিগুলো তাকে প্রতি মুহূর্তে তাড়া করে বেড়ায়। এদিকে কয়েকদিন হয়ে গেল, রাসানের কোন খোঁজখবর নেই, নেই ফেসবুকে কোন টেক্সট; নাকি সাদা চামড়ার ভালোবাসা পেয়ে রাসান তাকে ভূলে গেছে ?
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ফেসবুকে জেগে থাকে ইসমত কিন্তু রাসান ইসলামের কোন দেখাই নেই। ফেসবুকে তার কোন কার্যক্রমই নেই। এদিকে ইসমতের বিয়ের জন্য তার মা-বাবা তাকে তাড়া দিচ্ছে; তাহলে রাসানকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে ইসমতের ?
৩ বছর হয়ে গেল, রাসান আজ মৃত। আমেরিকা যাবার পথে প্লেন ক্রাস করে রাসান ইসলাম মারা যায়; সেই সংবাদ ইসমত পায় তার মৃত্যুর ঠিক ৩ বছর পর যখন সে তার প্রথম বাচ্চার জন্ম দেয় কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয় বাচ্চাটা যেন ঠিক রাসান ইসলামের মত হয়েছে; বাচ্চা জন্ম দিতে তার যতটা না কষ্ট হয়েছে রাসানের মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার থেকেও বেশী কষ্ট হয়েছে ইসমতের। ইসমতের এখন ছোট্ট সুখের সংসার, ফুটফুটে একটা বেবী আর রাসান ইসলামের মত করে ভালোবাসার জন্য একটা স্বামী আছে তার কিন্তু রাসানের সেই স্মৃতিগুলো এখনো তাকে তাড়া করে বেড়ায়। তার বেবীর নাম দেয় রাসান আলমগীর। এভাবেই রাসান ইসলামের “সীমানাহীন” ভালোবাসাকে আজও বুকে চেপে নিয়ে বেঁচে আছে ইসমত জাহান।