মিউজিকের এন্টারটেইনিংয়ের জন্য বলিউডের মুভির জুরি নেই। আমরা অনেকেই কমবেশী বলিউডের মুভির প্রতি আসক্ত। কারো আমির, কারো শাহারুক, কারো সালমান কিংবা কারো শাহেদ, রনবীর, ঋত্বিক’রে ভালো লাগে। এটা যার যার ব্যক্তিগত চাহিদা। যার যাকে ভাল লাগে তার নুতন কোন মুভি বের হলে সেটা না দেখা পর্যন্ত পেটের ভাত হজম হয় না। তেমনি সেই হিরোর সব মুভিই যে তার ভালো লাগবে এটা কোন কথা হতে পারে না। হিরোদের সব মুভিই হিট হয় না, তবে মাঝে মাঝে তার ক্যারিয়ারে সব মুভির ভিড়ে ২-১টা মুভি ফ্লপ হয়। এটা খুব সামান্য। আজ আমি তেমনি, বস আমির খানের ৩টা মুভি নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো অনেক আগেই সবাই দেখেছেন কিন্তু এই সকল মুভিগুলান দেখার পর আমার ভালোলাগা নিজের মাঝে লুকিয়ে রাখতে পারলাম না, তাই সকলের সাথে শেয়ার করলাম।
মুভিগুলান হল-
-থ্রি ইডিয়টস,
-তার জামিন পার এবং
-গজনী...
থ্রি ইডিয়টস-
তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, হলে নুতন সিট পাইছি। হলে উঠে দেখি কেউ কেউ আবার ডেস্কটপ কম্পিউটার নিয়ে এসেছে। কম্পিউটার কখনো ভালোভাবে দেখিনি তাই আগ্রহ মেটানোর জন্য এক বন্ধুর রুমে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি তারা একটা মুভি মাত্র দেখা শুরু করেছে। আমিও তাদের সাথে বসে মুভিটা দেখতে লাগলাম। পুরো ২ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ড মুভিটা দেখার পর প্রচণ্ড পরিমাণে আমিরের ফ্যান হয়ে গেলাম। ভালো লাগা এবং চোখে পানি আনার মত এত সুন্দর একটা মুভি আমির খান যে করতে পারে তা শুধু থ্রি ইডিয়টস না দেখলে বোঝা যাবে না। সেদিন থেকেই আমির খানকে চেনা শুরু। আসলে বন্ধুর জন্য বন্ধু কতটা নিবেদিত প্রাণ তা থ্রি ইডিয়টস না দেখলে বোঝা যায় না। মুভিটার শুরুর দিকে অনেক কমেডি ছিল এবং ভাল লাগাও তত বেশী ছিল। যেমন, আমিরের দরজায় প্রস্রব করতে গিয়ে এক বড়ভাই ইলেকট্রিক শক খায় যা কল্পনা করলে মনেহয় নিজেই ইলেকট্রিক শক খাচ্ছি। গান গুলোও ছিল অসাধারণ। মুভিতে আমার সব থেকে ভাল লাগার অংশটি হচ্ছে পরীক্ষার খাতাটা জমা দেওয়ার ব্যাপারটা। তখন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছিলাম। এরপর আরেকটি অংশ দেখেও একই অবস্থা আর সেটি হচ্ছে রাজুর বাসায় রুটি খাবার পর্বটি দেখে। সব শেষে যেটা দেখে চোখে পানি এসে যায় আর তা হল কারিনা কাপুর ও আমির খানের চুম্বনের দৃশ্যটি দেখে। কারণ কারিনা কাপুরের অনেকদিনের জমানো ভালবাসা একসাথে সেদিন একটা চুম্বনের মাধ্যমে আমিরকে উজার করে দিয়েছিল। আর তার সাথে বন্ধুদের কিল, চর ঘুষিও সহ্য করতে হয় আমিরকে। সব মিলিয়ে মুভিটা অসাধারণ। আমার এক বন্ধু বলেছিল এই একটাই মুভি যেটা কিনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আসলেই তাই, এই একটা মুভিই যথেষ্ট...ইন্সপায়ার পাওয়ার জন্য।
তার জামিন পার-
ঈসান...চমৎকার একটা নাম। কিন্তু পড়ালেখায় মনযোগ না দিয়ে দুষ্টুমির বিভিন্ন শাখায় তার বিচরণ। ক্লাসে পড়া না পারা, ম্যামের গালি খাওয়া, পারায় বন্ধুদের সাথে মারামারি করা ইত্যাদিতে সবাই অতিষ্ট হলেও তার মা তার উপর তেমন একটা বিরক্ত হতেন না। যখন দিনের পর দিন তার অত্যাচার এবং পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ কমে যাচ্ছিল ঠিক তখনই তাকে তার বাবা মা একটা বোডিং স্কুলে রেখে আসে এবং সে মেন্টালি প্রচুর পরিমানে ভেঙ্গে পরে। সেখানে গিয়ে পড়াশুনা না পারার কারণে সে তার শিক্ষকের টার্গেট হয়। সেখানেও যখন একের পর এক শিক্ষকরা তাকে অপমান করে যাচ্ছিল ঠিক তখনই আমির খানের আবির্ভাব। প্রথম দেখাতেই আমির খান বুঝতে পারেন যে, এই ছেলেটির মাঝে কোন একটা সমস্যা হইছে। যার ফলে আমির খান তাকে ক্লাসের বাইরেও অতিরিক্ত সময় লেখাপড়া করাইয়ে তাকে সেরা বানায়। উল্লেখ্য থ্রি ইডিয়টস দেখার পর কতিপয় এক বন্ধুকে বলেছিলাম, বন্ধু...আমিরের আর কি কোন মুভি আছে যা দেখলে চোখ দিয়ে এমনেতেই পানি চলে আসবে। তখন সে বলেছিল তার জামিন পার দেখিস। আমি যখন মেসে থাকতাম তখন মেসের সবাই মিলে আমরা মুভিটা দেখেছি আর মুভিটা দেখার পর সবাই সবার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি যে, যে যে যার যার চোখের পানি মুছছে। আরেক বড় ভাই দেখি লুঙ্গির কোনা দিয়ে চোখের পানি মুছছে। এই হচ্ছে আরেকখান মুভি সরাসরি ইমশনে আঘাত করার মত। আমিও কেঁদেছিলাম যখন ঈশানের বাবা মা তাকে নিতে আসে এবং চলে যাবার সময় ঈশান তার বাবার কোল থেকে নেমে গিয়ে দৌড়ে আমির খানের কোলে গিয়ে ওঠে। এই দৃশ্যটাই মূলত মুভিটার স্বার্থকতা। প্রত্যেক বাবা মা’রই এই মুভিটা দেখা উচিৎ তাহলে বাবা মা সহজেই বুঝতে পারবে যে, আসলে পড়ালেখায় তার সন্তানের ব্যর্থতার কারণ গুলো কি কি এবং সে অনুযায়ী অভিভাবকরা তাদের সন্তানের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এই লক্ষ্যে যে, তার সন্তানটা যেন ভবিষ্যতে ভালো করে।
গজনী-
২০০৬ সালের দিকে মুক্তি পাওয়া আমিরের অসাধারণ আরেকটি ছবি গজনী। মুভিটা পিসিতে অনেকদিন ধরেই সংরক্ষিত ছিল কিন্তু সময়ের অভাবে দেখা হয়ে ওঠে নি। তবে সম্প্রতি মুভিটা দেখলাম এবং থ হয়ে গেলাম। এরকম সুন্দর একটা প্রেম কাহিনী, যে মেয়েটি জানেই না যে সঞ্জয়ই তার সাথে সাধারণ একটা ছেলের অভিনয় করছে এবং মেয়েটি সঞ্জয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন মজা লুটে নিচ্ছে এবং আমির খানও (সঞ্জয়) তা উপভোগ করছে। এমনি এক সময় আমির খানের সাথে অসিনের প্রেম হয়ে যায়। এই প্রেম যখন রোমান্টিক থেকে আরো রোমান্টিক হতে শুরু হয় ঠিক তখনই অসিনকে মেয়েদের পাচার রহিত করণের জন্য সন্ত্রাসীর হাতে আমিরের সামনে জীবন দিতে হয় এবং আমিরের সেই মূহুর্তে কিচ্ছু করার থাকে না কারণ সে তখন মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে তার স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে এরপর জ্ঞান ফিরলে তার স্মৃতি শক্তি ফিরে আসে কিন্তু তা ১৫ মিনিটের বেশী নয়। সে তারপর তার স্মৃতি শক্তি প্রতি ১৫ মিনিট সক্রিয় থাকার পর সব কিছু ভূলে যায় এবং প্রতি ১৫ মিনিটের মধ্যেই সে তার সমস্ত কাজ করে একটা ক্যামেরার সাহায্যে। যেখানে অসিনের খুনি এবং খুনিদের সাথে জড়িত সকলের ছবি আমিরের কাছে ঐ ক্যামেরায় সংগৃহীত থাকে এবং একের পর এক খুনিদেরকে ক্যামেরার তোলা ছবি দেখে দেখে মেরে ফেলে। যদি বলা হয় এই মুভিতে আমার প্রিয় অংশ কোনটি? আমি তখন বলব যে, আসিন যখন তার নুতন গাড়ি একদিন চালানোর পর সেই গাড়ি বিক্রি করে ১ লক্ষ টাকা আমিরকে দিয়ে দেয় তার মায়ের চিকিৎসার জন্য। সেই মুহুর্তটিই আমার অনেক প্রিয় আর সব চেয়ে খারাপ লাগার অংশটি হল শেষের দিকে যখন আমির অসিনের পায়ের ছাপ হাতে নিয়ে হারিয়ে যায়, ক্যাসে মুঝে তুম দিল গেয়ি এই গানটার সাথে ঠিক সেই মুহুর্তেই অনেক খারাপ লাগা মনে এসে ভর করে এনং চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।
আসলে এই ৩টি মুভি নিয়ে এই কথাগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত এবং মন চাইল তাই ব্লগে শেয়ার করলাম। লেখাটি পড়ে কারো খারাপ লেগে থাকলে মুভি ৩টা দেখার অনুরোধ করলাম...