আজ খুব ভোরে ঘুম ভাংলো সৌরভের কারণ গতকালই সে নুতন বাসায় শিফট করেছে। সাধারণত এত সকালে তার ঘুম ভাংঙে না। যদিও সে সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে কিন্তু সে আজ ৫টায় ঘুম থেকে উঠেছে। তার ফ্লাটটা ছিল সেকেন্ড ফ্লোরে। সকাল বেলার প্রাত:রাশ সেরে এক মগ গরম গরম কফি নিয়ে সে বারান্দার লনে গিয়ে দাঁড়াল। সবে মাত্র সকালের আলো ফুঁটতে শুরু করেছে, চারিদিকের শুনশান নিরবতা যে আস্তে আস্তে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। দূর দিগন্তের দিকে চেয়ে আছে সে। এত সুন্দর সকাল সে কোন দিনই উপভোগ করে নি। ধীরে ধীরে সে তার কফির মগে চুমুক দিচ্ছে আর ভোরের সৌন্দর্য অবলোকন করছে। হঠাত তার চোখ পড়ে যায় তার সামনের ফ্লাটের বারান্দার দিকে। সে এত সকালে এটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না। খুব একটা অদ্ভুত জিনিষ দেখে সে তারাতাড়ি করে রুমে চলে আসে এবং তার চোখে পানি দিয়ে ভাবতে থাকে যে, সে যা দেখেছে তা সত্যিই? না কি এত সকালে জেগে ওঠায় তন্দ্রাভাবের কারণে সে স্বপ্নে দেখেছে ? কিন্তু পরক্ষনেই সে ভাবল যে, সে চোখ মুখ ধুয়েই তো বারান্দায় গিয়েছিল আর তাছাড়া তার হাতে কফির গরম মগও ছিল। তন্দ্রার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
অফিসে যাবার সময় হয়ে যাচ্ছে। সেই সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একই টেবিলে প্রতিদিন একই কাজ করতে মাঝে মাঝে তার বিরক্তিও লাগে কিন্তু কি আর করা বেসরকারি চাকুরী, ছুটি খুব কম, তাই ইচ্ছে হলেও সে কোথাও যেতে পারে না। তরিঘরি করে নিচে নামার পর সৌরভ খেয়াল করল যে, তার মানি ব্যাগটা সে তার রুমে রেখে এসেছে তবে তার পকেটে কয়েকটা খুচরা টাকা আছে যা দিয়ে সে অনায়াসে অফিসে যাওয়া আসা করতে পারবে। তাই সে অফিসের দিকেই ছুটলেন।
ওদিকে তার কলিগ মিস. জলি আজ লাল শাড়ী আর কপালে ছোট্ট একটা টিপ দিয়ে সুন্দর করে সেজে এসেছেন। কিন্তু কেন জানি সৌরভ এই মেয়েটাকে তেমন একটা পছন্দ করে না কারণ এই মেয়েটি সৌরভকে সব সময় চোখে চোখে রাখে, কাজের ছলে এসে তার কাছে বসে দু চারটা কথা বলতে চায়, মাঝে মাঝে সৌরভের জন্য রান্নাও করে নিয়ে আসে কিন্তু মেয়েটির এই সব আহ্লাদ তার ভাল লাগে না তাই সে প্রতিদিনই মেয়েটিকে পাত্তা না দিয়েই তার কাজ শুরু করত। আজও তাই হল কিন্তু কাজে সে আজ মন বসাতে পারছে না। শুধু বার বার সকালের ঐ ঘটনার কথা তার মনে হচ্ছিল। মিস. জলি কয়েকবার তার কাছে এসেছিল কিন্তু কোন পাত্তা না পাওয়ায় সে তার কাজে মন দিল। এদিকে সৌরভ তার বসের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে আজকের মত বাসায় চলে গেল। সে যখন বাসায় যাচ্ছিল তখন মিস. জলি এক দৃষ্টিতে তার পথের দিকে চেয়ে ছিল কারণ তিনি আজ সৌরভের সাথে কোথাও ঘুরতে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা আর হল না। সৌরভের প্রস্থানের সাথে সাথে তার ঘুরতে যাবার স্বপ্নও ভেস্তে গেল।
বাসায় ফিরে সে ফ্রেস হয়ে একটা ঘুম দিলো কিন্তু সে ঘুমের মাঝেও সকাল বেলার ঐ ঘটনাটা দেখতে পেল। সে দেখলো যে,
খুব সুন্দর একটা মেয়ে, এতটাই সুন্দর যে, তাকে দেখে পুতুলের মত মনে হচ্ছিল। মেয়েটি মাত্র ওয়াস রুম থেকে গোসল করে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় বারান্দায় তার কাপড় নিতে এসেছে। কিন্তু মেয়েটি কখনই ভাবতে পারে নি এত সকালে তাকে কেউ এ অবস্থায় দেখবে। তাই মেয়েটি বারান্দা থেকে তারাতাড়ি করে তার কাপড় নিয়ে তার রুমে চলে গেল। ঘুম ভাংঙার পর মেয়েটির প্রতি সৌরভের ভালবাসার বীজ আস্তে আস্তে গজাতে শুরু করল। অনেকক্ষণ সে মেয়েটিকে নিয়ে ভাবল আর হাসল ও বিড়বিড় করে কি যেন বলতে লাগল এবং পরক্ষনেই সে হেসে হেসে বলতে লাগল এ অসম্ভব! এত সুন্দর একটা মেয়ে আমার সাথে কিভাবে?
বিছানা থেকে নেমে ঘড়িতে দেখল যে, বিকাল ৫টা বাজে। তাই সে ফ্রেস হয়ে আবারো এক মগ গরম কফি নিয়ে বারান্দায় গেল মেয়েটিকে এক ঝলক দেখার জন্য। কিন্তু সে মেয়েটিকে তাদের বারান্দায় দেখতে পেল না। সে প্রায় কফিটি শেষ করেই ফেলল তারপরও মেয়েটির কোন দেখা নাই। তাই সে রুমে আসতে যাচ্ছিল, এমন সময় সে দেখল ঐ মেয়েটি খুব সুন্দর পোশাকে বাসার গেট খুলে বের হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। সে ততক্ষণই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল, যতক্ষন পর্যন্ত মেয়েটি পথের আড়াল হল না।
এর পরদিন সকালে সৌরভ আবার বারান্দায় গেল মেয়েটিকে দেখার জন্য কিন্তু এবার সে মেয়েটিকে দেখতে পেল না বরং তার পরিবর্তে মেয়েটির ভেজা জামা কাপড়গুলি দর্শন করল। মন খারাপ করে সে আজ অফিসে গেল এবং অফিস থেকে ফেরার সময় আবারো সে মেয়েটিকে পরিপাটি অবস্থায় কোথায় যেন যেতে দেখলো। মেয়েটিকে সে যতই দেখছে ততই তার ভাল লেগে যাচ্ছে। মেয়েটিকে প্রতিদিন এই সময় যেতে দেখে তার মনে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নের ভাবোদয় হল। আচ্ছা মেয়েটি কি করে? সে কি কোন এফ এম রেডিওতে লেট নাইট শো করে নাকি এয়ারপোর্টের রিসিপসোনিস্টের চাকুরী করে ইত্যাদি সব নানা বিষয়গুলি তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল কিন্তু সে যাই হোক সব কথার শেষ কথা সে মেয়েটিকে ভালবেসেছে। তাই সে সাহস করে একদিক তার মনের কথা বলবে।
এর পরের দিন সৌরভ অফিস থেকে আগেই চলে আসল এবং মেয়েটির বাসার সামনে দাঁড়াল। মেয়েটি ঠিক ঐ সময় বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেল। সে সৌরভের দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করল না, আপন মনে সে তার গন্তব্যের দিকে ছুটে চলল। মাঝখান থেকে সৌরভের নাকে কড়া পারফিউমের গন্ধ এসে লাগল। তাই সে আজ খুশি মনে বাসায় এলো কারণ সে আজ মেয়েটিকে সামনাসামনি দেখেছে। প্রতিটি জিনিষকে দূরে থেকে খুব আকর্ষনীয় মনে হয় কিন্তু কাছে আসলে তার সৌন্দর্য কমে যায় কিন্তু এই মেয়েটির ক্ষেত্রে তা নয় বরং দূরের তুলনায় মেয়েটিকে কাছেই সুন্দর দেখাচ্ছিল।
এর পরদিন আবারো সৌরভ অফিস থেকে তারাতাড়ি চলে এল এবং ঐ মেয়েটির বাসার সামনে দাঁড়াল এবং সেই সময় মেয়েটি বাসা থেকে বের হয়ে চলে গেল। এরকম প্রায় প্রতিদিনই হতে লাগল। এদিকে মেয়েটিরও তার প্রতি তেমন একটা গুরুত্ত দিচ্ছে না। আর মেয়েটির প্রতি সৌরভের ভালবাসা তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হতে লাগল। এরকম দেখাদেখি চলল কয়েক মাস তবুও সৌরভ মেয়েটির সাথে একদিনও কথা বলতে পারে নি, শুধু মেয়েটিকে তার চোখের সামনে অবলোকন করে গেছে। আর তাই সে আজ সিদ্ধান্ত নিল যে, কাল যে করেই হোক মেয়েটিকে তার ভালবাসার কথা বলবে। এর পরদিন সে অফিস থেকে একটু আগেই ছুটি নিয়ে শাহবাগের মোড় থেকে একটি আধফোঁটা গোলাপ নিয়ে মেয়েটির বাসার সামনে গিয়ে হাজির হল।
যথারীতি মেয়েটি আজ গোলাপি কালারের একটা শাড়ী পরে তার কর্মস্থলে যাচ্ছিল। সৌরভ তখন মেয়েটিকে বলল, এক্সকিউজ মিস...তখন মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সাথে সাথে সৌরভ তার দু হাঁটু গেড়ে ফুলটা মেয়েটির সামনে ধরিয়ে বলব...
আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু মেয়েটি কোন অবাক হল না। ঠান্ডা মাথায় মেয়েটি তাকে বলল,আপনি আমায় ভালবাসেন ? সে বলল হ্যাঁ। মেয়েটি আবার বলল ভালবাসা এত সহজ না। এখন হয়ত আপনি আবেগের বসে আমাকে ভালবাসছেন কিন্তু আপনি আমার আসল রুপ দেখলে ঐ নর্দমায় ছুরে ফেলে দিবেন। সৌরভ খুব অবাক হয়ে বলল কেন?
মেয়েটি তখন উত্তরে বলল, আমি কল গার্ল। এখন প্রেম করবেন আমার সাথে?
এই কথা শুনে সৌরভের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল কিন্তু সেই মূহুর্তে সৌরভ কোন কিছু চিন্তা না করেই মেয়েটিকে অবাক করে দিয়ে তার হাত ধরে বললেন, তুমি যতই খারাপ হও না কেন কিংবা যত খারাপ কাজই কর না কেন আমি আমার ভালবাসা দিয়ে তোমাকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসব এবং তোমাকে আমার ভালবাসার বন্ধনে সারাজীবন বেঁধে রাখব। এই কথা শুনে মেয়েটি সৌরভের বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ল...