আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ৩য় বর্ষে পড়ি। সেই সুবাদে আমাদের ডিপার্টমেন্টের আনু মুহাম্মদ স্যারের কোর্সের অংশ হিসেবে আমরা ১১ জন বন্ধু দক্ষিণ বঙ্গের উদ্দেশে ফিল্ড ওয়ার্কে যাই। আমাদের ফিল্ড ওয়ার্ক শেষে আমরা ৬ জন বন্ধু কুয়াকাটায় ঘুরতে যাই এবং ৫ জন বন্ধু বাড়ী চলে আসে। আমরা যখন কুয়াকাটায় গিয়ে নামলাম তক্ষণ গোধূলি সময়। সরকারি বাংলোতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা যখন বাংলোতে গেলাম, রুমে গিয়ে আবিষ্কার করলাম বিদ্যুৎ নেই। কেয়ারটেকারকে ডেকে বললাম, বিদ্যুৎ কখন আসবে। তিনি বললেন, মহাসেনের কারণে আজ ৭-৮ দিন যাবত বিদ্যুৎ নেই, তবে আশা করি আগামীকাল বিদ্যুৎ আসতে পারে। রুমের ভিতর ঘুঁট ঘুঁটে অন্ধকার, মোবাইলেও চার্জ অল্প। কোনমতে মোবাইলের লাইটটা জ্বালিয়ে আমরা জিনিসপাতি গুলো রাখলাম। আমাদের জন্য ২ টা রুমের বরাদ্দ ছিল। একটা রুমে ৪ টা খাট এবং আরেকটা রুমে ২ টা খাট পাতা ছিল। ওরা ৪ জন পাশের রুমে চলে গেল আমি আর সিমান্ত রইলাম ২ সিটের রুমে। ফ্রেশ হয়ে আমরা খওয়া দাওয়া করতে গেলাম। খওয়া দাওয়ার পর আমরা রাত ১১ টা পর্যন্ত সী-বীচে ঘোরাঘুরি করে বাংলোতে চলে আসলাম। রুম এত অন্ধকার যার জন্য আমি আর সিমান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম যে মোমবাতি জ্বালিয়ে ঘুমাব। তো তাই হল...
প্রচণ্ড গরমে হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। শরীরে হাত দিয়ে দেখি ঘামে আমার সমস্ত শরীর ভেজা। মোমবাতি নিভে গেছে, ফোনে আলো জ্বালিয়ে দেখলাম রাত মাত্র ৩ টা। বাতাস খাবার জন্য বারান্দায় গেলাম। হঠাৎ করে আমার চোখ যায় নিচের দিকে। চেয়ে দেখি ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চা আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। আমি প্রচণ্ড ঘাবড়ে যাই, ভাবলাম এত রাতে এইটুকুন একটা বাচ্চা কোথায় থেকে এলো। ভাবলাম কেয়ারটেকারের বাচ্চা হতে পারে, হয়ত প্রচণ্ড গরমে তারাও আমার মত বাহিরে বাতাস খেতে বের হয়েছে। যেই ভাবা সেই কাজ, কেয়ারটেকারের সাথে গল্প করার জন্য নিচে আসলাম। কিন্তু কাউকে পেলাম না। দেখি মেয়েটি সোজা রাস্তা দিয়ে সাগরপারের দিকে যাচ্ছে। আমি তার পিছু পিছু ফলো করলাম। কিছুক্ষণ ফলো করার পর দেখি মেয়েটি আর নাই। আমি এক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবতেছি হয়ত চোখের ভুল। খানিকবাদে সিমান্ত আমাকে বলল, আমাকে গরমে রাইখা একা একা বীচে বাতাস খাওয়া হচ্ছে। আমি ঘটনাটা চেপে বললাম যে, খুব গরম পরছিল আর তুইও গভীর ঘুমে ছিলি তাই তোকে ডাক দেই নি, চল হাঁটাহাঁটি করি। আমরা ২ বন্ধু ঘণ্টা খানেক হাঁটাহাঁটি করে বাংলোতে আসলাম। সিমান্ত আমাকে বলল, তুই রুমে যা আমি পুকুর থেকে হাত-পা ধুয়ে আসি। আমি রুমে গেলাম। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দেখি সিমান্ত গভীর ঘুমে অচেতন। তক্ষণ আমি খুব ভয় পেয়ে যাই এবং পুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। আমি তাড়াতাড়ি করে সিমান্তকে ডেকে পুরা ঘটনাটা বলি, সেও শুনে খুব বিস্মিত হয়। সে আমাকে বিভিন্ন ধরণের দোয়া পড়ে ফুঁ দেয়, ঐ দিন রাতে আমরা আর ঘুমাতে পারি নি।