ঢাকা, জানুয়ারি ০৩ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বেশ কিছু দিন ধরে আলোচনা চললেও সপ্তাহের শেষ দিনে এসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
পেট্রোল ও অকটেন লিটারে ৫ টাকা করে এবং ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৭ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জ্বালানি সচিবের একান্ত সচিব নাজমুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
নতুন দর অনুযায়ী, ডিজেল ৬৮ টাকা, কেরোসিন ৬৮ টাকা, অকটেন ৯৯ টাকা এবং পেট্রোল ৯৬ টাকায় বিক্রি হবে।
সর্বশেষ ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর এই চার ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল সরকার।
এক বছর পর তা আবার বাড়ানো হল। এনিয়ে চার বছরে পঞ্চমবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালো মহাজোট সরকার।
গত কিছুদিন ধরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী তেলের দাম বাড়ানোর পক্ষে মত জানিয়ে আসছিলেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। এই বিষয়ে পাম্পগুলোর পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু বলা না হলেও তখন থেকেই তেলের দাম বাড়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে ঘোষণা আসে রাত সোয়া ১০টার দিকে।
সরকারের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা শুনেই আগাম কর্মসূচি দিয়ে রেখেছিল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
গত ৩০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ১৮ দলের বৈঠকের পর বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “জ্বালানি তেলের দাম যেদিন সরকার বৃদ্ধির ঘোষণা দেবে, তার পরদিনই হরতাল হবে।
“যদি আগামী রোববার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তারপরের দিন সোমবার হরতাল হবে।”
বৃহস্পতিবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার, এর পরের দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি। তবে দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে রোববার হরতাল দেয়া হবে বলে বিএনপির একাধিক নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর হরতালের ঘোষণা আসবে।
দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
জ্বালানি খাতে সরকার ভর্তুকি দেয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ পেট্রালিয়াম কর্পোরেশনের লোকসান বেড়ে যাচ্ছে, তা কমাতেই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির চার শতাংশ। এর মধ্যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
দেশে ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের প্রায় ৬৫ শতাংশই ডিজেল।
তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা সম্পর্কিত তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দর বৃদ্ধির কারণে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রিতে সরকারকে ১৮ টাকা ৭৭ পয়সা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
প্রতি লিটার কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ১৯ টাকা ১৫ পয়সা।
সরকার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধির পরও প্রতি লিটার ডিজেলে ১১ টাকা ৭৭ পয়সা এবং প্রতি লিটার কেরোসিনে ১২ টাকা ১৫ পয়সা করে ভর্তুকি দিতে হবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তরল জ্বালানি সরবরাহ করতে গিয়ে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে বলে সরকার স্বীকার করেছে, যার সমালোচনা করছে বিরোধী দলসহ অনেক অর্থনীতিবিদ।
তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে তা মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব রাখবে বলে স্বীকার করেছে সরকার।
তবে তা বাজেটে ধরা লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে সরকার আশাবাদী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এমআই/আরবি/২২৩০ ঘ.