somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলীগ নিয়ে অজনপ্রিয় কয়েকটি কথা-

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বয়স তখন হাইস্কুলে পড়ি এমন। পাড়ার মসজিদে মাগরিবের নামাজের সালাম ফেরালাম। ঘাড়টা তখনো বাঁ দিকেই রয়ে গেল প্রায়। তখনি সামনের কাতারের এক লোক দাড়িয়ে "ইনশাআল্লাহ বাকি নামাজ বাদ ঈমান ও আমলের জরুরী বয়ান হবে। সব ভাই বসি। বহুত ফায়দা হবে।"আশৈশব বই, বক্তৃতা, সভা-সমিতি, সেমিনার, ওয়াজ প্রভৃতির প্রতি, তা যে মত ও পথের লোকই আয়োজন করুক না কেন, একটা টান আছে। সুতরাং, বসে পড়লাম। বেশির ভাগ নিয়মিত মুসল্লী চলে গেলে বোঝা গেল 'অচেনা' একদল লোক এসেছে এখানে গাট্টি-বোচকা নিয়ে। আল্লাহ, ফেরেশতা, পরকাল, নামাজ ও দ্বীনের পথে মেহনত ইত্যাদি নিয়ে নাতিদীর্ঘ বয়ান দিলেন বয়োবৃদ্ধ একজন। মোদ্দাকথায়, ওনাদের বহরে শামিল হয়ে বহুল প্রচারিত ফায়দা হাসিলের আহ্বান জানালেন। আনুমানিক ১ সপ্তাহ অবস্থান শেষে দলটি চলে গেলেন।

কলেজে-ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় আবার রেগুলার দেখা পেলাম দলটির। এশার নামাজ শেষে ৫/৭ জনের ছাত্র-তাবলীগ প্রেয়ার রুমে গোল হয়ে বসে মোটাসোটা একটা বই, নাম ফাজায়েলে আমা'ল, পড়ে একজন, বাকিরা শুনে। বিস্তারিত পড়ার ধৈর্য্য নেই, তাই উল্টে-পাল্টে দেখলাম একদিন। নামাজ রোজা দাওয়াত সহ নানান দোয়া দরুদের ফজিলত, শিক্ষামূলক কাহিনী- এটাই বইটার আদ্যপান্ত। এর বাইরে সপ্তাহে একদিন তারা লাইন ধরে হলের কক্ষে কক্ষে যেতেন। আহ্বান একটাই, ওনাদের বহরে শামিল হয়ে বহুল প্রচারিত 'ফায়দা হাসিলে।'

তাবলীগকে অনিয়মিত দেখি আরেক স্থানে। মৎস্য ভবন থেকে শেরাটনের দিকে ফুটপাত ধরে হাটঁতে হাটঁতে। বছরজুড়ে কাকরাইল মসজিদ ও সংলগ্ন এলাকা গমগম। তাসবীহ, টুপি, আতর, ঢিলা কুলুখ, মেসওয়াক, ও খাবারের দ্রস্টব্য গন্ধ নাকে লাগবেই এখানে। দেশ ও বিদেশের নানান বয়সী, বিশেষত: বয়স্ক, মানুষের ভীড়। লক্ষ্য একটাই- ফায়দা হাসিল।

বছরে আরেকবার নিয়মিত তাবলীগের প্রচার-জোয়ার বয়ে যায় ইজতেমা নামক সম্মেলনের প্রাক্কালে। মোটামুটি ৫ দিনের জন্য যাবতীয় মতাদর্শের টিভি, রেডিও, পত্রিকা 'মুসলিম বিশ্বের ২য় বৃহত্তম' এ সমাবেশের বয়ানে বয়ানে মত্ত হয়ে উঠে। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়াক্রান্ত রাস্তা, রেল, বাসের ছবি, হাত তুলে স্রস্টার দরবারে মোনাজাত, খালেদা-হাসিনা-এরশাদ ইত্যাদিদের সদলবলে আখেরীমোনাজাতে যোগদানের খবর। তারপর হারিয়ে যায়। নীরবে আমরা যারযার মত ঝাঁপিয়ে পড়ি আগেকার কাজে।

আপাত: এটাই তাবলীগ। সাধারনের কাছে। তবে আরেকটু গভীরে পেয়েছি অদ্ভুত কিছু বিষয়। ছাত্র-তাবলীগের মধ্যে অনেক বন্ধুকে পেয়েছি যারা ঘোরতর ছাত্রলীগ সমর্থক (!), প্রায় সবাই শিবিরের ঘোর-বিরোধি! তবে 'কলেজ-মেডিক্যাল-ভার্সিটিতে' ছদ্মবেশধারী তবলীগও আছে। শিবির, লীগ, দল, ফ্রন্টের টানাটানি থেকে বাচতে ফার্স্ট ইয়ারে কূশলী অনেকে 'তাবলীগের লেবাস' নিয়ে ফেলেন। তবে সেটাও কম কঠিন নয়। এ বয়সে দাড়ি, পান্জাবির ভাড় বহন করা কি চাট্টিখানি কথা! এ ধরনের বেশ কজনকে চিনি যারা স্নাতক শেষে দিব্যি দাড়ি ফেলে দিয়েছেন!! আহলে সুন্নাত, খারেজী, ওহাবী বা নানা ধরনের ধর্মীয় গ্রুপের অনেক মৌলভী মওলানাকে দেখেছি তবলীগের প্রতি সমালোচনা মুখর। কাউকে কাউকে এ ব্যাপারে নীরব, কেউবা পক্ষবাদী।

যেমনটা দ্বিধাগ্রস্ত আমিও। ইজতেমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ যায়। কেন যায়? হয়ত আশা করে সওয়াব হবে। এভাবে আশা করে কোনো একস্থানে লক্ষ কোটি বা তারও বেশি লোক জড়ো হলেই কি সওয়াব হবে? কি কি কাজ করতে হবে, করলে ভাল হবে, কিকি কাজ করলে গোনাহ হবে তা কি মানুষের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে? না তো, বরং পরিপূর্নভাবে আল্লাহ রাসুলদের মাধ্যমে দিয়েই দিয়েছেন। সামর্থ্যবান মুসলিম/মানুষদের জন্য হজ্জ্ব নামক বিধানতো কারো কাছেই অজানা নয়। এটার অতিরন্জনে ২য়, ৩য়, ৪র্থ সম্মেলন করে, কাল্পনিক সওয়াব আশা করা কেমন কথা? কেউ কেউ বলতে পারেন- এখানে মানুষ প্রশিক্ষন লাভ করে। আসলে কি তাই? প্রশিক্ষন কি এত সোজা? আর প্রশিক্ষনের খোদা ও তার নবীরাসুলদের প্রদর্শিত টেকনিক কিংবা রেফারেন্স বই পুস্তক কি এসব? নাকি এটা নেহায়েতই লক্ষমানুষের আরেকটি গন্তব্যহীন সম্মেলন? সওয়াব ক্ষুধার্ত বোধহীন মুসলিমদের যুক্তিহীন বিক্ষিপ্ত করুনা প্রার্থনা? মুসলিম উম্মাহ নামক একটি 'আন্তর্জাতিক ভূতের' কল্যান কামনা, যার কল্যান জর্জ বুশও কামনা করতেন! সুযোগ পেলেই যে কেউ এর কল্যান কামনা করেন। আর ইজতেমা মাঠ থেকে বাসাই ফিরেই এর পাছায় বাঁশ দেন!!!

চোর, ডাকাত, ঘুষখোর, পেশাদার খুনী অনেকেই চুলে পাক ধরলে দিব্যি তাবলীগে যোগ দিয়ে ফেলেন। ঘুরতে থাকেন এ মসজিদ থেকে ও মসজিদ। যথারীতি বয়ান দিতে থাকেন আসরের নামাজের পর। কবর, হাশর নিয়ে বয়ান করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। অদ্ভুত এক ব্যাপার- অদ্যাবদী ১টাকা ঘুষ ফেরত এসেছে, রাস্ট্রীয় কোষাগার লুট করা ১টি পয়সাও ভুল বুঝতে পেরে ফেরৎ দিয়েছেন, কারো উপর অন্যায়ের জন্য মাফ চেয়েছেন তেমনটি দেখিওনি, শুনিওনি। কিন্তু আল্লাহর কাছে রাতদিন মাফ চাইছেন, ফাজায়েলে আমাল পড়ছেন, বয়ান করছেন!
আল্লাহ কে যে, তাদেরকে মাফ করবে? আল্লাহর কি কোন অধিকার আছে আরেকজনের মেরে দেয়া টাকা মাফ করার? এটা শুনতে খারাপ লাগতে পারে যে, এ ধরনের দাগী বার্ধ্ক্যপীড়িত সন্ত্রাসীদের একটা উত্তম আখড়া কিংবা আখেরাতেও লুটে পুটে খাওয়ার একটা ভালো রাস্তা (কাল্পনিক)হিসেবে তাবলীগকে পাওয়া যায় দেদার।

মসজিদে রাত্রিনিবাস ও ধ্যানের ব্যাপারে ইসলামে কিছু নেই তা না। বরং তাবলীগের জন্মের ঢের আগে রাসুল (স) রমজানের শেষ ১০ দিন পুরুষদের জন্য মসজিদ আর মহিলাদের গৃহঅভ্যন্তরে নিবীড় ধ্যানের উপদেশ দিয়েছেন। এর বাত্যয় ঘটিয়ে দল বেঁধে বছরব্যাপী মসজিদ ভ্রমন কিছুতেই কল্যানকর কিছু হতে পারেনা। এটা স্বরচিত সুন্নত (!) বা বড় জোড় 'ইসলামি বৈরাগ্যবাদের' চর্চা হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১০ বিকাল ৪:৪৮
৬২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×