প্রথমদফা প্রত্যাখানের পর দিন মাস গড়িয়ে যায়। কোম্পানীর অসংখ্য ও বিচিত্র পদ পদবীর 'নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি'ও তাদের ওয়েবসাইটে হরদম আসতে থাকে। অফিসার থেকে ডিজিএম এমনকি হেড অব অমুক, তমুক। BBA/MBA preferably from reputed business school, ০-5 years exp ইত্যাদি। আমার জানামতে, আইবিএ মোটামুটি নামকরা একটি স্কুল। কিন্তু এসব অসংখ্য খালিপদের বিপরীতে ১টিতেও যে কেন ডাক পাইনা ব্যাপারটা বোধগম্য হয়না। রাস্তাঘাটে মাঝেমধ্যেই এর ওর সাথে দেখা হয়। জিগাই- ভাই কৈ আছেন? কয়- জিপিতে। কি কন? কবে থেকে? এইতো গত সপ্তাহে/ মাসে। এর বেশী জিগানো অভদ্রতা। মনে মনে ভাবি ওরা ক্যামনে ঢুকল, ভাই বেরাদরদের জিগাই। ঈর্ষান্বিত হই 'কি সুন্দর সুন্দর বাসে, সুন্দর সুন্দর মাইয়া, আহারে কত মজার চাকরি! ইতোমধ্যে একই সময়ে স্নাতক হওয়া ডজনখানেক বিবিএ দল বেধেঁ ঢুকল। কর্পোরেট সেলস আর মার্কেটিং-এ। বেশ ঘনিস্ট বন্ধু ঢুকল ১ জন। আর সে কি তার আস্ফালন! ৬০ হাজার টাকার কম কোনো মাসেই পড়ছেনা। সামনে নাকি অফিসারের বেসিক হবে ৩৫ হাজার। সেলসে পার্সোনাল গাড়ি থাকবে, ল্যাপটপতো বটেই! আর কাজ বলতে টুকটাক ডাটা এন্ট্রি ও দিনভর ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়ানো, ক্যান্টিন, মিটিং, লান্চ, নানাবিদ দিবস উদযাপন, ওয়ার্কসফ ইত্যাদি!!
পরিস্থিতির 'ভয়াবহতা' দেখে ভাবলুম আরোখানিকটা এফোর্ট দিতে হৈবেক। ট্র্যাক নম্বর টা জানিয়ে একে ওকে 'ভাই- একটু দেইখেন।' বিদ্যমান ভিন্ন নতুন 'চাকুরি'র ব্যস্ততার মাঝে দীর্ঘদিন পর আবার ১ দিন "মি.....বলছেন....। আপনার একটা...স্ক্র্রিনিং...।' কৈলাম- আমি তো ভাই এটাতে এপ্লাই করিনাই।' 'ডাটাবেজ থেকে আমরা আপনাকে সর্টলিস্ট করেছি...।' যাব যাবনা করতে করতে ইন্টারভিউ, রিটেন, ইন্টারভিউ, মেডিক্যাল এসবের ঘাট পেরিয়ে মাস দুয়েক পরে একটা এপয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে এল। তবে ততদিনে আরো ১টা ভালো এপয়েন্টমেন্ট লেটার এবং বিদ্যমান চাকুরিটি ছাড়ার অপশনও যোগ হল।
নানান মত, অমত পেরিয়ে 'দেখি না কি আছে ভেতরে' ধাঁচের একটা মানসিকতা থেকে ২০০৬ সালের কোনো এক সকালে গিয়ে হাজির হলাম গুলশান ১ ও ২ এর মাঝামাঝি বিখ্যাত এ কোম্পানীর হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের রিসেপশনে। অতি সুন্দরী রিসেপশনিস্টের কাছে গিয়ে কাঁচু মাঁচু ভংগিতে বললাম- আমি এইচআর বিভাগে যাব। বিরক্ত মুখে জিজ্ঞেস করলেন- কার কাছে যাবেন? পড়লাম গ্যাড়াঁকলে 'কার কাছে যাব?' কৈলাম- আমি আসলে জয়েন করতে এসেছি। এই..দেখুন..অফিসার, লতাপাতা বন্টন পদে। 'রেগুলার পজিশন?' বললাম- 'তাইতো মনে হচ্ছে।' পরিবর্তিত মুখাবয়ব নিয়ে 'আপনি বসুন।' কার সাথে যেন ফোনে কথা বললেন। আর নিকটবর্তী গাঢ় নীল সোফায় বসে আমি ইতি উতি দেখছি। কটিদেশে ঝুলানো আইডি কার্ড দরজায় ছোঁয়ালেই 'কিঁ' করে আওয়াজ ও খুলে যাওয়া আরো কত কি! (পরবর্তীকালে বুঝতে পেরেছিলাম ঐ সুন্দরীর তাচ্ছিল্য, ঈর্ষা ও পরিবর্তনের কার্যকারন। যথাসম্ভব উর্ধ-অধ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ সুন্দরী ছিলেন পার্ট-টাইমার। তখনকার ব্যবস্থাপনায় পার্ট টাইমার, কন্ট্রাকচুয়াল, রেগুলার অফিসার, ডেপুটি ম্যানেজার.... এই ছিল অবস্থা। রেগুলার অফিসারের সংখ্যা ছিল খুব কম। আবার জিপির পার্ট টাইমার হৈল এক আজব বস্তু। যারা দিনে ১০ ঘন্টারও অধিক কাজ করে। বিশ্বের এটাই অন্যতম আজব কোম্পানী যেখানে পার্ট টাইমাররা ওডি ক্লেইম করে ও পায়! মাস শেষে যার পরিমান ২০ হাজার টাকাও হত (২০০৬)। তাই মাস্টার্স পাশ করেও পোলাপাইন 'কান্ড জ্ঞান হীন ভাবে' এসব চাকরিতে জয়েন করে। কিছু দিন যেতে না যেতে ঘ্যানর ঘ্যানর করে কন্ট্রাকচুয়াল করার জন্য তার পর পুরা রেগুলার। কারো শিকেয় তা জোটে, কারো জোটে না। না জোটারা ৩০ বছর পার হলে বুঝে আম ছালা ২ ই গেছে! এর চেয়ে ঢের ভালো ছিল ৮ হাজার টাকা বেতনে রেগুলার-ফুলটাইম অন্যকোনো চাকুরি শুরু করা। কটা টাকার লোভে..!)
ঐদিন আনুমানিক ১১-০০ টায় আমি জয়েনিং লেটার ও দলিল সমুহে সাইন করি। অর্থাৎ ঢুকে পড়ি অন্দরমহলে। (চলবে)