"গুড মর্নিং,হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে টু ইউ, ডিয়ার!"
লাউড স্পিকার অন থাকা উর্মির মোবাইলে অপর প্রান্ত থেকে বয়ফ্রেন্ডের কন্ঠ সেই সাত সকালে।
উর্মি সাধারনত: ঘড়ির ঘন্টা ও মিনিটের কাটা ৯০ ডিগ্রি কোণ করে সকাল ৯ঃ০০ টা না বাজলে উঠেনা। আজ আর দেরি হয় নি; আজ না "বিশ্ব ভালবাসা দিবস"!
"ওয়াও সেইম টু ইউ, শীতল! হাউ আর ইউ! তুমি না একটা,,,,! আমাকে ঠকিয়ে তুমিই আগে উইশ করলে! জানো শীতল,আমি না আজ সারাটা রাত ঠিকমত ঘুমায়নি, শুধু তোমাকে আগে উইশ করব বলে, আর তুমি কি না,,,,,"
--"ও সরি ডিয়ার! থ্যাংকস! গেট রেডি উই উইল মিট সুন। বাই"।
-- কে ফোন করছিল এত লাউডে উর্মি? মা মিসেস আনিকার জিজ্ঞাসা।
-- কে আর, তোমার হবু,,,,,,,
লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে ফেলা তরুনী মেয়েটি তার লাভারের পরিচয় নিজ মায়ের কাছে এভাবেই দেয়।
-- আম্মু আজ আর আমার নাস্তা রেডি করা লাগবেনা। এখনই বেরুতে হবে আমাকে।আমি আর শীতল আজ অনেক মজা করব, পার্কে, রাইডারে, চাইনিজে সবশেষে নভো থিয়েটারে। ও হ্যাঁ, শোন আম্মু আজ বাসায় ফিরতে একটু রাত হবে। কমপক্ষে রাত ১১ টা। তোমরা ঘুমিয়ে যেওনা যেন।
-- আচ্ছা, আচ্ছা। যা তোরা মনের মত করে মজা কর। ও হ্যাঁ, আর এই নে ০৫ হাজার টাকা ইচ্ছেমত খরচ করিস।
--থ্যাংক ইউ আম্মু, টা -টা, টা -টা।
--এই শীতল তুমি লেট করলে কেন?
--আর বলোনা উর্মি পথে এত জ্যাম আজ!
-- ও কে, ও কে! তা কি খাবে বল, তুমি যা চাইবে আজ আমি তাই খেতে দিব। তোমার হবু শ্বাশুড়ি আমাকে ০৫ হাজার টাকা খরচের জন্য দিয়েছে।
তারা একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা শেষে বেরোয়। এরপর সারাদিন মানসিক, দৈহিক, আর্থিক মজা লুটে ঢোকে নভো থিয়েটারে। সেখান থেকে বেরুনোর সময় রাস্তায় দেখে ০২ টা এতিম বাচ্চা বলাবলি করছে-
-- এই বন্ধু, আজ না বিশ্ব ভালবাসা দিবস! আই আমরা আজ দিনটি পালন করি।
-- সে আবার কি রে বন্ধু? তুই জানলি ক্যামনে?
-- ক্যান দেহিসনা আজ স্যার আর ম্যাডামরা কি সাজা সেজেছে! একসাথে পেম করে বেড়াচ্ছে!
--ওহ, তাইতো, তাইতো। আচ্ছা এ আবার কিরাম ভালবাসা দিবস? কৈ আমাগের তো কেউ একটু ভালবাসলো না।
-- বাদ দে, বাদ দে! এই নে আমার ২৩ টাকার তে তোর ২ টাকা দিলাম।
-- আর আমিও তোর ২ টাকা দিলাম, এই নে।
এদের কথোপকথন শুনে শীতলরা আরো শীতল হয়ে গেল। তারা ভাবতে লাগল--
আসলেই তো সারাটা দিন তারা কী না করে বেড়িয়েছে! কতো রোমান্স, কত অপচয়, আরো কত কী! কিন্তু এই যে অনাথ, এতিম এদের তো নেই কোন আদর, যত্ন, এরা পায়না কোন স্নেহ ভালবাসা। এরাও তো কোন না কোন মায়ের সন্তান। কী অসহায় এরা। এ সব ভাবতে ভাবতে গা শিউরে উঠে তাদের। সারাদিনের রোমান্স যেন গলা দিয়ে বমি হয়ে উঠতে চায়। কি রে কিসের ভালবাসা দিবস? যদি অনাথ, এতিম, গরিব, দুঃখি, অসুস্থ, অসহায় রা একটু ভালবাসা না পায়? ধিক ভালবাসা দিবসের নামে এ সমস্ত বেলেল্লাপনাকে শত ধিক! পকেটে থাকা ২০০০ টাকা তারা ফিরতি পথে সামনে পড়া ফকির মিসকিনদের মাঝে ভাগ করে দেয়। সেই সাথে আরো প্রতিজ্ঞা করে আজ হতে তারা সব ধরনের খারাপ কাজ হতে দূরে থাকবে, ভাল হয়ে চলবে, সৎ পথে আসবে। যার যার বাসায় ফিরে যায় তারা। সাথে নিয়ে যায় হেদায়েতের মহান উপলব্ধি। হে আল্লাহ তুমি আমাদের তরুন প্রজন্মকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করে দাও!
১৪.০২.২০১৮.
ভালোলাগলো তাই কপি করলাম
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১১