বিগত কয়েক বছরে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমান বেড়েই চলেছে। যা অামাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অবস্থা ও মানষিকতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিবাহ বিচ্ছেদে এগিয়ে শিক্ষিত স্বাবলম্বী নারীরা।
** সেদিন পত্রিকায় একটা নিউজ দেখলাম। তখন চিন্তা করলাম কিছু একটা লিখবো। তাই একটু লেখার চেষ্টা করছি। প্রথমেই বলতে চাই অামি ডিভোর্স এর বিপক্ষে নয়। কারণে যেখানে মনের মিল থাকেনা সেখানে বিবাহটা কোন কল্যান বয়ে অানেনা। তাই বলে ইচ্ছে হলেই তালাক, এই প্রবণতা পাশ্চত্য বিশ্বে একটা মহামারি অাকার ধারণ করেছে। যার ফলে একক পরিবার সংখ্যা অনেক চোখে পড়ে। যা সন্তানের মানষিক বিকাশে সমস্যার সৃষ্টি করে।
একটা বইতে পড়েছিলাম, বাবা- মায়ের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি বা ভালোমন্দ তারতম্য সন্তানের পরবর্তী জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই চাই একটা সুন্দর অালোকিত সমাজ।
তাই, ডিভোর্সের ব্যাপারে ইসলামী বিধানটা অামার অনেক ভালোলাগে। ইসলামে ডিভোর্সকে অনুতসাহিত করা হয়েছে" স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোন বিবাদ হলে সেখানে বারবার মিমাংসার অপশান অাছে। তারণ রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল হয়। নারী স্বাধীনতার কথা বলে নারীকে ডিভোর্স দেওয়ার অধিকার সম্পর্কে বলছে। কিন্তু সমাধানের অপশান রাখছেন না।
যাহোক অামি এখানে ডিভর্সের কয়েকটি কারণ অালোকপাত করার চেষ্টা করছিঃ
★অবৈধ সম্পর্কঃ এটার জন্য ছেলে অথবা মেয়ে উভয়ই দায়ি হতে পারে।
=> বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীরা রাস্তা ঘাটে যেভাবে মেয়েছেলে মেলা মেশা করছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। পার্ক এবং হোটেলের কথা নাই বা বললাম। সব বলতে গেলে অামার লেখা শেষ করা কষ্ট হয়ে যাবে। *
*অবৈধ সম্পর্কের উৎস যদি লক্ষ্য করি তবে প্রথমেই যেটা অাসে সেটা হলো
১) পাশ্চাত্যের অবাধ অনুকরণ।
২) নিজেদের সাংস্কৃতি ভুলে যাওয়া।
৩)অাকাশ সাংস্কৃতির কুপ্রভাব।
৪)ধর্মীয় অনুসাসন না মেনে চলা।
৫) সমস্ত সিনেমা নাটক এবং গানে অবাধ প্রেমকে উৎসাহ দেওয়া।
৬) গঠন মূলক সিনেমা নাটক গান কবিতা লেখা না হওয়া।
৭)মূল্যবধের অবক্ষয়।
৮) প্রযুক্তির অপব্যবহার।
৯) মোবাইল ফোনের সহজ লভ্যতা। অাসলে লিখলে অারো কারণ লেখা সম্ভব।
★চাকুরিজীবি নারীঃ
অামি নারীর চাকুরি কে একক ভাবে দায়ী করছিনা। তবে, পর্যবেক্ষণে যা দেখাযায়। বিশেষ করে যেসকল পরিবারে নারী চাকুরিজীবি। সে সব পরিবারে ডিভর্সের হার বেশি। কারণ হিসেবে দেখা যায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সম্মান ও ভালোবাসাটা কমে যায়। একে অপরে দোষ দেয়। নিজেদের মধ্যে সময় কম দেওয়াকে দায়ী করে।
★ড্রাগের অবাধ সর্বরাহ। যতোগুলা ডিভর্সের ঘটনা অাছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো ছেলের ড্রাগ অাসক্ততা। যার ফলে পারিবারিক কলহের সূত্রপাত ঘটে। এর চূড়ান্ত ফল হলো ডিভোর্স।
★সামাজিক সৃংখলা কমে যাওয়া।
যারা গ্রামের মুরব্বী অাছে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়। অাগে অামাদের সমাজ ব্যবস্থায় অনেক সৃংখলাবোধ ও একে অপরের প্রতি সম্মান বোধ ছিলো। ফলে সামাজিক অনেক সমস্যা কম হতো।
যারা ডিভর্সের ব্যাপারে বেশি উৎসাহি অামার দেখা দৃষ্টিতে অনেক মেয়েকে দেখেছি যাদের পরবর্তী জীবন সুখের হয়নি।
পাশ্চত্য বিশ্বে মেয়েরা অনেকটাই অার্থিক ভাবে স্বাবলম্বী তাদের বাস্তবতা ও সমাজ ব্যবস্থা অামাদের মতো নয়। উন্নত সমাজ ব্যবস্থা হওয়ার পরেও পাশ্চাত্যের সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ বেশি অসুখি। সামাজিক অশান্তি ও সমস্যা বেশি। এর অন্যতম কারণ হলো পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়া। পারাস্পারিক ভালোবাসা শ্রদ্ধাবধ কম থাকা।
যাহোক, এখনই সময় অামাদের সচেতন হওয়া। নাহলে এর প্রভাবটা বেশ খারাপ হবে।
পত্রিকার নিউজ নিচে দেওয়া হলোঃ
শিক্ষিত স্বাবলম্বী নারীরাই ডিভোর্সের শীর্ষে
জিন্নাতুন নূর
শিক্ষিত স্বাবলম্বী নারীরাই ডিভোর্সের শীর্ষে ভাঙছে ঘর ভাঙছে সংসার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী ছিলেন রোকেয়া ও আফজাল (ছদ্মনাম)। তাদের মধ্যে ছিল প্রেমের সম্পর্কও। স্বপ্ন ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ভালো সরকারি চাকরি পেয়ে ঘর বাধবেন। বিসিএস-এ রোকেয়ার প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি হয়। কিন্তু আফজালের সেবার ভাগ্য খোলেনি। এরপরও রোকেয়ার উৎসাহে বিয়ে করেন তারা। দুঃসময়ে সঙ্গী ও নিজের সংসারের ভার একাই কাঁধে নেন রোকেয়া। এরপর আবার বিসিএস-এ বসেন আফজাল। পুলিশ ক্যাডারে চাকরিও পান। কিন্তু এবার পুড়ে রোকেয়ার ভাগ্য। তার সঙ্গে আর সংসার করতে চান না আফজাল। দুজনের সম্মতিতেই ইতি ঘটে একটি ভালোবাসার সংসারের। শুধু রোকেয়া আর আফজাল নয়, ভালোবাসার অনেক সংসার এখন মুহূর্তেই ভেঙে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আগের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে নারীদের কাজ করার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় নারীরা সামাজিকতা ও লোকলজ্জার চেয়ে নিজের আত্মসম্মানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর তাই সংসারে অশান্তি নিয়ে থাকার পরিবর্তে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তই বেশি নিচ্ছেন। জানা গেছে, ঢাকায় গত এক দশকে বিবাহ বিচ্ছেদের হার আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এক্ষেত্রে বিচ্ছেদের বেশি আবেদন করছেন শিক্ষিত ও সাবলম্বী নারীরা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুই এলাকাতেই নারীরা বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য পুরুষের চেয়ে বেশি আবেদন করছেন। জরিপের তথ্যে, বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করছেন ৭০ দশমিক ৮৫ ভাগ নারী আর পুরুষের হার মাত্র ২৯ দশমিক ১৫ ভাগ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে যেখানে বাংলাদেশে প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল দশমিক ৬ জন। বর্তমানে এই হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক এক জন। বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তারা হাজারে এক দশমিক ৭ জন বিচ্ছেদের আবেদন করেন। আর অশিক্ষিতদের মধ্যে এই হার হাজারে শূন্য দশমিক ৫। রাজধানীর গত পাঁচ বছরের বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত শালিসি পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাঁচ বছরে রাজধানীতে তালাকের মোট আবেদনের ৬৬ দশমিক ১৬ শতাংশ স্ত্রী এবং ৩৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ স্বামীর পক্ষ থেকে করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তালাকের নোটিস পাওয়া গেছে ১৯৮টি। এর মধ্যে নারীরা দিয়েছেন ১৪২টি নোটিস। উত্তর সিটি করপোরেশনও তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানায়, নারীদের তালাক দেওয়ার হার পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। পেশাগত উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আগের চেয়ে বেশি সচেতন। নারীরা লোকলজ্জার ভয়ে এখন আর আপস করছেন না। বরং অশান্তি এড়াতে বিচ্ছেদের আবেদন করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আইন বিভাগের কর্মকর্তা এস এম মাসুদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সামাজিক জটিলতার জন্য সমাজে বিচ্ছেদের ঘটনা এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে সন্তানের মঙ্গল ও হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ রোধে বিচ্ছেদে যাওয়ার মধ্যে নেতিবাচক কিছু নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকায় একজন নারী এখন তার পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা করতে পারছে। পারিবারিক বন্ধনের চেয়ে অনেক নারী নিজের পেশা জীবনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর মনস্তাত্ত্ব্বিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ফলে নারী নিজেই এখন বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
সর্বোপরি, ছেলে বা মেয়েদের কে দোষী করাটা অামার উদ্দেশ্য নয়। সকলের সামগ্রিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতার মাধ্যমে সকল সামাজিক সমস্যার সমাপ্তি ঘটুক। এই পত্যাশায়। অাজ এ এপর্যন্তই।
অাল্লাহ হাফেজ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:৩১