প্রায় ৬-৭ বছর আগের কথা। আজকের মতই ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম শুক্রবার। গিন্নীকে নিয়ে তার বাবার বাড়ীতে গেলাম, ঢাকার পার্শ্ববর্তী কোন একটা জেলাতেই। ঢাকা থেকে আসা যাওয়া করতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। শ্বশুরালয়ে তেমন কেউ থাকে না। গিন্নীর মা-বাবা ছাড়া আর কেউ বাসায় থাকে না। আমার স্ত্রী সবার ছোট, বাকী বোনদের আরো আগে বিয়ে হয়ে গেছে। আমি দুপুরে ভাত খেয়ে বিকাল ৩টা নাগাদ রওনা দিচ্ছি, ঢাকায় ফেরত আসার জন্য। আর গিন্নী কয়েকদিন থাকবে, এমনটাই প্ল্যান ছিল।
আসার আগে গিন্নী আমাকে বললো, তার মোবাইলে ব্যালেন্স শেষ, আমি যেন তাকে দোকান থেকে ৫০ টাকা পাঠিয়ে দেই। আমিও বাসা থেকে বের হলাম, রিক্সা নিয়ে বাস স্টপেজে গেলাম, টাকা লোড করতে একটা দোকানে গেলাম, কিন্তু টাকা ভাংতি সমস্যা কিংবা অন্য কোন কারণে গিন্নীর মোবাইলে টাকা পাঠাতে পারি নাই, এর মধ্যে বাস ছেড়ে দিচ্ছে, পরের বাস আর ৩০ মিনিট পর। ভাবলাম, বাসে উঠে যাই, ঢাকায় গিয়ে টাকা পাঠিয়ে দিব।
৩ ঘন্টা পর বাসায় আসলাম, বাসায় ঢুকার আগেই নিচের দোকান থেকে গিন্নীর মোবাইলে টাকাও পাঠিয়ে দিলাম। বাসায় আসার ১৫ মিনিট পর শ্বশুরবাড়ী থেকে কেউ একজন ফোন করল, "শাশুড়ী মারা গেছেন।"
আবার রওনা দিলাম।
পরে যা শুনলাম, আমি রওনা দেওয়ার পর শাশুড়ীর শ্বাসকষ্ট উঠে, গিন্নী একা ছিল বাসায়, এমন পরিস্থিতিতে সে আগে কখনো পড়ে নাই। কাউকে ফোন করে হেল্প চাইবে, সেটাও সম্ভব হয় নাই মোবা|ইলে ব্যালেন্স না থাকার কারণে। পরে বাড়ী থেকে বের হয়ে পাশের বাড়ীর কারো কাছ থেকে মোবাইলে নিয়ে ফোন করেছিল তার বড়বোন কে। তারপর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।
গিন্নী মেনে নিয়েছিল, এটা তার নিয়তি, তার মায়ের মৃত্যুর সময় অন্তত সামনে ছিল, যদিও তিনি মোটামোটি সুস্থ ছিলেন, হঠাৎ মৃত্যু কাম্য ছিল না। কিন্তু এই মৃত্যুটা আমাকে অনেকদিন ধরে অপরাধী করে রেখেছে। আমি যদি ঐ সময় গিন্নীর মোবাইলে ফ্লেক্সি করে দিতাম, ঘটনা অন্য রকমও হতে পারত। যদিও আমার স্ত্রী এটা নিয়ে আমাকে কখনো কোন অভিযোগ করে নাই, কিন্তু নিজেকে তারপরও অপরাধী মনে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০০