প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে “মজা মারে ফজা ভাই পাড়া পড়শির ঘুম নাই”। তেমনি অবস্থা দেখলাম ভারত মিডিয়ার। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে তাদের যেভাবে লাফালাফি ফালাফালি দেখলাম তাতে চুপ করে বসে থাকার উপায় নাই। মুখে শব্দ উচ্চারণ না করলেও হাত পা নাড়িয়ে বিভিন্ন ইশারা ইঙ্গিত দিয়ে হলেও কিছু কথা বলা দরকার।
বাংলাদেশের তরুণ ছাত্রদের আন্দোলনের ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক পদত্যাগ করে ভারতে পালায়ন করলেন। হাসিনার হুট করে পরাজয় অনেকেই মেনে নিতে পারল না আবার সরাসরি প্রতিহতও করতে পারল না। বাঘা বাঘা মন্ত্রীসহ দলীয় বড় বড় নেতারা বিক্ষোভে ফেটে পড়া ছাত্রদের কিলের ভয়ে গোপনে হাসিনার মতই দেশ ছেড়ে পালায়ান করলেন। তারা গোপনে বিভিন্ন কৗশল অবলম্বন করে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করলেন। আর এই কৌশলের প্রধান অস্ত্র হিসাবে বেছে নিল হিন্দুদেরকে। হিন্দুরাও সহজেই ছাত্র আন্দোলন বিরোধী শক্তির টোপ গিলে হিন্দু নির্যাতনের ধুয়া তুলে মিছিল মিটিংসহ ভারতের বর্ডারে গিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করে ধর্না ধরে জোড়হাত করে বসে রইল। হিন্দুদের কিছু বাড়ি ভাঙচুরসহ মন্দিরের ভাঙা মূর্তির সত্য মিথ্যা প্রদর্শন করে হিন্দু বাঁচাও হিন্দু বাঁচাও বলে আন্দোলন করতে লাগল। পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য কিছু ভারতীয় মিডিয়া সত্যমিথ্যা যাচাই না করেই প্রচার করে হিন্দুদের মুসলিম বিরোধী করার চেষ্টা করে। মিডিয়ার চেষ্টা ব্যার্থ হয় নাই ভারতের কিছু মুসলিম এর মধ্যেই নাজেহাল হয়েছে। এইসব করতে গিয়ে বাংলাদেশের হিন্দুরা কতটুকু সফল হলো আর না হলো এটা মূখ্য বিষয় নয় মূখ্য বিষয় হলো সাধারণ জনগণ তাদের এই কার্যকলাপকে কিভাবে দেখছে সেইটা।
এতোদিন হিন্দু বাড়ি ভাঙচুরের জন্য সবসময় জামাত শিবিরকেই দায়ী করা হতো। আমরাও মনে মনে সেইটা গ্রহণ করে নিতাম। কিন্তু এবার তাদের কার্যক্রম ভিন্ন দেখা দিল। হিন্দু ঘর বাড়ি বা মন্দির পাহারায় জামাতের ভুমিকা প্রশংসনীয়। এই কাজে আওয়ামীলীগ নয় জামাত শিবিরের লোকজন সশরীরে পাহারা দিয়েছে। অনেক মন্দির মাদ্রাসার ছাত্ররা পাহারা দিয়েছে। পাহারারত অবস্থায় ভাঙচুর বা লুট করতে আসা অনেক সন্ত্রাসীকে সাধারণ জনগণ পাকড়াও করে নজির সৃষ্টি করেছে। ধরা পরা সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামীলীগের কর্মী, কিছু ডাকাত আবার কিছু হিন্দুও আছে। আওয়ামীলীগের লোকজন এসেছে নেতার নির্দেশে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। হিন্দু যারা হিন্দু বাড়ি ভাঙা বা লুটপাট করতে গিয়েছে তাদের উদ্দেশ্য লুটপাট করা নয় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গ লাগানো, ডাকাতদের উদ্দেশ্য হলো নিজের স্বার্থে কিছু ধন দৌলত টাকা পয়সা লুট করা। হিন্দু সন্ত্রাসীদের মধ্যে আবার অনেকেই নিজেদের মন্দির নিজে ভেঙে মুসলমানের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে। এই দৃশ্যগুলো চোখে দেখার পরে অতীতের ঘটনাগুলো নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তবে যে ধর্মেরই হোক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করা মানুষের সংখ্যা খুবই কম তারপরেও এদের দ্বারাই পুরো দেশ, জাতি নিগৃহত হয়।
যশোরের হোটেল জ্বালানোর আগুনের ছবি দেখিয়ে ভারতীয় মিডিয়ারা সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই হিন্দু বাঁচাও হিন্দু বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে প্রথমে আমিও বিশ্বাস করেছিলাম। পরবর্তীতে জানা গেল এটা একটা আওয়ামী মুসলিম নেতার হোটেল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এই হোটেল আগুনে পোড়ানো হয়েছে। এইসব মিথ্যা ঘটনা হিন্দুদের নির্যাতনের কাহিনী হিসাবে প্রচার করায় বিশ্বাস উল্টো রুপ নিল। এখন সত্য ঘটনাগুলোও পাতানো খেলা মনে হচ্ছে। আগে হিন্দুদের বাড়ি ভাঙচুরের প্রত্যেকটি ঘটনার প্রতি যেভাবে বিশ্বাস ছিল এবং নিন্দা যানাতাম এখন অনেকটা কমে গেছে।
কিছু পুরানো ভাঙচুরের ছবি দেখিয়ে বর্তমানের আন্দোলনের সাথে জুড়ে দেয়াটা আওয়ামীলীগ সমর্থকদের আনন্দ দিলেও হিন্দুদের প্রতি সচেতন হিন্দুদেরই মর্মাহত করেছে। এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা যে বর্তমান অন্তরবর্তী সরাকারকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য সাজানো নাটক তা সাধারণ জনগণ বুঝে গেছে।
ভারতের শীতলকুচি বর্ডারে গিয়ে যেসব লোক আশ্রয় প্রার্থনা করছে তাদের মাঝে কোন বয়স্ক লোক বা মহিলা বাচ্চাদের চেহারা চোখে পড়ল না। সবই তরুণ মুখ। এটা যে কোন এক দলের ইন্দোনে বর্ডারে জমায়েত হয়েছে সেটা ঐ ছবি দেখলেই বোঝা যায়।
যশোরে এক হিন্দু ব্যাবসায়ীর বাড়ি ভাঙার ছবি চোখে পড়ল। সেটা আন্দোলনের কারণে ভাঙে নাই ভেঙেছে জমিজমা সংক্রান্ত ঝামেলার কারণ। তবে আন্দোলনের সুযোগে এই ঘটনা ঘটানোর কারণে এটাকেও হিন্দু নির্যাতন হিসাবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো, শত শত ছাত্র-ছাত্রী সাধারণ জনগণ নিহত হলেও তাদের মধ্যে হিন্দু মরেছে কয়জন? সর্বসাকুল্যে আন্দোলনে মারা গেছে দুইজন হিন্দু, তাদের মধ্যে একজন পুলিশ আরেকজন রাজনৈতিক নেতা। কোন সাধারণ হিন্দু মনে ভুলেও মরে নাই। হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হলে শত শত হিন্দু নারী পুরুষ মরার কথা কিন্তু এখানে যারা মরেছে তাদের সবই প্রায় মুসলিম। আন্দোলনে হিন্দুর চেয়ে চৌদ্দগুণ বেশি মুসলিমদের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। মুসলিমদের বাড়ি ভাঙার সেই বিষয়টি ভারতের মিডিয়ার নজরে খুব একটা আসে নাই এবং খুব একটা প্রচারও করে নাই। কারণ মুসলিমদের ব্যাপারে এই মিডিয়াগুলো সবসময় টিনের চশমা পরে থাকে। যে কারণে তাদের মুসলিম নির্যাতনের দৃশ্য চোখে না পড়লেও হিন্দু নির্যাতনের দৃশ্য তারা ভারত থেকেই ভালোভাবে দেখতে পায় আর হিন্দু নির্যাতনের দৃশ্যর বর্ননা দিতে দিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। তাদের কথা শুনলে মনে হয় শেখ হাসিনার পতনে আওয়ামী লোকজনের নেঙটিতে যত না আগুন লেগেছে তার চেয়ে শতগুণ বেশি আগুন লেগেছে ভারতীয় মিডিয়ার নেঙটিতে।
শেষ কথা হলো হিন্দু ভাইদের প্রতি, এখন টিকে থাকার জন্য যে আন্দোলন আপনারা করলেন এই আন্দোলনটা তো অনেক আগেই করতে পারতেন। এই দেশেই আপনাদের চৌদ্দপুরুষের বাস। আপনারা কেন ভারত চলে যাবেন। মুসলমানের হাতে জাত গেল জাত গেল বলে আপনারা নিজের থেকেই ভারত চলে যান অথচ দোষ দেন এদেশের মুসলমানদের। সব মুসলমান কি আপনাদের নির্যাতন করে? অথচ ভারত গিয়ে এনআরসি পাওয়ার জন্য এমন বক্তব্য ছাড়েন শুনলে মনে হয় মুসলমান মানেই হিন্দু নির্যাতনকারী। আপনাদের এই মানসিকতা পাল্টান, নির্যাতনকারীদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করেন। এক দলের হাতে নির্যাতন হলে সেই দলকেই দায়ী করেন অন্য দলেকে দায়ী করা বন্ধ করেন দেখবেন আপনারা আর নির্যাতিত হবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৮:২১