আমার এই একটাই সমস্যা। মানুষের নাম ভুইল্লা যাই !
পৃথিবীর কোন দেশের উপর দিয়া কোন অক্ষাংশ রেখা চইলা গেছে, আফ্রিকার জঙ্গলে সবচেয়ে বিষাক্ত পিঁপড়ার নাম কি, এমনকি কোন দেশের জনসংখ্যা কত, মহিলা কত, পুরুষ কত, সবই থাকে আমার নখদর্পনে। অর্থাৎ নখ কামড়াইলেই সব মনে পইড়া যায়!
কিন্তু ঐ একটাই সমস্যা।
মানুষের নাম ভুইল্লা যাই !
একবার ভাইবা বোর্ডে আমারে প্রশ্ন করলো, আইচ্ছা বলেন তো দেখি উগান্ডার প্রেসিডেন্টের রান্নাঘরে কতজনের জন্য রান্না করা হয় ?
আমি একটু মুড নিয়া এবং চালাকি কইরা উত্তর দিয়া দিলাম। সকালে ৩৮ জন, দুপুরে ৩৭ জন, রাতে ৪২ জন।
বোর্ডের লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাই থাকে। বুঝলাম তারাও ধাঁধায় পইড়া গেছে। এবার আমারে বলে, হা হা.. এইটাতো কোন প্রশ্নই ছিল না। এইটা একটা ট্রায়াল কোয়েশ্চন। আপনারে এমনেই জিজ্ঞেস করছি। মজা লইছি !
আচ্ছা এবার বলেন, বাংলাদেশের ১৫তম রাষ্ট্রপতির নাম কী ?
বুঝলাম তারা আমার দুর্বল জায়গায় টুনকা মারছে। আমি হাত কচলানি শুরু করলাম। নাকের গোড়ায় বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দিতাছে। এ্যা এ্যা এ্যা....
পাশেরজন মারলো একটা ধমক। যান মিয়া... খালি এ্যা এ্যা করতেছেন। রাষ্ট্রপতির নাম জানেন না আইছেন চাকরি করতে !
আমি মাথা নিচু কইরা ভাইবা বোর্ড থাইক্কা বাইর হইলাম। আপনারা হয়তো ভাবছেন এই অফিসে আমার চাকরি হয়নি ! কিন্তু না। আপনাদের ধারনা ভুল। একদিন মাথা উঁচু কইরা এই চাকরিতেই জয়েন করছি আমি ।
এবার আরেকটা ঘটনা বলি।
গাড়ি মিস করায় শ্বশুরবাড়ি যাইতে সন্ধ্যা হইয়া গেল। প্রচন্ড ঝড়-তুফান চলতেছে। বিদ্যুৎ উধাও। বাস থেকে নাইমা রিক্সাতে উঠলাম। ড্রাইভার কইলো, স্যার কই যাইবেন ? কইলাম, নিদনপুর। 'আইচ্ছা' কইয়া ড্রাইভার তুফান বেগে রিক্সার প্যাডেল মারা শুরু করলো।
সিগারেটের আয়ু অর্ধেক থাকতেই নিদনপুর গ্রামে ঢুইক্কা গেলাম। পুরা গ্রাম আন্ধাইরে গিজগিজ করতেছে। গ্রামের রাস্তাঘাট দেখা তো দূরে থাক, হাত বাড়াইলে নিজের হাতও দেখা যায় না। ড্রাইভার কইলো, স্যার, আপনে কি রিক্সায় বইসা আছেন। আমি 'হুম' কইরা একটা শব্দ করলাম। পরে ড্রাইভার কইলো, পিছন ফিইরা আপনারে দেখি নাইতো স্যার, তাই কইলাম।
ড্রাইভারকে দোষলাম না। দোষ আমারই। এমন আন্ধাইর রাতে কুইচ্চার মতো কুচকুচে কালাইয়া এই আমি গায়ে দিছি নীল রংয়ের ফুলহাতার শার্ট। আমারে না দেখারই কথা !
স্যার, আমরা নিদনপুর গ্রামে তো আইয়া পড়লাম। আপনি কার বাড়ি যাইবেন ?
আমার এ্যা এ্যা শব্দ শুরু হইয়া গেল।
তাড়াতাড়ি কন, তাড়াতাড়ি কন স্যার !
বউরে দিলাম ফোন।
- আইচ্ছা, কও তো দেখি তোমাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকের বাড়িটার নাম কি ?
- দক্ষিণবাড়ি !
- আরে, বাড়ির মালিকের একটা নাম আছে না !
বউ চিল্লাই উঠলো।
-তুমি যাবা তোমার শ্বশুরবাড়িতে। দক্ষিণবাড়ির মালিকের নাম জাইন্না লাভ কি তোমার !
-তাইলে পূবেরবাড়ির মালিকের নামটা কও।
-এই, কী হইছে তোমার। কী আবুল তাবুল বকতাছ। তোমার মাথা কি নষ্ট হইয়া গেছে। তুমি শ্বশুরবাড়ি গিয়া আউলাই গেছো নাকি ?
ওপাশে চিৎকার শুরু করে বউ। যেন মোবাইলটা ফাটাইদিতাছে। পরে টাস কইরা লাইনটা কাইট্টা দেয়। ভাবছিলাম দক্ষিণবাড়ির মালিকের নামটা জানলে ড্রাইভাররে কইমু এই বাড়ির ধারেকাছে লইয়া যাইতে ! তা আর হইলো না ।
হঠাৎ মাথায় নতুন একটা বুদ্ধি উঁকি দিল।
আমার পাশ দিয়ে যাওয়া একটা লোকরে দাঁড় করাইয়া কইলাম, ভাই, এই গ্রামে কিছুদিন আগে ধরাধরপুর গ্রামের একটা ছেলে বিয়া করছে। আপনি কি কইতে পারবেন সেই বাড়িটা কোনটা ?
- ধুর মিয়া কী যা-তা কইতাছেন। কোন বাড়িতে কে বিয়া করছে আমি তা ক্যামনে কইমু... যান মিয়া, যান.. ভাগেন।
রিক্সাড্রাইভার কইলো..
আপনার মতো এক পাগলের কাছে কোন দূর্ভাগা তার মেয়েরে বিয়া দিলো। আপনি শ্বশুরের নাম জানেন না। নামেন, নামেন। আমার রিক্সা থাইক্কা নামেন !
ড্রাইভার আমারে নামাইয়া গলা ফাটাইয়া চিল্লাইতেছে... শ্বশুরের নাম জানেনা.. বেয়াক্কলের ঘরে বেয়াক্কল।
লাজে-ভয়ে আমার কাপড় ভেজার মতো অবস্থা !
আন্ধাইর রাতে কাকভেজা হইয়া গাছের নিচে দাঁড়াই আছি। বুকটা ধড়পড় করতাছে। ভগবান, এবারের মতো মাফ কইরা দেও আমারে। শ্বশুরের নামটা মনে কইরা দেও ভগবান !
হঠাৎ দূর থাইক্কা একটা বিরহী গানের সুর আমার কানে ভাইসা আইলো।
নিশি ভোর হইয়া যায়,
কোথায় ছিলে প্রাণবন্ধু বলগো আমায়।
প্রাণটা আমার জুড়াই গেল। কিছু একটা আবিষ্কারের আনন্দে মনটা ছলাত ছলাত কইরা উঠল তখন। বুঝলাম সৃষ্টিকর্তা কাউরে সহজে বিপদে ফালায় না।
একটা দোকানে গিয়া জিজ্ঞাস করলাম-
ভাই, নিশিকান্ত বাবুর বাড়িটা কোনদিকে কইতে পারবেন !
লোকটা তর্জনীর ইশারায় দেখাইলো, ঐ যে দেখা যায় নিশিকান্ত বাবুর বাড়ি !
ছবি: গুগল