জীবনের প্রথম স্বাক্ষরটা যে এই কাজেই প্রয়োগ হবে এমাদ মিয়া তা স্বপ্নেও কল্পনা করেন নি।
রেজা তার বাবাকে বলল- অন্তত স্বাক্ষর দেয়াটা শিখা উচিত বাবা। কখন কোথায় প্রয়োজন পড়ে, বলা যায় না। তখন তো শুধু পস্তাবে।
বাবা বললেন, সারা জীবন তো কাটিয়েই দিলাম, কোন প্রয়োজন পড়েনি। এখন কষ্ট করে কেনো শিখবো বাবা ?
-আহা... বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে সে টাকা স্বাক্ষর দিয়ে তুলতে হবে না ?
-আচ্ছা আচ্ছা, তখন দেখা যাবে।
রেজা হাল ছাড়েনি। জোঁকের মতো কামড় খেয়ে লেগেছিল। গতবার যখন সে ছুটিতে বাড়ি আসে তখন স্বাক্ষর দেওয়াটা শিখিয়ে গেছে তার বাবাকে। তিনিও সাদা কাগজে আগ্রহ নিয়ে নাম লিখাটা শিখে ফেললেন। নিরক্ষর থেকে অক্ষর শেখার কী যে আনন্দ, তা তখন তিনি অনুধাবন করেছেন।
এমাদ মিয়া এয়ারপোর্টে তার পুত্রের জন্য অপেক্ষা করছেন। প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হওয়া পাইলট পু্ত্রের জন্য । কফিনটা জড়িয়ে ধরার আগে সাদা কাগজের এক কোণে স্বাক্ষরটা দিতে হবে তার। লাশ বুঝিয়া পাওয়ার স্বাক্ষর। পুত্রের কাছে শেখা স্বাক্ষরটার এমন প্রয়োগ মানতে পারছেন না তিনি। শুধু হা-হুতাস করছেন। হাত কাঁপছে। পা কাঁপছে। কলম কাঁপছে। সমগ্র ব্রহ্মান্ড কাঁপছে যেন।
বুকের পাঁজর ভেঙ্গেচুড়ে বের হতে চায় জমাট বাধা আর্তনাদ। কিন্তু না পেরে একসময় তা নোনাজলে রূপান্তরিত হয়ে দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় ঝরতে থাকে।
গুটি কয়েক কাক বিল্ডিংয়ের কার্নিশে বসে কা কা করছে। রেজা একদিন কাকের উড়াউড়ি দেখে আকাশে উড়ার স্বপ্ন দেখেছিল। এমাদ মিয়া কাঁদেন। শূন্যে তাকান। চারিদিক শুধু শূন্যতায় ভর করে। স্বপ্নেরা ডুবে মরে সেই অসীম শূন্যতায়।