somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কম্পিউটার ভুল করে না :: আইয়ুব আহমেদ দুলাল

০২ রা জুন, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কম্পিউটার ভুল করে না
আইয়ুব আহমেদ দুলাল

কম্পিউটারে ভুল হতে পারে অপারেটিংয়ের জন্য, কম্পিউটারের জন্য নয়
যতোদূর মনে পড়ে, ১৯৯২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম অবজেকটিভ টাইপ পদ্ধতি শুরু হয়েছিল। তারপর কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষার খাতা চেক করা শুরু হয়েছিল। পরীক্ষার খাতা দেখার ক্ষেত্রে প্রথম যখন এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল ঠিক সেই সেশনে বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী ফেল করেছিল। আসলে তারা ফেল করেনি, তাদের ফেল করা হয়েছিল। আবার ফেল করা অনেকেই পাস করেছিল, এমনকি স্ট্যান্ডও করেছিল।
দেশের প্রথম সারির খ্যাতনামা বেশ কয়েকটি স্কুলের শত শত ছাত্রছাত্রী সেবার রাস্তায় নেমে তাদের জীবনের ওপর অত বড় একটি কলঙ্ক চিহ্ন থেকে মুক্তি পাওয়ার নিমিত্তে সুব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছিল। প্রেসক্লাবের সামনে রাস্তায় গড়াগড়ি গিয়ে কর্তৃপক্ষের আক্কেলের ওপর চোখের নোনাজল ফেলে তাদের বিবেকের অস্থি-মজ্জা ধুয়ে দিয়েছিল। তাদের খাতা আবার যাচাই করার দাবি করেছিল। সেই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা কর্তৃপক্ষের বশংবদ সেই ব্যক্তিদের যখন ওই ঘটনার কারণ জানতে চেয়েছিলেন তখন তারা দন্ত প্রদর্শন করে বলেছিলেন কম্পিউটার নাকি ভুল করেছে। অনেক জ্ঞানীগুণী বুদ্ধিজীবী মহল সেদিন মাথা নিচু করে নিয়েছিলেন। প্রতিবাদ করার বা তাদের বিকৃত মস্তিস্কে খোঁচা মেরে ফুটো করে জ্ঞান ঢুকিয়ে বা শিখিয়ে দেয়ার মতো মানসিকতাও তারা হারিয়ে ফেলেছিলেন। কারণ তারা জানেন, আহাম্মকের কথার প্রতিবাদ করলে নিজেকেই আহাম্মক হতে হয়। তারা জানতেন, কম্পিউটার কখনো ভুল করে না। ভুল তথ্যের জন্য কম্পিউটার আবিষ্কার হয়নি। বরং যে কম্পিউটার অপারেট করে সে ভুল করে, তার ভুল হয়। সে যে ফর্মুলা প্রয়োগ করবে বা নির্দেশনা দেবে কম্পিউটার সেই অনুযায়ী কাজ করে বা করবে। এমনকি সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো ফর্মুলা প্রয়োগ হলে কম্পিউটার তা সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ দেবে। সব মিলিয়ে কম্পিউটার ভুল করেছে- এটা কোনোভাবেই বলা যায় না। বললে তা হবে চিরন্তন মিথ্যা।
যাহোক সেই প্রসঙ্গটা হয়তো পুরনো। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র বা ন্যাশনাল আইডি প্রসঙ্গটা বর্তমানে দেশে হটকেক। ন্যাশনাল আইডি প্রস্তুতিকরণ পদ্ধতি পরিপ্রেক্ষিতে ওপরের ঘটনা পুনরাবৃতি করলাম মাত্র। ভোটার আইডি বা ন্যাশনাল আইডেনটিটি পদ্ধতি বাস্তবায়ন পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষের একটা মহৎ ও বৃহৎ উদ্যোগ। নিঃসন্দেহ প্রশংসার দাবিদার এবং আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকায় লেখা আসছে, সেই আইডি কার্ডে নাকি তথ্য প্রদানে অনেক ভুল রয়েছে। যেমন- বানানে ভুল, পিতার জায়গায় স্ত্রীর নাম, ছেলের জায়গায় বাড়ির নাম, প্রকৃত নামের বিকৃতি, ছবি, ঠিকানা ঠিক থাকলেও নাম ভিন্ন, রাজশাহীর জায়গায় কুমিল্লা, স্ত্রীর নামের জায়গায় অন্য মহিলার নাম ইত্যাদি ভুল তথ্য ছাপা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট লোকজন কি বলবেন, কম্পিউটার ভুল করেছে? এ যুক্তি এখন আর মার্কেটে চলবে বলে মনে হয় না।
এখন প্রায় সব শিক্ষিত মানুষই কম্পিউটার প্রযুক্তি সম্পর্কে কমবেশি জ্ঞাত। তবুও শোনা যায় কর্তৃপক্ষের লোকজন নাকি বলছেন, সিস্টেমে সমস্যা ছিল। আমার প্রশ্ন হলো, সিস্টেমে যদি সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ফাইনাল প্রিন্ট হলো কেন? এখনকার প্রযুক্তি নড়বড়ে নয়, অনেক উন্নত। সেই ১০-১৫ বছর আগের মতো চিন্তা করে ফর্মুলা বসাতে হয় না। সবই সেট করা আছে (অপারেটিংয়ের ক্ষেত্রে)। ডাটা এন্ট্রির সময় অপারেটর কিংবা নেপথ্যের কারিগররা দেখতে পাননি কেন? একজন ব্যক্তি সামনে বসে অপারেটরকে তার পুরো নাম, ঠিকানা সঠিকভাবে লিখে দেয়ার পর অপারেটর সেই ডাটা প্রোগ্রামে এন্ট্রি করে ওকে করেছেন। প্রোগ্রাম সেটা গ্রহণ করেছে এবং নিশ্চয়ই একটি মেসেজ দিয়েছে। তাছাড়া তথ্য পূরণের পর কয়েক সেকেন্ড ব্যয় করে প্রিভিউতে নাম, ঠিকানা দেখে নেয়া যেতে পারতো। প্রিভিউ দেখার অপশন বর্তমানে সব প্রোগ্রামেই আছে। যদি সিস্টেমে সমস্যা থাকবে তাহলে কম্পিউটার সেই ডাটা গ্রহণ করতো না। গ্রহণ করলেও মেসেজ আসতো। তাছাড়া সিস্টেমে যতোই গ-গোল থাকুক না কেন, শব্দের বানান তথা নাম কেন ভুল হবে? আকলিমার জায়গায় বড়জোর আখলিমা হতে পারে, কিন্তু তাহমিনা হতে পারে না। এছাড়া সিস্টেমে সমস্যা থাকলে হয়তো লাইন সামান্য আপ-ডাউন হতে পারে অথবা ফাইল করাপ্ট হয়ে পুরো তথ্য উল্টোপাল্টা হতে পারে (অবশ্যই সেটা ধরা পড়বে এবং মেরামতযোগ্য), কিংবা পুরো তথ্যই ডিলিট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ছবি ও ঠিকানা ঠিক থেকে সোনামিয়ার জায়গায় তো লালমিয়া হতে পারে না। ভেবে দেখুন, সোবহানের জায়গায় যদি ছোবড়ান হয়ে যায় তাহলে নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো স্থানে পাবলিকে নিঃসঙ্কোচে চড় মারা শুরু করে দেবে কি না!
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওই প্রজেক্টে বেশ অভিজ্ঞ ও দক্ষ অপারেটর, প্রোগ্রামার ও টেকনিশিয়ান কাজ করেছেন, তারা আমার চেয়ে অনেক অনেকগুণ ভালো জানেন এবং অভিজ্ঞতা রাখেন। তারাই প্রযুক্তিগত যৌক্তিক ব্যাখ্যা ভালো দিতে পারবেন। তবে একজন প্রোগ্রামার ভালো করেই জানেন, প্রোগ্রামে সমস্যা দেখা দিলে তিনি কিভাবে বুঝতে পারবেন, কিংবা কিভাবে সমাধান দেবেন, অথবা তার ফলাফল কেমন হবে। তার কাজ শুধু প্রোগ্রামের দিকে নজর রাখা, কারো নামের বানান কিংবা অপারেটর কার স্ত্রীকে অন্যের স্ত্রী বানিয়ে দিয়েছে সেই দিকে নয়। আমার বিশ্বাস প্রোগ্রামাররা তাদের দায়িত্ব ঠিক ঠিকমতোই পালন করেছেন। টেকনিশিয়ানরাও তদ্রƒপ। তা না হলে অপারেটররা স্বাচ্ছন্দ্যে ডাটা এন্ট্রি কিংবা অপারেটিং করতে পারতেন না। এখানে অবশ্যই ‘সরকারি মাল দরিয়াতে ঢাল’ পন্থায় অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কাজ করেছে। মূলত দোষ চাপানোটা আমাদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নিজে দোষ স্বীকার না করে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিই। এটা মোটেও উচিত নয়। দোষ স্বীকার করাটাও একটা মহৎ গুণ। বোধগম্য হয় না, সরকারি কাজে এতো অবহেলা কেন ? কোথাও কোনো স্বচ্ছতা দেখা যায় না। অবহেলা-অযতœ মানেই যেন সরকারি। সেখান থেকেই হয়তো ওই শব্দ দুটির (অবহেলা, অযতœ) উৎপত্তি হয়েছে। তাহলে কি বিশ্বাস করা যায় যে, সরকারি বশংবদ সব কাঠের পুতুল, শুধু পয়সা দেখলে হা করে !
সব মিলিয়ে অদক্ষতাকেই দায়ী করা যায়। অথচ আমাদের দেশে অনেক ট্যালেন্ট রয়েছে। তারা গেম এবং চেটিং করে সময় কাটায়। এসব জাতীয় কাজে কলেজ, ভার্সিটি থেকেও অস্থায়ী ভিত্তিতে ট্যালেন্ট কাজে লাগানো যেতে পারতো। এতে তাদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হতো। নিজের মধ্যে কোয়ালিটি খুঁজে পেতো। সেই বিশ্বাসে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে অন্তত বিষণœœতা থেকে মুক্তি পেতো। শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে কোনো না কোনোভাবে নিজেকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতো।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা একটা সিকিউরিটি। একটি মানুষের সঠিক পরিচয় বহন করে। এ পরিচয়পত্রের ভুল তথ্যের জন্য একজন দাগি ফেরারি আসামি বা ক্রিমিনালও সৎ হিসেবে মুক্তি পেয়ে যেতে পারে। আবার অপরাধ না করেও একজন সৎ মানুষ ক্রিমিনাল হিসেবে ফেঁসে যেতে পারে। একজনের স্ত্রী অন্যের স্ত্রী হয়ে যাওয়ার বিষয়টা না হয় সামাজিকভাবে হাস্যকর হবে, কিংবা প্রকৃত অর্থে গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু একজন স্ত্রীলোক সেনাপ্রধানের মতো ব্যক্তির নাম ব্যবহারকারী ভুল কার্ড দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে। কাজেই এ কার্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তেমন শিকারির শিকার হতে চাই না। কাজেই আমাদের এ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সব কর্তৃপক্ষ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সচেতনভাবে সঠিক সময়ে সঠিক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে সর্বদা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করবেন এটাই নাগরিক হিসেবে আমাদের চিরপ্রত্যাশা।




সৌদি আবর


যায়যায়দিন
উপসম্পাদকীয়

২ জুন ২০০৮ সোমবার
২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪২৯
১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪১৫
বছর ০২ সংখ্যা ৩৫১


১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×