মারিয়া (ছদ্দ নাম) নামের একটি মেয়ে ছিল, গ্রামের মেয়ে । সহজ সরল এবং একটু বোকা ও ছিল । পরিবারের বড় মেয়ে । সবার থেকে কিছুটা আলাদা ছিল। একা একা থাকতে ভালোবাসতো, সম্পূর্ণ নিজের জগৎ ছিল তার। বয়সে বড় কারো সাথে মিশতে না পারলেও ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে ছিল তার খুব মিল । ক্লাসে এর পর সারাদিন ঐ ছেলেমেয়েদের সাথে ঘুরে বেড়ানো ছিল তার কাজ । শখ ছিল একটা তার গাছ লাগানো। জঙ্গল থেকে বিভিন্ন গাছ এর চারা/বীজ সংগ্রহ করে বাসায় এনে লাগানো, এতে সাথ দিত তার ছোট্ট দল টা ।
হাই স্কুল পেরিয়ে কলেজ, তারপরও একই স্বভাব রয়ে গিয়েছিল। গ্রামে মেয়েরা কলেজে পড়া শুরু করলেই তাদের বিয়ে দেয়ার জন্য আশেপাশের সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে । মনে হয় এটাই তাদের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান।
যাইহোক, কলেজ পড়াকালীন সময়ে মরিয়ার বিয়ে হয়ে যায় মে মাসে, ২০০৭ সালে।
বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে, বাবার ব্যবসা আছে, বড়লোক...ইত্যাদি..। আর কি চাই একটা মেয়েকে বিয়ে দিতে !! ছেলে কি করে ? ছেলের বয়স কতো? পড়ালেখা কতদূর? স্বভাব কেমন? কোন বদঅভ্যাস আছে কিনা? এইগুলো জানার কোন প্রয়োজন বোধ করেনি মারিয়ার বাবা । আর মা?? তার কথা কে শুনে!!? তাকেও তো সারা জীবন নির্যাতিত হয়ে আসতে হয়েছে, তার কি কোন মূল্য আছে নাকি !
বিয়ে হয়ে গেল, যে দিন দেখতে এসেছে ঐ দিন ই তরীঘরী করে। সেদিন ই মারিয়াকে ছেলের বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো। যে মেয়ে তার ছেলেবেলা ই ছাড়েনি তাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যাওয়া হলো ।
যার সাথে তার বিয়ে হয়েছিল সে ছিল তার থেকে ১৫ বৎসরের বড় একজন। আর মারিয়ার তখন ১৭ চলে। কোন কিছুর সাথে খাপ খাওয়াতে পারছিলনা মারিয়া। সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ। চারদেয়ালে ঘেরা জীবন,শ্বশুর,শাশুরী,স্বামী এই ছিল পরিবারের মানুষ। জীবনটা কারাগারে কাটানোর মতো হয়ে গিয়েছিল। স্বামীর সাথে কিছুতেই মতে মিল হতো না। হবে কিভাবে মারিয়া যা ভাবতো বা করতো তা ওর স্বামীর কাছে ছিল ছেলেমানুষী,বয়সের পার্থক্য বেশি হওয়ার কারণে কোন কিছুতেই মিল ছিলনা দুজনের। অল্পতেই কথা কাটাকাটি হতো, এ পর্যায়ে মারিয়ার গায়ে হাত তোলা শুরু হয়ে গেল। ভীষন মারতো, কেউ ছিলনা ফেরানোর, শ্বশুর,শাশুরী দেখেও কিছু দেখতো না । এক পর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারিয়া। কোন কারনে ঝগড়া লাগলে বা ওর শরীরে হাত ওঠালে সে নিজে নিজের শরীরে আঘাত করতো।কোন বন্ধু-বান্ধব ছিলনা তার, কারো সাথে কথা বলতে দিত না ওর স্বামী। নিজেকে পরফেক্ট ভাবতো ,সে যা বলবে তাই সঠিক, আর কেই কিছু জানেনা,বুঝেনা।
কিছুদিন পর মারিয়া জনতে পারে,ওর স্বামী কিছু করে না, না কোন চাকরী বা ব্যবসা, পড়ালেখা এইচ এস সি পর্যন্ত, সারা নি ঘুমাতো, সন্ধায় বেরহয়ে যেতো, অনেক রাতে বাড়ি ফিরতো যদিও সে কিছুই করতোনা ঘোড়াঘুড়ি ছাড়া ও বন্ধুদের সাথে আড্ডামারা ছাড়া । কিছুদিন পর মারিয়া বুঝতে পারে যে তার স্বামী নেশাগ্রস্থ । সে ফেন্সিডিল,গাজা ইত্যাদি ব্যবহার করতো নেশা হিসেবে। নেশা কি জিনিস তা কিন্তু মারিয়া আগে কোনদিন জানতো না বা শুনেওনি,শুনবে কিভাবে সে তো বড়দের গল্পে অংশীদার হতো না এবং এখনকার মতো ডিশের লাইন ও ছিল না তাদের।পরবর্তীতে সে আরো জানতে পারে যে, তার স্বামী ইয়াবা ও খায়। এগুলো সে কিন্তু অন্য কারো কাছে শুনেনি, নিজে তার স্বামীর কাছে পেয়েছে। নেশা না করার জন্য অনেক বলেছে সে তার স্বামীকে, অনেক মার ও খেয়েছে সে এর জন্য। শ্বশুর,শাশুরী কে বলেও লাভ হয় নি , তারা বলতো তাদের ছেলে ফুলের মতো পবিত্র। মারিয়া কে পশুর মতো মারতো ................।
এরপর আর কি যা হওয়ার তাই হলো, মারিয়া তার বাবার বাড়িতে চলে আসলো। তার স্বামী তাতে ডিভোর্স লেটার পাঠালো আজ থেকে ৩ বৎসর আগে। মারিয়া ঢাকা চলে আসে, চাকরী করে সে এখন।(অনেক কষ্ট করেছিল চাকরী হওয়ার আগ পর্যন্ত, কেউ সাথ দেয়নি শুধূ একজন ছাড়া, সে মারিয়ার পূর্বপরিচিত বা আত্বীয় নয়, হোস্টেলে থাকাকালীন সময়কার একজন বান্ধবী ছিল) এখনো মারিয়ার স্বামী মারিয়ার পিছু ছাড়েনি। সব জায়গায় অশান্তি সৃষ্টি করে সে। কোথাও শান্তিতে থাকতে দেয় না। জানিনা শান্তি পবে কিনা মেয়েটা ........................।
(সত্য ঘটনা)