বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী পরিষদের অভিমত: ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েদের প্রায় ৯০ শতাংশই সামাজিক পরিসরে যৌন হয়রানির শিকার। কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম বাংলাদেশের ৪৭ ভাগ নারী গৃহে যৌন নির্যাতনের শিকার হন, এই সংখ্যাটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ। সীমা ও ইয়াসমীনের কথা মনে আছে তারা ধর্ষিতা ও খুন হয়েছিল, পুলিশের হাতেই। সাম্পতিক সময়ে রুনা, রিনা, রুমি, তন্বী, ইলোরা, পিংকিসহ অনেক মেয়েই পুরুষের যৌন আগ্রাসী মনোভাবের কারণে জীবন হারিয়েছে। এর কারণ যৌন সহিংসতায় নারী ও কিশোরীরা অপমানিত, লঞ্ছিত ও বিচারবঞ্চিত হয়ে জীবনতে বিসর্জন দিতে বাধ্য হন।
কিশোরীদের প্রতি কিশোর/ তরুণদের লোলুপ দৃষ্টি, লাম্পট্যপূর্ণ আচরণ এবং উচ্ছৃঙ্ক্ষল হয়ে উঠার কারণ আগের পোস্টে বলেছি, আমি এখনো একই মত পোষণ করছি।
আমরা অধিকাংশ নারীই কিন্তু যৌন হয়রানির কথা প্রকাশ করি না। মনে হয় প্রকাশ করলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। দেশে অধিকাংশ ধর্ষিতাই প্রকাশ করতে পারে না। অনেকগুলো প্রকাশ ঘটে যায় বলেই জানা যায়। এটা সামাজিক অবস্থার কারণেই হয়েছে। আমিসহ বহু ছাত্রী মার্কেটে, বাসে হয়রানির শিকার হই কিন্তু কজন বলে। সম্মানহানীর ভয়; আরো আক্রমনের ভয় এবং পুরুষরা প্রচার করবে নারীটিই উস্কানী দিয়েছে। টাইট জিন্স পড়েছে, ওড়না গলায় ঠিকমতো ছিল না, ওর বুক বেশি উচু, নিতম্ব দোলে এই মেয়েতো ধর্ষিতা হওয়ার জন্যই রাস্তায় বের হয়েছে। স্তনে বা নিতম্বে হাত দেয়া; কটুক্তি করা পুরুষরা যৌন হয়রানি বলে মনেই করে না।
যৌন হয়রানি সর্বত্র ঘটছে। ঘরে, বিদ্যাপীঠে, কর্মস্থলে। যেন নারীর জন্য বাংলাদেশের কোথাও নিরাপত্তা নেই। ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, পুরুষদের স্ত্রী ও দাসীদের ভোগ করার অধিকার দেয়া হয়েছে। জাবি, ঢাবি, চবিতে অনেকগুলো যৌন হয়রানীর ঘটনা ঘটেছে। কারা ঘটিয়েছে: পূজনীয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছাত্র। গৃহে কাজের মেয়েটিকে ধর্ষণ করে বাব-সন্তান। এ কারণে অনেক কাজের মেয়েই হয়ে উঠে পতিতা। ফিলিপাইনের বালবাগানকে মধ্যপ্রাচ্যে পিতা-পুত্র ধর্ষণ করে এবং পরে আদালত রায় দেয় মেয়েটির বিরুদ্ধে। বিশ্ব বিবেক জেগে উঠলে, মেয়েটি মুক্তি পায়। পাকিস্তানের সালমা ছিল বোবামেয়ে। ও ধর্ষিতা হয় এবং গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ওর শরীরে চিহ্ন থাকায় আদালত মেয়েটির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। বাংলাদেশেও একটি মেয়ে পিতার বিরুদ্ধে মামলা করায়, বিচারক তাকে ভৎর্সনা করেছিল। বিচারকরা প্রায়শই পুরুষসূলভ আচরণ করে। চাকরি ক্ষেত্রে বসতো নারী কলিগকে বউ মনে করতে চায়, ভোগের লালসায়। এদেশে নারী চাকুরিজীবীর সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়ে অবস্থার পরিবর্তন হবে আশা করি। গাড়ির হ্যাল্পারতো গায়ে হাত দিবেই। কিছু বললেই কয়েকজন পুরুষ খেকিয়ে উঠে। কিছু রিক্সাচালক দেখবেন রোকেয়া হলের গেটই দাড়িয়ে থাকে, ওরা ছাত্রীদের বহন করতে আগ্রহী। একজন নারী তার সহপাঠী, সহযাত্রী, সহকর্মী কারো কাছেই নিরাপদ নয়। তারা যে যৌন হয়রানি করে এটাই অনেকে মানতে চায় না। আসলে তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এগুলোকে যৌন হয়রানি মনেই করে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৩০