১. বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা: শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার ও প্রসারের নিমিত্তে ১৯৭৫ সালের ২৮শে মার্চ এক অধ্যাদেশ বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্থা হিসেবে নন্দিত।
২. বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন: মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্যে শেখ মুজিব মাদ্রাসা বোর্ড গঠন করে মাদ্রাসা শিক্ষকদের চাকরির নিশ্চয়তাসহ যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেন। পূর্বে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্ত্বশাসিত ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডকে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদার করে এর নাম রাখেন “মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড”।
৩. টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থান নির্ধারণ: বঙ্গবন্ধু ইসলামসহ সকল ধর্মের যথাযথ স্থান সঠিকভাবে নির্ধারণের ব্যাপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। তাবলীগ জামাত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়াই হচ্ছে এ সংগঠনের একমাত্র কাজ। এই সংগঠনটি যাতে বাংলাদেশে অবাধে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এ উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে এর সুবিশাল(১৬০ একর) জায়গা বরাদ্দ করেন। প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে দাওয়াতি কাজে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজার তাবলীগি ভাই এ জামাতে সমবেত হন।
৪. হজ পালনের জন্য সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা ও হজযাত্রীদের ভ্রমণ কর রহিতকরণ: পাকিস্তান আমলে হজযাত্রীদের জন্য কোনো সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা উত্তর
বাংলাদেশে প্রথম হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন এবং তিনি হজযাত্রীদের ভ্রমন কর রহিত করেন।
৫. সরকারি টেলিভিশন ও রেডিওতে কোরান তেলাওয়াতের ব্যবস্থাঃ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টিভিতে অত্যন্ত গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে কুরআন তিলাওয়াত ও তাফসীর প্রচার শুরু হয়। ফলে, বেতার ও টিভির অনুষ্ঠান সকালের শুভ সুচনা ও দিবসের কর্মসূচী কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয়। করেন।
৬. কাকরাইল মসজিদের জন্য জায়গা বরাদ্দ: বর্তমানে কাকরাইলের যে মসজিদে কেন্দ্রীয়ভাবে তাবলীগ জামাতের মারকাজ অনুষ্ঠিত হয় এ মসজিদটি ছিল খুবই অপ্রশস্ত। বঙ্গবন্ধু কাকরাইলের তাবলীগ জামাতের মারকাজ মসজিদের জন্য স্থান বরাদ্দ করেন এবং মসজিদটি তাঁরই নির্দেশে সম্প্রসারিত হয়।তাবলীগ জামাতের দাওয়াতি কার্যক্রমকে ব্যাপকভিত্তিক করার জন্যই বঙ্গবন্ধু কাকরাইলের মসজিদ ও তৎসংলগ্ন জায়গা তাবলীগি মারকাসকে প্রদান করেন।
৭. আইন করে মদ ও জুয়া নিষিদ্ধকরণ এবং শাস্তির বিধান: ইসলামে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামের নামে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে অবাধে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুই প্রথম আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান জারি করেন।
৮.ধর্মীয় দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা : ইসলামের ধর্মীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ঘোষনা করেন। এই দিনগুলোতে সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। উল্লিখিত দিনসমূহের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
৯. বাংলাদেশ সিরাত মজলিস প্রতিষ্ঠা ও জাতীয়ভাবে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স) উদযাপন: স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম হাক্কানী আলেম-ওলামাদের সংগঠিত করে পবিত্র ইসলামের সঠিক রূপ জনগনের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহন করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় সিরাত মজলিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান জঠন করা হয়। সিরাত মজলিস ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহন করেন। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মুকার্রাম মসজিদ চত্ত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন। একজন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স) মাহফিলের উদ্বোধন উপমহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স) মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে।
১০. রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা: রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একটি কমিউনিস্ট দেশ। সেদেশে বিদেশ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য কেউ অনুমতি পেত না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়া সহযোগিতা করায় বঙ্গবন্ধুর সাথে সেদেশের নেতৃবৃন্দের একটি সুদৃঢ় বন্ধুত্বের ভিত্তি রচিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে স্বাধীনতার পর প্রথম রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নে তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।
১১. ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা নিষিদ্ধকরণ: পাকিস্তানি আমলে ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। সেখানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতার নামে চলত জুয়া, হাউজি ও বাজিধরা প্রতিযোগীতা। এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহন করে বাজিতে হেরে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যেত। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতা বন্ধ করেন। আমাদের প্রিয় নবী (স) বৃক্ষরোপণের প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন। এই শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে রেসকোর্স ময়দানের অনৈসলামিক কর্মকান্ডের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ করে সেই স্থানের নাম রাখেন “সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।”
মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা ও মুসলিম বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন: মুসলিম বিশ্বের সাথে কুটনীতি জোরদার করে তিনিই ১৯৭৪ সালে ওআইসি-তে বাংলাদেশের সদস্যপদ পাইয়ে দেন।
বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক ফোরামে আরব বিশ্ব, বিশেষ করে প্যালেস্টাইনি ভাইদের প্রতি বলিষ্ঠ সমর্থন অব্যাহত রাখেন।
আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় তিনিই সর্বপ্রথম আরব বিশ্বের প্রতি সমর্থন ও সাহায্য প্রেরণ করেন। তাতে করে আরব বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই ঘনিষ্ঠতা ছিল সমতার ভিত্তিতে। তাদের নিকট আমাদের পরিচয় ছিল একটি মর্যাদাবান ও সংগ্রামী জাতি হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে, আরব দেশগুলোর চাপেই ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এটা ছিল আরব বিশ্বে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতির এক বিরাট সফলতা।
বঙ্গবন্ধুর পরমত সহিষ্ণুতা: ১৯৭২ সালে গনপরিষদে রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণী এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, “ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।” এই সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার নিশ্চিত করেছেন এবং ধর্ম নিরপেক্ষতাকে বাংলাদেশের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কার বলা হয়েছে। ধর্ম নিরেপক্ষতা বা পরমত সহিষ্ণুতা ইসলাম বিরোধী নয়। এটা ইসলামেরই মহান শিক্ষা। ইসলামই সর্বপ্রথম মানবজাতিকে পরমতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দিয়েছে। মহানবী (স), খোলাফায়ে রাশিদিনের জীবন আদর্শেও তার অনেক প্রমান রয়েছে। মদীনায় হিজরতের পর মহানবী (স) ইহুদী-মুশরিকদের সাথে যে সম্মিলিত সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন, তাতেও ধর্ম নিরপেক্ষতা বা পরমত সহিষ্ণুতাকে মূলনীতি হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। তাদের সাথে মুসলমানদের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। ইতিহাসে এই চুক্তি “মদীনার সনদ” নামে খ্যাত।
(বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ দরবেশ শেখ আউয়াল হযরত বায়জীদ বোস্তামি (র.)-এর সঙ্গী হিসেবে বাগদাদ থেকে এ বঙ্গে আগমণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তারই উত্তর পূরুষেরা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের বংশধর। বঙ্গবন্ধুর পিতা মাতা দু জনই ছিলেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, “আমরা ইনসাফের ইসলামে বিশ্বাসী। আমাদের ইসলাম হজরত নবী করীম (সা এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।”)
আশা রাখি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ এর নামে ছড়ানো বিভিন্ন অপপ্রচার ও প্রোপাগান্ডার জবাব দিতে এই লেখাটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:২৯